কালো পতাকা নিয়ে আমাদের রয়েছে এক নতুন আশা। কারণ এই পতাকাটিই হবে ইমাম মাহদীর সাহায্যকারী দলের চিহ্ন এবং তারাই ইমাম মাহদীর কাছে বাইয়াত নিতে যাবে। এই দলের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য হাদিসে খুব কঠিনভাবেই বলেছে। যেমন হাদিসে এসেছে-
আবূ হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: খুরাসানের দিক হতে কালো পতাকাবাহীগণ আবির্ভূত হবে (মাহ্দীর সর্মথনে)। অবশেষে সেগুলো ইলিয়া (বায়তুল মাকদিস)-এ স্থাপিত হবে এবং কোন কিছুই তা ফিরাতে পারবে না।
- (সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৯ [ইঃ ফাঃ ২২৭২]; মুসনাদে আহমাদ ৮৭৬০)
প্রাচ্যদেশ (পূর্ব) থেকে কালো পতাকাধারী কতক লোক তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে। তারা কল্যাণ (খিলাফত) প্রার্থনা করবে, কিন্তু তা তাদের দেয়া হবে না। তারা লড়াই করবে এবং বিজয়ী হবে। শেষে তাদেরকে তা (খিলাফত) দেয়া হবে, যা তারা চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে আমার আহলে বাইত-এর একজন লোকের (ইমাম মাহাদীর) নিকট তা (খিলাফত) সোপর্দ করা হবে। সে পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে, যেমনিভাবে লোকেরা একে যুলুমে পূর্ণ করেছিলো। তোমাদের মধ্যে যারা সে যুগ পাবে, তারা যেন বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের নিকট চলে যায়।
- (যঈফ, সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৮২; রাওদুন নাদীর ৬৪৭; তারিখে তাবারী; আস সাওয়ায়িকুল মুহ্রিকাহ্, অধ্যায় ১১, উপাধ্যায় ১, পৃ. ২৫০-২৫১)
- উক্ত হাদিসের রাবী ১. মুআবিয়াহ বিন হিশাম সম্পর্কে আবুল ফারাজ আল-জাওযী বলেন, তার থেকে কেউ হাদিস শ্রবন করেনি তবে যারা হাদিস শ্রবন করেছে তারা তা বর্জন করেছে। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬০৬৭, ২৮/১২৮ নং পৃষ্ঠা); আরেক রাবি- (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৯৯১, ৩২/১৩৫ নং পৃষ্ঠা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, পূর্বদিক থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে।
- (সহীহ মুসলিম খণ্ড ৩, হাঃ ২৮৯৬; সুনানে ইবনে মাজাহ খণ্ড ৩, হাঃ ৪০৮৮)
সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের একটি খনিজ সম্পদের নিকট পরপর তিনজন খলীফার পুত্র নিহত হবে। তাদের কেউ সেই খনিজ সম্পদ দখল করতে পারবে না। অতঃপর প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকা উড্ডীন করা হবে। তারা তোমাদেরকে এত ব্যাপকভাবে হত্যা করবে যে, ইতোপূর্বে কোন জাতি তদ্রূপ করেনি। অতঃপর তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ আরও কিছু বলেছেনঃ যা আমার মনে নাই। তিনি আরো বলেনঃ তাকে আত্মপ্রকাশ করতে দেখলে তোমরা বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার সাথে যোগদান করো। কারণ সে আল্লাহর খলীফা মাহ্দী।
- (যঈফ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮৪; যইফাহ ৮৫; ইমাম আলবানী বলেনঃ ‘আল্লাহর খলীফা’ কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ)
সাওবান (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ ও বলেছেন: যখন তুমি খোরাসানের দিক থেকে কালো পতাকাবাহী সৈন্য আসতে দেখবে, তখন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে। কেননা তার মাঝে আল্লাহর খলীফাহ্ মাহদী থাকবেন। (আহমাদ ও বায়হাকী’র “দালায়িলুন্ নুবুওয়াহ্”) *
- (মুনকার যঈফ, মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৬১; মুসনাদে আহমাদ ২২৪১; দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্ ৬/৫১৬; ‘আলী ইবনু যায়দ য'ঈফ; য'ঈফাহ্ ৮৫; য'ঈফুল জামি' ৫০৬)
- * অন্যান্য সহীহ হাদিসে বলা হয়েছে কালো পতাকাধারীরা আরবে গিয়ে ইমাম মাহদী এর কাছে বায়াত নিবে আর এখানে বলা হয়েছে সেই কালো পতাকাবাহী দলেই থাকবে। এটা সহীহ হাদিস এর বিপরীত, তাই এটির মান মুনকার। যদি শাব্দিক অর্থ করা হয় خَلِيفَةَ اللَّهِ الْمَهْدِيَّ এর তাহলে হয় হেদায়েতপ্রাপ্ত বা সৎপথপ্রাপ্ত আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি। শেষ জামানায় যে সকল কুরাইশি খলীফাগণ আসবে তারা সকলে হেদায়েতপ্রাপ্তই হবেন এবং এই কালো পতাকাবাহী দলের নেতাও একজন হেদায়েতপ্রাপ্ত নেতা বা ইমাম। এভাবেই এটির সামজ্জস্য তৈরি করা যায়। কারণ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ এর অর্থ করা হয় “সঠিকভাবে পরিচালিত/হেদায়েতপ্রাপ্ত খলিফাগণ”। অর্থাৎ এটি দ্বারা খুলাফায়ে রাশিদাকে বুঝানো হয়ে থাকে। (আবু দাউদ; তিরমিজী, হাদীছ নং- ২৮৯১) এছাড়া বাকি অংশ গ্রহণ করা যেতে পারে যেহেতু হাদিসে কালো পতাকাবাহী দলের আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সঠিক পথের পথিক হবে।
হযরত আরতাত (রা:) বলেন, সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। অতঃপর মাহদি ও মানসূর উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানী উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে।
- (আল ফিতান ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী (রা:) কে বললাম, হে আবুল হাসান! আমাদের রাজত্বকাল কখন থেকে শুরু হবে, জবাবে তিনি বললেন, যখন তুমি দেখবে আহলে খোরাসানের কতক যুবক প্রকাশ পেয়েছে তখন তোমরা তাদের গুনাহ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে আর আমরা সন্তুষ্ট থাকব তাদের সওয়াব নিয়ে।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৪৭)
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন বনু আব্বাসের একটি কালো ঝান্ডা বের হবে (৭৫০-১২৫৮ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল)। অতঃপর খোরাসান থেকে আরেকটি কালো ঝান্ডা বের হবে। তাদের টুপি হবে কালো। তাদের পোষাক হবে সাদা রং এর। তাদের সম্মুখে একজন লোক থাকবে যাকে শুয়াইব ইবনে সালেহ অথবা সালেহ ইবনে শুয়াইব ডাকা হবে। সে হবে তামিম গোত্রের। তারা সুফিয়ানীর সৈন্যদের কাছে পরাজিত হবে। এমনকি তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থান নিবে। তারা মাহদীর রাজত্বের জন্য পথ সহজ ও প্রস্তুত করবে। আর সিরিয়া হতে তিনশত লোক তার সাথে মিলিত হবে। তার বের হওয়া ও মাহদীর নিকট বিষয় (নেতৃত্ব) সমর্পণ করার মধ্যে বাহাত্তর মাসের ব্যবধান হবে।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৪)
এই হাদিসগুলো আমাদের চিরচেনা হলেও এই নিয়ে রয়েছে আরো অনেক রহস্য। অনেকে মনে করেন যে, খোরাসান থেকে যেহেতু কালো পতাকাবাহী দল বের হবে মাহাদীর সাহায্যার্থে তাহলে তারা খোরাসানের বাসিন্দাই হবে। আর দেখা যায় এরকম একটি জিহাদরত দলও রয়েছে সেই এলাকারই যারা তালিবান নামে সুপরিচিত। আবার তাদের পতাকার রং সাদা। কালোপতাকা এখন খুঁজতে গেলে দেখা মিলে আল কায়েদা এবং আইএস বা ইসলামিক ষ্টেট এর, যারা কালোপতাকা ব্যবহার করতেছে। তারা আবার খোরাসানীও না। আর আইএস এর ব্যাপারেও হাদিস রয়েছে, যেগুলোতে তাদেরকে ভ্রষ্ট দল-জামায়াত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, হাদিসে বলা আছে খোরাসান সেটায় সরাসরি আরবিতে খোরাসান শব্দটিই লেখা রয়েছে, আবার যেটায় আমরা দেখি পূর্বদিক লেখা, সেটায় আরবিতে মাশরিক লেখা যার অর্থ পূর্বদিক। তাহলে একটিতে বলা পূর্ব দিক আর অন্য হাদিসে রয়েছে খোরাসান। এরপর আসে মুসলিমদের মধ্যে এই কালোপতাকা নিয়ে কিছু মতবিরোধ নিয়ে। কেউ কেউ মনে করে থাকেন যে, শুধু এই কালোপতাকাবাহী দলই হক দল হবে। আর কোন দল হক না। আবার কেউ মনে করে থাকেন যে কালো পতাকাবাহী দলেই ইমাম মাহদী থাকবেন বা সে ই পরিচালনা করবেন, কারণ এরকম একটি যঈফ হাদিসও রয়েছে। এত মতবিরোধ এর একটা সমাধান দরকার যাতে আমরা সঠিক কালোপতাকাবাহী দলকে চিনতে পারি ও তাতে যোগদান করতে পারি এবং এগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা জানতে পারলে আমাদের এই দল চেনা আরো সহজ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
বর্তমানে কি কালো পতাকাবাহী দলের আবির্ভাব হয়েছে? এখনো না হলে কখন হবে?
না। কালো পতাকাবাহী দলের আবির্ভাব এখনো হয়নি। তা আরো পরে বের হবে। তবে কালো পতাকাবাহী দলের মূল নেতা ও তাদের দলের আবির্ভাব খুবই নিকটে। আফগানী খুরাসানীরাও এই দলে থাকবে ইনশাআল্লাহ। দলের আবির্ভাব আগে হলেও কালো পতাকা নিয়ে আরবের দিকে যাওয়ার ঘটনাটি আরো পরের। হিন্দুস্তানের যুদ্ধের নেতা এবং তাঁর দলই হবে কালো পতাকাবাহী দল। কখন কালো পতাকা নিয়ে বের হবে তা বিভিন্ন হাদিস বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় যে, সুফিয়ানীর উত্থানের নিকটবর্তী সময়ে তারা বের হবে। যখন এই হিন্দুস্তানের যুদ্ধ সংঘটিত হবে আর তাতে মুমিনদের বিজয় হবে, তখন হিন্দুস্তানে ইসলামী শাসন কায়েম হবে। এবং তা ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এইখানে যে রহস্যটি রয়েছে তা হচ্ছে এরকম যে, এই কালো পতাকাবাহী দলটি নামকরণ করা হয়েছে তার কারণ হচ্ছে এরা কালো পতাকা বহন করবে। কিন্তু এই দলটি এই কালো পতাকা তখনই ব্যবহার করবে যখন তারা এই হিন্দুস্তান ইরান পর্যন্ত বিজয় করবে এবং পূর্বের এলাকাগুলো বিজয় করে আরব ও জেরুজালেমের দিকে গমন করবে। যখন তারা তা বিজয় করতে রওনা দিবে ঠিক তখনই তারা কালো পতাকা উত্তোলন করবে ও এটি হবে তাদের নিশান। আর হাদিসে এসেছে, এরা সুফিয়ানীর সাথে ইরাকে যুদ্ধ করবে ও বিজয়ী হবে। স্বাভাবিকভাবেই একটি যুক্তি এই যে, তারা পূর্বের তথা খোরাসানের অঞ্চল, হিন্দের অঞ্চল বিজয় না করে আরেক অঞ্চল বিজয় করার জন্য ছুটবে না। আরো সহজভাবে বললে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সুফিয়ানীর প্রকাশের আগে কালো পতাকা বের হবে না, যদিও তার আগে থেকেই কালো পতাকাবাহী দল থাকুক ও সেই জামায়াত থাকুক। আমরা জানি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে আধুনিকতার ধ্বংস হয়ে যাবে। আর হাদিসেও এসেছে যে, কালো পতাকাবাহী দলের যোদ্ধারা ঘোড়া ব্যবহার করবে। যদি আরো আগেই বের হয়ে থাকতো বা বর্তমানে উপস্থিত থাকতো তাহলে তাদের ঘোড়া ব্যবহার করতে হবে আর এমন কোন দলই এই আধুনিক যুগে ঘোড়া ব্যবহার করবে না আর করেও না। হাদিসে এসেছে-
হযরত উমর বিন মুররাহ আল জামালী (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চই খোরাসান থেকে একদল কালো পতাকাবাহী লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং তাঁদের একদল তাঁদের ঘোড়াগুলো দড়ির সাহায্যে বাইতাল লাহ্যিয়া (ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা) এবং হারাস্তার (সিরিয়া রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী এলাকা) মধ্যবর্তী স্থানে জাইতুন (জলপাই) গাছের সাথে বাধবে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সেখানে কি কোন জাইতুন গাছ আছে’? তিনি বলেন, যদি সেখানে জাইতুন গাছ নাও থাকে তাহলে শীঘ্রই সেখানে জাইতুন গাছ জন্মাবে এবং খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী দল বের হয়ে আসবে এবং তারা তাঁদের ঘোড়াগুলো এইসব জাইতুন গাছের সঙ্গে বাঁধবে। *
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৬১, পৃষ্ঠা ২১৫, দুর্বল হাদিস)
- * হাদিসে মূলত কালো পতাকাধারীরা কখন বের হবে সেটার বর্ণনা দিয়েছে।
কালো পতাকাবাহী কারা হবে?
যারা হিন্দুস্তান দখল করবে তারাই মূলত কালো পতাকারবাহী দল। তবে তারা এই কালো পতাকা আরো অনেক পরে প্রকাশ করবে। পূর্বদিক (ভারত উপমহাদেশ) হতে ইরান এলাকা পর্যন্ত বিজয়ী হওয়ার পরই এই দল কালো পতাকা ব্যবহার করে আরব ও জেরুজালেমের দিকে ছুটবে। এই ব্যাপারে হাদিস সরাসরি না থাকলেও শাহ্ নিয়ামাতুল্লাহ এর কাসিদাতে বলা রয়েছে হিন্দুস্তান বিজয় হবে অনেকগুলো দল সম্মিলিত হয়ে। যেমন বলা ছিল ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর দলের সাথে ইরানী, আফগান বাহিনী যুক্ত হবে। আর হাদিসেও এটি রয়েছে যে খোরাসানের দলটি হক জামাতেরই একটি অংশ। হাদিসে এসেছে-
হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই (আফগানীরাই) তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখন্ডের দূর্গম নামক একটি অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম আব্দীল/আব্দুন (নামে এটি থাকবে)। সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে হিন্দুস্তান বিজয় করবে।
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩২)
ইরানী, আফগান ও হিন্দুস্তানের বাহিনীর সম্মিলিত দলটিই হবে ভবিষ্যতে কালো পতাকাবাহী দল। অনেকে উল্লেখ করতে পারে যে, ইরান শিয়াদের দেশ, আফগান সাদা পতাকা বহন করে আর হিন্দুস্তানে কোন এরকম দলই নেই। হ্যাঁ, বর্তমানে এই অবস্থা থাকলেও খুব দ্রুতই হিন্দুস্তান থেকে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর প্রকাশ হবে আর তখন সবাই একতাবদ্ধ হয়ে একই পতাকার ছায়াতলে দাঁড়াবে। আর হিন্দুস্তান, খোরাসান, ইরান এই সকল এলাকা দখলে আসার পরই কালো পতাকা নিয়ে আরবের দিকে রওনা হবে এই সম্মিলিত দল। এই দল আগে থেকেই কালো পতাকা ব্যবহার না করলেও এরা হক দলই হবে। কারণ শুধু ইমাম মাহদীর সাহায্যার্থে যখন বেরিয়ে পড়বে তখনই কালো পতাকাবাহী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এর আগে দলটির অস্তিত্ব থাকবে কিন্তু কালো পতাকাবাহী হিসেবে নয়। যখন তারা কালো পতাকা বহন করা শুরু করবে তখনই তারা কালো পতাকাবাহী হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে পুরো পৃথিবীতে। অর্থাৎ বুঝা যাচ্ছে যে, কালো পতাকাবাহী দলের মূল হচ্ছে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর দল ও সাথে সাহায্যকারী আফগান ও ইরান জাতির সম্মিলিত রূপ। এছাড়াও মাহদীর অন্যান্য সাহায্যকারী দলগুলোও তাদের চিহ্ন হিসেবে কালো পতাকা ব্যবহার করবে। হাদিসে এসেছে-
আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের উপরে খুবই অত্যাচার করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল হতে একটি মুসলিম জামায়াতের প্রকাশ ঘটবে। যাদের পরিচালনা করবে একজন দুর্বল বালক। যার নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ। তিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের পর কাবার দিকে ধাবিত হবে। আমি (আবু হুরায়রা) জিজ্ঞেস করলাম, "হে আল্লাহর রসূল ﷺ, সে কাবার দিকে ধাবিত হবে কেন? সেই সময় কি বাইতুল্লাহ ইহুদী-খ্রিষ্টানদের দখলে থাকবে?" তিনি বলেন, না। বরং সে আল্লাহর খলীফা মাহদীর হাতে বাইয়াত নিতে আসবে। *
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩১; কিতাবুল আক্বিব ১২৫৬; ক্বাশ্ফুল কুফা ৭৩২; আল আরিফুল ফিল ফিতান ১৭০৩)
- * যখন কাবার দিকে রওনা দিবে তখন তারা কালো পতাকা ব্যবহার করবে।
যারা মনে করেন কালো পতাকাবাহী দল ছাড়া আর কোন দল হক নয়, আর এখন কোন দল কালো পতাকা বহন করলে তারা হক হবে
উপরের ব্যাখ্যাতে কালো পতাকাবাহী দলের আত্মপ্রকাশের সময় সম্পর্কে জানার পরও এরকম প্রশ্ন অনেকে করে থাকবে। এর কারণ সাদা পতাকা ব্যবহার করেও তালিবান হক দল হয় হাদিস মতে কিন্তু এরপরও আইএস বা ইসলামিক ষ্টেট কালো পতাকা ব্যবহার করেও হক দল নয়? আইএস কেন হক দল নয় সেটি নিয়ে অন্য পরিচ্ছেদে লেখা দেওয়া থাকবে তবে একটি বিষয় এই যে, কালো পতাকা যে কেউ ব্যবহার করলেই তা হক দল হয়ে যায় না আর ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার সহযোগী সেই কালো পতাকাবাহী দলও হয়ে যাবে না। একটি হাদিসে পরপর দুইটি কালো ঝান্ডা বা পতাকাবাহী দলের বের হওয়ার কথাও বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন বনু আব্বাসের একটি কালো ঝান্ডা বের হবে (৭৫০-১২৫৮ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল)। অতঃপর খোরাসান থেকে আরেকটি কালো ঝান্ডা বের হবে। তাদের টুপি হবে কালো। তাদের পোষাক হবে সাদা রং এর। (প্রয়োজনীয় অংশ)
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৪)
এই হাদিসেও দুইটি কালো পতাকা বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কোনটি আসল কালো পতাকাবাহী হবে তাহলে তা তো সহজেই বুঝতে পারছেন। তাই কালো পতাকা যখন খোরাসান থেকে বের হবে তখনই সেটি আসল কালো পতাকাবাহী দল হবে। এর আগেই কেউ কালো পতাকা বের করে হক দাবি করলেও হক দল হতে পারবে না।
আবার যারা শুধু মনে করেন যে, কালো পতাকাবাহী দল বের হবে সেটাই হক দল। আর বর্তমানে কোন দলই হক হতে পারে না কালো পতাকবাহী দল না তৈরি হওয়া পর্যন্ত। তাদের জানা উচিৎ, ইতিহাসে যারা হকের উপর বাতিলদের সাথে যুদ্ধ করেছে, সেই সকল দলের পতাকা কি ছিল। সর্বশেষ যেই উসমানী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেটিও হকের উপর থেকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে এবং অনেক ত্যাগের পর একটি রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তখন যদি এই বলে থেমে যেত যে কালো পতাকাবাহী দল বের হবে তারাই ইসলাম কায়েম করবে, তাহলে আর উসমানী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হতো না। আর হাদিসেই বলা রয়েছে যে, কেয়ামত পর্যন্ত একটি দল হকের উপর থাকবেই। হাদিসে এসেছে-
হযরত আবু মূসা আশআরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, যখনই আল্লাহর এই দ্বীন নিভে যাওয়ার অবস্থায় আসবে, তখনই আল্লাহ তাআলা এই দ্বীনকে বিজয়ী রাখার জন্য, আল্লাহ তা’আলা একটি করে দল তৈরি করে দেন। যারা আল্লাহর দ্বীনকে মজবুত ভাবে ধরেন।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৬)
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হকের পক্ষে যুদ্ধ করবে, তারা দুশমনদের উপর বিজয় থাকবে, তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
- (সহীহুল মুসলিম ২৯২, ৪৭১৭; সুনান আবু দাউদ ২৪৮৪; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫১, ১১৬৭; মুসনাদে আহমদ ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৪৫০)
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, আল্লাহর একদল বান্দাগণ কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর আল্লাহর নিভে যাওয়া আলোকে আবার পূর্ণ বিকশিত করবেন।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৬৮)
তাই যদি আমরা সেই কালো পতাকাবাহী দলে যোগ দিতে চাই তাহলে আমাদের সেই খুরাসানীদেরই (আফগান জাতি বা তালিবানদেরই) অনুসরণ করতে হবে যতক্ষণ না ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর আত্মপ্রকাশ না হয়। তার আত্মপ্রকাশ হলেই তখন তার দলে আমাদের জামায়াত বদ্ধ হতে হবে। হাদিস থেকে জানা যায় তার আত্মপ্রকাশ আমাদের এই হিন্দুস্তান থেকেই হবে। তিনিই হবেন আল্লাহ মনোনীত মুজাদ্দিদ ও আমীরুল মুজাহিদীন। আর তখন সকলকেই তাকে অনুসরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে,
হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই (আফগানীরাই) তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখন্ডের দূর্গম নামক একটি অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালক বা যুবকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। তার পিতার নাম আব্দীল (নামে আব্দিল বা আব্দুল থাকবে)। সে মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়ে হিন্দুস্তান বিজয় করবে।- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩২)
0 মন্তব্যসমূহ