শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেমদের সংখ্যা বেশি হবে আর যারা সত্যবাদী হকপন্থী হবে তারা নির্যাতিত হবে যা অসংখ্য হাদিস থেকে পাওয়া যায়। এটার প্রমাণ আগের উল্লিখিত হাদিসগুলো। কিন্তু বিশেষভাবে তারা সত্য থেকে মানুষকে দূরে রাখছে ও ইসলামের বিরুদ্ধেও কাজ করছে। এর কারণগুলো কি হতে পারে? দুনিয়ার চাকচিক্য, দুনিয়ার সম্পদের লোভ, ক্ষমতার লোভ, জনপ্রিয়তা, অহংকার আরো অনেক কিছু রয়েছে। মূল কারণ বলতে গেলে এটিই যে তারা আখিরাতের চেয়ে দুনিয়াকে বেশি মূল্যবান মনে করে। অনেকেই আছে যারা সমাজে আজ আলেম সেজে আছে কিন্তু তাদের মধ্যে ইসলামের ছিটেফোটাও নেই। তারা একদিক দিয়ে যেরকম পথভ্রষ্ট তেমন অন্যদিক দিয়ে অহংকারী হয়ে থাকে। তারা মূলত আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়া ক্রয় করে। হাদিসে এসেছে-
আনাস রা: বলেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের আগে রাতের আঁধার টুকরার মত ফিতনা দেখা দিবে। সকালে এক জন মুমিন থাকবে, তো সন্ধায় সে কাফির হয়ে যাবে। সন্ধায় মুমিন থাকবে, তো সকালে কাফির হয়ে যাবে। মানুষ তার দ্বীনকে দুনিয়ার জিনিসের বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে।
- (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৩৬৫১৫)
সমাজ ব্যবস্থাও এমন যে, কোন সাধারণ মুসলিম কোন ভালো কাজ করলেও তার প্রতিদানও চায় দুনিয়া থেকে। আর অনেক বাতিল আলেমরাও নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করে থাকে এই দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যেই। তারা সুন্নত ও বিদআতকে মিশ্রিত করেছে ও সুন্নতকে বদলাচ্ছে। তারা মুসলিম উম্মাহর সঠিক মুক্তির পথ ও সঠিক ইসলামকে তুলে ধরে না। তারা দরবারে গমন করে ক্ষমতার জন্য, দুনিয়ার সম্পদ লাভের জন্য তাগুত ও জালিম শাসকের পক্ষে কথা বলে। আর যখন জিহাদের কথা আসে যা মুসলিমদের একমাত্র পরিত্রাণের উপায় তখন তারা জিহাদ এর বিরুদ্ধেও কথা বলে। হাদিসে সরাসরি এই বিষয়ে এসেছে-
আব্দুল্লাহ (রা:) বলেছেন, তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে যখন ফিতনার কাপড় তোমাদের পড়ানো হবে? অল্প বয়সীরা সে সময় সীমা ছাড়াবে, এবং বয়স্করা দুর্বল হয়ে পড়বে। মানুষ এটাকে সুন্নাহ হিসাবে নিবে। এর মাঝে কিছু পরিবর্তন করলে মানুষ বলবে, "তুমি সুন্নাহকে বদলাচ্ছো।" লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, এটা কখন হবে, আবু আব্দুর রহমান?
: যখন তোমাদের মাঝে লিখাপড়া জানা লোক বেড়ে যাবে কিন্তু বিশ্বস্ত লোক কমে যাবে। যখন তোমাদের মাঝে নেতা বেড়ে যাবে কিন্তু ফকিহ কমে যাবে। যখন তোমরা আখেরাতের আমল দ্বারা দুনিয়ার সন্ধান করবে।
- (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ৩৬৪৫৭)
তারা মূলত দুনিয়ার জন্যই আলেম সাজবে ও আখেরাতের বিনিময় চাইলেও মূলত দুনিয়ার জন্য উপার্জন করবে। আজ যখন দান করা হয় তখন তারা দুনিয়ার কথা চিন্তা করে, যখন কোন ইসলামী কার্যক্রম হয় তখন দুনিয়ার লাভ খোঁজে। তারা সর্বক্ষণ অর্থ উপার্জন ও ক্ষমতার কথা চিন্তা করে। তাদের সামনে যখনই সত্য উপস্থাপন করা হয় তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তো বটেই উল্টো তারা বিপরীত ব্যাখ্যা ও বিদ্রোহ পোষণ করে ও সাধারণ মুসলিমদেরও বিভ্রান্ত করে। সেখানে তারা কাউকেই ছাড় দিতে চায় না যারাই তাদের মতাদর্শী হয় না। এ যেন সেই ইহুদী আলেমদের আরেক প্রতিরূপ। যারা তখনকার বাদশাহদের তাদের খোদা বানিয়ে নিয়েছিল। সত্যসহ আগমনকারী নাবী-রসূলদের সাথে বিদ্রোহ করেছিল। যেমনভাবে করেছিল হযরত ঈসা (আঃ) এর সাথে। আর তারা নবীদের হত্যাও করেছিল। আর হয়েছে আল্লাহর অভিশপ্ত জাতি। তারা নিজেদের ঠিক ঈসা (আঃ) এর জামানার সেই ইহুদী আলেমদের মতই গর্ব করে জাহির করে। তারা নিজেদের বলতো- আমরাই রবের ইবাদতকারী, কিতাবধারী, কিতাবের সংরক্ষণকারী, এর উত্তরসূরি। আর আজকের পথভ্রষ্ট আলেমরা ঠিক এভাবেই বলছে, আমরাই নবীর ﷺ উত্তরসূরি। যদিও তাদের মধ্যে নবীর ﷺ কোন আদর্শ নেই।
আজ এই আলেম সমাজের অবস্থাই যেন সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করবে। আর হাদিসে তো আছেই যে, জাহান্নামে এইসকল নামধারী আলেমদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।
0 মন্তব্যসমূহ