আমরা আগেই জেনেছি যে দাজ্জালের বাহিনীতে ইহুদী অনুসারী হবে বেশি। এছাড়া খ্রিষ্টানরাও অনুসরণ করবে দাজ্জালকে। দাজ্জালের এই বিরাট বাহিনীর সাথে মুসলিমরা ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে যুদ্ধ করবে। এই যুদ্ধেও গাছ ও পাথরের জবান খুলে দেওয়া হবে আল্লাহর সাহায্য ও নিদর্শন হিসেবে। এমনকি পুরো বাহিনীকেই ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এভাবেই দাজ্জাল ও তার বাহিনীকে মুসলিমরা পরাস্ত করবে।
হযরত নাহিদ ইবনে সারিম (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, নিঃসন্দেহে তোমরা হিন্দুস্তানের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিক অবস্থান করবে। আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭৩)
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হকের পক্ষে যুদ্ধ করবে, তারা দুশমনদের উপর বিজয় থাকবে, তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম ২৯২, ৪৭১৭; সুনান আবু দাউদ ২৪৮৪; আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫১, ১১৬৭; মুসনাদে আহমদ ১৯৮৯৫; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৪৫০)
আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের যুদ্ধ-বিগ্রহ হল পাঁচটি। দুটি অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর বাকি তিনটি এই উম্মতের মধ্যে সংঘঠিত হবে। একটি হলো তুর্কিদের যুদ্ধ। অন্যটি হলো রোমের যুদ্ধ। আরেকটি হলো দাজ্জালের যুদ্ধ। আর দাজ্জালের যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ নেই।
- (আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৫৩৬; তাহকীক: মাওকুফ, যঈফ)
নাফে ইবনে উতবা ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেনঃ তোমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তা তোমাদের অধীনে করে দিবেন। অতঃপর তোমরা রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ সেখানেও তোমাদের বিজয়ী করবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তার বিরুদ্ধেও তোমাদের জয়যুক্ত করবেন। জাবির (রা:) বলেন, রোম বিজিত না হওয়া পর্যন্ত দাজ্জাল আবির্ভূত হবে না।
- (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৯১; মুসনাদে আহমাদ ১৮৪৯৩)
......অতঃপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দুটুকরো করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহবান করবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রববুল আলামীন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তিনি দু’ ফেরেশতার কাঁধের উপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রং এর জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকবেন তখন ফোটা ফোটা ঘাম তার শরীর থেকে গড়িয়ে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের কাছে যাবেন সে তার শ্বাসের বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তার দৃষ্টি যতদূর পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততদূর পর্যন্ত পৌছবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে বাবে লুদ নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।
অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। ঈসা (আঃ) তাদের কাছে গিয়ে তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহের ব্যাপারে খবর দিবেন। (প্রয়োজনীয় অংশ)
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৬৩-(১১০/২৯৩৭) [ইঃ ফাঃ ৭১০৬, ইঃ সেঃ ৭১৬০])
গাছ ও পাথরের জবান খুলে দেওয়া হবে
হযরত আবু যার (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সাথে মুসলমানদের দুটি বড় যুদ্ধ হবে। প্রথম যুদ্ধে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুটি বালক নেতৃত্ব দিবে, যাদের নাম হবে শুয়াইব আর শামীম বারাহ। এবং দ্বিতীয় যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবে মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.), আর দুটি যুদ্ধেই আল্লাহ তাদের পাথর ও গাছ দিয়ে সাহায্য করবে।
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৪১)
হযরত আলী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, ইহুদী-খ্রিষ্টানদের সাথে মুসলমানদের দুইটি বড় যুদ্ধ হবে। আর দুটিতেই মুসলমানদের সাহায্যের জন্য আল্লহ তাআলা গাছ ও পাথরের জবান খুলে দেবেন। তার একটি হবে মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.) এর সময়। আর প্রথমটি মাহদীর আগমনের কিছু পূর্বে।
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৪৭)
কাব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন দাজ্জাল ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহিস সালামের অবতরণের কথা শুনবে, তখন সে পালাবে। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম তার পিছু নিবেন। অতঃপর তাকে বাবে লুদের নিকট পাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। প্রতিটি বস্তুই দাজ্জালের বাহিনীর লোকদেরকে দেখিয়ে দেবে এবং বলবে, হে মুমিন! এই হলো কাফের।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ পথিক প্রকাঃ ১৫৬৩)
সালেম তার পিতা থেকে, তার পিতা রসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, রসূল ﷺ বলেন, ইহুদিরা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। আর তাতে তোমাদেরকে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি পাথরও বলবে, হে মুসলিম! এখানে আমার পিছনে ইহুদি আছে। তাকে হত্যা কর।
- (মারফু, মুআল্লাক, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৬০০; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ২০৮৩৭, খন্ড ১১, পৃ: ৩৯৯; দ্বিতীয় মুদ্রণ-১৯৮৩ ইং)
আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইয়াহূদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহূদী আছে, তাকে হত্যা কর।’
- (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ২৯২৬ [আঃ প্রঃ ২৭১১; ইসঃ ফাঃ ২৭২২]; সহীহুল মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯২২/৭৫২৩)
আবূ হুরাইরা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত মুসলিমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে। এমনকি ইহুদী পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলে পাথর ও গাছ বলবে ’হে মুসলিম! আমার পিছনে ইহুদী রয়েছে। এসো, ওকে হত্যা কর।’ কিন্তু গারক্বাদ গাছ [এরূপ বলবে] না। কেননা এটা ইহুদীদের গাছ।”
- (সহীহ, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৩/১৮২৯; সহীহুল বুখারী ২৯২৬; সহীহুল মুসলিম ১৫৭, ২৯২২, ৭৫২৩; মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪১৪; সহীহুল জামি ৭৪২৭; আহমাদ ৮৯২১, ৯৩৮৭, ১০৪৭৬, ২০৫০২)
আবু বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ..... ইবনু উমর (রা:) এর সূত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অবশ্যই ইয়াহুদীরা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করবে এবং তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে। পরিশেষে পাথর (সন্ধান দিয়ে) বলবে, হে মুসলিম। এই যে ইয়াহুদী। এসো, তুমি তাকে হত্যা কর।
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২২৫, ৭২২৭-(৭৯/২৯২১) [ইঃ ফাঃ ৭০৭১, ইঃ সেঃ ৭১২৫])
হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ..... ’আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ ইয়াহুদী সম্প্রদায় তোমাদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে। তারপর তোমরা তাদের উপর জয়ী হবে। এমনকি পাথর বলে উঠবে, ’হে মুসলিম! এই তো ইয়াহুদী আমার পিছনে আছে, তুমি তাকে হত্যা কর।’
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২২৮ [ইঃ ফাঃ ৭০৭৪; ইঃ সেঃ ৭১২৮]; সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৩৬ [ইঃ ফাঃ ২২৩৯])
0 মন্তব্যসমূহ