গাজওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দের যুদ্ধ ভবিষ্যতে দুই বার হবে। অর্থাৎ এই হিন্দ নামক স্থানে আরো দুইবার মর্যাদাপূর্ণ এই যুদ্ধ সংঘটিত হবে। এই দুই যুদ্ধের মর্যাদা একই সমান। কিন্তু এই দুই যুদ্ধের সাথে ইমাম মাহদী বা ঈসা (আঃ) এর কোন সংযোগ বা তাদের কোন ভূমিকা আছে কিনা তা জানা অতীব জরুরী একটি বিষয়। তাদের আবির্ভাবের আগে বা পরে কখন এই যুদ্ধ হবে বা তাদের জামানায় আর কি যুদ্ধ আছে তা হাদিস দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এই পরিচ্ছেদে।
ইমাম মাহদীর সাথে গাজওয়াতুল হিন্দ ও অন্যান্য যুদ্ধের সম্পর্কঃ
অনেকের ধারণাতীত বর্ণনার মধ্যে একটি হচ্ছে ইমাম মাহদী এসে যুদ্ধ করবেন। হিন্দের যুদ্ধও তার সময়ে বা তিনিই করতে পারেন। কারণ সাধারণভাবেই ভাবতে পারে যে, এরকম একটি মর্যাদাপূর্ণ যুদ্ধে ইনি ছাড়া আর কে আমীর হতে পারে! তবে অসংখ্য হাদিসের কিতাব খুঁজেও এটি পাওয়া যায় না যে, ইমাম মাহদী এসে কোন যুদ্ধ করবেন বা কোন যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন। কারণ তাঁর আগমনের আগেই ইসলামী শাসন কায়েম এর মত বৈশ্বিক অবস্থা তৈরি হয়ে যাবে তাঁর আগে আগমনকারী ইমামদের-নেতাদের মাধ্যমে, তার খিলাফত প্রতিষ্ঠার সাহায্যকারী দলের মাধ্যমে। হাদিসেই এসেছে যে, যখন ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ করবে তখন এই খবর জেনে সুফিয়ানীর দল তাকে হত্যা করতে রওনা দিবে এবং সেই দলটি বায়দাহ নামক প্রান্তরে যা হচ্ছে মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি এক স্থান, সেখানে ধ্বসে যাবে। এটা হচ্ছে মাহদী এর প্রকাশ পাওয়ার পরের তাকে আক্রমন করতে যাওয়া তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী দলের অলৌকিক পরাজয়। তাহলে তার প্রকাশের পর আর কে তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে আসবে? আর কার সাহস হবে তাকে রুখতে যাবার? অর্থাৎ, তার সময়কালে সকলেই তার বশ্যতা স্বীকার করে নিবে এবং হিন্দ, ইরান, আফগান, বাইতুল মুকাদ্দাস, আরব এগুলোতে আগে থেকেই মুসলিমরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে রাখবে। হাদিসে এসেছে-
হযরত ইবনে ওহাব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমি আবু ফারেস থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ কে বলতে শুনেছি যে, মাহদীর অবির্ভাবের আলামত বা নিদর্শন হলো খোলা প্রান্তর সৈন্য সহকারে ধ্বসে যাওয়া। আর সেটাই মাহদীর অবির্ভাবের আলামত।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩৩)
হযরত তুবাই (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন- আশ্রয়প্রার্থী (ভণ্ড মাহদী দাবিদার) আচিরেই মক্কার নিকট আশ্রয় চাইবে। কিন্তু তাকে হত্যা করে দেওয়া হবে। অতঃপর মানুষ এক বুরহা সময় বসবাস করবে। অতঃপর আরেকজন আশ্রয় চাইবে। যদি তুমি তাকে পাও তাহলে তোমরা তাকে আক্রমন করিও না। কেননা সে ধ্বসনেওয়ালা সৈন্যদলের একজন সৈন্য। (অর্থাৎ যারাই তাকে আক্রমণ করতে যাবে, তারাই মাটির নিচে ধ্বসে যাবে)
- (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৩৫)
আর হাদিসে এসেছে, ঠিক এই বায়দাহ প্রান্তর ধ্বসে যাওয়ার পরই সুফিয়ানী পরাজয় স্বীকার করবে এবং এরপর ইমাম মাহদী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন এবং সেই সময়ে এমন আর কোন শক্তিই থাকবে না, যারা ইমাম মাহদী এর দলের সাথে লড়ার ক্ষমতা রাখবে। তার কাছে (আহলে বদর সংখ্যক) ৩১৩ জন ও কিছু বর্ণনায় ৩০০ জন বীরযোদ্ধা সেনাপতি বায়াত গ্রহণ করবে।
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন বনু আব্বাসের একটি কালো ঝান্ডা বের হবে (৭৫০-১২৫৮ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল)। অতঃপর খোরাসান থেকে আরেকটি কালো ঝান্ডা বের হবে। তাদের টুপি হবে কালো। তাদের পোশাক হবে সাদা রং এর। তাদের সম্মুখে একজন লোক থাকবে যাকে শুয়াইব ইবনে সালেহ অথবা সালেহ ইবনে শুয়াইব ডাকা হবে। সে হবে তামিম গোত্রের। তারা সুফিয়ানীর সৈন্যদের কাছে পরাজিত হবে। এমনকি তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থান নিবে। তারা মাহদীর রাজত্বের জন্য পথ সহজ ও প্রস্তুত করবে। আর সিরিয়া হতে তিনশত লোক তার সাথে মিলিত হবে। তার বের হওয়া ও মাহদীর নিকট বিষয়সমূহ (ক্ষমতা) সমর্পণ করার মধ্যে বাহাত্তর মাসের ব্যবধান হবে।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৪)
খোরাসান থেকে বের হওয়া কালো পতাকাবাহী বাহিনী ইমাম মাহাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের পূর্বে ইরাকের কুফা নগরীতে ইমাম মাহদীর প্রধান শত্রু তৎসময়ের শক্তিশালী সুফিয়ানীর দলের মোকাবিলা করবে। হাদিসে এসেছে-
হযরত আরতাত (রা:) বলেন, সুফিয়ানী কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানীর সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদীর দিকে আহ্বান করবে। অতঃপর মাহদী ও মানসূর উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানী উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদী ও মানসূর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানীর বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদী মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানীর লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানীর লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে।
- (আল ফিতান ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)
দেখা গেল যে, সুফিয়ানীর সাথে যুদ্ধটিও মাহদী এর হাতে বায়াত নেওয়ার আগেই সংঘটিত হচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইমাম মাহদী এর আবির্ভাব ও বায়াত নেওয়ার আগেই ইসলামী খিলাফত তৈরির মত যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে যাবে। এরপর আর কোন যুদ্ধই হবে না ইমাম মাহদীর যুগে। তবে কয়েকটি বাদে। সেটি হচ্ছে তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর তখনও যারা খিলাফত মেনে নিবে না তাদের কাছে সৈন্যদল প্রেরণ করে বাধ্য করা ও জিযিয়া প্রদানে বাধ্য করা যা খুব ছোটখাটো যুদ্ধ। ইমাম মাহদী এর আবির্ভাবের পর তুর্কিদের সাথে একটি যুদ্ধ হবে যা হবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের সময়কার শেষ পর্যায়ের যুদ্ধ। তবে সেই যুদ্ধেও তিনি সেনাপতি বা আমীর থাকবেন না। হাদিসে এসেছে-
হযরত আরতাত থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন প্রথম যে পতাকা যা মাহদী গ্রহণ করবে তা সে তুর্কের দিকে পাঠাবে। অতঃপর তাদের পরাজিত করবে। এবং তাদের সাথে বন্দি ও মাল সম্পদ থেকে যা থাকবে তা গ্রহণ করবে। অতঃপর সিরিয়ার দিকে সফর করবে। অতঃপর তা বিজয় করবে। অতঃপর তার সাথে থাকা প্রত্যেক মালিকানাধীনকে মুক্ত করে দিবে। আর তার সাথীদের তাদের মূল্য দিয়ে দিবে।
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১০৬০ [পথিক প্রকা: ১০৫৭; তাহকীক: সহীহ])
সিরিয়া বা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যাবেন এ জন্য না যে সেখানে যুদ্ধ করবেন। এর মানে হচ্ছে সেখানেও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। কারণ সে যখন সেখানে যাবে তার আগেই জেরুজালেম মুসলিমদের দখলে থাকবে। হাদিসে এসেছে-
হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, দুটি বালকের একসঙ্গের আক্রমনে ইহুদী সম্প্রদায় জেরুজালেম বা বাইতুল মুকাদ্দাস হারিয়ে ফেলবে। তাদের একটির নাম শুয়াইব ইবনে ছলেহ, অপরটির নাম হবে শামীম বারাহ।
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ৯১)
হযরত কাতাদাহ (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, মাহদীর আগমনের পূর্বে অভিশপ্ত জাতির সাথে শামীম বারাহর নেতৃত্ব মুমিনদের যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাস মুমিনদের দখলে আসবে।
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ৯৭)
হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অবশ্যই আমার বংশের মাহদীর আগমনের পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবে না। আর সে নিরাপদে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাস ভ্রমণ করবে। আর ততক্ষন মাহদী জেরুজালেম ভ্রমন করবে না, যতক্ষন না অভিশপ্ত জাতি থেকে তা শামীম বারাহর দখলে না আসে। আর অবশ্যই তা দিনের আলোর মত সত্য।
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ৯৬)
তাহলে হাদিসগুলো থেকে জানা গেল যে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আগের-পরের যুদ্ধ ও তার জামানায় আর যুদ্ধ হবে কিনা তার ব্যাখ্যা। এ থেকে পাওয়া যায় তার আবির্ভাবের সময় ও তার শাসনকালে হিন্দের যুদ্ধ হচ্ছে না বা তাতে তার কোন ভূমিকা থাকবে না। তার আগমনের আগেই হিন্দুস্তান ইমাম মাহমুদ এর নেতৃত্বে বিজয় হবে। আর এরপর কালো পতাকাবাহী দল ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায় বের হবে। তারা এবং পশ্চিমে প্রকাশ পাওয়া ইমাম মানসূর ও শুয়াইব ইবনে সালেহ একযোগ হয়ে মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে এবং পৃথিবীর বেশির ভাগ জায়গায়ই তখন তাদের শাসনের অধীনে থাকবে। আর অন্যান্য যুদ্ধের সাথেও তার কোন সরাসরি সংযোগ নেই। আর বহু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে তাঁর জামানায়/ শাসনকালে পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করবে। তাঁর খিলাফতের সময়কালে আর কোন যুদ্ধ সংঘটিত হবে না যা উপরে হাদিস দ্বারাই প্রমানিত। কারণ তার আগমনের পূর্বেই বিশ্বের বেশির ভাগ এলাকাই মুসলিমরা বিজয় করে নিবে। আর এমন কোন হাদিস কোথাও পাওয়াও যায় না, যাতে বলা আছে ইমাম মাহদী কোন যুদ্ধ করবেন বা কোন যুদ্ধে আমীর বা সেনাপতি থাকবেন।
ঈসা (আঃ) এর সাথে গাজওয়াতুল হিন্দ ও অন্যান্য যুদ্ধের সম্পর্কঃ
সর্বসম্মতিক্রমে সরাসরি হাদিসের প্রমাণ ও সকল মুহাদ্দিসগণের একই মত যে, দাজ্জাল এর আবির্ভাবের পরেই ঈসা (আঃ) আকাশ হতে অবতরণ করবেন বা তার পুনরায় আবির্ভাব হবে। তিনি এসে আবার সকল ফিতনার অবসান করবেন এবং পৃথিবীকে আবার শান্তিময় করবেন এবং আবারো রাজত্ব করবেন। তাহলে তার জামানাতে কি কি যুদ্ধ কখন হবে তা হাদিস দিয়ে দেখা যাক-
ইমাম মানসূর এর শাসন কালে আবারো ফিতনা দেখা দিবে। রোমানরা যুদ্ধ করবে। এরপর চুক্তি করবে তারপর আবার চুক্তি ভঙ্গ করবে। তার মোট শাসনকাল বিশ বছর যা অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এরপর সে অস্ত্র দ্বারা হত্যা হয়ে যাবে এবং আরেকজন শাসনভার গ্রহণ করবেন যার সময়ে আবার যুদ্ধ হবে ও তাতে বিজয় লাভ করবেন। হাদিসে এসেছে-
...এরপর বনু হাশেমের জনৈক লোক তার স্থলাভিষিক্ত হবে। তার হাতেই রোমানরা পরাজিত হবে এবং ইস্তাম্বুল নগরীর বিজয় হবে। অতঃপর সে রোমিয়া নগরীর দিকে অগ্রসর হবে এবং সেটা জয় করতে। সেখানে গচ্ছিত রাখা সম্পদগুলো বের করে আনবে এবং সেখানে থাকা হযরত সুলাইমান ইবনে দাউদ (আঃ) এর দস্তরখানাও বের করবে। অতঃপর বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে অবস্থান করবে। তার যুগেই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং হযরত ঈসা (আঃ) ও আসমান থেকে অবতরন করবে। ঐ শাসকের পিছনেই হযরত ঈসা (আঃ) নামায আদায় করবেন।
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০০ [পথিক প্রকা: ১১৯৭; তাহকীক: সহীহ])
হযরত আরতাত (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত খলীফার নেতৃত্বে ভারতের যুদ্ধ সংগঠিত হবে, সে হবে ইয়ামানের (ইয়ামানী হবেন)। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা:) ও এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০১ [পথিক প্রকা: ১১৯৮; তাহকীক: সহীহ])
হযরত সাফ্ওয়ান ইবনে আমর জনৈক সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে রেওয়ায়েত করেন, রসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন, আমার উম্মতের একদল ভারতের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয়ী করবেন। এক পর্যায়ে শিকল পরা অবস্থায় ভারতের (ইহুদী নেতারা) রাজার সাথে মুসলমানদের স্বাক্ষাৎ হবে। এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী প্রত্যেকের যাবতীয় অপরাধ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর তারা শাম নগরীর দিকে অগ্রসর হবে এবং সেখানেই তারা সায়্যিদুনা হযরত ঈসা (আঃ) কে পেয়ে যাবে। *
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১২০২ [পথিক প্রকা: ১১৯৯; তাহকীক: যঈফ])
- * ভারতে তখন একটি অংশে চুক্তিতে ইহুদীরা বসবাস করবে এবং পরে চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং পরাজয় বরণ করবে।
এই সকল হাদিস থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাবের কিছু আগেই দ্বিতীয় হিন্দের যুদ্ধটিও সংঘটিত হয়ে যাবে। আর এরপরে দাজ্জালের প্রকাশ হবে এবং তারপর ঈসা (আঃ) এর আবির্ভাব হবে।
রসূলুল্লাহ ﷺ এর গোলাম ছাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমার উম্মতের দুটি দল, আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দান করবেন। একদল যারা হিন্দুস্তানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে।
- (সহীহ, সূনান নাসাঈ ৩১৭৫ (ইঃ ফাঃ ৩১৭৮); সহীহাহ ১৯৩৪; সহীহ জামে' আস-সগীর ৪০১২; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৬৫)
এই হাদিস থেকেও সরাসরি বুঝা যায় যে, হিন্দুস্তানের যুদ্ধের মুজাহিদ আর তার সাথে যারা থাকবেন তারা দুই দল। তবে যেহেতু হিন্দুস্তানে দুইবার যুদ্ধ সংঘটিত হবে। সেই দ্বিতীয় হিন্দের যুদ্ধটি ঈসা (আঃ) এর আগমনের কিছুকাল আগেই সংঘটিত হবে।
হযরত কা'ব (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি অচিরেই মুসলমানরা এক দুর্বল বালকের নেতৃত্বে হিন্দুস্তান দখল করবে। আর এ যুদ্ধের ব্যপারেই তোমাদের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে। আর আল্লাহও এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই আল্লাহ মুশরিকদের পতন করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। একথা বলে তিনি সুরা ইব্রাহিম এর ৪৭ নং আয়াত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলঃ হে আল্লহর রসূল ﷺ! তাহলে মানুষ দাজ্জালকে দেখবে কখন? তিনি বললেন, যখন জাহজাহ পৃথিবী শাসন করবে তখন হিন্দুস্তান আবারও ইহুদীদের দখলে যাবে। আর তখন বায়তুল মুকাদ্দিস মুসলমানরা শাসন করবে। আর সেখান থেকে জাহজাহ কালো পতাকা নিয়ে এক দল সৈন্য হিন্দুস্তানে পাঠাবেন এবং হিন্দুস্তান দখল করবে। তারা সেখানে ইসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর আগমন পর্যন্ত অবস্থান করবে। আর আল্লাহর নবী ইসা (আ.) ৩৩ বছর পৃথিবী শাসন করবে।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৫০৭; কিতাবুল আক্বিব ১০০; আখীরুজ্জামানা আলমাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩৫)
আর এটাও হাদিস থেকে প্রমানিত যে, ঈসা (আঃ) এর শাসনকালে বা তার পরেও আর কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ হবে না।
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হকের পক্ষে যুদ্ধ করবে, তারা দুশমনদের উপর বিজয় থাকবে, তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
- (সহীহুল মুসলিম ২৯২, ৪৭১৭; সুনান আবু দাউদ ২৪৮৪; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫১, ১১৬৭; মুসনাদে আহমদ ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৪৫০)
আর ঈসা (আঃ) ই সকল মুসলিমদের নিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যা হবে মুসলিম উম্মাতের সর্বশেষ যুদ্ধ। তার জামানাতে দুটি সময় শুধু ফিতনা দেখা দিবে আর তা হচ্ছে দাব্বতুল আরদ এর উত্থান ও ইয়াজুজ-মা’জুজ এর আবির্ভাব। কিন্তু তাদের কারো সাথেই কোন যুদ্ধ ঈসা (আঃ) করবেন না। হাদিসে এসেছে-
......এমতাবস্থায় এদিকে ঈসা (আঃ) দুই ফিরিশতার পাখনায় তাঁর হাত রেখে গেরুয়া রঙ্গের বসনে স্বেত-শুভ্র মিনারার কাছে পূর্ব দামিশকে অবতরণ করবেন। তাঁর মাথা নীচু করলে পানি ঝরতে থাকবে আর তা উঠালে মোতির মত ফোটায় ফোটায় পানি পড়বে।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ যাকেই তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস স্পর্শ করবে সেই মারা যাবে। চক্ষু দৃষ্টি যেখানে গিয়ে শেষ হবে সেখানে পর্যন্ত তাঁর নিঃশ্বাসের বাতাস পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ করবেন এবং লুদ (বায়তুল মুকাদ্দাসের নিকটবর্তী একটি শহর)-এর নগর দরওয়াজার কাছে তাকে পাবেন। তারপর একে তিনি হত্যা করবেন।
আল্লাহ যতদিন চান তিনি এভাবে বসবাস করবেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাকে ইলহাম পাঠাবেন- ‘আমার বান্দাদেরকে তুর পাহাড়ে সরিয়ে নাও। আমি আমার এমন একদল বান্দা নামাচ্ছি যাদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা কারো নেই’। এরপর আল্লাহ তাআলা ইয়াজুজ-মাজুজের দল পাঠাবেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার বিবরণ মত প্রতি ’উচ্চ ভূমি থেকে তারা ছুটে আসবে’। তাদের প্রথম দলটি তাবারিয়া উপসাগর (শামে অবস্থিত একটি ছোট সাগর) অতিক্রম করা কালে এর মাঝে যা পানি আছে সব পান করে ফেলবে। এমন অবস্থা হবে যে, পরে তাদের শেষ দলটি যখন এই উপসাগর অতিক্রম করবে তখন তারা বলবে ’এখানে এক কালে হয়ত পানি ছিল’। আবার তারা চলবে এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে পর্বতে যেয়ে তাদের এই যাত্রার শেষ হবে। তারা পরস্পর বলবেঃ পৃথিবীতে যারা ছিল তাদেরকে তো বধ করেছি এসো এবার আসমানে যারা আছে তাদের শেষ করে দেই। তারপর তারা আসমানের দিকে তাদের তীর ছুঁড়বে। আল্লাহ তা’আলা তাদের তীরগুলোকে রক্ত রঞ্জিত করে ফিরিয়ে দিবেন। ঈসা ইবনে মারয়াম (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকবেন। তাদের অবস্থা এমন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে যে, আজকে তোমাদের কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার যে দাম, তাদের কাছে তখন একটি ষাড়ের মাথাও তদপেক্ষা অনেক উত্তম বলে মনে হবে।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তারপর ঈসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে মিনতি জানাবেন। আল্লাহ তাআলা তাদের গর্দানে ‘নাগাফ’ জাতীয় এক জীবানু মহামারীরূপে প্রেরণ করবেন। তারা সব ধ্বংস হয়ে মরে যাবে যেন একটি মাত্র প্রাণের মৃত্যু হল। এরপর ঈসা (আঃ) ও তার সঙ্গীগণ পাহাড় থেকে নেমে আসবেন, কিন্তু তারা এক বিঘৎ জায়গাও এমন পাবেন না যেখানে ইয়াজুজ-মা’জুজের গলিত চর্বি, রক্ত ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে না আছে। তারপ ঈসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে আবার মিনতি জানাবেন। তখন আল্লাহ তা’আলা উটের মত লম্বা গলা বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি প্রেরণ করবেন। পাখিগুলি ইয়াজুজ-মা’জুজদের লাশ উঠিয়ে নীচু গর্তে নিয়ে ফেলে দিবে। মুসলিমগণ তাদের ফেলে যাওয়া ধনুকে জ্যা, তীর এবং তূণীর সাত বছর পর্যন্ত জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করবে। আল্লাহ তাআলা প্রবল বৃষ্টি করবেন শহর বা গ্রামের কোন বাড়িঘরই তা থেকে রক্ষা পাবে না। সমস্ত যমীন ধৌত হয়ে যাবে এবং তা আয়নার মত ঝক ঝকে হয়ে উঠবে।
পরে যমীনকে বলা হবে, তোমার সব ফল ও ফসল বের করে দাও, সব বরকত ফিরিয়ে দাও। এমন হবে যে, সেদিন একটি আনার একদল লোক খেতে পারবে এবং একদল লোক এর খোসার নীচে ছায়া গ্রহণ করতে পারবে। দূধের মধ্যেও এমন বরকত হবে যে, একটি দুগ্ধবতী উট বহুসংখ্যক লোক বিশিষ্ট দলের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী ছাগল একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে।
এমন অবস্থায় তারা দিন গুযরান করতে থাকবে। হঠাৎ আল্লাহ তাআলা এক হাওয়া চালাবেন। এই হাওয়া প্রত্যেক মুমিনের রূহ কবয করে নিয়ে যাবে। বাকী কেবল দুষ্টু লোকেরা থেকে যাবে। এরা গাধার মত নির্লজ্জভাবে নারী সঙ্গমে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (প্রয়োজনীয় অংশ)
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০]; সুনান তিরমিজী ইঃ ফাঃ ২২৪৩ [আল মাদানী প্রকাঃ ২২৪০]; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৭৫; আবূ দাউদ ৪৩২১; ইবনু মাজাহ ৪০৭৫; মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ৩৬৫; আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১০৭৮৩; আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৯৮৮৪; সহিহাহ ৪৮১; তাখরিজ ফাযায়েলুশশাম ২৫;)
0 মন্তব্যসমূহ