৬.৫৯ ঈসা (আঃ) এর যুলফিকর হাতে লুদ্দ ফটকে কানা দাজ্জালকে হত্যা

 আবু খাইসামাহ, যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আর রাযী (রহঃ) ..... নাওওয়াস ইবনু সামআন (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রসূলুল্লাহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনার সময় তিনি তার ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেন। পরে অনেক গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত করেন যাতে তাকে আমরা ঐ বৃক্ষরাজির নির্দিষ্ট এলাকায় (আবাসস্থল সম্পর্কে) ধারণা করতে লাগলাম। এরপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তার কাছে গেলাম। তিনি আমাদের মধ্যে এর প্রভাব দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের ব্যাপার কি? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো ব্যক্তিত্বকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেছেন, আবার কখনো তার ব্যক্তিত্বকে বড় করে তুলে ধরেছেন। ফলে আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ বাগার মধ্যেই বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক ভয় করছি। তবে শোন, আমি তোমাদের) মধ্যে বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যদি দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকাবস্থায় দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন লোক নিজের পক্ষ হতে তাকে প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে তত্ত্বাবধানকারী।

দাজ্জাল যুবক এবং ঘন চুল বিশিষ্ট হবে, চোখ আঙ্গুরের ন্যায় হবে। আমি তাকে কাফির আবদুল উয্যা ইবনু কাতান এর মতো মনে করছি। তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূরা আল-কাহফ এর প্রথমোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা অটল থাকবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল ! সে পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ বললেন, চল্লিশদিন পর্যন্ত। এর প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যেদিন এক বছরের সমান হবে, সেটাতে এক দিনের সালাতই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তোমরা এদিন হিসাব করে তোমাদের দিনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! দুনিয়াতে দাজ্জালের অগ্রসরতা কি রকম বৃদ্ধি পাবে? তিনি বললেন, বাতাসের প্রবাহ মেঘমালাকে যে রকম হাকিয়ে নিয়ে যায়। সে এক কওমের কাছে এসে তাদেরকে কুফুরীর দিকে ডাকবে। তারা তার উপর ঈমান আনবে এবং তার আহ্বানে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশমণ্ডলীকে আদেশ করবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিবে, ফলে ভূমি গাছ-পালা ও শস্য উৎপন্ন করবে। তারপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুগুলো পূর্বের চেয়ে বেশি লম্বা কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং পেটভর্তি অবস্থায় তাদের কাছে ফিরে আসবে। তারপর দাজ্জাল অপর এক কাওমেরর কাছে আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি ডাকবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করবে। অমনি তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ কিছুই থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে সেটাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন জমিনের ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতুষ্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারপাশে সমবেত হয়। অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দুটুকরো করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহবান করবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রববুল আলামীন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুজন ফেরেশতার কাঁধের উপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রং এর জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকবেন তখন ফোটা ফোটা ঘাম তার শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের কাছে যাবেন সে তার শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তার দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে বাবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।

অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ঈসা (আঃ) তাদের কাছে গিয়ে তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহের ব্যাপারে খবর দিবেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০])

মক্কা-মদ্বীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই সে (দাজ্জাল) প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় বায়তুল মাকদিসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) ফিলিস্তিনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ) কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা। ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।
-       (নেহায়া, আল-ফিতান ওয়াল মালাহিম, ১/১২৮-১২৯)

...অতঃপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) দামেশকের পূর্ব প্রান্তে একটি সাদা মিনারে অবতরণ করবেন এবং লুদ্দ নামক স্থানের দ্বারপ্রান্তে দাজ্জালকে নাগালে পাবেন এবং হত্যা করবেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩২১ [ইঃ ফাঃ ৪২৭০]; মুসলিম; তিরমিযী; মুসনাদে আহমাদ)

কুতায়বা (রহঃ), মুজাম্মা ইবন জারিয়া আনসারী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছিঃ ইবন মারয়াম [ঈসা (আঃ)] দাজ্জালকে লুদ্দ দ্বার প্রান্তে হত্যা করবেন।
-       (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৪৪ [ইঃ ফাঃ ২২৪৭]; কিচ্ছাতুল মাসিহি দাজ্জালি ওয়া কাতলুহু)
-       এ বিষয়ে ইমরান ইবন হুসায়ন, নাফি ইবন উতবা, আবূ বারযা, হুযায়ফা ইবন আসীদ, আবূ হুরায়রা কায়সান, উসমান ইবন আবুল আস, জাবির, আবূ উসামা, ইবন মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবন আমর, সামুরা ইবন জুন্দুব, নাওওয়াস ইবন সামআন, আমর ইবন আওফ এবং হুযায়ফা ইবন ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান-সহীহ।

আবু উমামা বাহেলি (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে তার থেকে পলায়নের পর পেয়ে যাবেন, যখন সে তার অবস্থানের স্থানে পৌঁছবেন, তখন দাজ্জালকে পূর্ব দিকের লুদ বাবের নিকট পাবেন। অতঃপর দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৫৯; তাহকীক: মারফু, জাইয়িদ (উত্তম))

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করবেন এমতাবস্থায় যে, দাজ্জাল মানুষকে বাইতুল মুকাদ্দাসে আটকে রাখবে। সে তার দিকে আসবে। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম ফজরের নামাজের পর দাজ্জালের দিকে যাবেন। আর দাজ্জাল তার শেষ সময়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে মারবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।
-       (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৬০; তাহকীক: মাওকুফ, সহীহ)

আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযিদ তার চাচা মাজমা ইবনু জারিয়া রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রসূল কে বলতে শুনেছেন, ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম লুদ বাবের নিকট দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৬২)

ছালেম রাহিমাহুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) ইহুদি এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, ফলে সে বর্ণনা করল। ওমর (রা:) তাকে বললেন, আমি তোমার থেকে সত্যতার পরীক্ষা নিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমাকে দাজ্জাল সম্পর্কে খবর দাও। সে বলল, সে ইহুদিদের খোদা। আর ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালাম তাকে লুদের শেষ প্রান্তে হত্যা করতে আসবেন।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৬৮)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ