৬.৩৩ ইমাম মাহদী এর আত্মপ্রকাশ

 উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলি ঘটার পরপরই ইমাম মাহদী অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত্মপ্রকাশ করবেন। তার পরিচয়, বংশ, বৈশিষ্ট্য, তার সহচর ও আবির্ভাবের সময়কাল নিয়ে এখানে আলোকপাত করা হলো।

৬.৩৩.১ ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ইমামুল মাহদী ও খলীফাতুল্লাহ) এর পরিচয়

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) সূত্রে বর্ণিত। নবী বলেছেনঃ যদি দুনিয়ার মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবে আল্লাহ সেই দিনকে অত্যন্ত দীর্ঘায়িত করবেন এবং আমার থেকে অথবা আমার পরিজন থেকে একজন লোক আবির্ভূত করবেন, যার নাম ও তার পিতার নাম আমার ও আমার পিতার নামের সঙ্গে হুবহু মিল হবে। সে পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে যেরূপ তা যুলুমে পরিপূর্ণ ছিলো। আর সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসে বলেন, ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতদিন পর্যন্ত আমার পরিবারের এক ব্যক্তি আরবে রাজত্ব না করবে, তার নাম হুবহু আমার নামই হবে।
-       (হাসান, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৮২ [ইঃ ফাঃ ৪২৩৩]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৫২; মুসনাদে আহমাদ খণ্ড ১/৩৭৬, হাঃ ৩৫৭২; মুসনাদে বাযযার ১৮০৪; সুনান তিরমিযী ৩২৩০; আল-মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ ৩৭৬৪৮; আল-আফরাদ, ইমাম দ্বারাকুতনী ৩৬৪৩; আবু নুআইম ১৯; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৪৪২, হাদিস ৮৪১৩; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১০/১৩৩, হাঃ ১০২১৬, ১০০৬৯; ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ)

উছমান ইব্‌ন আবূ শায়বা (রহঃ) .... আলী (রা:) সূত্রে বর্ণিত। নবী বলেছেনঃ যদি দুনিয়ার একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবুও আল্লাহ আমার পরিজন (আহলে বাইত) থেকে অবশ্যই এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন। তখনকার দুনিয়া যেরূপে অত্যাচারে ভরে যাবে, সে সেরূপেই তা ন্যায়-ইনসাফে ভরে দিবে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৮৩ [ইঃ ফাঃ ৪২৩৪]; আল-মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বা ৩৮৬৪৮; মুসনাদে আহমাদ ১ম খণ্ড, পৃ.৯৯, বৈরুত, দারুল ফিকর কর্তৃক প্রকাশিত)

মহানবী বলেছেন, এমনকি সমগ্র বিশ্বের আয়ু যদি শেষ হয়ে গিয়ে থাকে এবং কিয়ামত হতে একদিনও অবশিষ্ট থাকে তাহলেও মহান আল্লাহ্ ঐ দিবসকে এতটা দীর্ঘায়িত করবেন যাতে তিনি ঐ দিবসেই আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির শাসনকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারেন যাকে আমার নামেই ডাকা হবে। পৃথিবী অন্যায়-অত্যাচারে ভরে যাওয়ার পর সে তা শান্তি ও ন্যায়ে পূর্ণ করে দেবে।
-       (সুনান আত-তিরমিযী ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৬, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৭৪-৭৫; আবু দাউদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৭; মুসনাদে আ‏‏‏হমদ ইবনে হাম্বল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৬, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৬৩; মুস্তাদরাকুস্ সাহীহাইন (হাকেম), ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫৫৭; আল মাজমা (তাবরানী), পৃ. ২১৭; তাহযীবুস্ সাবিত (ইবনে হাজার আসকালানী), ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৪৪; আস সাওয়ায়িকুল মুহ্রিকাহ্ (ইবনে হাজার হাইসামী), ১১শ অধ্যায়, উপাধ্যায় ১, পৃ. ২৪৯; কানযুল উম্মাল, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৮৬; ইকদুদ দুরার ফী আখবারিল মাহ্দী আল মুনতাযার, ১২শ খণ্ড, ১ম অধ্যায়; আল বায়ান ফী আখবারি সাহিবিয যামান (গাঞ্জী শাফিয়ী), ১২শ অধ্যায়; ফাতহুল বারী (ইবনে হাজার আসকালানী), ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩০৫; আল তাযকিরাহ্ (কুরতুবী), পৃ. ৬১৭; আল হাভী (সুয়ূতী), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৬৫-১৬৬; শারহুল মাওয়াহিবুল লাদুন্নীয়াহ্ (যুরকানী), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৪৮; ফাতহুল মুগীস (সাখাভী), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪১; আরজাহুল মাতালিব (উবায়দুল্লাহ্ হিন্দী), পৃ. ৩৮০; আল মুকাদ্দিমাহ্ (ইবনে খালদুন), পৃ. ২৬৬; জামিউস সাগীর (সুয়ূতী), পৃ. ১৬০; আল উরফুল ওয়ারদী (সুয়ূতী), পৃ. ২)
-       আশ শাফিয়ী (ওফাত ৩৬৩/৯৭৪) বলেছেন যে, এ হাদীস বিপুল সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত এবং বহু সংখ্যক বর্ণনাকারী কর্তৃক তা মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র বর্ণিত ও প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া হাদীসটি ইবনে হিববান, আবু নাঈম, ইবনে আসাকির প্রমুখ কর্তৃক লিখিত গ্রন্থাদিতেও উদ্ধৃত হয়েছে।

আবু ইসহাক (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আলী (রা:) স্বীয় পুত্র হাসান রাঃ-এর প্রতি তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয় আমার এই পুত্র একজন নেতা। যেমন রসূলুল্লাহ তাকে নেতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। অদূর ভবিষ্যতে তার ঔরসে এমন এক লোকের আগমন ঘটবে, যার নাম হবে তোমাদের নবীর নামানুসারে। তিনি হবেন তাঁর (নবীর) চরিত্রের সদৃশ, কিন্তু চেহারা ও দৈহিক গঠনে তাঁর সদৃশ হবে না। অতঃপর আলী (রা:) উক্ত ব্যক্তির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা সারা ভূপৃষ্ঠকে পরিপূর্ণ করে দেবেন। [আবূ দাউদ, তবে ইমাম আবু দাউদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর রিওয়ায়াত সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত ঘটনাটি বর্ণনা করেননি]
-       (যঈফ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৬২; আবূ দাউদ ৪২৯০; য'ঈফাহ্ ৬৪৮৫)
-       কারণ সনদে আবু ইসহাক ও আলী-এর মাঝে ইনকিতা আছে।

হযরত কাতাদাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে, তখন তিনি দুই হাতে মানুষের মাঝে শান্তি বন্টন করবে। তারপর আবার ফিতনা দেখা দিবে, তখন আসবে মরিয়ম এর পুত্র ঈসা (আঃ)।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১২)

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী বলেনঃ আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আসমান-যমীনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন
-       (মুসনাদে আহমাদ; মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ৭/৩১৩-৩১৪; ইমাম হায়ছামী বলেনঃ হাদীছের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।)
নবী বলেনঃ ‘‘আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন
-       (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)

তার নাম ও বংশ পরিচয়

অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, শেষ জামানায় একজন খলীফা হবেন যিনি হবেন আহলে বাইত থেকে এবং সে এই পৃথিবীতে আবারো শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন এবং মুসলিমদের লাঞ্ছনার জীবনকে আবারো সম্মানিত করবেন। বেশির ভাগ হাদিসেই তাকে ইমাম আল মাহদী, খলীফাতুল্লাহ মাহদী হিসেবে এবং কিছু জায়গায় অস্পষ্টভাবে রসূল এর বংশ থেকে একজন, আহলে বাইত থেকে একজন, কুরাইশ থেকে একজন ন্যায়পরায়ণ আমীর আসবে এসেছে। মাহদী তার উপাধি নাম হবে তার আসল নাম নয়। তার নাম বেশির ভাগ জায়গাতেই মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অথবা রসূল বলেছেন তার নাম ও পিতার নাম আমার নাম ও পিতার নামেই হবে, সে কারণে এটাই সঠিক। তবে এক জায়গায় আহমাদ নামও উল্লেখ দেখা যায়। যেই দলিলের জোর বেশি সেটাই বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। তার পুরো নাম হয়- মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাসানী আল ফাতেমী আল হাশিমী আল কুরাইশী। এই নাম থেকেই বুঝা, যায় তিনি আহলে বাইত থেকে হবেন যেমনটা বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ এসেছে।

ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ ‘‘তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী
-       (নিহায়া, অধ্যায়ঃ আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম)

আহমদ ইব্‌ন ইবরাহীম (রহঃ) .... উম্মু সালামাহ (রা:) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছিঃ মাহদী আমার পরিজন থেকে ফাতিমাহর (সন্তানদের) বংশ থেকে আবির্ভূত হবে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৮৪ [ইঃ ফাঃ ৪২৩৫]; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮৬; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৫৩; সহীহুল জামি ৬৭৩৪; সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮০; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৬০০, হাঃ ৮৭১৪, ৮৭১৫; রাওদুন নাদীর ২/৫৪; সুনান নাসাঈ; বাইহাকী; আস সাওয়ায়িকুল মুহ্রিকাহ্, অধ্যায় ১১, উপাধ্যায় ১, পৃ. ২৪৯)

আবূ ইসহাক (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রা:) বলেছেন, আর তিনি তার ছেলে হাসানের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার এই ছেলেকে নবী যেরূপ নেতা আখ্যায়িত করেছেন, অচিরেই তার বংশ থেকে জনৈক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তোমাদের নবী -এর নামে তার নাম হবে, স্বভাব-চরিত্রে তাঁর মতো; কিন্তু গঠন আকৃতি অনুরূপ হবে না। অতঃপর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে ভরে দিবে।
-       (যঈফ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৯০ [ইঃ ফাঃ ৪২৪০])

আলী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ মাহ্দী আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে এক রাতে (এসলাহ তথা সংশোধন করে) খিলাফতের যোগ্য করবেন।
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮৫; সহীহাহ ২৩৭১; মুসনাদে আহমদ খণ্ড ২/৫৮ হাঃ ৬৪৫, ৬৪৬; রাওদুন নাদীর ২/৫৩; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১০৫০)

হযরত আব্দুল্লাহ (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করেন যে, রসূল বলেন মাহদীর নাম আমার নামের সমান হবে (আমার নাম ও তার নাম এক হবে)। তার পিতার নাম আমার পিতার নাম। বর্ণনাকারী বলেন আমি আরেকবার হাদীসটি শুনেছি যাতে তার পিতার নাম উল্লেখ করেন নাই।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৭৬, ১০৭৭ [পথিক প্রকা: ১০৭৩, ১০৭৪; তাহকীক: সহীহ, হাসান])

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদীর নাম হবে মুহাম্মাদ। অথবা তিনি বলেন মাহদীর নাম হবে নবীর নাম।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৭৮ [পথিক প্রকা: ১০৭৫; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু বলেন মাহদীর নাম হবে আমার নাম।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৮০ [পথিক প্রকা: ১০৭৭; যঈফ জিদ্দান])

হযরত আবু তুফাইল (রা:) হতে বর্ণিত যে, রসূল বলেন মাহদীর নাম হবে আমার নাম। আর তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নাম।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৮১ [পথিক প্রকা: ১০৭৮; তাহকীক: যঈফ তবে মানা সহীহ])

হযরত কাতাদা (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমি সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব (রা:) কে বললাম মাহদী কি হক বা সত্য? তিনি উত্তরে বললেন হক বা সত্য। তিনি বলেন আমি বললাম সে কাদের থেকে হবে? তিনি উত্তরে বললেন কুরাইশ থেকে। আমি বললাম কুরাইশের কোন শাখা হতে? তিনি উত্তরে বললেন বনী হাশেম হতে। আমি বললাম বনী হাশেমের কোন শাখা হতে? উত্তরে তিনি বলেন বনী আব্দুল মুত্তালিব হতে। আমি বললাম কোন আব্দুল মুত্তালিব হতে? উত্তরে তিনি বললেন ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা এর বংশধর হতে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৮২ [পথিক প্রকা: ১০৭৯; তাহকীক: সহীহ])

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করে বলেন যে, রসূল বলেন, মাহদী হল আমার বংশধর হতে এক ব্যক্তি অথবা তিনি বলেন মাহদী হল আমার পরিবারের থেকে এক ব্যক্তি।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৮৩ [পথিক প্রকা: ১০৮০; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদী হবে আমার হতে (আমার বংশধর হতে)।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৮৪ [পথিক প্রকা: ১০৮১; তাহকীক: সহীহ])

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদী আমাদের পরিবারের থেকে এক যুবক হবে। তিনি বলেন, আমি বললাম, তা থেকে তোমাদের বৃদ্ধরা হতাশ হয়ে যাবে। আর তোমাদের যুবকরা উহার আশা করবে। উত্তরে সে বলল, আল্লাহ তাআলা যা চান তাই করেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৮৬ [পথিক প্রকা: ১০৮৩; তাহকীক: সহীহ])

হযরত আলী (রা:) রসূল থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত মাহদী হলেন আমার আহলে বাইত তথা আমার বংশের একজন ব্যক্তি।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৯১ [পথিক প্রকা: ১০৮৮; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) নবী করীম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাহদী হলো আমার পরিবারের একজন ব্যক্তি।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৯৪ [পথিক প্রকা: ১০৯১; যঈফ জিদ্দান])

আবু জাফর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদী বনী হাশেম গোত্রের হযরত ফাতেমা (রা:) এর বংশের থেকে হবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১০২ [পথিক প্রকা: ১০৯৯; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদী হলেন যিনি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বংশের থেকে হবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১১০ [পথিক প্রকা: ১১০৭; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) নবী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাহদী হলো আমার আহলে বাইত তথা আমার পরিবারের একজন ব্যক্তি।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১১১ [পথিক প্রকা: ১১০৮; মাকতু, মুয়াল্লাক])

হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম হাসানের নাম রেখেছেন সায়্যেদ। আর অচিরেই তাঁর বংশের থেকে একজন ব্যক্তি জন্মলাভ করবে, যার নাম হবে তোমাদের নবীর নামে। তিনি গোটা পৃথিবীতে ন্যায় বিচারে ভরপুর করে দিবেন যেমন পৃথিবী জুলুমে ভরে গেছে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১১৩ [পথিক প্রকা: ১১১০; তাহকীক: যঈফ])

হযরত কাব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদী হলেন যিনি হযরত ফাতেমা (রা:) এর বংশের থেকে হবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১১২, ১১১৪ [পথিক প্রকা: ১১০৯, ১০১১; তাহকীক: যঈফ])

হযরতে কাব ইবনে আহবাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদি কুরাইশ বংশ থেকে হবে এবং খেলাফতও তাদের মধ্যে বাকি থাকবে। তবে কতক ইয়ামানীও খলীফা হবেন, যাদের সাথে কুরাইশের বৈবাহিক বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১১৫ [পথিক প্রকা: ১১১২; তাহকীক: যঈফ])

নবী বলেনঃ ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপ
-       (মুসনাদে আহমাদ; সহীহুল জামেউস্ সাগীর ৫১৮০)

তার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য

হযরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদী আল্লাহ তাআলাকে ভয়কারী হবে। ঈগলের ভয় করার মত। (ভয়ের কারণে) উহা ডানা প্রসারিত করে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৬১ [পথিক প্রকা: ১০৫৮; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু সাঈদ (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করে বলেন যে, মাহদী সম্পদ দানকারী ও (মন্দ) বিতাড়িতকারী হবেন।

অন্য অনুবাদে এসেছে- মাহদী প্রশস্ত ললাট ও দীর্ঘ নাকের অধিকারী হবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৬২, ১০৬৩, ১০৬৪, ১০৬৫ [পথিক প্রকা: ১০৫৯-১০৬২; তাহকীক: যঈফ])

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মাহদী হবে যুবক।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৬৮ [পথিক প্রকা: ১০৬৫; তাহকীক: সহীহ])

হযরত আবু তুফাইল (রা:) হতে বর্ণিত যে, একবার রসূল মাহদীর গুনাগুন বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন তার ভাষায় হবে ওজনতা। তার যখন তার উপর কথা বিলম্বিত হবে তখন বাম উরু ডান হাত দ্বারা মারবে। তার নাম হবে আমার নাম। তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নাম।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৬৯ [পথিক প্রকা: ১০৬৬; তাহকীক: যঈফ])

সাহ্‌ল ইব্‌ন তাম্মাম (রহঃ) .... আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমার বংশ থেকে মাহদীর আবির্ভাব হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট (উজ্জ্বল চেহারা, উঁচু নাকবিশিষ্ট)।
-       (হাসান, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৮৫ [ইঃ ফাঃ ৪২৩৬]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৫৪; সহীহুল জামি ৬৭৩৬; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৫৫৭)

রসূলুল্লাহ্ বলেছেন, মাহ্দী আমার আহলে বাইত থেকে আবির্ভূত হয়ে একটি বিপ্লব ঘটাবে এবং পৃথিবী অন্যায়-অবিচার ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তাকে ন্যায় ও সাম্য দ্বারা পূর্ণ করে দেবে।
-       (মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৪; জামিউস সাগীর, পৃ. ২ ও ১৬০; আল উরফুল ওয়ার্দী, পৃ. ২; কানযুল উম্মাল, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৮৬; ইকদুদ দুরার, ১২শ খণ্ড, অধ্যায় ১; আল বায়ান ফী আখবারি সাহিবিয যামান, ১২শ অধ্যায়; আল ফুসুসুল মুহিম্মাহ্, ১২শ অধ্যায়; আরজাহুল মাতালিব, পৃ. ৩৮০; আল মুকাদ্দিমাহ্, পৃ. ২৬৬)

তার রাজত্ব কাল

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে ইমাম মাহদী কত বছর শাসন করবেন তার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি ৪০ বছর বয়সে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তারপর খলীফা হিসেবে পৃথিবীতে শাসন করবেন। বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া যায় তিনি ৭ বছর, ৮ বছর, ৯ বছর শাসন করবেন। এছাড়া অন্যান্য যেসকল বর্ণনা রয়েছে তা একক এবং দুর্বল সনদ বা মতনে ভুল। কিছু হাদিসে ৭ থেকে ৯ বছর এসেছে। বিভিন্ন হাদিস দেখে এটির সঠিকটা নির্ণয় করা যায় না আর এটি আল্লাহ তায়ালা কম-বেশিও করতে পারেন। তবে আরো কিছু সূত্র থেকে ৮ (আট) বছর শাসন করবেন বলে মতটিকেই বেশি সঠিক মনে হয়। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদিসও রয়েছে।

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) নবী হতে বর্ণনা করেন, আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি (হারানো গৌরব ফিরে) পাবে। (এরপর) তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন (খিলাফত পরিচালনা করে মৃত্যুবরণ করবেন)।
-       (মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/৬০১; সিলসিলায়ে সহীহা ৭১১; আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন)

হযরাত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) রসূল হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাহদী এর মধ্যে তথা শাসন ক্ষমতা লাভ করার পর সাত বছর অথবা আট বছর অথবা নয় বছর জীবিত থাকবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১২১, ১১২২ [পথিক প্রকা: ১১১৮, ১১১৯; তাহকীক: যঈফ])

আবু সাঈদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেন, ইমাম মাহদি সাত, আট অথবা নয় বছর রাজত্ব করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৯৫৪)

আবু সাঈদ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ একদিন বিপদ-আপদের কথা আলোচনা করলেন, যা এ উম্মাতের শেষ সময় এসে পৌছবে। এমনকি কোন ব্যক্তি তা হতে আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে না। এ সময় আল্লাহ তাআলা আমার বংশ ও আমার পরিবার হতে এক ব্যক্তিকে দুনিয়াতে পাঠাবেন। তিনি ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা জমিনকে এমনিভাবে পরিপূর্ণ করে দেবেন। যেমনিভাবে তা ইতোপূর্বে যুলম-অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল। তার কার্যকলাপে আসমান ও জমিনের অধিবাসী সকলেই সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। আকাশ তার এক ফোঁটা পানিও অবশিষ্ট রাখবে না; বরং সম্পূর্ণই বের করে দেবে। (প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা দেখে) জীবিত লোকেরা মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে। লোকেরা এই অবস্থায় সাত অথবা নয় বছর জীবনযাপন করবে। (হাকিম তাঁর মুসতাদরাক-এ বলেন, হাদীসটি সহীহ)
-       (সহীহ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৫৭; সুনান আবু দাউদ ৪২৮২; সুনান আত তিরমিযী ২৩৪৫; সহীহুল জামি ৫৩০৪; সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৫২৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৭৭০; মুসনাদে বাযযার ১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ ১১৩৩১; আবু ইয়া'লা ৯৮৭; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৮২৩; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ ত্ববারানী ১৫৪১২; আল মু'জামুল আওসাত্ব ১২৩৩; আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৪৩৮)

সাহ্‌ল ইব্‌ন তাম্মাম (রহঃ) .... আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ আমার বংশ থেকে মাহদীর আবির্ভাব হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট (উজ্জ্বল চেহারা, উঁচু নাকবিশিষ্ট)। তখনকার দুনিয়া যেরূপে যুলুমে ভরে যাবে, সে তার বিপরীতে তা ইনসাফে ভরে দিবে; আর সে সাত বছর রাজত্ব করবে।
-       (হাসান, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৮৫ [ইঃ ফাঃ ৪২৩৬]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৫৪; সহীহুল জামি ৬৭৩৬; মুসতাদরাকে হাকিম ৪/৫৫৭)

তিনি ১২ জন আমীর/ইমামের সর্বশেষ

আমর ইব্‌ন উছমান (রহঃ) .... জাবির ইব্‌ন সামুরা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্‌ কে বলতে শুনেছি যে, এ দ্বীন ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম থাকবে, যতক্ষণ না তোমাদের উপর সর্ব সম্মতিক্রমে নির্বাচিত বার জন খলীফা (নিযুক্ত) হয়। (রাবী বলেনঃ) এরপর আমি নবী কে আরো কিছু বলতে শুনি, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেনঃ এ সমস্ত খলীফা কুরায়শ বংশ থেকে হবে।
-       (সহীহ, সহীহ মুসলিম ইঃ ফাঃ ৪৫৫৪, ৪৫৫৭, ৪৫৫৮, ৪৫৫৯; আবু দাউদ ৪৯৭৯ [ইঃ ফাঃ ৪২৩০])

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্‌ কে বলতে শুনেছি যে, বার জন খলীফা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত এ দ্বীন ইয্‌যতের সাথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। রাবী বলেনঃ একথা শুনে সাহাবীগণ তাকবীর দেন এবং চিৎকার করেন। এরপর তিনি আস্তে আস্তে কিছু বলেন, (যা আমি শুনতে না পাওয়ায়) আমার পিতাকে জিজ্ঞাস করিঃ হে আমার প্রিয় পিতা! তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেনঃ সে সব খলীফা কুরায়শ বংশ থেকে হবে।
-       (সুনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৩১; একইরকম বর্ণনা- সহীহ মুসলিম; আবু দাউদ ৪২৩০, ৪৯৭৯)

ইলহামপ্রাপ্ত-বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত হবেন

হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, একদিন আল্লাহর রসূল ﷺ আমাকে বললেন, শোনো হে আয়েশা! আমার কন্যা ফাতেমার বংশের এক সন্তান আসবে, যে কুরআনে ভাষায় দুর্বল থাকবে। কিন্তু আল্লাহ তাকে আসমানী জ্ঞানে সাহায্য করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! তাঁর নাম কি হবে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ।

-   (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১০৮৪)

হযরত আবু বাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ইমাম মাহদী আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞান পাবেন।

-   (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১০৮৫)

হযরত বাকের (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হযরত কাজিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যামানার ইমামগণ ইলহাম প্রাপ্ত হন, আর ইমাম মাহদীও আল্লাহর গোপন বাণী (ইলহাম) পাবেন।

-   (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১০৮৬)

আলী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ মাহ্দী আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে এক রাতের মধ্যেই এসলাহ (সংশোধন) করবেন।
-       (হাসান, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮৫; সহীহাহ ২৩৭১; মুসনাদে আহমদ খণ্ড ২/৫৮ হাঃ ৬৪৫, ৬৪৬; রাওদুন নাদীর ২/৫৩; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১০৫০)

মাহদী সম্পর্কে অন্যান্য দুর্লভ-অনির্ভরযোগ্য বর্ণনা

ইমাম মাহদীর আগমন হবে, এ বিষয়ে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ বিশ্বাস করে। তেমনি ইমাম মাহদী নিয়ে শিয়াদেরও আকিদা আছে যাতে রয়েছে অনেক বাড়াবাড়ি মিশ্রিত। তবে অনেক বর্ণনা তাদের কিতাবে পাওয়া যায় তার কিছু গ্রহণ করা যেতে পারে বা সত্য হতে পারে। তাই ইমাম মাহদীর বিষয়ে যে সকল বর্ণনা দুর্বল-দুর্লভ এবং যে সকল বর্ণনা শিয়াদের কিতাব থেকে পাওয়া যায় (যেগুলো বাস্তবসম্মত, বেউসুল নয়) তা এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে।

মহানবী বলেছেন: মাহদী আমার বংশধারার অন্তর্ভুক্ত এবং ফাতিমার একজন বংশধর হবে। আমি যেভাবে ওহীর ভিত্তিতে সংগ্রাম করেছি তদ্রূপ সে আমার পথ ও পদ্ধতির (সুন্নাহর) ভিত্তিতে সংগ্রাম করবে।
-       (বায়ান-ই শাফিয়ী, পৃ. ৬৩)

আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: যেভাবে আমি ইসলাম ধর্মের সূচনালগ্নে এ ধর্মসহ উত্তিত হয়েছি ও আন্দোলন করেছি তদ্রূপ সে সর্বশেষ যুগে ইসলাম ধর্মসহ উত্থিত হবে।
-       (বিহারুল আনোয়ার, ৫১তম খণ্ড, পৃ. ৭৮; এটি শিয়াদের প্রসিদ্ধ একটি কিতাব)

একইভাবে তিনি বলেছেন: বিশ্বে কেবল ইসলামের শাসনকর্তৃত্ব ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তখন পৃথিবী রূপালী ফলকের মতো আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাবে।
-       (আল মালাহিম ওয়াল ফিতান, পৃ. ৬৬)

কতিপয় রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর অধিকাংশ সঙ্গী যুবক হবে। বরং এগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের মধ্যে পৌঢ় ও বৃদ্ধদের সংখ্যা পথিকের ব্যঞ্জনের (তরকারীর) মধ্যে লবন যেমন সামান্য মাত্রায় থাকে, তেমনি নগণ্য হবে।

আমীরুল মুমিনীন আলী (রা:) বর্ণিত হাদীসটিতে বলা হয়েছে, আল মাহ্দীর সঙ্গীরা হবে যুবক। চোখের মধ্যে সুরমা এবং ব্যাঞ্জনে লবন যেমন সামান্য হয়, তেমনি তাদের মধ্যে নগণ্য সংখ্যক পৌঢ় ও বৃদ্ধ ব্যক্তি থাকবে। আর পথিকের পাথেয়ের মধ্যে সবচেয়ে নগণ্য জিনিসই হচ্ছে লবন।
-       (আসরে জুহুরি; বিহারুল আনোয়ার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৩৪)

হযরত আলী (রা:) বলেছেন: অন্যেরা যখন পবিত্র কোরআনকে নিজেদের ধ্যান-ধারণা, অভিরুচি ও বিশ্বাসের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় (অর্থাৎ নিজেদের অভিরুচির ভিত্তিতে অপব্যাখ্যা করবে) তখন সে পবিত্র কোরআন থেকে তার আকীদা-বিশ্বাস গ্রহণ করবে। সে বিশ্ববাসীকে ন্যায়প্রক্রিয়া কিভাবে অবলম্বন করতে হয় তা বাস্তবে দেখাবে এবং কিতাবে (কোরআন) ও সুন্নাহ যাকে পরিত্যাগ ও কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে তা পুনরুজ্জীবিত করবে।
-       (শারহু নাহজুল বালাগাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৬; আলী (রা:) এর খুতবার সংকলন করা একটি কিতাব নাম নাহজুল বালাগাহ যা শিয়াদের নিকট একটি প্রসিদ্ধ কিতাব)

ইমাম বাকির (রহি) থেকে বর্ণিত হয়েছে: আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পলায়নরত রক্তে রঞ্জিত কাতর পাখির মতো, আমাদের আহলে বাইতের এক ব্যক্তি ব্যতীত কেউ তা তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তখন সে তোমাদেরকে বছরে দুবার পুরষ্কার এবং মাসে দুটি জীবিকা প্রদান করবে। তোমরা তার সময় এমনভাবে প্রজ্ঞা অর্জন করবে যে, মহিলারা নিজ নিজ ঘরে মহান আল্লাহর কিতাব এবং মহানবী এর সুন্নাহর ভিত্তিতে বিচার করবে।
-       (বিহারুল আনোয়ার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৫২)

ইমাম সাদিক (রহ:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ইসলাম ধর্ম শ্রীহীন ও হীন হওয়ার পর মহান আল্লাহ এ ধর্মকে তার মাধ্যমে সম্মান প্রদান করবেন, পরিত্যাক্ত ও অপাঙক্তেয় থাকার পর এ ধর্মকে পুনরায় জীবিত করবেন, জিযিয়াহ পুনঃপ্রত্যাবর্তন করবেন এবং তরবারী দিয়ে কাফির ও প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে তার পথে আহবান করবেন; আর যে এর বিরোধিতা করবে সে নিহত হবে; আর যে তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে সে-ই অপদস্ত হবে।
-       (বিশারাতুল ইসলাম, পৃ. ২৯৭)

তিনি আরো বলেছেন: মহান আল্লাহ তার মাধ্যমে সব ধরনের বিদআত দূরীভূত করবেন, প্রতিটি পথভ্রষ্টতাকে মিটিয়ে দেবেন এবং প্রতিটি সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
-       (আল কাফী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১২)

ইমাম বাকির (রহ:) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে এমন কোন বিরাণ ভূমি থাকবে না যা আবাদ হবে না। একমাত্র মহান আল্লাহ ব্যতীত প্রতিমা, মূর্তি ইত্যাদির মতো আর কোন উপাস্য থাকবে না যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ধ্বংস হবে না (অর্থাৎ সব প্রতিমা-মূর্তি পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে)।
-       (কামালুদ্দীন, শেখ সাদুক প্রণীত, পৃ. ৩৩১)

মহানবী বলেছেন, পৃথিবী তার জন্য এর সমুদয় সম্পদ ও ঐশ্বর্য্য বের করে দেবে এবং সে জনগণের মধ্যে অগণিত ধন-সম্পদ বণ্টন করবে।
-       (বিহার, ৫১তম খণ্ড, পৃ. ৬৮)

ইমাম বাকির বলেছেন, মহান আল্লাহ্ তার মাধ্যমে নিজ ধর্মকে বিজয়ী করবেন যদিও কাফের-মুশরিকরা তা পছন্দ করবে না এবং পৃথিবীর সমস্ত বিধ্বস্ত ও বিরাণ এলাকা তার মাধ্যমে আবাদ হয়ে যাবে।
-       (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ১৯১)

ইমাম সাদিক বলেছেন: মাহ্দী মানব জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা এবং মহান আল্লাহ্ তার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত ফিতনার প্রজ্বলিত অগ্নি নিভিয়ে দেবেন।
-       (বিশারাতুল ইসলাম, পৃ. ১৮৫)

সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে: যে বছর আল কায়েম আল মাহ্দী আবির্ভূত হবেন এবং কিয়াম করবেন সে বছর চব্বিশ বার পৃথিবীর ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হবে যার বরকত ও কল্যাণকর প্রভাব সর্বত্র দৃষ্টিগোচর হবে।
-       (কাশফুল গাম্মাহ্, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৫০)

ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করছেন: মাহ্দীর চিহ্ন হচ্ছে নিজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাপারে কঠোর আচরণ, মুক্ত হস্তে ধন-সম্পদ দান এবং দুঃস্থ, সহায়-সম্বলহীন মানুষের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়া।

আরো বর্ণিত হয়েছে, মাহ্দী যেন অসহায়দের মুখে মাখন পুরে দেবেন।
-       (ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি, পৃ. ৯৮)

ইমাম বাকির থেকে বর্ণিত হয়েছে: আমি যেন আল কায়েমের সঙ্গী-সাথীদেরকে দেখতে পাচ্ছি যারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের আজ্ঞাবহ, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের হিংস্র পশুকুল এবং আকাশের শিকারী পাখীরাও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করবে। সবকিছুই, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের এক অঞ্চল আরেক অঞ্চলের ওপর গর্ব করে বলবে : আজ আল কায়েমের একজন সঙ্গী আমার ওপর পদধুলি দিয়েছেন এবং আমাকে অতিক্রম করেছেন।
-       (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩২৭)

ইমাম বাকির থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে: যখন আমাদের কায়েম আবির্ভূত হবে ও বিপ্লব করবে তখন পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে যে ব্যক্তিকেই প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরণ করবে তখন তাকে বলবে: তোমার হাতের তালুতেই তোমার কর্মসূচী ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা আছে। যখনই তোমার ক্ষেত্রে কোন ব্যাপার ঘটবে যা তুমি বুঝ নি এবং যার হিকমতও তোমার জানা নেই তখন তুমি তোমার হাতের তালুর দিকে তাকাবে এবং সেখানে যে নির্দেশনা বিদ্যমান আছে তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
-       (নুমানী প্রণীত গাইবাত, পৃ. ৩১৯)

মাহদী আগমণের ব্যাপারে কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্যঃ

ইমাম ইবনে তাইমীয়াহ্ (ওফাত ৭২৮ হি./১৩২৮ খ্রি.) তাঁর গ্রন্থ মিনহাজুস সুন্নাহ্য় (৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২১১-২১২) লিখেছেন যে, ইমাম মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ অবশ্যই নির্ভরযোগ্য। আর তাঁর শিষ্য যাহাবী তাঁর শিক্ষকের এ গ্রন্থের সার সংক্ষেপে এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
-       (মুখতাসার মিনহাজুস সুন্নাহ্, পৃ. ৫৩৩-৫৩৪)

রাবেতায়ে আলমে ইসলামী কর্তৃক ১১ অক্টোবর ১৯৭৬ তারিখে প্রদত্ত এক ফতোয়ায় বলা হয়েছে যে, ২০ জনেরও অধিক সাহাবী ইমাম মাহ্দী সংক্রান্ত এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন। এছাড়া যে হাদীসশাস্ত্রবিদগণ এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং যাঁরা ইমাম মাহ্দীর ওপর বই-পুস্তক লিখেছেন তাঁদের একটি তালিকাও এ ফতোয়ার সাথে প্রদান করা হয়েছে। এ ফতোয়ায় বলা হয়েছে : হাদীসের হাফেজ এবং হাদীসশাস্ত্র বিশারদগণ প্রত্যয়ন করেছেন যে, ইমাম মাহ্দী সংক্রান্ত হাদীসসমূহের মধ্যে অনেক সহীহ এবং হাসান হাদীস বিদ্যমান। এর অধিকাংশ হাদীসই বিপুল সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত (অর্থাৎ মুতাওয়াতির বা অকাট্য)। তাঁরা আরও প্রত্যয়ন করেছেন যে, মাহ্দীর আগমনে বিশ্বাস স্থাপন ফরয এবং এটি হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদার অন্যতম। সুন্নী মাজহাবের কেবল অজ্ঞ ব্যক্তিরা ও বিদআতপন্থীরা মাহ্দী সংক্রান্ত আকীদা অস্বীকার করেছেন।
-       (এ ফতোয়ার পূর্ণ পাঠের জন্য আল বায়ান গ্রন্থের লেখক আল গাঞ্জী আশ শাফেয়ীর ভূমিকা দেখুন, বৈরুত ১৩৯৯ হি./ ১৯৭৯ খ্রি., পৃ. ৭৬-৭৯)

ইমাম শাওকানী (রঃ) বলেনঃ যতদূর জানা যায় মাহদীর ব্যাপারে ৫০টি মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সহীহ, হাসান ও সামান্য ত্রুটি বিশিষ্ট হাদীছ, যা অন্য সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ত্রুটিমুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং বিনা সন্দেহে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির
-       (নাজমুল মুতানাছিরি মিনাল হাদিসিল মুতাওয়াতিরি, পৃষ্ঠা ১৪৫-১৪৬)

শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রঃ) বলেনঃ মাহদীর বিষয়টি অতি সুস্পষ্ট। এ ব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। তাঁর আগমণ সত্য। তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী আল-ফাতেমী। আখেরী যামানায় তিনি আগমণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। অন্যায়-অবিচার প্রতিহত করবেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ সত্য ও কল্যাণের ঝান্ডা বলুন্দ করবেন। যে ব্যক্তি আখেরী যামানায় ইমাম মাহদীর আগমণকে অস্বীকার করবে তার কথায় কর্ণপাত করা যাবেনা।
-       (আশরাতুস্ সাআ, ডঃ আব্দুল্লাহ সুলায়মান আল-গুফায়লী, পৃষ্ঠা ৮৭)

শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ বলেনঃ ২৬ জন সাহাবী থেকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কিত হাদীছগুলো বর্ণিত হয়েছে। ৩৬টি হাদীছ গ্রন্থে এ সমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
-       (আর রদ্দু 'আলা মান কাজাবা বিল আহাদীসিছ্‌ ছহীহাতিল ওয়ারিদাতি ফিল মাহদীই)

সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী (রঃ) বলেনঃ মাহদীর ব্যাপারে অনেক হাদীছ বিভিন্ন গ্রন্থে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। *
-       (আল ইযা'আতু লাম্মা কানা ও মা ইয়াকুনু বাইনা ইয়াদাইস সা'আতি, পৃষ্ঠা ১১২)
-       * উসূলে হাদীছের পরিভাষায় মুতাওয়াতির ঐ হাদীছকে বলা হয় যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে মিথ্যার উপর তাদের একমত হওয়ার কল্পনাও করা যায়না।

৬.৩৩.২ মাহদীর সহচর শুয়াইব ইবনে সালেহ

ইমাম মাহদীরও একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু অর্থাৎ সহচর থাকবে। তার নাম হবে শুয়াইব ইবনে সালেহ। অন্যান্য যেসকল নেতারা বা ইমামগণ তার আগে এসেছে তাদের সকলেরই একজন করে সহচর রয়েছে। যেমন ইমাম মাহমুদ এর সহচর শামীম বারাহ এবং ইমাম মানসূর এর সহচর হারিস ইবনু হাররাস। শুয়াইব ইবনে সালেহ কখন বের হবেন এবং তার কার্যক্রম কি কি হবে এ বিষয়ে আগেই লেখা হয়েছে। এখানে কিছু হাদিস আবারো তুলে ধরা হলো।

হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন বনু আব্বাসের একটি কালো ঝান্ডা বের হবে (৭৫০-১২৫৮ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল)। অতঃপর খোরাসান থেকে আরেকটি কালো ঝান্ডা বের হবে। তাদের টুপি হবে কালো। তাদের পোষাক হবে সাদা রং এর। তাদের সম্মুখে একজন লোক থাকবে যাকে শুয়াইব ইবনে সালেহ অথবা সালেহ ইবনে শুয়াইব ডাকা হবে। সে হবে তামিম গোত্রের। তারা সুফিয়ানীর সৈন্যদের পরাজিত করবে। এমনকি তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থান নিবে। তারা মাহদীর রাজত্বের জন্য পথ সহজ ও প্রস্তুত করবে। আর সিরিয়া হতে তিনশত লোক তার সাথে মিলিত হবে। তার বের হওয়া ও মাহদীর নিকট বিষয় সমর্পণ করার মধ্যে বাহাত্তর মাসের ব্যবধান হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৪)

হযরত সুফিয়ান কালবী (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদীর পতাকা তলে এক যুবক বের হবে। অল্প বয়সের। পাতলা দাঁড়ি বিশিষ্ট। হলুদ বর্ণের। আর হযরত ওয়ালীদ তার হাদীসের মধ্যে আসফার (হলুদ বর্ণের হওয়া) উল্লেখ করেন নাই। যদি সে পাহাড়ের সম্মুখিন হয়ে তাহলে পাহাড়কেও কাঁপিয়ে দিবে। আর হযরত ওয়ালিদ বলেন তা ভেঙ্গে ফেলবে। এমনকি সে ঈলাতে (বাইতুল মুকাদ্দাসে) অবতরণ করবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৭১ [পথিক প্রকা: ১০৬৮; তাহকীক: যঈফ])

হযরত হাসান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আর্যদের পিতল বর্নের চাঁর ব্যাক্তি বনি তামিম গোত্রের অভিমুখে বের হবেন। তাদের মধ্যে একজন হবেন হাঙর মাছের মত (তামাটে বর্ণের মত), যার নাম হবে শুয়াইব ইবনে সালেহ। তার সাথে ৪০০০ সৈন্য থাকবে। তাদের পোশাক হবে সাদা, আর তাদের পতাকা হবে কালো। তারা ইমাম মাহদীর অগ্রগামী অনুগত সৈন্য হবে এমনকি তারা তাদের শত্রুদের পরাজিত না করে মাহদীর সাথে সাক্ষাৎ করবে না।
-   (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৭)

৬.৩৩.৩ আবির্ভাবের সময়কাল

ইমাম মাহদীর আগমন কখন হবে সেই বিষয়ে প্রতি যুগেই চলেছে অসংখ্য ভবিষ্যৎবাণী। বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং মাহদীর আগমনের ২, ১ টি আলামত মিলিয়েই প্রচার হতে থাকে অমুক সময়ে মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে। আবার এর ফায়দা নিয়ে অনেক প্রতারক, ভণ্ডরাও নিজেদের মাহদী দাবী করছে যেমন টা বর্তমানে অহরহ দেখা যাচ্ছে। বর্তমান যুগে মুজাদ্দিদের আগমনের সময়কালকেই অনেকে মাহদীর আগমনের সময়কাল ধরে এই ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন জনে বিভিন্ন আলামত জেনে বিভিন্ন সময় আনুমানিক ভাবে নির্ণয় করে বলেছে এরকম সময়ে আগমন হতে পারে। আবার অন্য একটি দল রয়েছে যারা বলে থাকেন যে, তিনি কখন আসবেন তার কোন সঠিক হিসাব কোথাও দেওয়া নেই তবে আলামত রয়েছে। আমরা যদি ফিতনার আলামতগুলো সব দেখি এবং এই নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা ও চিন্তা ফিকির করি তাহলে আমরা এর একটা সম্ভাব্য সময় হাদিস থেকেই জানতে পারি। বিভিন্ন গবেষকদের মত ও বিভিন্ন লোকের দাবি অনুযায়ী ২০২০, ২০২১, ২০২৪, ২০২৬ ও ২০২৮ সালগুলো নিয়ে মাহদীর আবির্ভাবের সময়কাল পাওয়া যায়। এই সালগুলো কেন গবেষকরা উল্লেখ করেছেন এবং কোনটি সবচেয়ে সঠিক সেটির ব্যাখ্যাও এখানে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। (এর আগে ৩য় অধ্যায়ে মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদীর আবির্ভাব নিয়ে লেখায়ও কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে।)

১। তুর্কি খিলাফত ধ্বংস

হযরত আবু কুবাইল (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, খিলাফত ধ্বংসের ১০৪ বছর পর মাহদীর উপর মানুষ ভিড় করবে। ইবনে লাহইয়া বলেন, উক্ত (খিলাফতের) হিসাবটা আজমী তথা অনারবী হিসাব মতে। আরবী হিসাব মতে নয়।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৬২ [পথিক প্রকা: ৯৬২; তাহকীক: যঈফ]; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১১)

আমরা সবাই জানি যে, তুর্কি খিলাফত আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৯২৪ সালে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। সুতরাং ১৯২৪+১০৪ =২০২৮ সাল।

বিঃদ্রঃ- একমাত্র তুর্কি খিলাফত আজমী, অর্থাৎ অনরবী। এছাড়া চার খলিফা, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফত, ফাতেমীয় খিলাফত সবগুলোই আরবদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত।

২। ১৫ ই রমজান শুক্রবার রাতে বিকট শব্দে আওয়াজ আসবে

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল বলেছেন, কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে? নবীজি বললেন, না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে
-       (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)

সৌদি আরবের কেলেন্ডার অনুযায়ী ১৫ই রমজান শুক্রবার হয় ১৪৪৯ হিজরী বা ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৮ সাল।

৩। রমজান মাস শুরু হবে শুক্রবার

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক রমজানে অনেক ভূমিকম্প হবে। যে বছর শুক্রবার রাতে রমজান মাস শুরু হয়। তারপর মধ্য রমজানে ফজরের নামাজের পর আকাশ থেকে বিকট শব্দে আওয়াজ আসবে। তখন তোমরা সবাই ঘরের দরজা, জানালা সব বন্ধ করে রাখবে। আর সবাই সোবহানাল কুদ্দুস, সোবহানাল কুদ্দুস, রাব্বুনাল কুদ্দুস বলবে।
-       (আল ফিতানঃ নুয়াইম বিন হাম্মাদ)

সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১ রমজান শুক্রবার ১৪৪৯ হিজরী বা, ২৮ জানুয়ারি ২০২৮ সাল হয়।

(বিঃ দ্রঃ হাদিস বড় হওয়ার কারনে সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হয়নি এবং কিতাবুল ফিতানের অনুবাদে শুক্রবারে রমজান মাস শুরু হবে এরকম বলা হয়নি। প্রথম রমজান ও মধ্য রমজান শুক্রবার হওয়া একটি আলামত এবং এটি শুধু ২০২০ সাল এবং ২০২৮ সালের রমজান মাসের সাথেই মিলে। ২০২০ সালের মধ্যে যেহেতু অন্যান্য আলামতগুলো ঘটার সম্ভাবনা নেই তাই ২০২৮ সালটিই একমাত্র এই আলামতের সাথে মিলে, অন্য কোনো সালে নয়।)

৪। আশুরা বা, ১০ মুহাররম শনিবার হবে

হযরত বাকির (রহঃ) বলেন, যদি দেখ আশুরার দিন বা ১০ মুহাররম শনিবার ইমাম কায়িম (মাহদী) মাকামে ইব্রাহিম ও কাবার এর মধ্যখানে দাঁড়িয়ে থাকেন তখন হযরত জিব্রাইল (আঃ) তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকবেন এবং মানুষকে ডাকবেন তাকে বাইয়াত দেয়ার জন্য।
-       (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২৭০; গাইবাত, লেখকঃ শাইখ আত তুসী, পৃষ্ঠা ২৭৪; কাশফ উল গাম্মাহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৫২; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫৮)

সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ মুহাররম শনিবার ১৪৫০ হিজরী বা, ৩ জুন ২০২৮ সাল হয়।

৫। ইমাম মাহদীর নাম ধরে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর আহ্বান

হযরত আবু বাছির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আস সাদিক (হযরত জাফর সাদিক (রহ:)) কে জিজ্ঞেস করলাম? কখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে? তিনি বললেন আহলে বাইতের (রসূলুল্লাহ এর বংশধর) জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় (উল্লেখ) নেই। তবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে ৫টি বিষয় ঘটবে। যেমনঃ ১. আকাশ থেকে আহ্বান। ২. সুফিয়ানীর উত্থান। ৩. খোরাসানের বাহিনীর আত্নপ্রকাশ। ৪. নিরপরাধ মানুষকে ব্যাপক হারে হত্যা করা। ৫. (বাইদার প্রান্তে) মরুভূমিতে একটি বিশাল বাহিনী ধ্বসে যাবে।

ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা যাবে। ১. শ্বেত মৃত্যু। ২. লাল মৃত্যু। শ্বেত মৃত্যু দুর্ভিক্ষের কারনে মৃত্যু। আর লাল মৃত্যু হল তরবারি (যুদ্ধের) কারনে মৃত্যু। আর আকাশ থেকে তিনি (হযরত জিব্রাইল (আঃ) তার (ইমাম মাহদীর) নাম ধরে আহ্বান করবে ২৩ ই রমজান শুক্রবার রাতে। (হাদিস বড় হওয়ায় সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হয়নি)
-       (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৯; বিশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৫০, মুন্তাখাবুল আসার, পৃষ্ঠা ৪২৫; মুজ'আম আল হাদিস আল ইমাম আল মাহদী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭২)

সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২ রমজান শুক্রবার (যেহেতু আরবী মাস সন্ধ্যা থেকে হিসাব করতে হয়, তাই শুক্রবার রাত ২৩ ই রমজান হবে) রাত ১৪৪৯ হিজরী বা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৮ সাল হয়।

৬। রমজান মাসে চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ হবে

মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আল হানাফিয়্যাহ (রহঃ) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী থেকে দুটি বিষয় না ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত মাহদীর আগমন হবে না। প্রথমটি হল, রমজানের প্রথম রাতে চন্দ্র গ্রহণ ও মধ্য রমজানে সূর্য গ্রহণ না ঘটে।
-       (ইমাম আল আলী বিন উমর আল দারাকতুনী; আল কাউলুল মুখতাসার ফি আলামাতিল মাহদী আল মুন্তাজার, লেখকঃ- ইবনে হাজার আল হাইতামী, পৃষ্ঠা ৪৭)

১ রমজান রবিবার ১৪৪৮ হিজরী বা, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৭ সালে সূর্য গ্রহণ ঘটবে। এবং ১৪ রমজান শনিবার ১৪৪৮ হিজরী বা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৭ চন্দ্র গ্রহণ ঘটবে। (সূত্রঃ Wikipedia & NASA website)

বিঃ দ্রঃ ২০২৬ সালেও রমজান মাসে দুই বার চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ হবে। অর্থাৎ এই আলামত দেখলে বুঝতে হবে তার পরেই মাহদীর আগমন হবে, এর আগে নয়। তাই এর আগে আগমন করবে যারা বলে তারা মূলত এই আলামতটি হিসাব করেনি এবং এর আগেই যারা মাহদী দাবি করে বসে আছে তারা ভণ্ড।

৭। বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা (রা:) এর উক্তি

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, ১৪০০ হিজরীর দুই দশক ও তিন দশক পর ইমাম মাহদীর আগমন হবে।
-       (আসমাউল মাসালিক লিইয়াম মাহদিয়াহ মাসালিক লি কুল্লিদ দুনিইয়া বি আমরিল্লাহীল মালিক, লেখক: কালদা বিন জায়েদ, পৃষ্ঠা ২১৬; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৭০)

সুতরাং ১৪০০+২০+৩০=১৪৫০ হিজরী বা ২০২৮ সাল।

৮। শাহ নিয়ামতউল্লাহ (রহঃ) এর কাসিদাহ

শাহ নিয়ামত উল্লাহ (রহঃ) এর কাসিদাহ মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভবিষ্যৎবাণী করা একটি কবিতা। কাসিদাহ লেখা হয়েছে ১১৫৮ সালে। কাসিদাহ এর (প্যারা-৫৭) বলা হয়েছে,

কানা জাহুকার প্রকাশ ঘটার সালেই প্রতিশ্রুত

(ইমাম মাহাদি) দুনিয়ার বুকে হবেন আবির্ভূত।

উল্লেখ যে, কানা যাহুকা সূরা বনী ইসরাইলের ৮১ নং আয়াতের শেষ অংশ। যার অর্থ মিথ্যার বিনাশ অনিবার্য। পূর্ব আয়াতটির অর্থ সত্য সমাগত মিথ্যা বিলুপ্ত। অর্থাৎ যখন মিথ্যার বিনাশ কাল উপস্থিত হবে তখন উপযুক্ত সময়েই আবির্ভূত হবেন ইমাম মাহদী। উনার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে বাতিল ধ্বংস হবে। তাহলে বনী ইসরাইলের আয়াত ৮১+ভারতের সত্য মিথ্যার বিভক্ত বা পাকিস্তান নামে ভাগ হয়, ১৯৪৭+৮১=২০২৮ সাল। শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ ভারত ও পাকিস্তান ভাগের সময় থেকে এই হিসাবটি করে ৮১ নং আয়াত উল্লেখ করে অস্পষ্টভাবে বলে গেছেন যার ব্যাখ্যা পরে পাওয়া গেছে। এছাড়া আশ্‌ শাহ্‌রানের আগামী কথনেও সরাসরি ২০২৮ সালে আগমনের ব্যাপারে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

হযরত আবু বাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মাহদী প্রকাশের সময় কোন অন্ধকার থাকবে না। সকল মানুষই আলোকিত হবে। আবু বাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারপর তিনি সূরা বনী ইসরাইলের একাশি নম্বর আয়াত পাঠ করতে থাকলেন।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬৯)

৯। সুফিয়ানীর জন্ম ও উত্থান

হযরত যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন দ্বিতীয় সুফিয়ানীর জন্মের সময় আকাশে আলামত বা নিদর্শন দেখা যাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৪)

১৯৮৬ সালের ৮ই মার্চ আকাশে হেলির ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল। সাধারণত প্রতি ৭৪ থেকে ৭৯ বছর পর পর হেলির ধূমকেতু পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, যে বছর হেলির ধূমকেতু দৃশ্যমান হয়, সে বছর একটা বিখ্যাত ঘটনা ঘটে।

হযরত হুজায়ফা (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রা:) রসূল কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব? উত্তরে রসূল বললেন, তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে (দুটি শক্তিশালী দল)। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে
-       (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১০)

সুতরাং ১৯৮৬+৪০=২০২৬ সাল। অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যেই সুফিয়ানীর উত্থান হবে। আমরা সবাই জানি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে সিরিয়াতে সুফিয়ানীর উত্থান হবে। অর্থাৎ তার আগে মাহদীর আগমন হবে না। যেহেতু ২০২৬ সালের ব্যাপারে দলিল পাওয়া যায় যে সুফিয়ানীর উত্থান তখন হবে, তাহলে তার আগে মাহদীর আগমন কিভাবে হতে পারে? আর যারা মাহদী দাবি করতেছে বর্তমানে তারা এই সকল দলিল মতে স্পষ্ট ভণ্ড।

 

 

১০। ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে উঠা ও ইমাম মাহদীর খিলাফতের দায়িত্ব হস্তান্তর

সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, চতূর্থ ফিতনা হচ্ছে, অন্ধকার অন্ধত্বপূর্ন ফিতনা। যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উত্তাল হয়ে আসবে, আরব অনারবের কোনো ঘর বাকি থাকবেনা, প্রত্যেক ঘরেই উক্ত ফিতনা প্রবেশ করবে। যা দ্বারা তারা লাঞ্ছিত অপদস্ত হয়ে যাবে। যে ফিতনাটি শাম (সিরিয়া) দেশে চক্কর দিতে থাকলেও রাত্রিযাপন করবে ইরাকে। তার হাত পা দ্বারা আরব ভুখন্ডের ভিতরে বিচরন করতে থাকবে। উক্ত ফিতনা এ উম্মতের সাথে চামড়ার সাথে চামড়া মিশ্রিত হওয়ার ন্যায় মিশ্রিত হয়ে যাবে। তখন বালা মুসিবত এত ব্যাপক ও মারাত্নক আকার ধারন করবে যা দ্বারা মানুষ ভালো খারাপ কিছুই নির্ণয় করতে সক্ষম হবেনা। ঐ মুহুর্তে কেউ উক্ত ফিতনা থামানোর সাহসও রাখবেনা। একদিকে একটু শান্তির সুবাতাস বইলেও অন্যদিকে তীব্র আকার ধারন করবে। মানুষ সকালে বেলা মুসলমান থাকলেও সন্ধা হতে হতে সে কাফের হয়ে যাবে। উক্ত ফিতনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবেন, কিন্তু শুধু ঐ লোক বাঁচতে পারে, যে সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়। করুন সুরে আকুতি জানাতে থাকে।

সেটা প্রায় ১২ বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। এক পর্যায়ে সকলের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে ফোরাত নদীতে স্বর্নের একটি পাহাড় প্রকাশ পাবে। যা দখল করার জন্য সকলে যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে এবং প্রতি নয় জনের সাতজন মারা পড়বে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৭৬)

আমরা সবাই জানি যে, চতুর্থ ফিতনা বা, সিরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। সেটা ১২ বছর স্থায়ী থাকবে, তারপর ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় ভেসে উঠবে। সুতরাং ২০১১+১২=২০২৩ সাল।

উল্লেখ ফোরাত নদীর তীরে সোনার পাহাড় দখল কে কেন্দ্র করে যুদ্ধের পরপরই ইরাকের কুফা (মসূল) নগরীতে কালো পতাকাবাহী দলের উপর গণহত্যা সংগঠিত হবে। তারপরই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী বাহিনীর আত্নপ্রকাশ হবে।

হযরত ইবনুল হানাফিয়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খোরাসান থেকে কালো ঝান্ডাবাহী দল এবং শুয়াইব ইবনে সালেহ ও মাহদী (আঃ) এর আত্নপ্রকাশ আর মাহদীর হাতে ক্ষমতা আসা বাহাত্তর মাসের (৬ বছর) মধ্যেই সংঘটিত হবে।
-       (যঈফ জিদ্দান, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮০৪)

সুতরাং, ইমাম মাহদীর হাতে খিলাফতের ক্ষমতা যাবে ২০২৩+৬= ২০২৯ সাল। অর্থাৎ ২০২৯ সালের পূর্বেই মাহদীর হাতে রাজত্ব যাবে। এ থেকে এটিও পাওয়া যায় যে ২০২৩ সালের আগেও কোনভাবেই মাহদীর আগমন হতে পারে না। যারা দাবি করবে তারা মিথ্যাবাদী।

 

১১। পবিত্র কাবা শরীফে হত্যাকাণ্ড

১৪০০ হিজরীতে ইমাম মাহদীকে কেন্দ্র করে লোকজন জড়ো হবে।
-       (রিসালাত আল খুরুজ আল মাহদী, পৃষ্ঠা ১০৮)

অর্থাৎ ১৪০০ হিজরী বা ১৯৭৯ সাল। ১৯৭৯ সালে হজ্জের সময় জুহাইমান আল কুতাইবি নামে এক ব্যক্তি তার শ্যালক কে ইমাম মাহদী হিসাবে পরিচিত করে পবিত্র কাবা শরীফ ১৫ দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। তারপর পাকিস্তান ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদেরকে হত্যা করা হয়। (সূত্রঃ Wikipedia)

হযরত তাবে (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আশ্রয়প্রাথী আচিরেই মক্কার নিকট আশ্রয় চাইবে। কিন্তু তাকে হত্যা করে দেওয়া হবে। অতঃপর মানুষ এক বুরহা সময় বসবাস করবে। অতঃপর আরেকজন আশ্রয় চাইবে। যদি তুমি তাকে পাও তাহলে তোমরা তাকে আক্রমন করিও না। কেননা সে ধসনেওয়ালা সৈন্যদলের একজন সৈন্য। (অর্থাৎ যারাই তাকে আক্রমণ করতে যাবে, তারাই মাটির নিচে ধ্বসে যাবে)
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩৫)

এখানে এক বুরহা সময় কাল বলতে, ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন ৩৩ থেকে ৪০ বছর বা, এবং ৬০ বছরকেও বুরহা বলা যায়, তার বেশি কিছু সময়। তবে ৪০ বেশি প্রসিদ্ধ।

সুতরাং ১৯৭৯+৪০=২০১৯+আরো কিছু সময়। হতেই পারে তা ২০২৮। এছাড়াও আরো অনেক ছোটখাটো প্রমাণ রয়েছে ২০২৮ এর ব্যাপারে।

কত বছর বয়সে আত্মপ্রকাশ করবেন?

বিভিন্ন হাদিস ও সূত্র থেকে এটি জানা যায় যে, ইমাম মাহদী যখন আত্মপ্রকাশ করবেন তখন তার বয়স ৪০ বছর হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদী বের হবে আর তখন সে হবে চল্লিশ বছরের এক জন ব্যক্তি। কেমন যেন সে একজন বনী ইসরাঈলের ব্যক্তি।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৬৭ [পথিক প্রকা: ১০৬৪; তাহকীক: যঈফ])

...আর তাকে প্রেরণ করা হবে আর তার বয়স হবে ত্রিশ হতে চল্লিশের কোঠায়।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৭৩ [পথিক প্রকা: ১০৭০; তাহকীক: যঈফ])

তিনি কোন এলাকার অধিবাসী হবেন?

মুহাম্মদ ইব্‌ন মুছান্না (রহঃ) .... নবী -এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রা:) সূত্রে বর্ণিত। নবী বলেনঃ জনৈক খলীফাহর মৃত্যুকালে মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। এ সময় মদীনাবাসী জনৈক ব্যক্তি পালিয়ে মক্কায় চলে যাবে।... (সংক্ষিপ্ত)
-       (যঈফ, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত/ আলবানী একাঃ) ৪২৮৬ [ইঃ ফাঃ ৪২৩৭]; মুসনাদে আহমাদ)
-       (আল মুজামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মুজামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)

-       ১। মদিনাবাসী থেকে এই বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তিনি আত্মপ্রকাশ পর্যন্ত মদিনাতে অবস্থান করবেন। কিছু জায়গায় হিজাজ শব্দও এসেছে।

এছাড়াও আরো অনেক হাদিস রয়েছে যাতে তার জন্মস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে যেমন আল ফিতানের ১০৬৯, ১০৭০ নং হাদিস এবং আরো বিভিন্ন মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ