৩.৯ গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিসগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা

 আমাদের পরিচিত হিন্দুস্তানের যুদ্ধ নিয়ে হাদিসগুলো ব্যাখ্যা করলে পাওয়া যায় যে এই যুদ্ধ আরো অনেক পরে হবে ইমাম মাহদী এর প্রকাশের অনেক পরে ও ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছু সময় আগে। আবার ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মুশরিকদের সাথে আমাদের একটি যুদ্ধ খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘটতে যাচ্ছে। আসলে সঠিক কোনটি? এই সমস্যার ব্যাখ্যা কী?

সূনানে তিরমিজি এর হাদিসে বলেছে খুরাসানের দিক হতে কালো পতাকাবাহী দল বের হবে এবং তাদের মুকাবিলা কেউ করতে পারবে না, আর সেই পতাকা ইলিয়ায় তথা বাইতুল মুকাদ্দাসে উড়ানো হবে। অর্থাৎ খুরাসান থেকে দল বের হয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে যাবে এবং বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় করবে। আবার কিতাবুল ফিতানের আবু হুরায়রার (রা:) খুবই পরিচিত হাদিসে বলা আছে যে উম্মতের একদল লোক হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে ও বিজয়ী হবে এবং সেখানে রাজা বাদশাহদের শিকল পড়িয়ে ফেরত নিয়ে যাওয়া হবে এবং শামে ফেরত যাবে ও সেখানে ঈসা (আঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করবে। তাহলে আগে পূর্বদিক তথা খুরাসান, হিন্দুস্তান বিজয় হবে যার সৈন্যদল পাঠাবে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকেই? নাকি হিন্দুস্তান, খুরাসান বিজয় হয়ে সৈন্যদল বাইতুল মুকাদ্দাস যাবে সেই বিজয় করতে? হাদীছগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী? সেটাই বুঝানোর চেষ্টা করা হবে।

আমরা যখনই এই ভবিষ্যৎবাণী করা মর্যাদাপূর্ণ যুদ্ধের বিষয়ে ভাবি তখনই আমরা আবু হুরায়রাহ রাঃ এর হাদিস মনে করি। তার এই যুদ্ধে অংশগ্রহনের কথা চিন্তা করি ও তাতে তার জান-মাল দেওয়ার কথার প্রশংসা করি। সুনানে নাসাঈতে হিন্দুস্তানের যুদ্ধ নিয়ে ৩টি হাদিস আমাদের খুবই পরিচিত আর নুয়াইম বিন হাম্মাদ এর আল ফিতান গ্রন্থের হিন্দুস্তানের যুদ্ধ অধ্যায় এর কতেক হাদিস আমাদের পরিচিত। কিন্তু বইয়ের এই পরিচ্ছেদে এই হাদিসগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়ার কি এমন বিষয় আছে যা জানা আমাদের জন্য জরুরী? সেটাই এখানে যত সংক্ষেপে ও সহজ করে বুঝানো যায় তার চেষ্টা করবো।

মানুষের মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা যায় তা সাধারনত তিন ধরনের হয়ে থাকে। এটা সাধারণ মুসলিমদের মাঝেও হয়ে থাকে। যথাঃ

১। ছাড়াছাড়ি   ২। মধ্যমপন্থা ও     ৩। বাড়াবাড়ি

হিন্দের যুদ্ধ নিয়েও সাধারণ মুসলিমদের ভিতরে এরকম তিন ধরনের মতই পাওয়া যায়।

এক প্রকার হচ্ছে যারা মনে করে এই যুদ্ধ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর কোন যুদ্ধ হবে না বা হিন্দের যুদ্ধ হবে না। তারা এটি মনে করে তার কারণ তাদের হাদিসের অপব্যাখ্যা বা স্বার্থকেন্দ্রিক কোন বিষয়। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুসারে ভবিষ্যতে এই উপমহাদেশে এরকম একটি জিহাদ হবে এটি বলা মানে সে উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী বা উগ্রবাদী। আবার হিন্দুস্তানের যুদ্ধ নিয়ে হাদিস দেখলেও তাকে জঈফ-জাল বলে উপেক্ষা করে। আর অনেকে হিন্দের যুদ্ধের বিষয়ে নীরব থাকে বা বললেও উল্টা ব্যাখ্যা করে থাকে নিজেদের স্বার্থে। অনেকে হাদিসের যুক্তিও দেয় যে, এই যুদ্ধ আরো আগেই হয়ে গেছে। তাদের জন্য আফসোস করা ছাড়া উপায় নেই।

আরেক মুসলিম দল মনে করে এটি হয়নি তবে ভবিষ্যতে হবে কিন্তু তা আরো অনেক পরে। এর পক্ষে তারা আমাদের পরিচিত সুনানে নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ও আল ফিতান গ্রন্থের হিন্দের যুদ্ধ নিয়ে আবু হুরায়রা (রা:) এর হাদিস পেশ করে বলে যে, এই যুদ্ধটি যখন হবে তখন মুজাহিদরা ঈসা (আঃ) এর সাথে সাক্ষাতের অনেক কাছে থাকবে। আর স্বাভাবিক ভাবেই সবারই একই মত, ইমাম মাহদী এর আগমনের আগে তো আর ঈসা (আঃ) আসবেন না। তাহলে এই যুদ্ধ ইমাম মাহদী এর আগমনের পরেই হবে। আর হাদিস অনুযায়ী ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছু আগে হবে। আর তখন যে কেউই বলবে যে হ্যা, এই যুদ্ধ হতে আরো অনেক দেরি আছে এবং ইমাম মাহদী এর আগমনের পরে বা আরো অনেক পরে হবে। কিছু মুসলিমরা মনে করে ইমাম মাহদীর নেতৃত্বেই এই হিন্দের যুদ্ধ সংঘটিত হবে। কিন্তু হিন্দের যুদ্ধ নিয়ে যে আরো অনেক হাদিস রয়েছে তা ৯০% মুসলমানদেরসহ বেশির ভাগ আলেমদেরই অজানা। সেগুলো দেখলে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো যে, হিন্দুস্তানের যুদ্ধ আসলেই কোন সময়ে সংঘটিত হবে, কার নেতৃত্বে হবে আর তখনকার প্রেক্ষাপট কেমন হবে। আমাদের বহুল পরিচিত বর্ণিত হাদিসগুলি আসলেই কোন সময়ের তা নিচে ব্যাখ্যাতে তুলে ধরা হবে।

আর সর্বশেষ আরেক প্রকার মুসলিম জামায়াত মনে করে যে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এটি আমাদের একদমই সামনে। আর কিছু বছরের মধ্যেই এই হিন্দুস্তানে মুসলিমদের সাথে মুশরিকদের একটি যুদ্ধ হবে বা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি, যখন দেখতে পায় হিন্দের মুশরিকরা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তখন তো আরো নিশ্চিত হয়ে যায়। তারা হাদিস থেকে বলতে চাইলেও সেই অতি পরিচিত হাদিসকেই ইঙ্গিত করে কিন্তু সেই হাদিস ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, হাদিসে যেই যুদ্ধের কথা বলেছে সেই যুদ্ধ আরো পরে বা ইমাম মাহদী এর আগমনের অনেক পরে হবে এবং ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছু আগে হবে। তারা জানে যে সামনে একটি যুদ্ধ রয়েছে এই হিন্দুস্তানের, কিন্তু হাদিস থেকে মিলাতে পারে না যে এটি কোন সময়, কিভাবে হবে। এছাড়া হিন্দুস্তানের যুদ্ধ নিয়ে অন্য হাদিসগুলো না জানার কারণে তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এক কথায় বলতে আবু হুরায়রাহ (রা:) এর হাদিসের বলা সময়ের হিন্দের যুদ্ধ আর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট যেন একদমই মিলছে না।

আসলে এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর মতবিরোধের সমাধান কি? সঠিক ব্যাখ্যা কোনটি? কোন সময়ে এই হিন্দের যুদ্ধ সংঘটিত হবে? কার মাধ্যমে হবে? কিভাবে হবে? প্রথমেই এর উত্তর দেওয়ার আগে সেই অতি পরিচিত হাদিসগুলো দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কোন সময়ের।

১। আহমদ ইবন উছমান ইবন হাকিম (রহঃ) ... আবু হুরায়রা (রা:) বলেনঃ রসূলুল্লাহ আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদের ওয়াদা দিয়েছিলেন। যদি আমি ঐ যুদ্ধের সুযোগ পাই, তা হলে আমি তাতে আমার জান-মাল ব্যয় করব। আর যদি আমি তাতে নিহত হই, তাহলে আমি শহীদের মধ্যে উত্তম সাব্যস্ত হব। আর যদি আমি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবু হুরায়রা হবো আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত।
-       (যঈফ, সূনান নাসাঈ ৩১৭৩ [ইঃ ফাঃ ৩১৭৬]; মুসনাদে আহমদ ২/২২৯; আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ, ইবনে কাসির ১০/১৯)
-       একই রকম বর্ণনাঃ সুনানে নাসাঈ ৩১৭৪ [ইঃ ফাঃ ৩১৭৭] নং হাদিসেও।
-       নুয়াইম বিন হাম্মাদের আল ফিতান গ্রন্থের ১২৩৭ নং হাদিসেও একইভাবে এসেছে।

২। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ একদা হিন্দের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তোমাদের পক্ষ থেকে একদল সৈন্য হিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে আল্লাহ তাআলা হিন্দের বিপক্ষে তোমাদেরকে জয়লাভ করাবেন। তাদের নেতা-রাজাদের শিকল দ্বারা বেঁধে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা তাদের (যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের) যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর যখন সেই বিজয়ী মুসলিমরা (শামে) ফিরে আসবে তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে (শামে) সিরিয়াতে পাবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) উল্লিখিত হাদীস বর্ণনার পর বলেন, আমি যদি হিন্দের সেই যুদ্ধ পাই তাহলে আমি আমার নতুন ও পুরাতন সকল সম্পদ বিক্রি করে দেবো এবং তাতে অংশগ্রহণ করবো। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিজয় দান করবেন এবং আমি ফিরে আসবো, তখন আমি এক (জাহান্নাম হতে) মুক্ত আবু হুরায়রা হয়ে ফিরে আসবো। যে সিরিয়াতে এমন মর্যাদা নিয়ে ফিরে আসবে, সে সেখানে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে পাবে। হে আল্লাহর রসূল ঐ সময় আমার একান্ত ইচ্ছে হলো, যে আমি তাঁর নিকট পৌঁছে তাঁকে বলবো, যে আমি আপনার সাহাবী। (বর্ণনাকারী বলেন) নবীজী আবু হুরাইরা (রা:) এর একথা শুনে মুচকি হাসলেন এবং হাসি দিয়ে বললেন, অনেক কঠিন (অনেক দূর) বা ভালো ভালো।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৬ [পথিক প্রকা: ১২৩২; তাহকীক: যঈফ])

৩। হজরত সাফওয়ান ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত এবং হুকুমের দিক থেকে মারফু দরজার অন্তর্ভূক্ত। তিনি বলেন, তাকে কিছু লোকে বলেছেন, নবীজী বলেছেন, আমার উম্মতের একদল লোক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয়ী করবেন। এক পর্যায়ে তারা ভারতের রাজা-নেতাদের শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তারা শামের দিকে ফিরে যাবে। অতঃপর শাম দেশে হযরত ঈসা (আঃ) কে পেয়ে যাবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৯ [পথিক প্রকা: ১২৩৫; তাহকীক: যঈফ])

৪। হজরত কাব (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের এক বাদশাহ হিন্দের দিকে একটি বাহিনী পাঠাবে। মুজাহিদগণ হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করে তাদের যাবতীয় সম্পদের উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। অতঃপর ঐ বাদশাহ সেই ধনভান্ডারকে বাইতুল মুকাদ্দাসের সংস্কার ও সৌন্দর্যের কাজে ব্যয় করবে। সেই বাহিনী হিন্দুস্তানের নেতাদেরকে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে ঐ বাদশাহর সামনে উপস্থিত করবে। তখন প্রায় গোটা পৃথিবী তার শাসনের অধীনে থাকবে (অর্থাৎ তিনিই মুসলিমদের আমীর থাকবেন)। ভারতে তাদের অবস্থান দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত থাকবে।
-       এই বর্ণনাটি ইমাম বুখারী রহ.- এর উস্তাদ নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ রহ. তার কিতাবুল ফিতানে বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে হজরত কাব (রা:) থেকে বর্ণনা করার বর্ণনাকারীর নাম নাই। এজন্য এই হাদিসটি বিচ্ছিন্ন হাদিসের অন্তর্ভূক্ত। [আল-ফিতান; গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়, ১/৯০৪, হাদিস নং ৩৫২১]
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৫ [পথিক প্রকা: ১২৩১; তাহকীক: যঈফ])

৫। হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত ইয়ামানী খলীফার নেতৃত্বে কুস্তুনতুনিয়া (ইস্তাম্বুল) এবং রোমানদের (কায়সার সম্রাটের শহর ইউরোপ) এলাকা বিজয় হবে। তার যুগে দাজ্জালে আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) আগমন করবেন। তার আমলে ভারতের যুদ্ধ সংগঠিত হবে, যে যুদ্ধের কথা হযরত আবু হুরায়রা বলে থাকেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৮ [পথিক প্রকা: ১২৩৪; তাহকীক: সহীহ])

উপরের উল্লিখিত হাদিসগুলো আমাদের সকলেরই খুব পরিচিত। হিন্দুস্তানের যুদ্ধের কথা বললেই এই হাদিসগুলো উল্লেখ করে থাকি। এখন এই হাদিস থেকে ব্যাখ্যা করে আমাদের কিছু তথ্য জানা দরকার যে, এই হাদিসগুলি কোন সময়ে ঘটবে। এই হাদিসগুলি বাস্তবায়নের আগে ও পরে কি ঘটবে এবং আগে-পরের অবস্থা কেমন থাকবে।

উল্লিখিত হাদিসগুলোর ব্যাখ্যাঃ

১। আবু হুরায়রার (রা:) প্রথম হাদিস থেকে বুঝা যায় হিন্দুস্তানের যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের নবী এর ভবিষ্যৎবাণী এবং সাহাবী আবু হুরায়রার (রা:) এর সেই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ও সেই যুদ্ধের রসূল কর্তৃক বর্ণিত মর্যাদা পাওয়ার ইচ্ছা। এতে আর কোন সময় বা ঘটনাকে ইঙ্গিত করে নি।

২। আবু হুরায়রার (রা:) এর দ্বিতীয় বর্ণিত লম্বা হাদিস থেকে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায়-

·         তোমাদের একদল ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে। অর্থাৎ তারা অন্য কোথাও থেকে আসবে এবং সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করবে।

·         সেই যুদ্ধে বিজয় হবে এবং সেখানকার রাজাদের, নেতাদের শিকল বা বেড়ি পড়িয়ে নিয়ে বাইতুল মোকাদ্দাসে ফেরত নিয়ে যাবে। অর্থাৎ, এই সৈন্য দল সেখান থেকেই আসবে তারা যুদ্ধ করে আবার আগের স্থানে ফেরত যাবে।

·         এরপর তারা ফিরে গিয়ে ঈসা (আঃ) কে পাবে। আবু হুরাইরাহ (রা:) শাম নগরীতে ফেরত আসার পর এই সাক্ষাৎটি পাওয়ার আশা করেছেন।

৩। আবু হুরায়রার (রা:) এর তৃতীয় বর্ণিত হাদিস থেকে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায়-

·         একদল লোক হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে ও বিজয়ী হবে।

·         তারা ভারতের রাজা-নেতাদের শিকল বা ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে নিয়ে যাবে এবং শামে ফিরে যাবে। অর্থাৎ সেখান থেকেই তারা এসেছিল।

·         শামে গিয়ে তারা ঈসা (আঃ) কে পেয়ে যাবে।

৪। কাব (রা:) এর বর্ণিত হাদিস থেকে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায়-

·         বাইতুল মুকাদ্দাসের এক বাদশাহ হিন্দের দিকে একটি বাহিনী পাঠাবেন। অর্থাৎ সেখান থেকেই এই দলের আগমন হবে।

·         মুজাহিদরা যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে তাদের সম্পদ দখল করবে এবং ঐ সম্পদ বাইতুল মুকাদ্দাসের জন্য সেই বাদশাহ ব্যয় করবেন।

·         আটক করা হিন্দের নেতা-রাজাদের বাইতুল মুকাদ্দাসে সেই বাদশাহর সামনে উপস্থিত করা হবে। তিনি তখন পৃথিবীতে মুসলিমদের আমীর থাকবেন।

·         ভারতে তাদের অবস্থান দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত থাকবে।

৫। হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসেও একই বিষয়ই এসেছে।

উপরোক্ত ৫টি হাদিস দেখে আমরা এতটুকু বুঝতে পারছি যে, ভারতে মুসলিম জামাতের একটি দলকে প্রেরণ করা হবে শাম থেকে আর তা পাঠাবেন বাইতুল মুকাদ্দাসের এক বাদশাহ বা আমীর। তারা সেখানে যুদ্ধ করে তাতে বিজয়ী হবে ও সেখানের নেতাদের বা রাজাদের শিকল পড়িয়ে আবার শামে ফেরত যাবে বা বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাবে। আর সেখানে ঈসা (আঃ) এর সাথে দেখা হবে। কারণ হাদিসে এসেছে তাদের অবস্থান হবে দাজ্জাল বের হওয়ার আগ পর্যন্ত। যখন সবাই শুনবে যে, দাজ্জাল বের হয়েছে আর প্রথম সংবাদটি হবে গুজব কিন্তু পরক্ষনেই সত্যি সত্যি দাজ্জাল বের হবে এবং তারা শামে গিয়ে ঈসা (আঃ) কেই পেয়ে যাবে।

তাহলে বুঝা যায় যে, এই হাদিসগুলো অনুসারে হিন্দের যুদ্ধটি ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছু আগেই সংঘটিত হবে। আর ইমাম মাহদীর আগমনের অনেক পরে হবে। এটাই এই হাদিসগুলির সঠিক ব্যাখ্যা। আর এটি হবে আরো অনেক পরেই। হয়তো এটা জেনে যারা জিহাদ বিরোধী বা যুদ্ধ চায় না তারা বলবে এটা অনেক পরেই হবে এখন কোন যুদ্ধ বা জিহাদ নেই। আর হিন্দুস্তানের জিহাদ তো আরো দূরে। আর সাধারণ মুসলিমরা এটা জেনে ভাববে, আমরা আজ অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হচ্ছি, তাহলে আমরা কবে মুক্তি পাবো, কিভাবে মুক্তি পাবো এই জালিমের জুলুম থেকে যা এই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা আমাদের উপর করে যাচ্ছে আর দিন দিন তার মাত্রা বেড়েই চলছে?

হাদিসের বাস্তবায়ন হতে যেগুলো দরকার তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাইতুল মুকাদ্দাসের বাদশাহ হিন্দের দিকে মুজাহিদ পাঠাবেন, অথচ দেখতে পাচ্ছি তা এখন ইহুদীদের দখলে, মুশরিকদের দখলে। সেরকম কোন শক্তিশালী নেতারও খোজ নেই যিনি সেখান থেকে হিন্দের জন্য মুজাহিদ বাহিনী পাঠাবেন আর যিনি বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী কাফির-মুশরিক দেশের বাঁধা না মেনে এটি করতে পারবেন। আবার হাদিসে বলা হয়েছে যে-

আবূ হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: খুরাসানের দিক হতে কালো পতাকাবাহীগণ আবির্ভূত হবে (মাহ্দীর সর্মথনে)। অবশেষে সেগুলো ইলিয়া (বায়তুল মাকদিস)-এ স্থাপিত হবে এবং কোন কিছুই তা ফিরাতে পারবে না।
-       (জামে' আত-তিরমিজি ২২৬৯; মুসনাদে আহমাদ ৮৭৬০)

তাহলে কোনটি আগে হবে? পূর্বদিক থেকে মুজাহিদ বাহিনী বাইতুল মুকাদ্দাসে যেয়ে সেটি আগে বিজয় করবে নাকি সেখান (শাম) থেকে মুজাহিদ বাহিনী এসে হিন্দ বিজয় করবে?

এছাড়াও, উপরে আমরা যে হাদিসগুলো দেখলাম ও ব্যাখ্যা করলাম, তাতে আমরা অনেকগুলো বিষয় পাইনি যেমন- এই যুদ্ধটি কার মাধ্যমে হবে। শাম থেকে এই দলকে কে পাঠাবে। আর এই মুশরিক রাজা-নেতারাই বা আসলে কারা। সেই মর্যাদাপূর্ণ যুদ্ধ যখন হবে তখন আমরা কিভাবে, কার মাধ্যমে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবো তাও বলা নেই। সেগুলো তো আমাদের জানা উচিত। আর আমাদের শেষ নবী অবশ্যই এই বিষয়ে আরো কিছু তো অবশ্যই বলে যাওয়ার কথা, তাই নয় কি? হাদিসে এসেছে-

হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যাপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ (মূর্তি পূজারীদের) মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সূরা ইব্রাহিম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলঃ হে আল্লাহর রসূল ! তাহলে মানুষ দাজ্জালকে দেখবে কখন? তিনি বললেন, যখন জাহজাহ পৃথিবী শাসন করবে তখন হিন্দুস্তান আবারও ইহুদীদের দখলে যাবে। আর তখন বায়তুল মুকাদ্দিস মুসলমানরা শাসন করবে। আর সেখান থেকে জাহজাহ কালোপতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)

হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, রসূলুল্লাহ বলেছেন, খুব শীঘ্রই হিন্দুস্তানের মুশরিকদের পতন হবে। আর তা হবে এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে। আর তার নাম হবে মাহমুদ। আল্লাহ তার মাধ্যমে হিন্দুস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। অতঃপর তার মৃত্যুর পর তার এক প্রতিনিধির ইহুদীদের সাথে শান্তি চুক্তি হবে এবং ইহুদীরা হিন্দুস্তানের একটি অঞ্চল দখলে নেবে। সাহাবীগণ বলল, হে আল্লহর রসূল তারা কী শান্তি চুক্তি রক্ষা করে সেখানে বসবাস করবে? তিনি (রসূল ) বললেন, না। বরং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে প্রতারণা করে হিন্দুস্তান দখলে আনবে এবং সেখানে বসবাস করবে। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! মুসলমানগণ কি তাদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, করবে। সে সময় মাহমুদের প্রতিনিধি বিশ্ব শাসকের নিকট সে ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে একটি পত্র পাঠাবে। তখন শাসক বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সেখানে (হিন্দে) একদল সেনা পাঠাবে এবং আবার ইহুদীদের পরাজিত করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫৩৮, ১৭০৩; কিতাবুল আক্বিব ১৩৭)

হযরত বিলাল ইবনে বারাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুসলমানরা শাসন করবে। আবার তা মুশরিকরা দখল করবে এবং তারাই সেখানে তাদের সকল হুকুম প্রতিষ্ঠা করবে। আবার তা মুসলমানরা বিজয় করবে যাদের নেতা হবে মাহমুদ এবং সেখানে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কিন্তু লা'নত ইহুদিদের প্রতি। একথা বলে তিনি (রসূল ) রাগন্নিত হয়ে গেলেন। তার চেহারায় রক্তিম চিহ্ন প্রকাশ পেল। সাহাবীগণ তাদের কন্ঠ নিচু করে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! সেখানে ইহুদিদের কর্ম কী? তিনি বললেন, অভিশপ্ত জাতিরা মাহমুদের এক জন প্রতিনিধির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং সেখানকার একটি অঞ্চল তাদের দখলে নেবে। সাহাবীগণ বললেন, তখন কী তারা (মুসলমানরা) অভিশপ্ত জাতিদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, হ্যাঁ করবে। আর তাদের সাহায্য করবে বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) একজন বাদশা।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৮; কিতাবুল আক্বিব ১৩৮)

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুশরিকদের থেকে মুমিনরা বিজয় করবে। আর তাদের নেতা হবে মাহমুদ। হিন্দুস্তানে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। আর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। তখন শামীম বারাহ আল্লাহর হুকুমত অটল রাখবে এবং তার মৃত্যুর পর সুশৃঙ্খল ভাবে চলতে থাকবে। এমন সময় এক প্রতিনিধির সাথে ইহুদীদের চুক্তি হবে এবং একটি অঞ্চলে তারা বসবাস করবে। অতঃপর, ইহুদীরা চুক্তি ভঙ্গ করে হিন্দুস্তান দখলে নেবে। তখন বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) বাদশা ইহুদীদের পরাজিত করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৯; কিতাবুল আক্বিব ১৪০)

উপরের হাদিসগুলো থেকে সহজেই বুঝতে পারি যে, ইমাম মাহদীর আগমনের আগে ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে হিন্দুস্তান বিজয় হওয়ার পর ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পরে অন্য খলীফা বা শাসকের খিলাফতকালে আবারো একবার হিন্দুস্তানের কিছু ভূখণ্ড ইহুদীদের কব্জায় যাবে। তখন বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) বাদশা সৈন্যদল পাঠাবে ও হিন্দুস্তান আবারো দখল করা হবে এবং সেই সময়টি ঈসা (আঃ) এর আগমনের খুব কাছে থাকবে। কিতাবুল ফিতানের আবু হুরায়রা (রা:) এর হাদিসগুলো এই যুদ্ধকেই ইঙ্গিত করে থাকে।

এই হিন্দ নামক স্থানে আগেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। তবে হাদিস থেকে পাওয়া যায়, ভবিষ্যতে আরো দুইবার এই হিন্দুস্তানে যুদ্ধ হবে। প্রথমটি হবে মুশরিক মূর্তিপূজারীদের বিরুদ্ধে ও তাদের চূড়ান্ত পতনও এই যুদ্ধের কারণেই হবে। যা হিন্দুস্তান থেকে মুশরিক মূর্তিপূজারীদের চিরতরে উৎখাত করে দিবে, ঠিক হুবহু সেরকম, যেমনভাবে বলা আছে শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ এর কাসিদাতে ও আশ-শাহ্‌রান এর আগামী কথন নামক ইলহামী কবিতাতে। আর তা খুবই কাছে এবং বর্তমান যারা শাসক আছে তাদের সময়তেই হবে। হাদিসে এসেছে-

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অবশ্যই অবশ্যই পৃথিবী ততদিন ধ্বংস হবে না যতদিন না মানুষ পাঁচজন শাসকের দেখা পাবে। যারা আল্লাহর দ্বীনকে যুক্তি করে ধ্বংস করতে চাইবে। আর তারা পাঁচ শাসকই এক সাথে পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে। আমি (আবু হুরায়রা) বললামঃ হে আল্লাহর রসূল ! সে পাঁচজনের পরিচয় কী? তিনি বললেনঃ তাদের একজন এই পবিত্র ভূমিতে আসবে। যার নাম হবে আমার নামের মতো (মুহাম্মাদ)। সে আরবের দ্বীনকে হাস্যকর বানাবে। আর অভিশপ্ত (ইহুদী-খ্রিষ্টান) জাতিকে বন্ধু বানাবে। দ্বিতীয় সে বিশ্ব শাসক হবে। আর মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবে। তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)

হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) বলেন, একদা এক মজলিসে আল্লাহর রসূল এর নিকট সাহাবাদের একজন জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল ! আপনার বংশের মাহদীর আগমন কখন হবে? তিনি বললেন, ততদিন মাহদীর আগমন ঘটবে না, যতদিন না পাঁচ শাসকের ধ্বংস হবে। আর তারা একই সময়ের শাসক হবে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কোন দেশের শাসক হবে? তিনি বললেন তাদের একজন আরব ভূমি শাসন করবে। আর একজন নাসারা বিশ্ব শাসন করবে। আর তিনজন হিন্দুস্তান ভূখন্ডের হবে। তাদের একজন হবে নারী। বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল , হিন্দুস্তানের শাসকরা কী মুসলমান হবে? তিনি বললেন, না বরং একজন মুসলিম নারী শাসক হবে। কিন্তু তার সকল কর্ম হবে মুশরিকদের নিয়ে।
-       (কিতাবুল আক্বিব ২৯৮)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের আদেশ দিয়েছেন মুশরিকদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না অথচ এমন একটি সময় আসবে যখন মুসলমান অঞ্চলের দুইটি শাসক মুশরিকদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল তাদের চেনার উপায় কী? তিনি বললেন, তাদের একজন তোমাদের ভূমির হবে, আর তার নাম হবে আমার নামের নেয় (মুহাম্মাদ) আর একজন হলো নারী, হিন্দুস্তানের ক্ষুদ্র অঞ্চলের শাসক হবে। আর তারা দুজন একই সময়কালের শাসক হবে।
-       (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৯৬)

এই সকল হাদিসগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, হিন্দের যুদ্ধ কোন সময়ে, কিভাবে ও কার নেতৃত্বে হবে। আমাদের সামনে যে হিন্দের যুদ্ধ অপেক্ষমান তার নেতার ব্যাপারে বলা হয়েছে শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) এর কাসিদা ও আশ-শাহ্‌রান এর আগামী কথনে যে, সেই নেতা হবেন হাবীবুল্লাহ ও সাহেবে কিরান। আর ইমাম মাহমুদ এর উপাধিই হচ্ছে হাবীবুল্লাহ। হাদিসে এসেছে-

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের উপরে খুবই অত্যাচার করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল হতে একটি মুসলিম জামাতের প্রকাশ ঘটবে। যাদের পরিচালনা করবে একজন দুর্বল বালক। যার নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ। তিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের পর কাবার দিকে ধাবিত হবে। আমি (আবু হুরায়রা) জিজ্ঞেস করলাম, "হে আল্লাহর রসূল , সে কাবার দিকে ধাবিত হবে কেন? সেই সময় কি বাইতুল্লাহ ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দখলে থাকবে?" তিনি বলেন, না। বরং সে আল্লাহর খলীফা মাহদীর হাতে বাইয়াত নিতে আসবে।

-   (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ ২৩১; কিতাবুল আক্বিব ১২৫৬; ক্বাশ্ফুল কুফা ৭৩২; আল আরিফুল ফিল ফিতান ১৭০৩)

অতএব হিন্দের এই যুদ্ধটি ইমাম মাহদীর আগমনের আগেই সংঘটিত হবে। আর হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি ইমাম মাহদী এর আগমনের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় সাল ১৪৫০ হিজরি বা ২০২৮ সাল। এই যুদ্ধটি হবে ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে যিনি হচ্ছেন কালো পতাকাবাহী দলের নেতা। যার মাধ্যমে এই হিন্দুস্তান বিজয় হবে এবং ততক্ষণ পর্যন্ত খোরাসানী উপাধি লাভ করবে না যতক্ষণ না এই হিন্দুস্তান ইরান পর্যন্ত বিজয় না করবে। আর তখনই কালো পতাকা নিয়ে এই খোরাসানীরা বের হয়ে আরবে যাবে ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায়। হাদিসে এসেছে-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেন, পূর্বদিক থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে।

অন্য অনুবাদে এসেছে- প্রাচ্য দেশ থেকে কতক লোকের উত্থান হবে এবং তারা মাহ্দীর রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে।
-       (যঈফ, সহীহুল মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদিস নং ২৮৯৬; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ৩, তাঃ পাঃ ৪০৮৮; যইফাহ ৪৮২৬, যইফ আল-জামি' ৬৪২১)
-       এ বিষয়ে সহীহ হাদিসও থাকায় এটিকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

যুদ্ধটি কবে কখন হতে পারে তার পরিস্থিতি এখন আমরা স্বচক্ষে দেখতেই পাচ্ছি। যা আমাদের খুবই নিকটে! আর ভবিষ্যতে আরেকবার ইমাম মাহদী, ইমাম মাহমুদ ও ইমাম মানসূর এর মৃত্যুর পর বাইতুল মুকাদ্দাসের বাদশাহ ইমাম জাহজাহ এর খিলাফত কালে কিছু বেঁচে যাওয়া ইহুদীরা, যারা ইমাম মাহমুদ এর এক প্রতিনিধির সাথে চুক্তির মাধ্যমে হিন্দুস্তানে বসবাস করতেছিল তারা চুক্তি ভঙ্গ করবে, মুসলিমদের উপর অত্যাচার শুরু করবে ও হিন্দ এর কিছু এলাকা দখল করবে। মূলত যখন কালো পতাকাবাহী সৈন্যরা বাইতুল মুকাদ্দাসে বিজয় অর্জন করবে তখন সেখানকার ইহুদীরা পরাজিত হয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবে, সেখানে কোন ইহুদী আর থাকবে না। কিছু বেঁচে যাওয়া ইহুদীরা হিন্দুস্তানের একটি এলাকায় চুক্তির মাধ্যমে থাকবে এবং পরে সেই চুক্তিও ভঙ্গ করবে। তখন তাদের সাথে মুসলিমদের আরেকটি যুদ্ধ হবে। তখন বাইতুল মুকাদ্দাসের বাদশাহ ইমাম জাহজাহ সেখান থেকে কালো পতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং তারা ইহুদীদের পরাজিত করে হিন্দুস্তান আবারো দখল করবে। সেই যুদ্ধটিও হিন্দের এলাকাতেই হবে। আর তখন এইসকল ইহুদীদের ও তাদের নেতাদের শিকল পড়িয়ে সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে যারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। সেই সময়টি ঈসা (আঃ) এর আগমনের নিকটবর্তী সময়ে হবে। সেই সময়ের যুদ্ধের কথাই আবু হুরাইরাহ (রা:) এর হাদিসে উল্লেখ এসেছে। যেটি হতে আরো দেরি আছে, কারণ ভবিষ্যৎবাণী করা হিন্দুস্তানের প্রথম যুদ্ধই এখন পর্যন্ত সংঘটিত হয়নি। ভবিষ্যতের এই দুইটি হিন্দুস্তানের যুদ্ধই একই মর্যাদা রাখে যার কথা হাদিসে এসেছে। যারা এই হিন্দের যুদ্ধে থাকবে তাদের শহীদরা হবে উত্তম শহীদ ও গাজীরা হবে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। কিন্তু একটি শ্রেণীর মানুষ মনে করে যে, হিন্দের মর্যাদাপূর্ণ এই যুদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু, আমরা দেখতে পাচ্ছি, হাদিসের সময়-কাল যে সময়কে ইঙ্গিত করে আমরা সেই সময়তেই রয়েছি। একটি নয়, এই হিন্দুস্তানের দুইটি যুদ্ধই এখনো আমাদের সামনে রয়েছে। হাদিসে সেই বিষয়ে উল্লেখ এসেছে। হিন্দের যুদ্ধ হয়ে গেছে বলে তারা মুহাম্মাদ বিন কাসেম এর সময় যে যুদ্ধটি হয়েছে, সেটিকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে ইঙ্গিত করে। কিন্তু তার আগেও তো হিন্দের এলাকায় মুসলিমরা যুদ্ধ করেছে, এই হিন্দুস্তান উপমহাদেশ শাসন করেছে। তবে যেই হিন্দের যুদ্ধের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে সেগুলো এখনো হয়নি। আরেকটি বিষয় এই যে, সেগুলো সব হিন্দের যুদ্ধ নামেই ধরা হবে কারণ সেই সকল যুদ্ধ হিন্দ নামক এলাকাতে হয়েছে বলে। কারণ ইতিহাস থেকে দেখা যায়, জায়গার নামানুসারেই বেশির ভাগ যুদ্ধের নামকরণগুলো করা হয়। আর ইতিহাস বলে মুহাম্মাদ বিন কাসেম এর নেতৃত্বে যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটি সিন্ধের যুদ্ধ বা গাজওয়াতুল সিন্দ (غزوة السند)। তাকে সিন্ধু বিজয়ী উপনাম একারণেই দেওয়া হয়েছে। আর সিন্ধ বিজয়ের ব্যাপারেও একটি হাদিস পাওয়া যায় যেটি পূর্বেই হয়ে গেছে। কিন্তু হিন্দের মর্যাদাপূর্ণ যুদ্ধ এখনো বাকি।

তাহলে এটি সহজেই বুঝা যাচ্ছে সুনানে নাসাঈ এর হাদিস, কিতাবুল ফিতানের হিন্দুস্তানের যুদ্ধ অধ্যায় এর পরিচিত হাদিসগুলি ভবিষ্যতের দ্বিতীয় বারের হিন্দুস্তানের যুদ্ধের সময়কে বুঝাচ্ছে। আর মুশরিকদের সাথে ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধটি আমাদের সামনেই। সেই সময়কাল নিয়েও বর্ণিত হাদিসগুলো আমরা উপরে উল্লেখ করেছি। এটি জানার পর হয়তো হিন্দের যুদ্ধ নিয়ে আমাদের মধ্যে আর কোন মতবিরোধ বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না ইংশাআল্লাহ। আর যেহেতু হিন্দুস্তানের যুদ্ধটি একদম সামনেই তাই আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ