গায়েব অর্থাৎ অদৃশ্য। অদৃশ্য সম্পর্কে শুধু আল্লাহই জানেন, অন্য কেউ সেই বিষয়ে জানে না। গায়েব এর বিষয় শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে তিনি তা থেকে যে কাউকে অবগত করেন সে ঠিক ততটুকুই জানতে পারে ঠিক যতটুকু জানানো হয়। কিন্তু অনেক জানা বিষয় যা আমাদের নবী ১৪০০ বছর আগেই জানিয়ে গেছেন সেগুলোকেও আজ গায়েব এর বিষয় বলে আখ্যা দেওয়া হয়। যদিও গায়েব কি তা সম্পর্কে তারা অবগত নন। কেয়ামত হবে এটা ভবিষ্যতের একটি কথা আর এটি হবে তা চূড়ান্ত। কিন্তু কেয়ামত কবে হবে তা আবার গায়েব এর জ্ঞান। এর কারণ কেয়ামত হবে নিশ্চিত তা জানানো হলেও কবে কোন সময় হবে তা আল্লাহ তায়ালা কাউকে জানান নি। আর আল্লাহ তায়ালা যেটি জানান নি সেটি জানার ক্ষমতা কারো নেই। এ বিষয়ে একটি হাদিসই উত্তম উত্তর দিতে পারবে।
হযরত আলী (রা:) এর নিকট থেকে বর্ণিতঃ "আমি যেন দেখতে একটি জাতিকে দেখতে পাচ্ছি, হাতুড়ির ঘা খাওয়া ঢালের মতো যাদের মুখমণ্ডল স্পষ্ট দৃশ্যমান, যারা রঙ্গিন রেশমী কাপড় পরিহিত এবং উন্নত জাতের অশ্ব চালনা করছে, সেখানে হত্যাযজ্ঞ এতটা অধিক যে, আহতরা নিহতদের লাশের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পার হচ্ছে। ঐ যুদ্ধে পলায়নকারীদের সংখ্যা যুদ্ধবন্দীদের চেয়ে অনেক কম।"
এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলোঃ "হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞানের সাথে পরিচিত।" হযরত আলী (রা:) হেসে বনি কালব গোত্রের ঐ লোককে বললেনঃ "হে বনি কালব গোত্রীয় ভ্রাতা! এটি গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞান নয়; বরং এ হচ্ছে এক ধরনের অবগতি যা একজন জ্ঞানী অর্থাৎ রসূলুল্লাহর ﷺ নিকট থেকে শিখেছি। কারণ গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞান কেবল কিয়ামত সংক্রান্ত জ্ঞান এবং যা কিছু মহান আল্লাহ পাক এ আয়াতে উল্লেখ করেছেন তা। আর আয়াত টি হচ্ছেঃ একমাত্র মহান আল্লাহই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনি মাতৃগর্ভসমূহে যা আছে সব ব্যাপারে জ্ঞাত, আর কোন ব্যক্তি জানেন না যে, তার জীবন (আয়ু) কোথায় শেষ হয়ে যাবে...। একমাত্র মহান আল্লাহ মাতৃগর্ভে যা আছে- ছেলে না মেয়ে, সুন্দর না কুৎসিত, দাতা না কৃপণ, সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা এবং কোন ব্যক্তি দোজখের অগ্নির দাহ্য কাষ্ঠ, কোন ব্যক্তি বেহেস্তি এবং কোন ব্যক্তি নবীদের সাথী সে সম্পর্কে জ্ঞাত। অতএব, গায়েব সংক্রান্ত যে জ্ঞান মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই জানে না তা হচ্ছে ঠিক এটিই। যা কিছু বলা হয়েছে তা ছাড়া আর সবকিছু হচ্ছে এমন জ্ঞান যা মহান আল্লাহ তার রসূল ﷺ কে শিখিয়েছেন। রসূল ﷺ আবার তা আমাকে শিখিয়েছেন এবং আমার জন্য দোয়া করেছেন যাতে করে মহান আল্লাহ তা আমার হৃদয়ে স্থাপন করে দেন এবং আমার অন্তঃকরণ তা দিয়ে পূর্ণ করে দেন।"
- (নাহজুল বালাগাহ, খুতবা নং ১২৮)
আশা করি উপরের বর্ণিত খুতবাটি থেকে আমরা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। কুরআনের সেই আয়াতটি- "কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, জরায়ুতে কী আছে তা তিনিই জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, কেউ জানে না কোন জায়গায় সে মরবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বাধিক অবহিত।" (সূরা লুকমান ৩১: আয়াত ৩৪)
তো এ থেকে জানা গেল গায়েব কোনগুলো আর এক ধরনের অবগতি যা জ্ঞানীদের থেকে পাওয়া জ্ঞান কোনগুলো।
গায়েবী জ্ঞান যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানবে না তা হচ্ছে-
১। কেয়ামত কবে কখন হবে।
২। কে কোথায়, কখন, কবে মৃত্যুবরণ করবে।
৩। মাতৃগর্ভে যা আছে।
৪। তাদের তাকদিরে কি আছে। কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী হবে।
৫। কখন কোথায় বৃষ্টি হবে।
এছাড়া আর সকল বিষয়ের জ্ঞান আমাদের নাবী ﷺ থেকে আমাদের পর্যন্ত অনেকাংশ পৌঁছেছে। সাহাবীরা কেয়ামত পর্যন্ত কি কি সংঘটিত হবে তা জানতো। আর আমরা তাদের কথাই তথা হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারছি যে ভবিষ্যতে বা আমাদের জামানায় কি কি সংঘটিত হবে। তবে যে বিষয়গুলো আমাদের কাছে পৌঁছেনি সেরকম বিষয় আমরা অনেক আলেম যারা তাসাউফের জ্ঞানে গুণান্বিত তাদের কাছ থেকে জানতে পারি।
বিঃ দ্রঃ এই সকল বিষয় এই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করার মূল কারণগুলো হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতের বিষয়ে পাওয়া ধারণা নিয়ে কারো এমন মনে না হয় যে এগুলো গায়েব থেকে অন্য মাধ্যমে (শয়তান) আসে। এগুলো আল্লাহ থেকেই পাওয়া জ্ঞান। আর গায়েবের জ্ঞান যেগুলো তা আল্লাহ যাকে যতটুকু ইচ্ছা অবগত করে থাকেন তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। “শারহুল আকিদা আল ওয়াসিত্বিইয়া - ড. সালেহ ইবনে ফাওযান” বইটির কারামত অধ্যায়টি পড়ার জন্য বিশেষভাবে আহবান থাকলো।
বর্তমান সময়ে এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন, কিন্তু বইয়ের কলাম বড় হয়ে যাওয়ায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। সামনে এ বিষয়ে বই আকারে প্রকাশের চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
0 মন্তব্যসমূহ