৬.৫০ দ্বিতীয় গাজওয়াতুল হিন্দ ও ইহুদীদের পরাজয়

 এমন সময় হিন্দুস্তান শাসন করবে ইমাম মাহমুদ এর একজন প্রতিনিধি। ঐ প্রতিনিধি ইহুদীদের সাথে শান্তি চুক্তি করে, হিন্দুস্তানের এক বিরাট অঞ্চলে তাদের বসবাস করতে দিবেন। তার মারা যাওয়ার পর আরেকজন প্রতিনিধি দায়িত্বে থাকবেন। এক সময় ইহুদীরা চুক্তি ভঙ্গ করে হিন্দুস্তানের কিছু এলাকা দখল করে নিবে। তখন, সে সময় শাসন ক্ষমতায় থাকা ইমাম মাহমুদের এক প্রতিনিধি বিশ্ব শাসক জাহজাহ এর নিকট একটি চিঠি পাঠাবে। তখন জাহজাহ গোটা বিশ্বের বাদশা বা খলীফা তাই তিনি জেরুজালেমেরও বাদশা। আর জাহজাহ তখন জেরুজালেম থেকে এক বিরাট সৈন্যদল ভারতের দিকে পাঠাবেন যাদের হাতে কালো পতাকা থাকবে। উক্ত সৈন্যদল ভারতে এসে ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে ও ইমাম মাহমুদ এর ঐ প্রতিনিধিকে সহায়তা করবে। তখন হিন্দুস্তান আবার মুসলমানদের দখলে আসবে। মানে আবারো গাজোয়াতুল হিন্দ হবে। এরপর তারা সেই ইহুদী নেতাদের শিকল পড়িয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাবেন এবং তারা শামে গিয়ে ঈসা (আঃ) এর সাক্ষাৎ পাবেন। অর্থাৎ এর পরপরই দাজ্জাল এবং ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব ঘটবে।

হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলঃ হে আল্লাহর রসূল ! তাহলে মানুষ দাজ্জালকে দেখবে কখন? তিনি বললেন, যখন জাহজাহ পৃথিবী শাসন করবে তখন হিন্দুস্তান আবারও ইহুদীদের দখলে যাবে। আর তখন বায়তুল মুকাদ্দিস মুসলমানরা শাসন করবে। আর সেখান থেকে জাহজাহ কালোপতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে। *
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)
-       * অর্থাৎ হিন্দুস্তান ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে বিজয় হওয়ার পর অদূর ভবিষ্যতে আবার এই হিন্দুস্তানের কিছু এলাকা ইহুদীরা দখল করে নিবে। আর তখন খলীফা এবং খিলাফত বাইতুল মুকাদ্দাসে থাকায় সেখানকার শাসক বা খলীফা সেখান থেকে হিন্দুস্তানে বাহিনী পাঠাবেন আর তাদের সাথেও কালো পতাকা থাকবে।

হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, রসূলুল্লাহ বলেছেন, খুব শীঘ্রই হিন্দুস্তানের মুশরিকদের পতন হবে। আর তা হবে এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে। আর তার নাম হবে মাহমুদ। আল্লাহ তার মাধ্যমে হিন্দুস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। অতঃপর তার মৃত্যুর পর তার এক প্রতিনিধির ইহুদীদের সাথে শান্তি চুক্তি হবে এবং ইহুদীরা হিন্দুস্তানের একটি অঞ্চল দখলে নেবে। সাহাবীগণ বলল, হে আল্লহর রসূল তারা কী শান্তি চুক্তি রক্ষা করে সেখানে বসবাস করবে? তিনি (রসূল ) বললেন, না। বরং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে প্রতারণা করে হিন্দুস্তান দখলে আনবে এবং সেখানে বসবাস করবে। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! মুসলমানগণ কি তাদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, করবে। সে সময় মাহমুদের প্রতিনিধি বিশ্ব শাসকের নিকট সে ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে একটি পত্র পাঠাবে। তখন শাসক বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সেখানে (হিন্দে) একদল সেনা পাঠাবে এবং আবার ইহুদীদের পরাজিত করবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫৩৮, ১৭০৩; কিতাবুল আক্বিব ১৩৭)

হযরত বিলাল ইবনে বারাহ (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুসলমানরা শাসন করবে। আবার তা মুশরিকরা দখল করবে এবং তারাই সেখানে তাদের সকল হুকুম প্রতিষ্ঠা করবে। আবার তা মুসলমানরা বিজয় করবে যাদের নেতা হবে মাহমুদ এবং সেখানে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কিন্তু লা'নত ইহুদিদের প্রতি। একথা বলে তিনি (রসূল ) রাগন্নিত হয়ে গেলেন। তার চেহাড়ায় রক্তিম চিহ্ন প্রকাশ পেল। সাহাবীগণ তাদের কন্ঠ নিচু করে বললেন, হে আল্লাহর রসূল সেখানে ইহুদিদের কর্ম কী? তিনি বললেন, অভিশপ্ত জাতিরা মাহমুদের এক জন প্রতিনিধির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং সেখানকার (হিন্দের) একটি অঞ্চল তাদের দখলে নেবে। সাহাবীগণ বললেন, তখন কী তারা (মুসলমানরা) অভিশপ্ত জাতিদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, হ্যা করবে। আর তাদের সাহায্য করবে বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) একজন বাদশা (জাহজাহ)।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৮; কিতাবুল আক্বিব ১৩৮)

হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুশরিকদের থেকে মুমিনরা বিজয় করবে। আর তাদের নেতা হবে মাহমুদ। হিন্দুস্তানে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। আর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। তখন শামীম বারাহ আল্লাহর হুকুমত অটল রাখবে এবং তার মৃত্যুর পর সুশৃঙ্খল ভাবে চলতে থাকবে। এমন সময় এক প্রতিনিধির সাথে ইহুদীদের চুক্তি হবে এবং একটি অঞ্চলে তারা বসবাস করবে। অতঃপর, ইহুদীরা চুক্তি ভঙ্গ করে হিন্দুস্তান দখলে নেবে। তখন বায়তুল মুকাদ্দাসের (জেরুজালেমের) বাদশা ইহুদীদের পরাজিত করবে।
-       (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৯; কিতাবুল আক্বিব ১৪০)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূলে পাক আমাদের নিকট থেকে হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধ পেয়ে যায়, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলবো। যদি নিহত হই তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি বেঁচে যাই তাহলে আমি হব জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি প্রাপ্ত আবু হুরায়রা।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭৪)

... এরপর বনু হাশেমের জনৈক লোক (জাহজাহ) তার স্থলাভিষিক্ত হবে। তার হাতেই রোমানরা পরাজিত হবে এবং ইস্তাম্বুল বিজয় হবে। অতঃপর সে রোমিয়া নগরীর দিকে অগ্রসর হবে এবং সেটা জয় করতঃ সেখানে গচ্ছিত রাখা সম্পদগুলো বের করে আনবে এবং সেখানে থাকা হযরত সুলাইমান ইবনে দাউদ (আঃ) এর দস্তরখানাও বের করবে। অতঃপর বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে অবস্থান করবে। তার যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) ও আসমান থেকে অবতরন করবে। ঐ শাসকের পিছনে হযরত ঈসা (আঃ) নামায আদায় করবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০০ [পথিক প্রকা: ১১৯৭; তাহকীক: সহীহ])

হযরত আরতাত (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত খলীফার (জাহজাহ) নেতৃত্বে ভারতের যুদ্ধ সংগঠিত হবে, সে হবে ইয়ামানের (ইয়ামানী হবেন)। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা:) ও এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০১ [পথিক প্রকা: ১১৯৮; তাহকীক: সহীহ])

হযরত সাফ্ওয়ান ইব্নে আমর জনৈক সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি রসূলুল্লাহ থেকে রেওয়ায়েত করেন, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেন, আমার উম্মতের একদল ভারতের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয়ী করবেন। এক পর্যায়ে শিকল পড়া অবস্থায় ভারতের রাজার সাথে মুসলমানদের স্বাক্ষাৎ হবে। এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী প্রত্যেক যাবতীয় অপরাধ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর তারা শাম নগরীর দিকে অগ্রসর হবে এবং সেখানেই তারা সায়্যিদুনা হযরত ঈসা (আঃ) কে পেয়ে যাবে। *
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০২ [পথিক প্রকা: ১১৯৯; তাহকীক: যঈফ])
-       * ভারতে তখন একটি অংশ চুক্তিতে ইহুদীরা বসবাস করবে এবং পরে চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং পরাজয় বরণ করবে।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত কাব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বায়তুল মোকাদ্দাসের জনৈক বাদশাহ (জাহজাহ) ভারতের দিকে সৈন্য প্রেরণ করে ভারত জয় করবেন এবং সেখানে অবস্থিত যাবতীয় সম্পদসমূহ হস্তগত করার পর সেগুলোকে বায়তুল মোকাদ্দাসের অলংকার হিসেবে রেখে দিবেন। এরপর ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্র জয় করার পর দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত তারা ভারতেই অবস্থান করতে থাকবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২১৫ [পথিক প্রকা: ১২১২, তাহকীক: যঈফ])

ইসহাক ইবনে রাহুবিয়া রহ. ও তার মুসনাদে উল্লেখ করেছেন। তার বর্ণনায় কিছুটা সংযোজন রয়েছে। তাই তার বর্ণনাটিও আমরা নিন্মে হুবহু উল্লেখ করে দিচ্ছি-

হজরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন, একদিন রসূল হিন্দুস্তানের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ তাআলা ঐ মুজাহিদদেরকে বিজয় দান করবেন। এমনকি ঐ মুজাহিদরা মুশরিকদের শাসকদেরকে ডাণ্ডাবেড়ি পড়িয়ে বন্দি করে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা ঐ সকল মুজাহিদকে ক্ষমা করে দেবেন। অতঃপর যখন তারা ফিরে আসবে, তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে সিরিয়াতে পাবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা:) বলেন আমি যদি সেই গাজওয়া পেয়ে যাই, তাহলে আমি আমার নতুন ও পুরাতন সকল সম্পদ বিক্রি করে দেবো এবং তাতে অংশগ্রহণ করবো। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিজয় দান করবেন এবং আমি ফিরে আসবো তখন আমি এক মুক্ত আবু হুরাইরা হয়ে ফিরে আসবো। সিরিয়াতে যখন আসবো সেখানে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাত করবো। হে আল্লাহর রসূল ঐ সময় আমার একান্ত ইচ্ছে হলো, আমি তাঁর নিকট পৌঁছে তাঁকে বলবো, আমার আপনার পবিত্র সংস্রবের সৌভাগ্য নসিব হয়েছে। (বর্ণনাকারী বলেন) যে নবীজী আবু হুরাইরা (রা:) এর একথা শুনে মুচকি হাসলেন।
-       (মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহুবিয়া; ১/২৬৪, হাদিস নং ৭৩৫)

হজরত কাব (রা:) এর হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের এক বাদশাহ হিন্দের দিকে একটি বাহিনী পাঠাবে। মুজাহিদগণ হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করে তাদের যাবতীয় সম্পদ উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। অতঃপর ঐ বাদশাহ সেই ধনভান্ডারকে বাইতুল মুকাদ্দাসের সংস্কার ও সৌন্দর্যের কাজে ব্যয় করবে। সেই বাহিনী হিন্দুস্তানের নেতাদেরকে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে ঐ বাদশাহর সামনে উপস্থিত করবে। তখন প্রায় গোটা পৃথিবী তার শাসনের অধীনে থাকবে (অর্থাৎ তিনিই মুসলিমদের আমীর থাকবেন)। ভারতে তাদের অবস্থান দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া পর্যন্ত থাকবে।
-       এই বর্ণনাটি ইমাম বুখারী রহ.- এর উস্তাদ নুয়াঈম ইবনে হাম্মাদ রহ. তার কিতাবুল ফিতানে বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে হজরত কাব (রা:) থেকে বর্ণনা করার বর্ণনাকারীর নাম নাই। এজন্য এই হাদিসটি বিচ্ছিন্ন হাদিসের অন্তর্ভূক্ত। [আল-ফিতান; গাজওয়াতুল হিন্দ অধ্যায়, ১/৯০৪, হাদিস নং ৩৫২১]
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৫ [পথিক প্রকা: ১২৩১; তাহকীক: যঈফ])

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ একদা হিন্দের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তোমাদের পক্ষ থেকে একদল সৈন্য হিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে আল্লাহ তাআলা হিন্দের বিপক্ষে তোমাদেরকে জয়লাভ করাবেন। তাদের নেতা-রাজাদের শিকল দ্বারা বেধে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা তাদের (যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের) যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর যখন সেই বিজয়ী মুসলিমরা (শামে) ফিরে আসবে তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে (শামে) সিরিয়াতে পাবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) উল্লিখিত হাদীস বর্ণনার পর বলেন, আমি যদি হিন্দের সেই যুদ্ধ পাই তাহলে আমি আমার নতুন ও পুরাতন সকল সম্পদ বিক্রি করে দেবো এবং তাতে অংশগ্রহণ করবো। যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে বিজয় দান করবেন এবং আমি ফিরে আসবো, তখন আমি এক (জাহান্নাম হতে) মুক্ত আবু হুরায়রা হয়ে ফিরে আসবো। যে সিরিয়াতে এমন মর্যাদা নিয়ে ফিরে আসবে, সে সেখানে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে পাবে। হে আল্লাহর রসূল ঐ সময় আমার একান্ত ইচ্ছে হলো, যে আমি তাঁর নিকট পৌঁছে তাঁকে বলবো, যে আমি আপনার সাহাবী। (বর্ণনাকারী বলেন) নবীজী আবু হুরাইরা (রা:) এর একথা শুনে মুচকি হাসলেন এবং হাসি দিয়ে বললেন, অনেক কঠিন (অনেক দূর) বা ভালো ভালো।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৬ [পথিক প্রকা: ১২৩২; তাহকীক: যঈফ])

ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াই (মৃ: ২৩৮ হি:) নিজ সনদে হযরত আবু হুরায়রাহ রাঃ-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ একদিন হিন্দ-এর উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন: অবশ্যই তোমাদের (মুসলমানদের একটি) সৈন্যদল হিন্দের সাথে গাজওয়া (জিহাদ) করবে, এতে আল্লাহ (তাআলা তোমাদের মুজাহিদগণকে) তাদের উপর বিজয় দান করবেন। এমন কি তারা সিন্দ- এর (এলাকাভুক্ত) রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে শিকলে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। এরপর তারা ফেরত যাবে এবং শাম-এ (গিয়ে) তারা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর দেখা পাবে। (রসূলুল্লাহ -এর একথা শুনে) হযরত আবু হুরায়রাহ (রা:) বলেন: আমি যদি (আমার জীবনকালে) সেই গাজওয়া (জিহাদ) পেয়ে যাই, তাহলে আমার নতুন-পুরাতন তল্পিতল্পা (সম্পদ) সব বিক্রি করে দিয়ে সেই গাজওয়ায় অংশ নিবো। এরপর আল্লাহ তাআলা যখন আমাদেরকে বিজয় দান করবেন এবং আমরা সেখান থেকে ফিরে আসবো, তখন আমি আবু হুরায়রাহ হবো (দোযখের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত। (আহা! সেই সময়ে আবু হুরায়রাহর কি আনন্দ হত, যখন) সে শাম-এ গিয়ে সেখানে আল-মাসিহ ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর দেখা পেতো! আমার খুব ইচ্ছে হয় তাঁর সান্নিধ্যে যেতে এবং তাঁকে এই খবর দিতে যে আমি আপনরা সাহাবী -ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ (আমার একথা শুনে) মুচকি হেসে দিলেন।
-       (মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুবিয়্যা ১/৪৬২ হাঃ ৫৩৭)

হযরত আরতাত (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত ইয়ামানী (জাহজাহ) খলীফার নেতৃত্বে কুস্তুনতুনিয়া (ইস্তাম্বুল) এবং রোমানদের (কায়সার সম্রাটের শহর ইউরোপ) এলাকা বিজয় হবে। তার যুগে দাজ্জালে আবির্ভাব হবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) আগমন করবেন। তার আমলে (দ্বিতীয়) ভারতের যুদ্ধ সংগঠিত হবে, যে যুদ্ধের কথা হযরত আবু হুরায়রা বলে থাকেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৮ [পথিক প্রকা: ১২৩৪; সহীহ])

হজরত সাফওয়ান ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত এবং হুকুমের দিক থেকে মারফু দরজার অন্তর্ভূক্ত। তিনি বলেন, তাকে কিছু লোকে বলেছেন, নবীজী বলেছেন, আমার উম্মতের একদল লোক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয়ী করবেন। এক পর্যায়ে তারা ভারতের রাজা-নেতাদের শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাআলা তাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং তারা শামের দিকে ফিরে যাবে। অতঃপর শাম দেশে হযরত ঈসা (আঃ) কে পেয়ে যাবে।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২৩৯ [পথিক প্রকা: ১২৩৫; তাহকীক: যঈফ])

নাহিক বিন সুরাইম আস-সাকুনী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, অবশ্যই মুশরেকদের সাথে তোমাদের যুদ্ধ হবে। এমনকি তোমাদের (মুসলমানদের) বাকি অংশ দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে -উরদুনে অবস্থিত (একটি) নহরের ধারে, যার পূর্ব পার্শ্বে থাকবে তোমরা, আর তার পশ্চিম পার্শ্বে থাকবে ওরা। (রাবী বলেন:) আমি জানি না, সেদিন উরদুন (অঞ্চলটি) পৃথিবীর কোথায় হবে।
-       (মুসনাদে বাযযার  ৪/১৩৭ হাঃ ৩৩৮৭; মুসনাদে শামেঈন, ত্বাবরাণী ; আল-আহাদ ওয়াল মাছানী, ইবনু আবি আসিম, হাদিস ৭৭৩; আত-ত্ববাকাত, ইবনে সাদ- ৭/৪২২; মুসনাদে ফিরদাউস, ইবনে দাইলামী ৪/১৮৬; তারিখে দামেশক, ইবনু আসাকীর ৬২/৩২৩; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী ৭/৩৪৯)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ