হযরত বুরাইদা (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন মুনাফিক সম্প্রদায়, কাফেররাও নয়।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১২০৯)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, শেষ জামানায় মিথ্যাবাদী আলেম বৃদ্ধি পাবে, তারাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৪)
হযরত আলী (রা:) বলেন, অদূর ভবিষ্যতে মানব জীবনে এমন এক জামানা আসবে যখন ইসলামের নাম আর কুরআনের শব্দ বাক্য ছাড়া কিছুই থাকবে না। তারা তাদের মসজিদগুলোকে প্রাসাদ বানাবে বটে কিন্তু সেগুলো আল্লাহর স্মরণ থেকে শূণ্য থাকবে। সে যুগের অধিবাসীদের মধ্যে তাদের আলেমগণই হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। তাদের থেকেই ফিতনার উদ্ভব ঘটবে, আবার তা তাদেরই দিকে ফিরে যাবে।
- (তাফসীরে কুরতবী, ১২তম খণ্ড, পৃঃ ২৮০; সূরা মুহাম্মাদ, আঃ ২৬)
রসূল ﷺ জানতেন যে, তার পরে একদল আলেমদের জন্ম হবে যারা দ্বীনের ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞানার্জন করবে কিন্তু সে জ্ঞানকে দুনিয়াবী স্বার্থে ব্যবহার করবে, জেনে শুনে ইলম গোপন করবে, জালেম-কুফফার শাসকদের পক্ষে কথা বলবে। তাই তিনি আমাদেরকে এইসব দুনিয়ালোভী আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। রসূল ﷺ আরও বলেছেনঃ 'তোমরা জেনে রাখ সব খারাপের মাঝে সবচেয়ে বড় খারাপ হচ্ছে আলেমদের মাঝে যারা খারাপ তারা আর সব ভালোর মাঝে সবচেয়ে ভাল হলো আলেমদের মাঝে যারা ভালো তারা।"
- (সুনানে দারেমী ৩৭০; মিশকাত ২৪৯)
এরা ছোট দাজ্জাল বা তার চেয়েও ভয়ানক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, শেষ জামানায় অধিকহারে পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তাদের ঘাড়ে অধিক গোস্ত আর পেট উঁচু (ভুড়ি) হবে, তারাই দাজ্জাল।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আউস (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মতের জন্য কোন কিছুর ভয় করিনা, পথভ্রষ্ট আলেম ব্যতীত।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৫)
হযরত আবু যার (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ এর নিকট একদিন উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মতের জন্য দাজ্জালের চেয়েও অধিক ভয় করি। তখন আমি ভীত হয়ে পরলাম, তাই বললাম হে আল্লাহর রসূল ﷺ! এটি কোন জিনিস? যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মতের জন্য দাজ্জালের চেয়েও অধিক ভয় পান? আল্লাহর রসূল ﷺ বললেন, পথভ্রষ্ট আলেমগণ।
- (মুসনাদে আহমাদ ২০৩৩৫; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১০৫২)
রসূল ﷺ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য কোন কিছুরই ভয় করি না, পথভ্রষ্ট আলিমগণ ব্যতীত। এভাবে যখন আমার উম্মাহ্-এর বিরুদ্ধে তলোয়ার উঠানো হবে, এটা তুলে নেওয়া হবে না বিচার দিবস পর্যন্ত।”
- (মুসনাদ আহমাদ ১৬৪৯৩, ২১৩৬০, ৩১৩৫৯, ২০৩৩৪; আদ্-দারিমী ২১১, ২১৬)
এছাড়াও আরো হাদিস যা শেষ জামানার আলেমদের বিষয়ে আমাদের রসূল ﷺ বলে গেছেন তা ১.৪ নং অনুচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে।
যারা ফিতনা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে তারা তা চিনতে পারবে
হাদিসে এসেছে, হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতনাকালীন হক্ব-বাতিল উভয়টা একটি আরেকটির সাথে মিশ্রিত হয়ে যাবে কিন্তু যারা হক্বকে যথাযথ ভাবে জানবে এবং বুঝবে, কোনো ধরনের ফিতনা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
- (মাওকুফ, সনদ বিচ্ছিন্ন, আল ফিতান, ইবনে হাম্মাদ ১৩২)
আমাদের নবী ﷺ বিশেষভাবে শেষ জামানার আলেমদের সম্পর্কে বলে গেছেন। শেষ জামানায় বেশির ভাগ আলেম এর লেবাস পড়লেও তারা আলেম হবে না। তারা হবে পথভ্রষ্ট। তাদের ফিতনা দাজ্জালের ফিতনা থেকেও ভয়াবহ হবে কিছু বর্ণনায় উল্লেখ হয়েছে। তারা উম্মতকে দলে দলে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তারা কুরআন, হাদিস পড়লেও তা তাদেরকে গোমরাহী এর দিকে নিয়ে যাবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ফিতনা তোমাদেরকে জড়াবে তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাতে বড়রা আরো বৃদ্ধ হবে এবং ছোটরা বড় হতে থাকবে। মানুষ তাকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করবে। যখন তাতে কোন কিছু পরিবর্তিত হবে তখন লোকেরা বলবে এটা দ্বীন পরিপন্থী। কেউ জিজ্ঞাসা করলো তা কখন ঘটবে? তখন তিনি বললেন, যখন তোমাদের মধ্যে নেতারা আধিক্যতা লাভ করবে আর আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। বক্তাবৃন্দ আধিক্যতা লাভ করবে আর দ্বীনের বিজ্ঞ আলেমগণ (ফকীহ) কমে যাবে। তার দ্বীন ব্যতিত অন্য কিছু (বদদ্বীন) শিক্ষা করবে এবং তারা আখেরাতের আমলের বিনিময়ে দুনিয়া অন্বেষণ করবে।
- (আল ফিতান, ইবনে হাম্মাদ ৬৯; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৩৬৪৬৮)
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনু ইয়ামান (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে, যদ্বারা মানুষের জ্ঞান লোপ পাওয়ার উপক্রম হবে। এমনকি তখন অনেক তালাশ করেও কোনো জ্ঞানী লোক পাওয়া যাবেনা। এরপর রসূলুল্লাহ ﷺ তৃতীয় প্রকার ফিতনার কথা উল্লেখ করেছেন।
- (যঈফ, আল ফিতান, ইবনে হাম্মাদ ১০৭)
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ কিয়ামতের পূর্বে বিশেষ কিছু হত্যার কথা আলোচনা করেছেন, এমনকি মানুষ তার প্রতিবেশি, ভাই এবং চাচাতো ভাইকেও হত্যা করবে। এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, সেদিন কি আমাদের সাথে আমাদের জ্ঞান থাকবে? জবাবে রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যুগের অধিকাংশ লোকের জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। মানুষের মধ্যে নির্বোধ ও বোকারাই বাকি থাকবে। তারা নিজেদেরকে খুবই তুচ্ছ মনে করবে, আসলেই তারা অত্যন্ত তুচ্ছ হবে।
- (আল ফিতান, ইবনে হাম্মাদ ১১৫)
তবে এরপরও প্রত্যেক জামানায় কিছু হক আলেম থাকেন। আলেম শব্দের অর্থ জ্ঞানী এবং এই জামানায় যারা কুরআন সুন্নাহ অধ্যায়ন করেছে তাদেরকে আমরা আলেম বলে থাকি। তবে তারা যদি সেগুলোর অপব্যাখ্যা করে, অপপ্রচার করে, শাসকের দরবারে গমন করে তাহলে? তারপরও তাদের টাইটেল আলেমই দেওয়া হয় যদিও তারা জাহান্নামী নিকৃষ্ট জীব। তাই আমাদেরকে সত্য-মিথ্যার মিশ্রিত রূপ থেকে তা আলাদা করতে হবে। এদেরকে বাছাই করতে হবে এবং এই পথভ্রষ্ট আলেম নামক আগাছা তুলে ফেলতে হবে। এই জামানায় সঠিক ও বেঠিক নির্ণয় কথিত আলেম দিয়ে করা হলে তা হবে মূর্খতা। প্রত্যেক আলেমকে মাপতে হবে কুরআন-সুন্নাহ দিয়ে। এমনকি তাদের দশটি কথা থেকে দশটি কথাই কুরআন-হাদিস থেকে প্রমাণিত ও সঠিক গ্রহণযোগ্য যুক্তি-প্রমাণ ও দলিল দিয়ে যাচাই করে নিতে হবে। তবে এটাও সাধারণ যে অনেক আলেমগণ থেকে অনেক বিষয়ে ভুল হতে পারে। আমরা শুধু ভুলটুকু বাদ দিয়ে সঠিকটি গ্রহণ করবো, তার কারণে তাকে পরিত্যাজ্য করবো না। কিন্তু শাসকের দরবারে যাওয়া, জিহাদের অপব্যাখ্যা করা তা কোন সাধারণ ভুল নয়, এটা তাদের থেকে অজ্ঞাতে হয়ে যাওয়া ভুলও নয়। এটি মারাত্মক ভুল যা তাদের ইচ্ছাধীন বিষয় থেকেই হয়। এই জামানায় পথভ্রষ্ট আলেমদের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এছাড়াও অসংখ্য আলেমরা আজ গণতন্ত্র আর মিছিল-মিটিং নিয়ে পড়ে আছে, এটাকেই বলছে এখন জিহাদ। তারা কুরআন-হাদিস কম জানে বলে কি তাদের পথভ্রষ্ট আলেম বলা হয়েছে? তাহলে কি কি কারণে পথভ্রষ্ট আলেম উপাধি দেওয়া হয় এটা অনুসন্ধান করা সবার দরকার, নাহলে এই ফিতনার জামানায় যেকোন জাহান্নামী দলে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা অনেক। যেমনটি রসূল ﷺ এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইল্ম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইল্ম তুলে নেবেন (অর্থাৎ, আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে)। অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।”
এইসকল পথভ্রষ্ট আলেমদের চিন্হিত না করতে পারলে ভুলে তাদের ভ্রান্ত মতবাদে দীক্ষিত হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। যেমন পরিচিত ফরজ বিধান জিহাদ এর অপব্যাখ্যা। বেশির ভাগ পথভ্রষ্ট আলেমরা এর অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কুরআন-হাদিস উচ্চারণ করলেও তার অপব্যাখ্যা করে মুসলিম উম্মাহকে সত্য থেকে দূরে রাখে।
তাদের জন্য হাদিসে এসেছে
আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আম্র ইবনে আ'স (রা:) থেকে বর্ণিতঃ নাবী ﷺ বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইসরাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।”
- (সহীহ, সহীহুল বুখারী ১০৭; সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬; সুনান আবূ দাউদ ৩৬৫১; মুসনাদে আহমাদ ১৪১৬, ১৪৩১; রিয়াদুস সলেহিন ১৩৮৮; দারেমী ২৩৩)
হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, এমন এক সময় আসবে, যখন দেখবে, অনেক আলেম রয়েছে কিন্তু তাদের আমল থাকবে না। রাবি বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ তাদের পথভ্রষ্ট আলেম বলেছেন। আর মসজিদের বাহির থেকে দেখবে চাকচিক্য, কিন্তু সেখানে কোন ঈমানদার নেই। আর সেই যুগটাই মূর্খের যুগ।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৫৬)
শায়খূল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহিঃ) বলেছেনঃ “যদি কোন শায়খ কুরআন এবং সুন্নাহ হতে অর্জিত শিক্ষা অনুযায়ী আমল ত্যাগ করে এবং এমন বিচারকের অনুসরণ করে যে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রসূলের শিক্ষা অনুযায়ী বিচার করেনা, তখন সে একজন ধর্মত্যাগী এবং কাফের হিসেবে বিবেচিত হবে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত”।
- (আল ফাতওয়া, ইবনে তাইমিয়া, খন্ডঃ ৩৫, পৃষ্টাঃ ৩৭৩)
তবে তারা দ্বীনকে কখনো মিটাতে পারবে না
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তাঁরা দ্বীনকে মৃত্যুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। ঠিক তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত উমর (রা:) এর বংশ থেকে একজন বালককে পাঠাবেন। যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত (দ্বীন সংস্কারসাধন) হবে।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৬)
0 মন্তব্যসমূহ