"গাজওয়াতুল হিন্দ" (غزوة هند) এটি আরবি শব্দ। বাংলায় গাজওয়া অর্থ "যুদ্ধ", আর হিন্দ হচ্ছে "হিন্দুস্তান বা একটি নির্দিষ্ট এলাকা"র নাম। উর্দুতে “গাজওয়াহ এ হিন্দ” বলা হয়। হিন্দ বলতে এই ভারত উপমহাদেশকে বুঝিয়েছে যখন এটি অখণ্ড ছিল। সিন্ধ নদী থেকে এই এলাকা শুরু হয়েছে যা “গাজওয়াহ এ হিন্দ” নামক পুরানো একটি উর্দুতে লেখা বই থেকে পাওয়া যায়। আর এতে বাংলাদেশ সহ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা সহ পূর্বের অনেকগুলো দেশকেই একত্রে বুঝায়। এক কথায় গাজওয়াতুল হিন্দ অর্থ "হিন্দুস্তানের যুদ্ধ"। মূলত হিন্দ নামক জায়গায় এটি সংঘঠিত হবে তাই এই নাম দেওয়া হয়েছে। এরকমই জায়গার নামে বেশিরভাগ সংঘঠিত যুদ্ধগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। যেমন বদরের যুদ্ধ "গাজওয়াতুল বদর" এর নামকরণও হয় বদর নামক জায়গায় যুদ্ধটি সংঘঠিত হওয়ার কারণে। হিন্দের যুদ্ধের ব্যাপারে আমাদের নবী ﷺ ১৪০০ বছর আগে বলে গিয়েছেন। অর্থাৎ কেয়ামতের আগে সংঘটিত হবে এরকম বিষয়ের একটি হচ্ছে হিন্দের যুদ্ধ যা হবে মুসলিমদের সাথে মুশরিকদের এবং তাতে বিজয়ের সুসংবাদও রয়েছে। এরকম আরো কিছু যুদ্ধের কথা নবী ﷺ বলে গেছেন যা অন্যান্য জায়গাকে, অন্যান্য গোত্রকেও উদ্দেশ্য করে আর তা এখনও সংঘঠিত হয়নি। যেমন- সুফিয়ানীর বাহিনীর সাথে যুদ্ধ, তুর্কিদের সাথে যুদ্ধ, রোমদের সাথে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় যুদ্ধ, আ’মাক প্রান্তরের যুদ্ধ, দাজ্জালের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ ইত্যাদি।
আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশকেই হাদিসে হিন্দ নামে উল্লেখ করেছে। যার শুরু হচ্ছে সিন্ধ নদী থেকে পূর্ব দিকের সকল এলাকা (গযওয়াহ-এ-হিন্দ নামক বই এর তথ্যসূত্রে)।
গাজওয়াতুল হিন্দ নামকরণ কেন?
ইসলামের যুদ্ধকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১) গাজওয়া ২) শিকওয়া বা সারিয়া
যে যুদ্ধ-জিহাদে রসূল ﷺ নিজেই অংশগ্রহণ করেছেন তাকে গাজওয়া বলে এবং যে যুদ্ধ-অভিযানে তিনি ﷺ অংশগ্রহণ করেননি তাকে ক্ষেত্র বিশেষে শিকওয়া বা সারিয়া বলে।
সুতরাং গাজওয়া রসূল ﷺ এর জন্যে খাস ও একটি বিশেষ পরিভাষা, জিহাদের এক বিশেষ মাক্বাম।
রসূল ﷺ ভারত অভিযান ও বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। আর এই অভিযান-যুদ্ধ যখন হবে তখন তিনি দুনিয়াতে থাকবেন না তিনি জানতেন। সুতরাং এই যুদ্ধ শিকওয়া হওয়ার কথা। অথচ তিনি এই যুদ্ধের নাম দিয়েছেন গাজওয়া- "এমন যুদ্ধ যে যুদ্ধে স্বয়ং নবীজি উপস্থিত থাকেন।"
এটি একটি সম্ভাষণ, গুরুত্ত্বের প্রাধান্য ও মর্যাদার মূল্যায়ন। যুদ্ধটির নাম গাজওয়া হওয়ার সম্ভাব্য আরো কারণ থাকতে পারে। যেমন, এটি মুশরিক/বিধর্মীদের সাথে মুসলিমদের চূড়ান্ত যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রচণ্ডতা, পরিবেশ, মুসলিম ও মুশরিকদের বৈষম্যমূলক অবস্থান, ঈমানদারদের স্বল্পতা, কঠিন পরীক্ষা, চূড়ান্ত বিজয়সহ ভারতীয় উপমহাদেশকে সার্বিকভাবে শিরকের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে দারুল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করার কারণেও হতে পারে।
সিন্দের অস্তিত্ব
হজরত আবু হুরাইরা (রা:) এর হাদিস এ কথার প্রমাণ যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেই এমন ভূখণ্ড পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল, যাকে সিন্দ (সম্ভবত বর্তমান পাকিস্তান) নামে জানতো। সিন্দ আরবের আরো কাছে এবং তার উপর আক্রমণ হবে গাজওয়াতুল হিন্দেরও পূর্বে তা আবু হুরাইরা (রা:) এর বর্ণিত হাদিসেই উল্লেখ ছিল।
আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু নবীজী ﷺ আমাকে বলেছেন, এই উম্মতের মাঝে সিন্দ এবং হিন্দের দিকে বাহিনী রওয়ানা হবে। আমার যদি এমন কোন বাহিনীতে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় এবং আমি তাতে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়ে যাই তাহলে ঠিক আছে। আর যদি ফেরত আসি তাহলে আমি একজন মুক্ত আবু হুরাইরা হবো। যাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।”
- (মুসনাদে আহমাদ ৮৮২৩)
হিন্দুস্তানের অস্তিত্ব
হাদিস থেকে এটাও প্রমাণিত হয়, নববী যুগে পৃথিবীর বুকে এমন একটি দেশও বিদ্যমান ছিল, যাকে “হিন্দ” বলা হতো। যদিও ওমরের (রা:) যুগে প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হাদিসে সরাসরি হিন্দ শব্দটি এসেছে। আমাদের পূর্বদিক বিষয়ক হাদিসে যে সকল শব্দ ব্যবহার করেছে তার মধ্যে আরো আছে মাশরিক (পূর্ব), খুরাসান, সিন্দ ইত্যাদি।
0 মন্তব্যসমূহ