"তোমরা যদি না জানো তবে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা কর"
(সূরা নাহল, আয়াত ৪৩)
জ্ঞানী বলতে আল্লাহ কাকে বুঝিয়েছেন? সর্বপ্রথম দেখবো আমাদের সমাজে জ্ঞানী বলতে কাকে বোঝানো হয়। আমাদের সমাজে যাকে জ্ঞানী (ইসলামী বিষয়ে) বলা হয়ঃ যারা দ্বীনী বিষয়ে পড়াশোনা করে বড় বড় ডিগ্রী নেয় তাদেরকেই আমাদের সমাজে জ্ঞানী বা আলেম বলা হয়। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, যারা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করে বড় বড় ডিগ্রী নেয় যেমন ফাজেল, কামেল, মুফতি এসব ডিগ্রী অর্জন করে তাদেরকেই আমাদের সমাজে জ্ঞানী বলা হয়।
পক্ষান্তরে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় সিলেবাস ভিত্তিক একটি গণ্ডীর মধ্যে থেকে ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় এবং দেখা যায় সেই সিলেবাস তৈরিতে শাসকদের হস্তক্ষেপ থাকে। রসূলুল্লাহ ﷺ এর ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী শেষ জামানায় আলেমদেরকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ ইলম উঠিয়ে নিবেন এবং এর ফলে শেষ জামানায় মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করে যে হারে মানুষ বড়বড় ডিগ্রী নিয়ে আলেম হচ্ছে তাতে আলেমদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছেনা বরং বহুগুণে আলেমদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কারণ প্রতি বছরই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে বহু আলেম (জ্ঞানী) বের হয়ে আসছে। এভাবে প্রত্যেক বছরই হাজার হাজার আলেম তৈরী হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেক বছর যে হারে আলেমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে আলেম মারা যাচ্ছেনা অর্থাৎ আলেমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় যেভাবে আলেমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে তাতে এই শেষ জামানায় আলেমদের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধিই পাবে। আলেমদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছেনা। অথচ রসূল ﷺ ভবিষ্যতবাণী করেছেন, আলেমদেরকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে অর্থাৎ শেষ যামানায় আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে। তাহলে প্রকৃত ঘটনাটা কি? জ্ঞানী বলতে আল্লাহ কাকে বুঝিয়েছেন সেটা বুঝা গেলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে।
আল্লাহর দৃষ্টিতে যারা জ্ঞানী
মূসা (আঃ) একবার আল্লাহকে সাতটি প্রশ্ন করেছিলেন। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিলো- আল্লাহ! আপনার বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানী কে? আল্লাহ বললেন- যে জ্ঞানার্জনে কখনো তৃপ্ত হয়না এবং মানুষের অর্জিত জ্ঞানকেও যে ব্যক্তি নিজের জ্ঞানের মধ্যে জমা করতে থাকে (হাদীসে কুদসী-আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বায়হাকী ও ইবনে আসাকির, আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী রঃ এর 'হাদীসে কুদসী' গ্রন্হের ৩৪৪ নং হাদীস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, আল্লাহ জ্ঞানকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথমটি তাঁর দেওয়া জ্ঞান যা তিনি সৃষ্টির প্রথম থেকে তাঁর নবী রসূলদের মাধ্যমে তাঁর কিতাবসমূহে মানবজাতিকে অর্পণ করে আসছেন, যার শেষ কিতাব হচ্ছে আল কুরআন। এটা হচ্ছে অর্পিত জ্ঞান। আর মানুষ পড়াশোনা, চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে জ্ঞান অর্জন করে তা হলো অর্জিত জ্ঞান। কারা প্রকৃত আলেম কারা প্রতারক আলেম তা একজন মুমিন এর জন্য ধরা সহজ, যখন তার ইসলামের সঠিক অর্জিত জ্ঞান থাকে।
প্রকৃত আলেম ও প্রতারক আলেম সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অনেক উক্তি কোর’আন ও হাদিসে পাওয়া যায়। প্রকৃত আলেমদেরকে আল্লাহর রসূল নিকৃষ্ট জীব বলেন নি, বলেছেন প্রতারক আলেমদেরকে। আমরা প্রকৃত আলেম বলতে বুঝবো আল্লাহর রসূলের আসহাবগণকে যাদেরকে স্বয়ং রসূল নিজে ইসলাম শিখিয়ে গেছেন, ইসলামের জ্ঞান তাদের চেয়ে বেশি আর কারও থাকা সম্ভব নয়। রসুলের আসহাবগণের পরবর্তীতে যারা আলেম হতে চান তাদের চরিত্র ও কাজ আসহাবদের মতোই হতে হবে। তা না হলে যত বড় টাইটেলধারীই হোন না কেন, যত বড় আলখেল্লাধারীই হোন না কেন তারা প্রকৃত আলেম নন। সুতরাং,
১। প্রকৃত যারা আলেম তারা সঠিক হেদায়েতের উপর থাকবেন এবং ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করবেন। আল্লাহর কারণেই কারো সাথে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা করবেন, হক কথা প্রচার করবেন, সত্য গোপন করবেন না। প্রকৃত যারা আলেম তারা কখনও অহঙ্কারী হবেন না, কারণ অহঙ্কার কেবলমাত্র আল্লাহরই সাজে। প্রকৃত আলেমরা তাদের সঞ্চিত জ্ঞানকে খুবই সামান্য মনে করবেন এবং সর্বদা অতৃপ্ত থাকবেন। তারা নিজেদেরকে কখনোই আলেম বলে মনে করবেন না, দাবি বা প্রচার করা তো দূরের কথা।
২। তারা আল্লাহর দ্বীন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করবেন না। এই জ্ঞান অন্যকে দেওয়া তারা নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করবেন। আলী (রা:) কে রসুলাল্লাহ ‘জ্ঞান-নগরীর দ্বার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি কি আজকের আলেমদের মতো তাঁর জ্ঞান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন? জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি কুলির কাজ করতেন এবং যাঁতার চাক্কি পিষে যবের আটা প্রস্তুত করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী জান্নাতের রানী ফাতেমার (রা:) পবিত্র হাতে কড়া পড়ে গিয়েছিল। এই জ্ঞানের দুয়ার হযরত আলীকেই (রা:) আমরা দেখি সিংহের বিক্রমে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তার অনন্য সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য রসূলাল্লাহ তাঁকে আরেকটি উপাধি দিয়েছিলেন- সেটা হলো আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহ। সুতরাং যিনি দ্বীনের যত বড় আলেম হবেন তিনি তত বড় সংগ্রামী, যোদ্ধা হবেন অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের রক্ষক হবেন। আল্লাহর জন্য তার অগাধ আত্মমর্যাদাবোধ থাকবে।
৩। প্রকৃত আলেম তার জ্ঞানকে মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে প্রচার করে যান। তার শিক্ষায় একটিও বিষয় থাকেনা বা থাকতে পারে না যা আল্লাহ বা তাঁর রসুলের শিক্ষার বিপরীত। আল্লাহ ধর্মব্যবসা হারাম করেছেন, দ্বীনের কাজের পার্থিব মূল্য গ্রহণকে তিনি আগুন ভক্ষণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যারা এই কাজ করে তাদেরকে তিনি বলেছেন পথভ্রষ্ট, অপবিত্র ও জাহান্নামী (সূরা বাকারা, আঃ ১৭৪)। তাদের পেছনে দাঁড়াতে মুমিনদেরকে নিষেধ করেছেন (সূরা ইয়াসীন, আয়াতঃ ২১)। অথচ আজকের সমাজের প্রতিষ্ঠিত আলেমগণ জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে দ্বীন বিক্রি করাকেই বেছে নিয়েছেন, যদিও তারা তা মুখে অস্বীকার করে থাকে। এরা আল্লাহর কুরআনের আয়াতের পরিপন্থী কাজ করছেন এবং নিজেদের আলেম বলে দাবি করে অর্থের বিনিময়ে, পার্থিব স্বার্থে নামাজ পড়িয়ে, মুর্দা দাফন করে, খতম পড়ে, ওয়াজ মাহফিল, খুতবা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদেরকেই আল্লাহর রসূল ﷺ আসমানের নিচে সর্ব নিকৃষ্ট জীব বলেছেন। (তবে নিয়তের উপরই এটি নির্ভরশীল। কারণ অনেকের নিয়তই থাকে যে ধর্ম দিয়ে দুনিয়া কামাই করবো তাদের কথা বলা হয়েছে।)
৪। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার রজ্জুকে ধরে রাখ। আজ এই নামধারী আলেমরা ইসলামকে নানান মাজহাব, ফেরকা, তরীকা, খানকা, পীরের অনুসারী এবং হাজারো ভাগে ভাগ করেছেন, সাধারণ মানুষ এই সব মাজহাব ফেরকা আবিষ্কার করে নি। এই কাজ করে নামধারী আলেমরা জাতিকে মেরে ফেলেছেন। প্রকৃত আলেমরা কখনই ইসলামকে এই ভাবে ধ্বংস করতে পারেন না।
আমরা চাই এ জাতির সত্যনিষ্ঠ আলেম ওলামাদের কালঘুম ভাঙুক। তারাও আল্লাহর প্রকৃত তাওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোক। আর বর্তমানে তা দেখাও যাচ্ছে। হক তাদের কাছে দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যে সকল আলেমরা গনতন্ত্র নিয়ে পড়েছিল তারা আজ তা থেকে বেরিয়ে আসছে। এই জাতি এখন জেগে উঠছে।
হক আলেমদের মর্যাদা
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তাদেরকে উচ্চমর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (সূরা মুজাদালাহ ৫৮/১১)
মানবজাতির জন্য সর্বশেষ পথনির্দেশিকা আসমানি গ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরা যুমার, আয়াত ৯)। যারা জানে, কোরআনের পরিভাষায় তাদের আলেম বলা হয়। ইসলামে আলেমের মর্যাদা সবার ওপরে। আলেম আর বে-আলেম কখনই মর্যাদা-সম্মানে সমান নয়- এ থেকেই প্রমাণ হয় আলেমের গুরুত্ব।
আলেমের মর্যাদা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে। একটি হাদিসে রসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, ‘আবেদের অপেক্ষা আলেমের মর্যাদা তেমন যেমন তোমাদের সর্বাপেক্ষা ছোট ব্যক্তির তুলনায় আমার মর্যাদা!’ (তিরমিজি)। আরেক হাদিসে রসূল ﷺ বলেছেন, ‘আলেমের জন্য সৃষ্টিজগতের সব কিছুই মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত।’ (জামে আস সগির ও কানজুল উম্মাল)
একজন আলেমের সবচেয়ে বড় মর্যাদা হলো, সে নবীর ওয়ারিশ। রসূল ﷺ বলেছেন, ‘আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীরা দিরহাম বা দিনার অর্থাৎ বৈষয়িক কোনো সম্পদের উত্তরাধিকার রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম তথা জ্ঞান। অতএব যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করেছে, আলেম হয়েছে, সে অনেক অনেক বেশি মুনাফা লাভ করেছে।’ (আবু দাউদ)। হাদিসে আরো এসেছে, রসূল (সা:) বলেছেন,
আলেমরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। ফলে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল। (সহীহুল বুখারী ৭১)
জগতে একজন আলেমের মর্যাদা বোঝাতে গিয়ে রসূল ﷺ সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন। বায়হাকিতে এসেছে, ‘পৃথিবীতে আলেমের অবস্থান আসমানের তারকারাজির মতো। যখন মানুষ তারা দেখতে পায়, তখন সে পথ চলতে পারে। যখন তারকা দেখা যায় না, তখন মানুষ অন্ধকারে পথ হাতড়াতে থাকে।’
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘আলেমকে দেখে দেখে, আলেমের কথা শুনে শুনে জগৎবাসী তাদের জীবন পরিচালনা করবে। যত দিন তারা আলেমদের কথা মেনে জীবন পরিচালনা করবে, তত দিন তারা পথ হারাবে না। যখনই আলেমদের পরামর্শ ছাড়া মানুষ জীবনযাপন শুরু করবে, তখনই তারা জীবনের মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়বে। অন্ধকারে, গলিপথে হারিয়ে যাবে। তাই আলেমদের আকাশের তারার সঙ্গে তুলনা করেছেন রসূল ﷺ।’ একজন আলেম মারা গেলেও তার সওয়াবের খাতা বন্ধ হয় না।
রসূল ﷺ বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি উৎস থেকে তা জারি থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়া ২. উপকারী ইলম (জ্ঞান) ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ মুসলিম। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, দুনিয়ায় যেমন সম্মান-প্রতিপত্তির অধিকারী হয় আলেমরা, একইভাবে আখিরাতেও তারা সম্মান-প্রতিপত্তির অধিকারী হবে।
শেষ জামানায় হক আলেমদের কঠিন পরীক্ষা
হযরত আবু সালামা (রহঃ) বলেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা (রা:) কে বলতে শুনেছি যে, মানুষের উপর এমন এক জামানা আসবে যে, তখন আলেমের কাছে লাল বর্ণের স্বর্ণের চেয়েও মৃত্যু বেশী পছন্দনীয় হবে।
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫৫, ১৬০ [পথিক প্রকা: ১৫৫, ১৬০; তাহকীক: মাওকুফ, সহীহ])
হক্ক আলেম হল নবী রসূলগণের উত্তরসূরী। তারা কখনো তাগুতের সাথে আপস করেন নি, হক্ক কথা গোপন করেননি এবং তার ইলমের উপর আমল করেন। ইবনে তাইমিয়্যার মতানুসারে এদের তিনটি জায়গায় পাওয়া যায়। ১. কবরে, ২. জিহাদের ময়দানে, ৩. তাগুতের কারাগারে।
আর তাদের মধ্য থেকে কেউ সত্য গোপন করলে
আবূ হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।”
- (সুনান আত তিরমিযী ২৬৪৯; সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬; মুসনাদে আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮; রিয়াদুস সলেহীন ১৩৯৮)
আমলহীন ইলম অর্জনকারীদের অবস্থা
আমলবিহীন আলেম সম্পর্কে কুরআন-হাদীছে অনেক বর্ণনা রয়েছে। আমরা এখানে তা থেকে কতিপয় বর্ণনা উপস্থাপনের চেষ্টা করব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ- كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ.
হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক। (সূরা ছফ, আঃ ২-৩)
আনাস (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, যখন আমাকে মে‘রাজের রাতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি কতিপয় লোককে দেখলাম, যাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেওয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আপনার উম্মতের বক্তাগণ, যারা মানুষকে ভাল কাজের জন্য আদেশ করত এবং নিজেদেরকে ভুলে যেত। তারা কুরআন তেলাওয়াত করত কিন্তু তারা চর্চা করত না।
- (আত তারগীব ওয়াত তারহীব ২৩২৭; সিলসিলা ছহীহাহ ২৯১)।
ওসামা ইবনু যায়েদ (রা:) বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম।
- (সহীহুল বুখারী ৩২৬৭; মিশকাত ৫১৩৯)
0 মন্তব্যসমূহ