৬.৬১ ঈসা (আঃ) এর শাসন ক্ষমতা গ্রহণ ও সকল যুদ্ধের অবসান

 ইমাম জাহাজাহ থেকে ঈসা (আঃ) শাসন ক্ষমতা নিয়ে নিবেন এবং তিনিই তখন হবেন সারা বিশ্বের মুসলমানদের আমীর বা শাসক। তিনি দুনিয়াতে ৩৩ বছর শাসন করবেন ও এরপর মারা যাবেন। তার জামানাতে সকলেই ইসলাম গ্রহণ করবে এবং কোন অমুসলিম জীবিত থাকবে না। এ কারণেই জিঝিয়া অকার্যকর হয়ে যাবে। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে সকল আহলে কিতাবরা ঈসা (আঃ) এর আগমনের মাধ্যমে ঈমান এনে মুসলিম হবে।

আবূ হুরাইরাহ (রা:) সূত্রে বর্ণিত। নবী বলেনঃ আমার ও তাঁর অর্থাৎ ঈসা (আঃ)-এর মাঝে কোনো নবী নেই। আর তিনি তো অবতরণ করবেন। তোমরা তাঁকে দেখে এভাবে চিনতে পারবে যে, তিনি মাঝারি উচ্চতার, লাল-সাদা ও গেরুয়া রঙের মাঝামাঝি অর্থাৎ দুধে আলতা তাঁর দেহের রং হবে এবং তাঁর মাথার চুল ভিজা না থাকলেও মনে হবে চুল থেকে যেন বিন্দু বিন্দু পানি টপকাচ্ছে। তিনি ইসলামের জন্য মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন ও জিযিয়া রহিত করবেন। তিনি তাঁর যুগে ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম বিলুপ্ত করবেন এবং মাসীহ দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযা পড়বে।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩২৪ [ইঃ ফাঃ ৪২৭৩]; ইবনু হিব্বান; মুসনাদে আহমদ ৯২৭০; আত-তামহীদ, ইবনু আব্দিল বার ১৪/২০১)

হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, মুসলমানদের শেষ বিজয় হবে মরিয়ম পুত্র ঈসা (আঃ) এর মাধ্যমে আর তিনি ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে। তারপর আল্লাহ এক শীতল বাতাস দিয়ে মুমিনদের মৃত্যু ঘটাবেন।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৩; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২২৮)

হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) বলেন, রসূল কে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) কত বছর পৃথিবী শাসন করবেন? তিনি বললেন, ৩৩ বছর। আর জান্নাতি যুবকদের বয়সও হবে ৩৩ বছর।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৪)

... আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে। (প্রয়োজনীয় অংশ) *
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)
-       * ঈসা (আঃ) এর শাসনকাল নিয়ে কয়েকটি হাদিস পাওয়া যায় যাতে বলা হয়েছে ৭ বছর, ৩৩ বছর ও ৪০ বছর এবং সবগুলোই সহীহ রেওয়ায়েতে এসেছে। ৭ বছরের হাদিসটি যার থেকে বর্ণিত তার তথ্য ভুল (হয়তো স্মৃতিভ্রমের কারণে) হয়েছে তা আগেই বলা হয়েছে। আর ৩৩ বছর এবং ৪০ বছর এর মধ্যে ৩৩ বছর শাসনকাল হবে এটাই বেশি সঠিক এবং এর দলিলও বেশি এসেছে হাদিসে। আল্লাহু আলিম।

আরতাত রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দাজ্জালের পর ঈসা আলাইহিস সালাম ত্রিশ বছর জীবিত থাকবেন। আর প্রত্যেক বছর তিনি মক্কায় এসে নামাজ আদায় করবেন এবং তাকবির দিবেন।
-       (মাকতু, সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬২৩)

আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজদা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ ‘‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা (আঃ)-এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন। (আন-নিসা, আঃ ১৫৯)
-       (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩৪৪৮, ২২২২ [আঃ প্রঃ ৩১৯৩; ইসঃ ফাঃ ৩২০২])

ইবনু মুসাইয়িব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি আবু হুরাইরা (রা:) কে বলতে শুনেছেন, রসূল লেছেন, ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই হয়তো তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক, নিষ্ঠাবান নেতা হিসেবে অবতরণ করবেন। সে ক্রুশ ধ্বংস করবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযিয়া উঠিয়ে নিবেন। এত পরিমাণ অধিক সম্পদ হবে যে,মানুষ তা গ্রহণ করবে না।
-       (মারফু, মুআল্লাক, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬০১, একই রকম ১৬০৯; সহীহ মুসলিম ২৫২; সহীহ বুখারি ২২২২; সুনানু তিরমিযি ২২৩৩)

ইবনু তাউস রাহিমাহুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, তার পিতা তার নিকট বর্ণনা করে বলেন, ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম একজন সঠিক পথপ্রদর্শনকারী নেতা ও ন্যায়নিষ্ঠাবান হিসেবে অবতরণ করবেন। যখন তিনি অবতরণ করবেন, তখন তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযিয়া রদ করবেন। তখন সকল জাতি এক হয়ে যাবে। জমিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। এমনকি সিংহ গাভীর সঙ্গে থাকবে, আর গাভী সিংহকে নিজেদের ষাঢ় মনে করবে। এমনিভাবে বাঘ ছাগলের সঙ্গে থাকবে, আর ছাগল বাঘকে নিজেদের কুকুর মনে করবে। প্রত্যেক কষ্টদায়ক জিনিস অপসারিত করা হবে। মানুষ সাঁপের মাথার উপর পাড়াবে, তবুও সাঁপ তাকে ক্ষতি করবে না। কিশোরী ছোট কুকুরছানা বসানোর মতো সিংহকে বসাবে। আর এক আরবি ঘোড়ার মূল্য হবে বিশ দিরহাম।
-       (মাকতু, সনদ ও অর্থ সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬০৪; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ২০৮৪০; সহিহ বুখারি: ২১৩৬; সহিহ মুসলিম: ২৫২, ২৫৪)

আবু হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এরশাদ করেন, আমার খুবই ইচ্ছে জাগে, আমার হায়াতটা যদি (এত) দীর্ঘ হত যে, আমি ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর সাক্ষাৎ পেয়ে যেতাম। সুতরাং, আমার মৃত্যু যদি (এর) আগেই চলে আসে, তাহলে (তোমাদের মধ্যে) যে তাঁর সাক্ষাৎ পাবে, সে যেন অবশ্যই আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম জানায়।
-       (মুসনাদে আহমদ ৮/৯০, হাঃ ৭৯৫৮)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ