৩.৫ ইমাম মাহদীর আগমন নিয়ে দুইটি হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা ও ভ্রান্তি নিরসন

ইমাম মাহদী এর আগমনের ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তার ব্যাপারে অনেক ইমাম ও বিজ্ঞ আলেমগণদেরও মতামত রয়েছে যে তিনি আসবেন সত্য। তবে এই বিষয় নিয়ে কিছু ভুল ব্যাখ্যা দেখা যায় যা সম্পর্কে বর্তমানের শতকরা ৯০ ভাগ আলেমরাও বেখবর। তারা অল্প কিছু হাদিসকে পর্যালোচনা করে এই ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করার ফলে এরকম ভুলগুলো তৈরি হয় আর সেগুলোই এই জামানাতে আরেকটি ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি হাদিসের ব্যাখ্যা এখানে উল্লেখ করা হলো এই ভ্রান্তি নিরসনের জন্য।

ঈসা (আঃ) এর মাহদীর পিছনে নামায পড়ার হাদিস

আলেমদের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ অর্থাৎ মুসলিমদের খলীফা বা আমীর, ঈসা (আঃ) কে নিয়ে নামাজে ইমামতি করবেন। এগুলোর সারসংক্ষেপ এটি বুঝায় যে, ইমাম মাহদী, দাজ্জাল, ঈসা (আঃ) একই সময়ে আসবেন যা অসংখ্য হাদিসকে পুরোপুরি অস্বীকার করার কারণ হয়। আর এই ব্যাখ্যাটি সম্পূর্ণরূপে ভুল একটি ব্যাখ্যা। কারণ যদি ইমাম মাহদী এর পিছনে ঈসা (আঃ) নামায পড়ান তাহলে ইমাম মাহদী এর সময়েই দাজ্জালের আবির্ভাব হয়ে যাচ্ছে। আর হাদিসে এসেছে দাজ্জালের আগমনের আগে তিন বছর ফসল ফলাদি ফলবে না (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নাম্বার: ৪০৭৭)। আর রোম, কুসতুনতুনিয়া বিজয় ছাড়া দাজ্জাল বের হবে না। অর্থাৎ মাহদী এর সময় তাহলে যুদ্ধ বিগ্রহও দেখা দিবে। কিন্তু রোম, কুসতুনতুনিয়া বিজয় কার মাধ্যমে হবে তা হাদিসে সরাসরি উল্লেখ আছে। আবার যে বিজয় করবে তার আগে একজন খলীফা থাকবে যিনি অস্ত্রের দ্বারা হত্যা হবেন ও দীর্ঘ বছর ধরে খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করে যাবেন। দেখা যাচ্ছে হাদিসের কথার সাথে মিল নেই। এটির ব্যাখ্যা সামনেই দিবো। তাও ধরে নেওয়া হলো মাহদীর জামানায়। এরপর দাজ্জাল বের হবে ও দাজ্জাল আরো ৪০ দিন সময় পাবে দুনিয়াতে ফিতনা ছড়ানোর জন্য। তবে এই ৪০ দিন সাধারন দিনের মত হবে না। এই ৪০ দিনের প্রথম দিন হবে ১ বছরের সমান, পরের দিন হবে ১ মাসের সমান, তার পরের ১ দিন হবে ১ সপ্তাহ এর সমান এরকম হাদিসে উল্লেখ রয়েছে (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)। এই ৪০ দিন শেষ হওয়ার পর ঈসা (আঃ) এর দুনিয়াতে আবির্ভাব হবে আর তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তাহলে ইমাম মাহদী এর জামানায় এই সকল ফিতনাই হতে থাকবে, কিন্তু হাদিসের ভাষ্য মতে ইমাম মাহদী এর জামানায় প্রচুর প্রাচুর্য দেখা দিবে ও সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকবে, কোন ধরণের ফিতনা বা যুদ্ধ-বিগ্রহ থাকবে না। তার মৃত্যুর পরে আবার ফিতনা দেখা দিবে এর আগে নয়। তাহলে এখানে হাদিসের বিপরীত কথা পাওয়া যাচ্ছে যে, ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন আর তার পিছনে ঈসা (আঃ) ছলাত আদায় করবেন। একটি হাদিস মিথ্যা আরেকটি কি সত্য? আবার বলা আছে ঈসা (আঃ) এর জামানাতে ন্যায় ইনসাফ, সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। তাহলে ইমাম মাহদী এর পরে তো ফিতনা দেখা দিবে যা হাদিসে বলা হয়েছে তা কখন হবে। তারপরও এই বিপরীত ব্যাপারটি প্রচলিতই হয়ে আসছে যা কিছু মত থেকে জানা যায়-

১। জাবের (রা:) বলেনঃ রসূল বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্য হতেই। এই উম্মতের সম্মানের কারণেই তিনি এ কথা বলবেন। (আল-মানারুল মুনীফ, পৃষ্ঠা ১৪৭-১৪৮) ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেনঃ হাদীছের সনদ ভাল)

উপরোক্ত হাদিসে মুসলমানদের আমীরের কথা বলা হয়েছে। হাদিসটির সনদ খুব ভালো বলেছেন ইবনুল কায়্যিম (রহ:)। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই মুসলমানদেন আমীর কি ইমাম মাহদী অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নাকি অন্য কেউ? কে হবেন সেটা এখানে অস্পষ্ট, কিন্তু ব্যাখ্যাতে ইমাম মাহদী বলে প্রচার হচ্ছে, যা একটি ভুল ব্যাখ্যা। এটি বলার কারণ হচ্ছে ইবনুল কায়্যিমও সেখানে মাহদী নামটি ব্যাখ্যাতে উল্লেখ করেছেন (আল-মানারুল মুনীফ)। তাহলে এরকম একজন জ্ঞানী আলেম কি অসংখ্য হাদিসের বিপরীতে যায় এরকম একটি বিষয় ভুল করেছেন, মাহদী নামে আরো কেউ আছে কি? এখন ইমাম জাহজাহ কেও যে মাহদী বলা হয়েছে সেই হাদিস দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর (ইমাম মুহাম্মাদ বা আল মাহদী) ইন্তেকালের পর এমন একলোক (মাহমুদ) শাসনভার গ্রহণ করবেন যিনি ইয়ামানবাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করবেন। অতঃপর খলীফা মানসূর ক্ষমতার মালিক হবে, এরপর মাহদী নামক আরেকজন (জাহজাহ) শাসনভার গ্রহণ করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে। *

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৮৬ [পথিক প্রকা: ১১৮৩, তাহকীক: যঈফ]; আরবীতে দুইবারই মাহদী শব্দ ব্যবহার হয়েছে এবং এরকম আরো হাদিস রয়েছে।)

-        * মাহদীর মৃত্যুর পর আবার দুজন শাসকের পর মাহদী নামে আরেকজন শাসক হবে? তারা কি কোনভাবে একই হতে পারে? তা তো হয় না। এরকম আরো হাদিস রয়েছে যাতে মাহদীর মৃত্যুর পর একজন শাসকের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে তার  নামও মাহদী হবে। সেগুলো দেওয়া হয়েছে এই পরিচ্ছেদে।

২। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, "ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) যার পিছনে নামাজ পড়বেন, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই একজন (অন্য বর্ণনায়- তিনি হবেন আমাদের/তোমাদের মধ্যে হতে)"। (সহীহ, কিতাব আল মাহদী/আখবারুল মাহদী লেখকঃ হাফিজ আবু নাঈম ইস্ফাহানী; ফাইয়াদ আল কাদির -আল মানাওয়ী; সহীহুল জামে আস্-সাগীর ৫৭৯৬)

উপরোক্ত হাদিসে রসূল বলেননি যে সে খলীফা ইমাম মাহদী অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ হবেন। বলেছেন তোমাদের মধ্য হতে কিন্তু মানুষ তাকেই ইমাম মাহদী ধরে নিয়েছেন। যদি মাহদীর কথা বলতো তাহলে এরকম বলতো যে আহলে বাইত থেকে বা রসূল এর বংশ থেকে একজন। আসল কথা, মাহদী ছাড়াও যে আরো ইমাম আসবে সে বিষয়ে জ্ঞান নেই।

৩। হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) ফাতহুল বারীতে (৬/৫৬৯) লিখেছেন, আবুল হাসান মানাকিব আশ-শাফেয়ী-তে লিখেছেন, ইমাম মাহদী নবী করীম এর উম্মত হবেন এবং ঈসা (আ) তার পিছনে নামায পড়বেন। তার আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

উপরোক্ত বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম মাহদী এর পিছনে ঈসা (আ) ছলাত পড়বেন। এখানে যত বর্ণনা পাওয়া যায় তা হাদিস নয়, অন্যান্যদের সাধারণ মত, যা ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এটাও সেরকম একটি ভুল। এরপরও যদি ধরে নেই, তাহলে এই মাহদী বলতে কাকে বুঝিয়েছেন তার অন্য কোন ব্যাখ্যা রয়েছে কিনা তাও দেখতে হবে।

৪। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, "সেদিন কেমন হবে, যখন মরিয়মের পুত্র হযরত ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে অবতরণ করে তোমাদেরই একজনের পিছনে ফজরের নামাজ আদায় করবেন"? (বুখারী; মুসলিম)

উপরোক্ত হাদিসে কোথাও ইমাম মাহদীর কথা বলা হয় নি। কিন্তু কার পিছনে পড়বেন তা অবশ্যই উল্লেখ করেছেন অন্য হাদিসে। আর এখানে ফজরের সময়ের কথা উল্লেখ এসেছে কিন্তু অন্য হাদিসে আছরের সময়ের কথাও উল্লেখ পাওয়া যায়।

৫। হযরত জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, "আমার উম্মতের একদল মুজাহিদ কিয়ামত পর্যন্ত শত্রুর উপর বিজয়ী থাকবে। একপর্যায়ে আকাশ থেকে ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) অবতরণ করলে মুসলমানদের সেনাপতি বলবে- আসুন, নামাজের ইমামতি করুন! তখন ঈসা (আঃ) বলবেন - না, বরং তোমাদের একজন অপরজনের নেতা (অর্থাৎ তুমি ইমামতি কর)। এটি এই উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি বিরাট সম্মানের"। (সহীহ মুসলিম; মুসনাদে আহমাদ)

এই হাদিসেও ইমাম মাহদীর কথা বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে, "তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর"। আর এটাও সাধারণভাবে সকলের বুঝা দরকার যে সেনাপতি আর খলীফা কখনই এক নয়।

৬। হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা:) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি, হযরত ঈসা (আ.) ফজরের নামাযের সময় অবতরণ করবেন। তখন 'মুসলমানদের আমীর' তাঁর নিকট আবেদন জানাবেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি নামাজের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন, এ উম্মত একে অন্যের উপর আমীর (অর্থাৎ তোমাদের জন্যই নামাজের ইকামত দেওয়া হয়েছে, তাই তোমরাই নামাজ পড়াও) তখন আমীর অগ্রসর হয়ে নামায পড়াবেন। (মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খণ্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা; দুররে মানসুর, ২য় খণ্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা; মুসতাদরাকে হাকিম, ৪র্থ খণ্ড, ৪৭৮ পৃষ্ঠা)

দেখা যায় ঈসা (আঃ) যার পিছনে নামাজ পড়বেন এই বিষয়ক সকল সহীহ হাদিস একসাথে করেও সেই হাদিসগুলির ইবারতে মাহদী নাম বা শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, শুধু মাত্র নুয়াইম বিন হাম্মাদ এর একটি মাত্র হাদিস থেকে এরকম বর্ণনা পাওয়া যায় যে ইমাম মাহদীর পিছনে ঈসা (আঃ) নামাজ পড়বেন তাও দুর্বল সনদে। এই মতবিরোধগুলো দেখা দেওয়ার একটাই কারণ তা হচ্ছে সাধারণ মুসলিমরা সহ অনেক আলেমরাই জানেন না যে ইমাম মাহদী ছাড়াও আরো ইমাম বা নেতার আগমন শেষ জামানায় হবে। ইমাম মাহদী এর পরেও আরো অনেক খলীফা বা নেতারা বিশ্ব শাসন করবেন এটা হাদিস থেকে প্রমাণিত। তাই খলীফা ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ এর পরে তাদেরকেও আমীর বলা হবে যারা শাসন ক্ষমতায় যাবেন। এরপরও যারা বলবেন যে দুয়েকটি বর্ণনাতে মাহদী এর কথা সরাসরি বলা আছে কিছু হাদিসে বা কোন আলেমের মতামতে, সেগুলো কি ব্যাখ্যা?

প্রথমে দেখতে হবে এই মাহদী কি মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নাকি ইমাম জাহজাহ, কারণ তাকেও অনেক হাদিসে শুধু মাহদী নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এখানেও মাহদী হিসেবে উল্লেখ করা স্বাভাবিক কিন্তু তাই বলে এই মাহদীকে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ধারনা করা ভুল। আর এটাকেই ব্যাখ্যা করা হয় ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ হিসেবে কারণ সাধারণ মুসলিমরা এই বিষয়ে অল্প জ্ঞান রাখেন। তাহলে এই মুসলিমদের আমীর বা এই মাহদী কি সেই ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ যার কথা হাদিসে আমীর হিসেবে এসেছে? আর কোনো আমীর কি আসবে মাহদী এর আগে বা পরে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে হাদিস থেকেই। নিচের হাদিসগুলি থেকে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-

হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মাহদীর মৃত্যুবরণ করার পর কাহতান গোত্রের উভয় কান ছিদ্রবিশিষ্ট একজন লোক (মানসূর) শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তার চরিত্র হবে হুবহু মাহদীর মত। তিনি দীর্ঘ ২০ বৎসর পর্যন্ত শাসক হিসেবে থাকার পর, তাকে অস্ত্রের দ্বারা হত্যা করা হবে। এরপর রসূলুল্লাহ এর বংশধর থেকে জনৈক লোকের (জাহজাহ) আত্মপ্রকাশ হবে। যিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবেন। তার হাতে কায়সার সম্রাটের শহর (ইউরোপ) বিজয় হবে। তিনিই হবেন, রসূলুল্লাহ এর উম্মতের মধ্যে সর্বশেষ খলীফা বা বাদশাহ। তার যুগে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সায়্যিদুনা হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকে অবতরণ করবেন।

-      (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৪ [পথিক প্রকা: ১২৩০, তাহকীক: সহীহ])

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, কিভাবে আমার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাবে? যখন এই উম্মতের শুরুতে আমি মুহাম্মদ আছি, মধ্যখানে মাহদী রয়েছে, আর এই উম্মতের শেষে হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ) রয়েছেন?

-      (মিশকাত; হাকেম; কানজুল উম্মাল; ইলমে রাজেন; তারিখে দিমাশক; তারিখ উল খিলাফাহ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেছেন, আমার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাবে না, কারণ (এই উম্মতকে পরিচালনা করার জন্য) শুরুতে আমি হযরত মুহাম্মদ ও শেষে রয়েছেন মারিয়ামের পুত্র হযরত ঈসা (আঃ)। আর আমাদের দুইজনের মধ্যখানে রয়েছেন ইমাম মাহদী। *

-      (এই হাদিসটি হাফেজ আবু নাঈম ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:) এর "মুসনাদে আহমাদ" গ্রন্থে সংগ্রহ করেছেন, এছাড়াও নুয়াইম বিন হাম্মাদের "আল ফিতান" এবং জালাল উদ্দিন সুয়ুতীর "আল আরিফুল আরদি ফি আখবার আল মাহদী" বইতেও রয়েছে)

-      * এই হাদিসটি যদি আমরা দেখি তাহলে পাওয়া যায় যে ঈসা (আঃ) এর পরে কেউ আমীর বা শাসক হবেন না কারণ তিনিই শেষ আমীর বা শাসক। আর ইমাম মাহদীর আগেও কেউ খলীফা হচ্ছেন না অথচ সহীহ হাদিস থেকেই পাওয়া যায় মানসূর কাহতানি, মাহমুদ, জাহজাহ এরা শাসক হবেন। তাদের আবির্ভাব এখনও হয়নি। তাহলে তারা কোন সময়ে কার আগে বা পরে শাসন ক্ষমতায় যাবেন? হাদিসে তো স্পষ্টই বলা যে তারা ইমাম মাহদীর পরে শাসক হবেন এবং ঈসা (আঃ) এর আগে।

হযরত জাবের বিন সামুরা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল কে আমি বলতে শুনেছি যে, এই দ্বীন (ধর্ম) প্রতিষ্ঠিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না তোমাদের মাঝে ১২ জন খলিফাহ না আসে। তারা সবাই তাদের প্রত্যেক উম্মতকে নিজের নিকট একত্রিত করবে। সাহাবী বলেন, তারপর রসূল একটি কথা বললেন, তা আমি বুঝতে পারিনাই। আমি আমার পিতাকে প্রশ্ন করলাম রসূল কি বলেছেন? পিতা বললেন, তিনি বলেছেন, খলিফাহ সকলেই কুরাইশদের মধ্য থেকেই হবে। *

-      (সহীহুল মুসলিম; সুনান আবু দাউদ ৪৯৭৯)

-     *  এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, ১২ জন আমীর বা ইমাম আসবেন এবং তারা কুরাইশী হবেন। এই ১২ জন ইমাম এর মধ্যে ইমাম মাহদী হচ্ছেন ১২ তম। এই থেকে অনেকে ধারণা করতে পারেন যে, তাহলে তার পরে আর খলীফা হবে কিভাবে। কিন্তু বিষয় হচ্ছে যে ইমাম মাহদীর আগে আগমন করে তার পরেও আমীর বা শাসক হতে পারে। যে বিষয়গুলো হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে যে, ইমাম মাহদীর আগমনের আগে ইমাম মাহমুদ, ইমাম মানসূর এর আত্মপ্রকাশ হবে। কিন্তু তারা তার পরে ক্ষমতায় যাবেন।

এইসকল উল্লিখিত হাদিস থেকে সরাসরি বুঝা যায় যে ইমাম মাহদী এর পিছনে ঈসা (আঃ) নামায পড়বেন না। তার মৃত্যুর পর কে খলীফা হবেন এবং কার পিছনে নামাজ পড়বেন তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ এসেছে। ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাবের সময় মুসলিম জাহানের আমীর থাকবেন অন্য কেউ। তারপরও অনেক জায়গায় মাহদী এর পিছনে লেখার কারণে অনেকে ধরে নেন যে এখানে আল্লাহর খলীফা ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ এর কথাই বলা হয়েছে। এটি স্পষ্ট করতে আরেকটি হাদিস নিচে দেওয়া হলো-

نعيم بن حماد - ١٢١٤

حدثنا الحكم بن نافع عن جراح عن أرطاة قال بلغني أن المهدي يعيش أربعين عاما ثم يموت على فراشه ثم يخرج رجل من قحطان مثقوب الأذنين على سيرة المهدي بقاؤه عشرين سنة ثم يموت قتلا بالسلاح ثم يخرج رجل من أهل بيت النبي صلى الله عليه وسلم مهدي حسن السيرة يفتح مدينة قيصر وهو آخر أمير من أمة محمد صلى الله عليه وسلم ثم يخرج في زمانه الدجال وينزل في زمانه عيسى بن مريم عليه السلام

হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, মাহদী দীর্ঘ চল্লিশ বৎসর জীবিত/ক্ষমতায় থাকবেন, এরপর নিজের বিছানায় মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কাহতান গোত্রের আরেকজন লোক যার উভয় কান ছিদ্র বিশিষ্ট হবে খলীফা নিযুক্ত হবেন এবং খলীফা মাহদীকে অনুসরণ করবেন। তিনি বিশ বৎসর পর মারা যাবে। মূলতঃ তাকে হত্যা করা হবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ এর বংশধর থেকে একজন লোক খলীফা হবেন, যার নাম মাহদী হবে, তিনি হবেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তার হাতে কায়সারের শহর জয় হবে। তিনি উম্মতে মুহাম্মদিয়ার সর্বশেষ আমীর। তার যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) পৃথিবীর বুকে পূনরায় আগমন করবেন। *

-      (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২১৪ [পথিক প্রকা: ১২১১, তাহকীক: যঈফ])

-      * হাদিসটি সহীহ/যঈফ মিশ্রিত। ১। এই হাদিসটিতে মাহদীর যে শাসনকাল বা জীবিত থাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যটি সহীহ হাদিসের বিপরীত। হয়তো এটি ভুল করেছে আর নাহলে ঈসা (আঃ) এর সময়কালকে গুলিয়ে ফেলেছেন। এই লাইনটি বাদ দিয়ে পরের বর্ণনাগুলো সঠিক। ২। এরপর বলা হয়েছে কাহতান গোত্রের একজন ক্ষমতায় থাকবেন। তার ব্যাপারে সহীহ হাদিসে এসেছে তার নাম হবে মানসূর। আর তার পরে যার কথা বলা হয়েছে যিনি ২০ বছর বিশ্ব শাসন করবেন ও মাহদী এর অনুসরণ করবেন তার নাম ইমাম মানসুর। যার কথাও হাদিসে বলা আছে- আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহ্তান গোত্র হতে এমন এক ব্যক্তির আগমন না হবে যে মানুষ জাতিকে তার লাঠির সাহায্যে (শক্তি দ্বারা সুশৃংখলভাবে) পরিচালিত করবে। [একই ৩২৬৯; ইসঃ ফাঃ ৩২৬৯] (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৫১৭ [আঃ প্রঃ ৩২৫৫; ইসঃ ফাঃ ৩২৬৬]; সহীহুল মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯১০)

-       ৩। এরপর যিনি ক্ষমতায় আসবেন তার নামই বলা হয়েছে মাহদী। ইমাম আল মাহদী এর আসল নাম হবে মুহাম্মাদ কিন্তু এখানে সেই শাসক এর নাম মাহদী বলা হয়েছে। একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় মাহদীর মৃত্যুর পরে এই শাসক হবেন যার নামও মাহদী উল্লেখ এসেছে। আর মাহদীর পর যে একজন কাহতানী শাসক হবে এর দলিলও অকাট্য হয়ে গেছে। এর পরের হাদিসেই সেই সর্বশেষ খলীফার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত কাব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বায়তুল মোকাদ্দাসের জনৈক বাদশাহ ভারতের দিকে সৈন্য প্রেরণ করে ভারত জয় করবেন এবং সেখানে অবস্থিত যাবতীয় সম্পদসমূহ হস্তগত করার পর সেগুলোকে বায়তুল মোকাদ্দাসের অলংকার হিসেবে রেখে দিবেন। এরপর ভারত জয় করার পর দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত তারা ভারতেই অবস্থান করতে থাকবে। *

-      (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২১৫  [পথিক প্রকা: ১২১২, তাহকীক: যঈফ])

-      * হাদিসে এখানে যার কথা বলা হয়েছে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসের বাদশাহ হবেন অথচ ইমাম মাহদী হবেন আল্লাহর খলীফা এবং তার খিলাফত চলবে আরব থেকে। এখানে যার কথা বলা হয়েছে তিনি আরেকজন আর তিনি হচ্ছেন জাহজাহ। তার সময়কালেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে যেটা হাদিসগুলো থেকে পাওয়া যায়।

হযরত আরতাত (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর কাহতান গোত্রের মানসূর নামক লাঠি ওয়ালা ব্যক্তি বিশ বছর শাসন না করা ব্যতীত কেয়ামত সংঘটিত হবে না।

-      (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১৪)

হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সূরা ইব্রাহিম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলঃ হে আল্লাহর রসূল ! তাহলে মানুষ দাজ্জালকে দেখবে কখন? তিনি বললেন, যখন জাহজাহ পৃথিবী শাসন করবে তখন হিন্দুস্তান আবারও ইহুদীদের দখলে যাবে। আর তখন বায়তুল মুকাদ্দিস মুসলমানরা শাসন করবে। আর সেখান থেকে জাহজাহ কালোপতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)

আবূ হুরায়রাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন: জাহজাহ নামক এক লোক মানুষের শাসক না হওয়া পর্যন্ত রাত্র-দিনের আবর্তন শেষ হবে না (কিয়ামত হবে না)। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে যাবৎ গোলাম বংশ হতে 'জাহজাহ' নামক এক ব্যক্তি শাসক না হবে।

-      (সহীহ, সহীহুল মুসলিম ৬১-(২৯১১); মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪১৬-[৭]; সহীহুল জামি ৭২৭৪)

মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আল আবদী (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) এর সূত্রে নাবী থেকে বর্ণিত। রসূল বলেন, রাত দিন শেষ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না জাহজাহ নামে কোন লোক শাসনকর্তা হবে।

-        (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২০১ [ইসঃ ফাঃ ৭০৪৫, ইসঃ সেঃ ৭১০১]; সূনান তিরমিজী ইসঃ ফাঃ ২২৩১; সহিহাহ ২৪৪১)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূলে পাক বলেছেন, জাহজাহ নামের একজন আজাদ ক্রীতদাস ক্ষমতায় না যাওয়া ব্যতীত কিয়ামত সংঘটিত হবে না।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৭২)

হযরত কাবে আহবার (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন মানুষের মাঝে হত্যা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে তখন লোকজন বলবে এ যুদ্ধ মূলতঃ কুরাইশদের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং কুরাইশদেরকে হত্যা করলে তোমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। একথা শুনার পর সকলে মিলে কুরাইশদেরকে এমন ভাবে হত্যা করবে, তাদের একজনও বাকি থাকবেনা। কিন্তু এরপর মানুষ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, যেমন জাহেলী যুগে লিপ্ত ছিল এবং গোলামদের (ক্রীতদাস থেকে) একজন মানুষের শাসন ক্ষমতা (খিলাফত) গ্রহণ করবে।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৫২ [পথিক প্রকা: ১১৪৯, তাহকীক: যঈফ])

আর এটাও বলা আছে তিনি উম্মতে মুহাম্মাদিয়া এর সর্বশেষ আমীর হবেন ও তার সময়ে দাজ্জাল ও ঈসা (আঃ) পৃথিবীর বুকে পূনরায় আগমন করবেন। আর এই আমীর যার নাম ইমাম জাহজাহ তিনিই ঈসা (আঃ) এর ছলাতের ইমামতি করবেন। ঈসা (আঃ) যার পিছনে ছলাত পড়বেন তিনি ইমাম মাহদী তথা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নন। এরকম ভাবার মূল কারণ হচ্ছে মাহদী নামকেই ইমাম মাহদী ধরে নেওয়া এবং তার পরে যারা খলীফা হবেন তার ব্যাপারে না জানা। এরকম অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে ইমাম জাহজাহ এর সময় ঈসা (আঃ) দুনিয়ার বুকে আবির্ভাব হবে ও তার পিছনে নামায আদায় করবে। তাহলে যারা বলে ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ এর পিছনে ঈসা (আঃ) নামায পড়বেন ও ঈসা (আঃ) এর দুনিয়ায় আগমনের হাদিসকে মাহদী সম্পর্কিত হাদিসের সাথে মিলিয়ে ফেলেন তারা এর মাধ্যমে একটি ভ্রান্তি তৈরি করেন যার মাধ্যমে অনেক হাদিসের বিপরীত ব্যাখ্যা দাড় হয়ে যায় ও এই নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। আরো অনেক হাদিস রয়েছে যাতে জাহজাহকেও মাহদী নির্দেশ করেছে-

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, তার কাছে সর্বমোট বারোজন খলীফার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এইসব খলীফার পর শাসক ও বাদশাহরা দেশ পরিচালনা করবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, আল্লাহর কসম! এরপর খেলাফতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, সিফাহ, মানসুর এবং (জাহজাহ) মাহদী। উক্ত মাহদীই (জাহজাহ) খেলাফতের দায়িত্ব হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর হাতে দিয়ে যাবেন। *

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০৩ [পথিক প্রকা: ১২০০; তাহকীক: সহীহ])

-        * বারোজন খলীফার সর্বশেষই হচ্ছেন ইমাম মাহদী। তারপরে আরো কিছু শাসক বা বাদশাহ হবেন যার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে। আর সর্বশেষ শাসক জাহজাহকেও অনেক হাদিসে মাহদী নামে উল্লেখ করেছে। তবে ইনি ইমাম আল মাহদী তথা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর (ইমাম মুহাম্মাদ বা আল মাহদী) ইন্তেকালের পর এমন একলোক (ইমাম মাহমুদ) শাসনভার গ্রহণ করবেন যিনি ইয়ামানবাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করবেন। অতঃপর খলীফা (ইমাম) মানসূর ক্ষমতার মালিক হবে, এরপর মাহদী নামক আরেকজন (ইমাম জাহজাহ) শাসনভার গ্রহণ করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৮৬ [পথিক প্রকা: ১১৮৩; তাহকীক: যঈফ])

উপরোক্ত হাদিসেও মাহদী বলতে ইমাম জাহজাহকেই বুঝানো হয়েছে, যেমন এর আগে আমরা আল-ফিতান এর ১২১৪ নং হাদিসে দেখেছি। কারণ প্রথমেই বলা হয়েছে ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পর। তাহলে দেখা যাচ্ছে তার মৃত্যুর পরে আরেকজন মাহদী নামে শাসক হবেন। এখন যদি কেউ বলে এটা আমাদের নিজস্ব মত তাহলে প্রশ্ন থাকবে এই হাদিসে মাহদী এর আগে যারা খেলাফতের দায়িত্ব পাবেন তারা কারা এবং তারা কবে পাবেন? অথচ সকল হাদিস দিয়ে প্রমাণিত যে, ইমাম মাহদী এসেই খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন ও খলীফা হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন, খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর তার আগে কেউ খলীফা হবেন না। আর হাদিসে এসেছে তার পরে যথাক্রমে ইমাম মাহমুদ, ইমাম মানসূর ও ইমাম জাহজাহ খলীফা হবেন। এরপর অনেকে হয়তো বলবেন যে, সরাসরি জাহজাহ না বলে মাহদী নামে হাদিসে ডাকা হলো কেন তাকে?

এর উত্তর হচ্ছে, আহলে বাইত থেকে যিনি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন তার নাম হবে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ। তাকে ইমাম আল মাহদী বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে আল-কায়েম, আল্লাহর খলীফা, আল্লাহর খলীফা আল মাহদী ইত্যাদি। ইমাম মাহমুদকে অনেক জায়গায় উপনাম হিসেবে হাবীবুল্লাহ বা কাহতানী বলা হয়েছে। ইমাম মানসূরকে বেশির ভাগ জায়গায় নাম সম্বোধন না করে বলা হয়েছে কাহতানী বা কাহতান গোত্রের বা ইয়েমেনী। আবার ইমাম মানসূরের পরবর্তী খলীফা, যার পিছনে ঈসা (আঃ) নামাজ পড়বেন ও উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার শেষ আমীর ও খলীফা ইমাম জাহজাহ, তাকে বলা হয়েছে হাদিসে মাহদী, ইয়েমেনী, এক আজাদকৃত ক্রীতদাস, জেরুজালেমের বাদশাহ ইত্যাদি নামে। আর কিছু হাদিসে দেখা গিয়েছে তার বর্ণনা সাধারণভাবে নিলে ইমাম মাহমুদকেও মাহদী বলেছে, ইমাম মানসূর কেও মাহদী বলেছে বা মাহদীর হুবহু চরিত্র বলা হয়েছে। অর্থাৎ চারজনকেই মাহদী বলা হয়েছে। আবার দেখা গিয়েছে ঈসা (আঃ) কেও একটি হাদিসে মাহদী বলা হয়েছে (ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ)-ই মাহ্দী-সূনান ইবনে মাজাহ ৪০৩৯)। এরকম মাহদী নিয়ে বিভ্রান্তি হতেই পারে যদি আমরা সঠিকটি না জানি। হাদিস পর্যালোচনা করে যেই সমাধানে আসতে পারি-

১। বেশির ভাগ হাদিসে তোমাদের নেতা বা আমীর বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্য হতে হবে বলা হয়েছে, আর এই নেতা বা আমীর ইমাম মাহদী বা ইমাম জাহজাহ কিনা তা সরাসরি বলেনি, তাই তাকে জোর করে ইমাম মাহদী বানানোটি মারাত্মক ভুল কারণ তার কোন প্রমাণ নেই, কিন্তু সেই আমীর ইমাম জাহজাহ হবেন তার দলিল রয়েছে। অন্য হাদিসগুলোতে পাই ইমাম জাহজাহ এর সময়কালেই দাজ্জাল ও ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব হবে এবং তার পিছনেই ঈসা (আঃ) নামাজ পড়বেন। যা সরাসরি স্পষ্ট বর্ণনা। রসূল বলেছেন যে তোমাদের মধ্য থেকে তথা তোমাদের একজন, যদি ইমাম মাহদীকেই উদ্দেশ্য করে বলতেন তাহলে বলতেন আমার বংশ থেকে একজন বা আমার বংশেরই একজন। তিনি সেটাও বলেন নি কিন্তু খলীফা মাহদীর ব্যাপারে বলেছেন আমার বংশ থেকে তিনি আসবেন বা আমার বংশের এক লোক বা নেতা। হাদিস থেকে স্পষ্টভাবেই জানা যায় ইমাম মাহদীর পরে আরো তিন জন খলীফা বা আমীর হবেন আর সর্বশেষ আমীরের জামানাতেই ঈসা (আঃ) এর আগমন হবে যার নাম ইমাম জাহাজাহ আর হাদিসে এসেছে মাহদী নামে।

২। কিছু হাদিসে বা কিছু ইমামদের লেখা কিতাবে ঈসা (আঃ) যার পিছনে নামাজ পড়বেন তাকে মাহদী বলা হয়েছে বা ইমাম মাহদী বলা হয়েছে। এখানে দুইটি বিষয় হতে পারে তা হচ্ছে, আরো যারা খলীফা বা আমীর হবেন তাদের ব্যাপারে জানতেন না, আরেকটি হচ্ছে যে এই মাহদী দিয়ে ইমাম জাহজাহকেই বুঝিয়েছে। কারণ উপরের আরবি ইবারতসহ দেওয়া হাদিসেই এটি বলা হয়েছে যে ইমাম জাহজাহ এর নামও মাহদী। এছাড়াও আরো হাদিসেও বলা হয়েছে খলীফা মাহদীর পরে যারা খলীফা হবেন তাদের সর্বশেষ আমীরের নামও মাহদী। হাদিসে এসেছে-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাহদীর (ইমাম মুহাম্মাদ বা আল মাহদী) ইন্তেকালের পর এমন একলোক (ইমাম মাহমুদ) শাসনভার গ্রহণ করবেন যিনি ইয়ামানবাসীদেরকে তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করবেন। অতঃপর খলীফা (ইমাম) মানসূর ক্ষমতার মালিক হবে, এরপর মাহদী নামক আরেকজন (ইমাম জাহজাহ) শাসনভার গ্রহণ করবেন, যার হাতে রোমানদের শহর বিজয় হবে।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৮৬ [পথিক প্রকা: ১১৮৩; তাহকীক: যঈফ])

সর্বশেষ শাসকের নাম অনেক জায়গায় বিভিন্নভাবে এসেছে যেমন- (হযরত আবু কুবাইল (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু হাশেমের জনৈক লোক যার নাম হবে আসবাগ ইবনে ইয়াযিদ। তার হাতেই রোমানদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন হবে।- আল ফিতান ১২২০) তবে তার নাম জাহজাহই হবে সেটাই বেশি দালিলিক।

৩। আর সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে শেষ জামানায় আবির্ভাব হবে এরকম সকল আমীর ইমাম বা খলীফা যারা আল্লাহর মনোনীত হবেন তারা সকলেই হেদায়েতপ্রাপ্ত হবেন। অর্থাৎ সকলেই মাহদী হবেন আম অর্থে। আর ঈসা (আঃ) ও ন্যায় বিচারক একজন শাসক হবেন সেই দিক দিয়ে সেও আম অর্থে মাহদী। খাস অর্থে শুধু একজনকেই বুঝায়, তিনি হচ্ছেন ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ বা ইমাম আল-মাহদী।

উপরোক্ত হাদিস থেকে সরাসরি বুঝা যায় যে, খলীফা ইমাম মাহদীর মৃত্যুর পরে আরো তিনজন খলীফা হবেন আর হাদিসে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, রোমানদের শহর বিজয় না হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের আবির্ভাবও হবে না। আর কেউ যদি বলে যে এরা ইমাম মাহদীর আগে বা ঈসা (আঃ) এর পরে খলীফা বা বিশ্ব শাসক হবে তাহলে সেটিও হাদিস বিরোধী কথা হবে। হাদিসে বলা হয়েছে-

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেছেন, আমার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাবে না, কারণ (এই উম্মতকে পরিচালনা করার জন্য) শুরুতে আমি হযরত মুহাম্মদ ও শেষে রয়েছেন মরিয়মের পুত্র হযরত ঈসা (আঃ)। আর আমাদের দুইজনের মধ্যখানে রয়েছেন ইমাম মাহদী।

-        (এই হাদিসটি হাফেজ আবু নাঈম ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ:) এর "মুসনাদে আহমাদ" গ্রন্থে সংগ্রহ করেছেন, এছাড়াও নুয়াইম বিন হাম্মাদের "আল ফিতান" এবং জালাল উদ্দিন সুয়ুতীর "আল আরিফুল আরদি ফি আখবার আল মাহদী" বইতেও রয়েছে)

হাদিস অনুযায়ী ঈসা আঃ এর পরে আর কেউ খলীফা হবেন না। তার মৃত্যুর পর কেয়ামত একদম নিকটে থাকবে বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। আর ইমাম মাহদীর আগেও কেউ আর খলীফা হবেন না। যদি আরো আগে তারা খলীফা হয়েছে এরকম কেউ বলে তাহলে বলবো তারা কবে কোথায় বিশ্ব শাসক বা খলীফা হয়েছিলেন আর তারা যুদ্ধ করেছিলেন বা বিজয় এনেছিলেন? ইতিহাস খুঁজলে সেটি কোথাও পাওয়া যায় না। হাদিসে এসেছে-

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে কাইস ইবনে জাবের সাদাফী (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, কাহতানী এবং পরবর্তীতে আরো যারা খলীফা ও আমীর নিযুক্ত হবেন, তারা প্রত্যেকে (ইমাম) মাহদীর পর আসবেন।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০৯ [পথিক প্রকা: ১২০৬; তাহকীক: যঈফ])

ইমাম মাহদী আর ঈসা (আঃ) যে একই যুগে আসবেন না এবং তারা যে একে অপরের সাক্ষাৎ পাবেন না এর স্বপক্ষে অনেক দলিল উপস্থাপন করা সম্ভব। আল-ফিতান গ্রন্থের লেখক নুয়াইম বিন হাম্মাদ তার বইতে সিরিয়ালভাবে বিভিন্ন অধ্যায়ে সাজানোর পর মাহদির পর যা হবে এবং মাহদির পর হিমস নগরীতে কাহতানীর রাজত্বকালীন ঘটনা প্রসঙ্গে দুটি অধ্যায় বা পরিচ্ছেদই এনেছেন। এরপরেও আর কি দলিল দরকার হয় যে যেই আমীরের পিছনে ঈসা (আঃ) নামাজ পড়বেন তিনি ইমাম আল-মাহদী নয় বরং তার মৃত্যুর পরে আরো অনেকে খলীফা হবেন এবং সর্বশেষ যিনি খলীফা হবেন ইমাম জাহজাহ তার সময়কালে ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব হবে। এরকম করলে এই বইটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তারপরও আরো কিছু হাদিস এখানে দেওয়ার চেষ্টা করছি ও শুধু কিছু রেফারেন্স দিয়ে আলোচনাটি বন্ধ করছি।

হযরত দীনার ইবনে দীনার (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, নিঃসন্দেহে মাহদী মৃত্যুবরণ করলে মানুষের মাঝে ব্যাপক গনহত্যা দেখা দিবে এবং একে অন্যকে হত্যা করবে। অনারবদের জয়জয়কার হবে এবং ভয়াবহ যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রকাশ পাবে। মানুষের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা এবং একতাবদ্ধতা থাকবেনা, এক পর্যায়ে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৩৪ [পথিক প্রকা: ১১৩১; তাহকীক: যঈফ])

হযরত কাতাদাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে, তখন তিনি দুই হাতে মানুষের মাঝে শান্তি বন্টন করবে। তারপর (তার মৃত্যুর পর) আবার ফিতনা দেখা দিবে, তখন আসবে মরিয়ম এর পুত্র ঈসা (আঃ)।

-      (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১২)

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে কায়স ইবনে জাবের আস সাদাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেন, অতিসত্ত্বর আহলে বায়তের একজন লোক (মাহদী) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তিনি গোটা পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করে দিবেন, যা ইতিপূর্বে জুলুম-নির্যাতনে পরিপূর্ণ ছিল। এরপর জনৈক কাহতানী (মানসুর) আমীর নিযুক্ত হবে!, কসম সে সত্ত্বার যিনি আমাকে হক্ব সহকারে পাঠিয়েছেন, উক্ত কাহতানীর পূর্বের শাসক (মাহমুদ) নিন্মমানের (দুর্বল চিত্ত) থাকবে।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৪৬ [পথিক প্রকা: ১১৪৩; তাহকীক: সহীহ])

একই রকমের বর্ণিত রেওয়ায়েত রয়েছে,

-        আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ- ১১৩৬, ১১৩৭, ১১৩৯, ১১৪০, ১১৪৪, ১২৩৪, ১২৩৮, ১২১৯, ১২৮০, ১৩৩৭, ১২২০, ১২৮২, ১২৯৯, ১২২১

-        সহীহ বুখারী তাওহীদ প্রকাশনী হাদিস নং- ৩৫১৭, ৭১১৭; মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৬৬

-        সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ৭০৪৪

-        আল-লুলু ওয়াল মারজান হাদিস নম্বরঃ ১৮৪৪

-        সহীহ বুখারী (ইফাঃ) হাদিস নম্বরঃ ৩২৫১

শতবর্ষী মুজাদ্দিদ নিয়ে হাদিস

সহীহ হাদিসে বর্ণিত, আল্লাহ প্রতি শতাব্দীতে তার দ্বীনকে সংস্কার করার জন্য মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন। তিনি আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত থেকে পরিশুদ্ধ ও বিদাআত মুক্ত করে আগের সেই দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনেন। এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার জানামতে রসূলুল্লাহ্‌ বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীতে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের তাজ্‌দীদ বা সংস্কার সাধন করবেন।

-        (সহীহ, সূনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৪১ [আলবানী একাঃ ৪২৯১]; হাকেম ৮৫৯২; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭০, ইবনে দাইলামী)

বেশির ভাগ মানুষ এই জামানার শতবর্ষী মুজাদ্দিদ বলতে ইমাম মাহদীকে বুঝে থাকেন যা আরেকটি ভুল ধারণা, যদিও তার আগমনের অনেক আলামত স্পষ্ট হচ্ছে দিন দিন। হাদিসের ভাষ্যমতে প্রতি শত বছরে একজন মুজাদ্দিদ আগমন করেন। ইসলাম ধ্বংসের বা বড় কোন ক্ষতি হওয়ার ঠিক একশত বছরের মাথায় আবারো মুজাদ্দিদ এর আগমন হয়ে থাকে। সর্বশেষ ইসলামের বড় ক্ষতি হয় ১৯২৪ সালে যার মাধ্যমে উসমানীয় খিলাফতের পতন ঘটে। এর একশত বছরের মাথায় বলতে ২০২৪ সালের মধ্যে এই দ্বীন সংস্কার করার জন্য একজন মুজাদ্দিদ এর প্রকাশ ঘটবেন। আর এটি অনারবী হিসাবে। যদি আরবী হিজরি হিসেবে গননা করা হয় তাহলে ৩ বছর কম হয়। তাহলে ৯৭ বছর পর হলে তা ২০২১ সাল হয়। এই হিসাব মতে প্রচার চলে যে ইমাম মাহদী এর আত্মপ্রকাশ এই দুইটি সালের একটিতে হবে। তাদের এই ধারণা দুইটিই ভুল। তবে এই সালের মধ্যেই একজন মুজাদ্দিদ এর আগমন হবে কারণ এটি সহীহ ভাবে বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে ও আগেও এরকম মুজাদ্দিদ এর আগমন হয়ে এসেছে। কিন্তু সবাই ইমাম মাহদীকেই এই শতবর্ষী মুজাদ্দিদ হিসেবে ধারণা করেন। কিন্তু তিনি ২০২৪ সালে আগমন করবেন না। তার আগমনের সাল হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। যদিও ইমাম মাহদী বা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ তিনিও একজন আম অর্থে মুজাদ্দিদ বা দ্বীন সংস্কারক ও পুরো পৃথিবীতে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন তবে তার আবির্ভাব হবে আল্লাহর খলীফা ও খলীফাতুল মুসলিমীন হিসেবে। ইমাম মাহদী এর আগমনের সময় বলা আছে যে সকল হাদিসে-

হযরত আবু কুবাইল (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, খিলাফত ধ্বংসের ১০৪ বছর পর মাহদীর উপর মানুষ ভিড় করবে। ইবনে লাহইয়া বলেন, উক্ত (খিলাফতের) হিসাবটা আজমী তথা অনারবী হিসাব মতে। আরবী হিসাব মতে নয়।

-        (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৬২ [পথিক প্রকা: ৯৬২; তাহকীক: যঈফ]; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮১১)

এই হাদিস থেকে জানা যায়, উসমানীয় খিলাফত ধ্বংসের ১০৪ বছরের মাথায় ইমাম মাহদী এর আত্মপ্রকাশ হবে। অর্থাৎ ১৯২৪+১০৪= ২০২৮ ঈসায়ী সালে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, ১৪০০ হিজরীর পর দুই দশক ও তিন দশক পর ইমাম মাহদীর আগমন হবে।

-     (আসমাউল মাসালিক লিইয়াম মাহদিয়াহ মাসালিক লি কুল্লিদ দুনিইয়া বি আমরিল্লাহীল মালিকঃ লেখক- কালদা বিন জায়েদ, পৃষ্ঠা- ২১৬; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৭০)

সুতরাং ১৪০০+২০+৩০ =১৪৫০ হিজরী বা, ২০২৮ সাল। এই হাদিস থেকেও মাহদী এর আগমনের সময় জানা যায়। যদি ২০২৮ সালে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হয় তাহলে ২০২৪ সালে কোন মুজাদ্দিদ এর আগমন ঘটবে তা খুঁজে বের করা উচিত। কারণ ২০২৪ সালের মধ্যে একজন মুজাদ্দিদ এর আগমন ঘটার কথা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ