২.৫ ক্বাসীদাহ বা কাসিদায় সউগাত

ক্বাসীদাহ বা কাসিদা এই শব্দ দিয়ে মূলত বুঝায় বড় প্যারার বা বড় ছন্দ নিয়ে লেখা কবিতা। একভাবে বলতে গেলে কাসিদাছন্দযুক্ত কবিতা সমার্থক শব্দ। যেকোন বড় প্যারা এর কবিতাকেই কাসিদা বলা যাবে। এবং অনেক দেশে যেকোনো কবিতাকেই কাসিদা শব্দ দ্বারা পরিচয় করানো হয়, ইংরেজি ভাষায় পোয়েম (poem) এর মত। আর আমাদের দেশে এই শব্দটিই এখন ব্যবহার হয় শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী করা কবিতাকে চিনাতে। এটি লেখা হয়েছিল ফার্সি ভাষায়। শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) কয়েকটি কবিতা লিখেছেন যেগুলো সবই তার তাসাউফের বা ইলহামী জ্ঞান থেকে লেখা। তবে এটি কাশফ এর মাধ্যমেও হয়ে থাকতে পারে, আল্লাহু আলাম। তার ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে লিখিত কাসিদার মধ্যে তিন (৩) টি কাসিদা বাংলায় ছাপা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এই কবিতেগুলোকে কাসিদায় সওগাত বলা হয়। সওগাত শব্দের অর্থ অনেক জায়গায় উপহার বলা হয়েছে। ২ টি কবিতা যেগুলো লেখা হয়েছিল মুসলিম মোঘল সম্রাটদের জামানার সময় সম্পর্কে ও তারও আগে বা পরের জামানা সম্পর্কে, যা বহু সময় আগেকার ঘটনাগুলো প্রকাশ করেছিল তার কবিতায় তা হুবহু মিলে গেছে আরো আগেই এবং এখন ৩য় কবিতাটির কিছু অংশ বাকি যা আগামীর ঘটনার সাথে মিলে যাবে আশা করা যায়। এটি খুব প্রচলিত একটি কবিতা যার প্যারায় লেখা কথা বা ভবিষ্যৎবাণী গুলো এই জামানার সাথে মিলে যাচ্ছে এবং এর ৮০ ভাগ কথা গুলো হুবহু মিলে গেছে যা এটি সত্য প্রমাণ করতে যথেষ্ট। আর এই কবিতার লেখার সাথে হাদিসেরও কোন বিপরীত পাওয়া যায় না বিধায় এর গ্রহণ যোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এজন্য এই কবিতাকে ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী বলেছি কারণ, এই কবিতার অনেক কথা জামানার সাথে মিলে যায় যেগুলো হাদিস গ্রন্থ বা সেগুলোর বর্ণনাগুলো থেকেও আগামীতে সংঘটিতব্য ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত পাওয়া যায় না। এটি হাদিস শাস্ত্রের বাহিরের জ্ঞান যেমন বাতেনি জ্ঞান বা ইলমে লাদুনি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে লেখা তা প্রমাণ করে। এই কবিতাগুলী আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি আমরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করি তাহলে হয়তো আমাদের কিছু উপকার ছাড়া ক্ষতি হবে না। ইলহাম-কাশফ কি তা নিয়ে উপরে আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

২.৫.১ লেখক শাহ নেয়ামাতু্ল্লাহ (রহঃ) এর কাসিদার ইতিহাস

কাসীদায়ে শাহ্ নিয়ামাতুল্লাহ- বিস্ময়কর ভবিষ্যৎবাণী সম্বলিত এক ইলহামী কাসীদা। জগদ্বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল হযরত শাহ নিয়ামতউল্লাহ (র) আজ থেকে ৮৫২ বছর পূর্বে হিজরী ৫৪৮ সাল মুতাবিক ১১৫২ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন এ কাসিদা। কালে কালে তাঁর এ কাসিদার এক একটি ভবিষ্যৎবাণী ফলে গেছে আশ্চর্যজনক ভাবে। মুসলিম জাতি বিভিন্ন দুর্যোগকালে এ কাসীদা পাঠ করে ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো প্রাণশক্তি, উদ্দীপিত হয়ে ওঠেছে নতুন আশায়। ইংরেজ শাসনের ক্রান্তিকালে এ কাসীদা মুসলমানদের মধ্যে মহাআলোড়ন সৃষ্টি করে। এর অসাধারণ প্রভাব লক্ষ্য করে ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড কার্জনের শাসনামলে (১৮৯৯-১৯০৫) এ কাসীদা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফারসী ভাষায় রচিত হযরত শাহ নিয়ামতউল্লাহ (র)-এর এ সুদীর্ঘ কবিতায় ভারত উপমহাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের ঘটিতব্য বিষয় সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। আল্লাহর অনেক প্রিয় বান্দাগণ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গায়েবের বিষয় সম্পর্কে স্বপ্নযোগে বা সরাসরি কাশফ, ইলহাম তথা বিশেষ জ্ঞান পেয়ে থাকেন। মনে রাখতে হবে যে, কোন সৃষ্টি জীবের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই যে, সে ইচ্ছা করলেই গায়েবের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে এই জ্ঞান দান করে থাকেন। উপমহাদেশের ইলমী জনক শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) তার ইলহামী ইলম দিয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ সাওয়াতিউল ইলহাম রচনা করেন।অনুরূপ হযরত শাহ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) তার ইলহামী জ্ঞানের কিছু অংশ একটি কবিতায় প্রকাশ করেছেন। এটি লিখার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি ভবিষ্যৎবাণী হুবহু মিলে গিয়েছে। কবিতার ৩৭ নং প্যারা থেকে বিশেষভাবে খেয়াল করুন। কারণ এর পূর্বের লাইনগুলো অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়ায় শুধুমাত্র বর্তমান ও ভবিষতে কি ঘটতে পারে এটাই আমাদের দেখার বিষয়। কিছুটা দীর্ঘ হলেও ধৈর্য সহকারে পড়লে গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।

আমাদের দূর্ভাগ্যই বলা চলে, পাকিস্তানি মুসলিম ভাইদের মাঝে কাসীদাগুলো বেশ পরিচিত, প্রসিদ্ধ এবং সমাদৃত অথচ বাংলাদেশে এ সম্পর্কে আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই। কবিতাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত কাসিদায়ে সাওগাত বইতে পাবেন। এই ছাড়াও মদিনা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত মুসলিম পুনঃজাগরণ প্রসঙ্গ ইমাম মাহদী বইতেও পাবেন। মাহমুদ প্রকাশনী থেকেও এটি বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় শাহ্‌ নেয়ামতুল্লাহ (রহ:) এর ভবিষ্যৎবাণী নামে। আর যারা উর্দু বুঝেন তারা এই নিয়ে ৮ পর্বের সিরিজ আলোচনা শুনতে পারেন, পাকিস্তানী বিশেষজ্ঞ জায়েদ হামিদ খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা সহকারে উনার সকল ভবিষ্যৎবাণী তুলে ধরেছেন। বাংলা ভাষায় রুহুল আমীন খান অনূদিত শাহ নিয়ামতুল্লাহ (রহঃ) এর একটি কবিতা ১৯৭০/৭১ এর দিকে এদেশে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া ৩য় বিশ্বযুদ্ধ, ইমাম মাহদী ও দাজ্জাল -মাওলানা আসেম ওমর এর বইতেও উল্লেখ করেছে। সেখানে দেওয়া তথ্য মতে শাহ্‌ ইসমাইল শহীহ (রহঃ) ও তার আরবাইন নামক কিতাবে এর উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, আরবাইন নামে শাহ্‌ ওয়ালিউল্লাহরও (রহঃ) লিখিত একটি কিতাব আছে। এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশে আবারো প্রকাশিত হয়েছে তবে তাতে অনেক তথ্য বিভ্রাটও চোখে পড়ে। এখানে সঠিকভাবে কাসিদাটি তুলে ধরা হয়েছে। নিম্নে এ কাসীদার সারমর্ম প্রদত্ত হলো।

৩য় বিশ্বযুদ্ধ, মাহদি ও দাজ্জাল বইতে যেভাবে উল্লেখ এসেছে

শহীদ মাওলানা আসেম ওমর (রহঃ) তিনি তার লেখা জনপ্রিয় বই ৩য় বিশ্বযুদ্ধ, মাহদি ও দাজ্জাল বইতে ভারত সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী পরিচ্ছেদে এই বিষয়ে লিখেন-

পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশ ও উপজাতি সম্পর্কে শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। নিঃসন্দেহে তা ঈমানদারদের জন্য সান্ত্বনা ও মনোবল তৈরিতে সহায়ক প্রমাণিত হবে। শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহ.) সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে আল-আরবাঈন' নামক কিতাবে উদ্ধৃত করেছেন। ফারসি কাব্যের আকারে উপস্থাপিত এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদিও নিশ্চিত কোনো বিষয় নয়, তবু তার কয়েকটি কবিতা এমন আছে, বিভিন্ন হাদীছ তাকে সমর্থন জোগাচ্ছে। এখানে আমরা সেই কবিতাগুলোর অনুবাদ উপস্থাপন করলাম।

হঠাৎ মুসলমানদের মাঝে হইচই শুরু হয়ে যাবে। পরক্ষণেই তারা কাফেরদের (ভারতের) সঙ্গে এক বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ লড়বে। তারপর মুহাররম মাস আসবে। মুসলমানরা তরবারি হাতে তুলে নেবে এবং বীরত্বের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তারপর হাবীবুল্লাহ নামক এক ব্যক্তি যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের বাহক হবেন, আল্লাহর সাহায্যসহ কোষ থেকে তরবারি বের করবেন। সীমান্ত প্রদেশের বীর যোদ্ধাদের পদভারে মাটি কেঁপে ওঠবে। মানুষ জিহাদের জন্য পাগলের মতো ছুটতে শুরু করবে এবং রাতারাতি পঙ্গপাল ও পিপীলিকার মতো আক্রমণ চালাবে। এমনকি আফগান জাতি বিজয় অর্জন করবে। বন, পাহাড়, স্থল ও সমুদ্র অঞ্চল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উপজাতিরা দ্রুতগতিতে বানের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। তারা পাঞ্জাব, দিল্লি, কাশ্মির, দাক্ষিণাত্য ও জম্মুকে আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্যে জয় করে নেবে। দ্বীন ও ঈমানের সকল অমঙ্গলকামী প্রাণ হারাবে। সমস্ত হিন্দুস্তান হিন্দুয়ানা রীতিনীতি থেকে পবিত্র হয়ে যাবে। হিন্দুস্তানের মতো ইউরোপেরও ভাগ্য খারাপ হয়ে যাবে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়ে যাবে। এই বিগ্রহ কয়েক বছর পর্যন্ত নৌ ও স্থল অঞ্চলে নির্মমতার সঙ্গে অব্যাহত থাকবে। বেঈমানরা সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করে দেবে। অবশেষে তারা চিরকালের জন্য জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হবে। হঠাৎ হজের মওসুমে হযরত মাহদি আত্মপ্রকাশ করবেন” -(৩য় বিশ্বযুদ্ধ, মাহদি ও দাজ্জাল পৃষ্ঠাঃ ৮৪-৮৫)

 

২.৫.২ কাসিদা এর ভবিষ্যৎবানীগুলোর সারমর্ম

ভারতীয় উপমহাদেশেঃ

১. এখানে তুর্কী মুঘলদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে, ২. তাদের পতনের পর প্রতিষ্ঠিত হবে ভিনদেশী খ্রিষ্টানদের রাজত্ব, ৩. তাদের শাসনকালে মহামারী আকারে প্লেগ এবং চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে এবং এতে বহু প্রাণহানি ঘটবে, ৪. দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে ইংরেজরা ভারত উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু এখানে অঞ্চলে-অঞ্চলে, সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে স্থায়ী শত্রুতার বীজ বপন করে যাবে, ৫. ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হবে, ৬. অযোগ্য লোকেরা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, ৭. মানুষের আইন-কানুনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা থাকবে না, ঘুষ, দুর্নীতি, অশ্লীলতা, জেনা, ব্যাভিচার, অরাজকতার সয়লাব সৃষ্টি হবে (উপরোক্ত ভবিষ্যৎবাণীগুলো ইতোমধ্যে হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে)।

ভবিষ্যতে যা হবে- ৮. মুসলমানদের উপর বিধর্মীরা মহাজুলুম ও অত্যাচার চালাবে, তাদের জানমালের কোন মূল্য থাকবে না, তাদের রক্তের সাগর বয়ে যাবে, ঘরে ঘরে আহাজারী সৃষ্টি হবে, ৯. এরপর পাঞ্জাবের প্রাণকেন্দ্র মুসলমানদের দখলে আসবে, মুশরিকরা সেখান থেকে পালিয়ে যাবে, ১০. অনুরূপ মুশরিকরা পার্শ্ববর্তী মুসলমানদের একটি শহর দখল করে নিয়ে পাইকারীভাবে মুসলিম নিধন চালাবে, ১১. নামধারী এক মুসলিম নেতা এক জঘন্য চুক্তি স্থাপন করে মুশরিকদের সাহায্য করবে, ১২. এরপর দুই ঈদের মধ্যবর্তী এক সময়ে বিশ্ব জনমত হিন্দুদের বিপক্ষে চলে যাবে, ১৩. মুহররম মাসে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বীর বিক্রমে অগ্রসর হবে, ১৪. সাহেবে কিরান ও হাবীবুল্লাহ নামের দুই মহান নেতা মুসলিম ফৌজের নেতৃত্বে দিয়ে প্রচণ্ড লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, ১৫. সীমান্তে মুসলিম বীরগণ বীরদর্পে ভারতের দিকে অগ্রসর হবে, ১৬. ওদিকে ইরানী, আফগান ও দক্ষিণা সেনাগণও সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে সমগ্র ভারতবর্ষ বিজয় করে বিজয় ঝাণ্ডা উড্ডীন করবে, ১৭. উপমহাদেশব্যাপী ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, ১৮. কোথাও দ্বীন-ঈমান বিরোধী কোন তৎপরতা আর অবশিষ্ট থাকবে না, ১৯. ছয় অক্ষরবিশিষ্ট নাম যার প্রথম অক্ষর গাফ এমন এক সুবিখ্যাত হিন্দু বণিক ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম পক্ষে যোগদান করবে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেঃ

১. রাশিয়া ও জাপানে প্রচণ্ড লড়াই হবে, ২. অবশেষে তাদের মধ্যে সন্ধি হবে কিন্তু তা স্থায়ী হবে না, ৩. জাপানে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প হবে, ৪. ইউরোপে চার বছর ব্যাপী এক মহাযুদ্ধ হবে (প্রথম মহাযুদ্ধ)। এতে এক কোটি ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে, ৫. প্রথম মহাযুদ্ধের ২১ বছর পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হবে, ৬. এর এক পক্ষে থাকবে ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা, চীন ও রাশিয়া, অপর পক্ষে থাকবে জার্মান, জাপান ও ইটালী, ৭. বিজ্ঞানীগণ এ যুদ্ধে অতি ভয়াবহ আণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, ৮. প্রাচ্যে বসে পাশ্চাত্যের কথা ও সঙ্গীত শ্রবণের যন্ত্র আবিষ্কৃত হবে, ৯. দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ছয় বছর স্থায়ী হবে এতে জানমালের অপরিমেয় ক্ষয়ক্ষতি হবে, ১০, দুনিয়াব্যপী যুলম-অত্যাচার, নগ্নতা, অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে (উপরোক্ত ভবিষ্যৎবাণীসমূহ ইতোমধ্যে হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে)।

ভবিষ্যতে যা হবে- ১১. পাশ্চাত্যের দাম্ভিক ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার মদে মত্ত হয়ে সারা দুনিয়ায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তার চরম পরিণতি ভোগ থেকে তাদের নিস্তার নেই, ১২. তৃতীয় মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতা চিরদিনের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আলিফ অদ্যাক্ষরের দেশের (আমেরিকা হতে পারে) কোন চিহ্ন থাকবে না। কেবল ইতিহাসেই তার নাম অবশিষ্ট থাকবে, ১৩. খ্রিষ্টশক্তির চূড়ান্ত পতন সাধিত হবে। তারা আর কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। ১৪. এরপর কিছু সময় পরেই হজের মৌসুমে দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হবেন হযরত ইমাম মাহদী।

আলোচিত মহা আলোড়ন সৃষ্টিকারী এবং যুগে যুগে ফলে যাওয়া ভবিষ্যৎবাণীসমূহঃ

    ·        ভারতবর্ষ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী।

    ·        প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী।

    ·        দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী।

    ·        দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী।

    ·        হিন্দু কতৃক বাংলাদেশ দখল সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী।

   ·        আমাদের দেশের একজন মুনাফিক নেতার নামের প্রথম ও শেষ অক্ষর সহ ভবিষ্যৎবাণী যে             কিনা এদেশকে মুশরিকদের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করবে।

    ·        গাজওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী।

    ·        সাহেবে কিরাণ ও হাবিবুল্লাহ এর আত্মপ্রকাশ নিয়ে।

    ·        তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ এবং মানচিত্র থেকে আমেরিকা/ইংল্যান্ডের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী।

    ·        ইমাম মাহদী এর আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী।

 

২.৫.৩ কাসিদায় শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহ.) ও ব্যাখ্যা

(১) পশ্চাতে রেখে এই ভারতের অতীত কাহিনী যত
আগামী দিনের সংবাদ কিছু বলে যাই অবিরত।

ব্যাখ্যাঃ ভারত = ভারতীয় উপমহাদেশ।

(২) দ্বিতীয় দাওরে হুকুমত হবে তুর্কী মুঘলদের
কিন্তু শাসন হইবে তাদের অবিচার যুলুমের।

ব্যাখ্যাঃ দ্বিতীয় দাওর= ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের দ্বিতীয় অধ্যায়। শাহবুদ্দীন মুহম্মাদ ঘোরী রহিমাহুল্লাহ উনার আমল (১১৭৫ সাল) থেকে সুলতান ইবরাহীম লোদীর শাসনকাল (১৫২৬ সাল) পর্যন্ত প্রথম দাওর। এবং সম্রাট বাবর শাসনকাল (১৫২৬ সাল) থেকে ভারতে মুসলিম দ্বিতীয় দাওর।

(৩) ভোগে ও বিলাসে আমোদে-প্রমোদে মত্ত থাকিবে তারা
হারিয়ে ফেলিবে স্বকীয় মহিমা তুর্কী স্বভাব ধারা।

ব্যাখ্যাঃ মুঘল শাসকদের অনেকই আল্লাহ ওয়ালা ছিলেন। তবে কেউ কেউ প্রকৃত ইসলামী আইন কানুন ও শরীয়তের আমল থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন।

(৪) তাদের হারায়ে ভিন দেশী হবে শাসন দণ্ডধারী
জাকিয়া বসিবে, নিজ নামে তারা মুদ্রা করিবে জারি।

ব্যাখ্যাঃ ভিন দেশী = ইংরেজদের বোঝানো হয়েছে।

(৫) এরপর হবে রাশিয়া জাপানে ঘোরতর এক রণ
রুশকে হারিয়ে এ রণে বিজয়ী হইবে জাপানীগণ।

(৬) শেষে দেশ-সীমা নিবে ঠিক করে মিলিয়া উভয় দল
চুক্তিও হবে কিন্তু তাদের অন্তরে রবে ছল।

ব্যাখ্যাঃ বিশ শতকের প্রারম্ভে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জাপান কোরিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পীত সাগর, পোট অব আর্থার ও ভলডিভস্টকে অবস্থানরত রুশ নৌবহরগুলো আটক করার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে রাশিয়া জাপানের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

(৭) ভারতে তখন দেখা দিবে প্লেগ আকালিক দুর্যোগ
মারা যাবে তাতে বহু মুসলিম হবে মহাদুর্ভোগ।

ব্যাখ্যাঃ ১৮৯৮-১৯০৮ সাল পর্যন্ত ভারতে মহামারী আকারে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এতে প্রায় ৫ লক্ষ লোকের জীবনাবসান হয়। ১৭৭০ সালে ভারতে মহাদূর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। বংগ প্রদেশে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ থেকে উদ্ভুত মহামারিতে এ প্রদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারায়।

(৮) এরপর পরই ভয়াবহ এক ভূকম্পনের ফলে
জাপানের এক তৃতীয় অংশ যাবে হায় রসাতলে।

ব্যাখ্যাঃ ১৯৪৪ সালে জাপানের টোকিও এবং ইয়াকুহামায় প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

(৯) পশ্চিমে চার সালব্যাপী ঘোরতর মহারণ,
প্রতারণা বলে হারাবে এ রণে জীমকে আলিফগণ।

ব্যাখ্যাঃ ১৯১৪-১৯১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরাধিকাল ধরে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। জীম = জার্মানি এবং আলিফ = ইংল্যান্ড।

(১০) এ সমর হবে বহু দেশ জুড়ে অতীব ভয়ঙ্কর
নিহত হইবে এতে এক কোটি ত্রিশ লাখ নারী-নর।

ব্যাখ্যাঃ ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রথম মহাযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৩১ লক্ষ লোক মারা যায়।

(১১) অতঃপর হবে রণ বন্ধের চুক্তি উভয় দেশে
কিন্তু তা হবে ক্ষণভঙ্গুর টিকিবে না অবশেষে।

ব্যাখ্যাঃ ১৯১৯ সালে প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে ভার্সাই সন্ধি হয় কিন্তু তা টিকেনি।

(১২) নিরবে চলিবে মহাসমরের প্রস্তুতি বেশুমার।
জীম ও আলিফে লড়াই ঘটিবে বারংবার।

(১৩) চীন ও জাপানে দুদেশ যখন লিপ্ত থাকিবে রণে

নাসারা তখন রণ প্রস্তুতি চালাবে সঙ্গোপনে।

ব্যাখ্যাঃ নাসারা মানে খ্রিষ্টান।

(১৪) প্রথম মহাসমরের শেষে একুশ বছর পর

শুরু হবে ফের আরো ভয়াবহ দ্বিতীয় সমর।

ব্যাখ্যাঃ ১ম মহাযুদ্ধ সমাপ্তি হয় ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সূচনা হয় ১৯৩৯ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর। দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় প্রায় ২১ বছর।

(১৫) হিন্দ বাসী এই সমরে যদিও সহায়তা দিয়ে যাবে
তার থেকে তারা প্রার্থিত কোন সুফল নাহিকো পাবে।

ব্যাখ্যাঃ ভারতীয়রা ব্রিটিশ সরকারের প্রদত্ত যে সকল আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তাদের সহায়তা করেছিল, যুদ্ধের পর তা বাস্তবায়ন করে নি।

(১৬) বিজ্ঞানীগণ এ লড়াইকালে অতিশয় আধুনিক
করিবে তৈয়ার অতি ভয়াবহ হাতিয়ার আনবিক।

ব্যাখ্যাঃ মূল কবিতায় ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে আলোতে বকর যার শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ অস্ত্র। অনুবাদক বিদ্যুৎ অস্ত্রের পরিবর্তে আনবিক অস্ত্র তরজমা করেছেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে আমেরিকা হিরোসিমা নাগাসাকিতে আনবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এতে লাখ লাখ বেসামরিক লোক নিহত হয়। কবিতায় বিদ্যুৎ অস্ত্র বলতে মূলত আনবিক অস্ত্রই বুঝানো হয়েছে।

(১৭) গায়েবী ধ্বনির যন্ত্র বানাবে নিকটে আসিবে দূর
প্রাচ্যে বসেও শুনিতে পাইবে প্রতীচীর গান সুর।

ব্যাখ্যাঃ গায়েবী ধ্বনির যন্ত্র রেডিও এবং টিভি।

(১৮) মিলিত হইয়া প্রথম আলিফ দ্বিতীয় আলিফ দ্বয়
গড়িয়া তুলিবে রুশ চীন সাথে আতাত সুনিশ্চয়। 

(১৯) ঝাঁপিয়ে পড়িবে তৃতীয় আলিফ এবং দু জীম ঘাড়ে
ছুড়িয়া মারিবে গজবী পাহাড় আনবিক হাতিয়ারে,
অতি ভয়াবহ নিষ্ঠুরতম ধ্বংসযজ্ঞ শেষে
প্রতারণা বলে প্রথম পক্ষ দাড়াবে বিজয়ী বেশে।

ব্যাখ্যাঃ প্রথম আলিফ = ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় আলিফ = আমেরিকা, তৃতীয় আলিফ = ইটালি এবং দুই জীম = জার্মানি ও জাপান।

(২০) জগৎ জুড়িয়া ছয় সাল ব্যাপী এই রণে ভয়াবহ,
হালাক হইবে অগণিত লোক ধন ও সম্পদসহ।

ব্যাখ্যাঃ জাতিসংঘের হিসাব মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি লোক মারা গিয়েছিল।

(২১) মহাধ্বংসের এ মহাসমর অবসানে অবশেষে
নাসারা শাসক ভারত ছাড়িয়া চলে যাবে নিজ দেশে,
কিন্তু তাহারা চিরকাল তরে এদেশবাসীর মনে
মহাক্ষতিকর বিষাক্ত বীজ বুনে যাবে সেই সনে।

ব্যাখ্যাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫ সালে আর ভারত উপমহাদেশ থেকে নাসারা তথা ইংরেজ খ্রিষ্টানরা চলে যায় ১৯৪৭ এ। এই প্যারার দ্বিতীয় অংশের ব্যাখ্যা দুই রকম আছে। ক) এই অঞ্চলের বিভেদ তৈরী করার জন্য ইংরেজ খ্রিষ্টানরা কাশ্মীরকে হিন্দুদের দিয়ে প্যাচ বাধিয়ে যায়। খ) ইংরেজরা চলে গেলেও তাদের সংস্কৃতি এমনভাবে রেখে গেছে যে, এই উপমহাদেশের লোকজন এখনও সব যায়গায় ব্রিটিশ নিয়ম-কানুন ভাষা সংস্কৃতি অনুসরণ করে।

(২২) ভারত ভাঙ্গিয়া হইবে দুভাগ শঠতায় নেতাদের
মহাদূর্ভোগ দূর্দশা হবে দুদেশেরই মানুষের।

ব্যাখ্যাঃ দেশভাগের সময় মুসলমানরা আরো অনেক বেশি এলাকা পেত। কিন্তু সেই সময় অনেক মুসলমান নেতার গাদ্দারির কারণে অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হিন্দুদের অধীনে চলে যায়। ফলে কষ্টে পরে সাধারণ মুসলমানরা। এখনও ভারতের মুসলমানরা সেই গাদ্দারির ফল ভোগ করছে।

(২৩) মুকুটবিহীন নাদান বাদশা পাইবে শাসনভার
কানুন ও তার ফর্মান হবে আজেবাজে একছার।

(২৪) দুর্নীতি ঘুষ কাজে অবহেলা নীতিহীনতার ফলে
শাহী ফর্মান হবে পয়মাল দেশ যাবে রসাতলে।

ব্যাখ্যাঃ তখনকার সমসাময়িক দুর্নীতি বুঝানো হয়েছে।

(২৫) হায় আফসোস করিবেন যত আলেম ও জ্ঞানীগণ
মূর্খ বেকুফ নাদান লোকেরা করিবে আস্ফালন।

(২৬) পেয়ারা নবীর উম্মতগণ ভুলিবে আপন শান
ঘোরতর পাপ পঙ্কিলতায় ডুবিবে মুসলমান।

(২৭) কালের চক্রে স্নেহ-তমীজের ঘটিবে যে অবসান

লুণ্ঠিত হবে মানী লোকদের ইজ্জত সম্মান।

  (২৮) উঠিয়া যাইবে বাছ ও বিচার হালাল ও হারামের
লজ্জা রবে না, লুণ্ঠিত হবে ইজ্জত নারীদের।

(২৯) পশুর অধম হইবে তাহারা ভাই-বোনে, মা-বেটায়
জেনা ব্যাভিচারে হইবে লিপ্ত পিতা আর কন্যায়।

(৩০) নগ্নতা আর অশ্লীলতায় ভরে যাবে সব গেহ
নারীরা উপরে সেজে রবে সতী ভেতরে বেচিবে দেহ।

(৩১) উপরে সাধুর লেবাস ভেতরে পাপের বেসাতি পুরা

নারী দেহ নিয়ে চালাবে ব্যবসা ইবলিস বন্ধুরা।

(৩২) নামায ও রোজা, হজ্জ্ব যাকাতের কমে যাবে আগ্রহ
ধর্মের কাজ মনে হবে বোঝা দারুন দূর্বিষহ।

(৩৩) কলিজার খুন পান করে বলি শোন হে বৎসগণ
খোদার ওয়াস্তে ভুলে যাও সব নাসারার আচরণ।

(৩৪) পশ্চিমা ঐ অশ্লীলতা ও নগ্নতা বেহায়ামি
ডোবাবে তোদের, খোদার কঠোর গজব আসিবে নামি।

ব্যাখ্যাঃ শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ তার এই কাসিদাতে উল্লেখ করেছেন যে, পশ্চিমাদের চাল-চলন যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর আল্লাহর কঠিন গজব আসবে।

(৩৫) ধ্বংস নিহত হবে মুসলিম বিধর্মীদের হাতে

হবে নাজেহাল, ছেড়ে যাবে দেশ, ভাসিবে রক্তপাতে।

ব্যাখ্যাঃ এইখানে বিধর্মীদের হাতে যে জাতি বা দেশের মুসলিমরা নাজেহাল হবে সেটি হচ্ছে মিয়ানমারের মুসলিমরা। আজ যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। তাদের উপর যে গণহত্যা চলেছে তার কারণ হয়তো আগের প্যারায় বলা ব্যাখ্যার কারণে। তারপর তারা দেশ ছেড়ে দেশান্তর হয়। দেশ রক্তপাতেই ভেসেছিল এই মিয়ানমার মুসলিমদের গণহত্যার কারণে। আর দেখা যায় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত মিয়ানমার মুসলিমদের উপর গণহত্যা চলে যার কারণে তারা দেশ ছাড়তেই বাধ্য হয়। আর এই ভবিষ্যৎবাণী পুরোপুরি মিলে গেছে। বার্মা ও নাফ নদী মুসলমানের রক্তে লালে লাল হয়েছিল এ সময়।

(৩৬) মুসলমানের জান-মাল হবে খেলনা মুল্যহত
রক্ত তাদের প্রবাহিত হবে সাগর স্রোতের মত।

(৩৭) এরপর যাবে ভেগে নারকীরা পাঞ্জাব কেন্দ্রের
ধন সম্পদ আসিবে তাদের দখলে মুমিনদের।

ব্যাখ্যাঃ এখানে পাঞ্জাব কেন্দ্রের বলতে কাশ্মীর মনে করা হয়। গাজওয়াতুল হিন্দ অর্থাৎ হিন্দুস্তানের যুদ্ধের পূর্বে মুসলিমরা সর্বপ্রথম ভারতের কাছ থেকে একটি এলাকা দখল করে নেবে। আশা করা যায়, এটা হচ্ছে পাকিস্তান সীমান্তলগ্ন পাঞ্জাব ও জম্মু কাশ্মীর এলাকা। কারণ কাশ্মীরের স্থানীয় মুজাহিদ, আল কায়েদা, তালেবান সহ আরো অনেক জিহাদি গ্রুপ ব্যাপক আকারে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে জম্মু কাশ্মীরকে ভারতের দখল থেকে মুক্ত করার জন্য।

(৩৮) অনুরূপ হবে পতন একটি শহর মুমিনদের
তাহাদের ধনসম্পদ যাবে দখলে হিন্দুদের।

(৩৯) হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সেখানে চালাইবে তারা ভারি
ঘরে ঘরে হবে ঘোর কারবালা ক্রন্দন আহাজারি।

ব্যাখ্যাঃ ৩৮ ও ৩৯ নং প্যারায় বলা হয়েছে, মুসলিমরা যখন কাশ্মীর দখল করে নেবে তারপরই হিন্দুরা মুসলিমদের একটি এলাকা দখলে নেবে এবং সেখানে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। মুসলমানদের ধন-সম্পদ ভারতের হিন্দু মুশরিকরা লুটপাটের মাধ্যমে নিয়ে নেবে, মুসলিমদের ঘরে ঘরে কারবালার ন্যায় রূপধারণ করবে। কিন্তু আপনি কি জানেন মুসলিমদের যে দেশটা ভারতের হিন্দুরা দখলে নিয়ে এ ধরনের হত্যা ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে সেটা কোন দেশ? ধারণা করা হয় সেটি আপনার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অর্থাৎ মুসলিমরা কাশ্মীর জয় করার পর মুশরিকরা বাংলাদেশ দখল করবে। পরবর্তী প্যারাগুলো পড়লে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে ইনশাআল্লাহ।

(৪০) মুসলিম নেতা অথচ বন্ধু কাফেরের তলে তলে,
মদদ করিবে অরি কে সে এক পাপ চুক্তির ছলে।

ব্যাখ্যাঃ বর্তমান সময়ে এই উপমহাদেশে এ ধরনের নেতার অভাব নেই। যারা উপর দিয়ে মুসলমানদের নেতা সেজে থাকে কিন্তু ভেতর দিয়ে কাফিরদের এক নম্বর দালাল। সমগ্র ভারত উপমহাদেশের নেতারা নামধারী মুসলিম হবে কিন্তু গোপনে গোপনে হিন্দুবান্ধব হবে। মুসলিমদের ধ্বংস করার জন্য ভারত সরকাররের সাথে গোপনে পাপ চুক্তি করবে।

(৪১) প্রথম অক্ষরে থাকিবে শীন এর অবস্থান
শেষের অক্ষরে থাকিবে নূনও বিরাজমান
ঘটিবে তখন এসব ঘটনা মাঝখানে দুঈদের
ধিক্কার দিবে বিশ্বের লোক জালিম হিন্দুদের।

ব্যাখ্যাঃ ইসলাম ধ্বংসকারী এই মুনাফিক শাসককে চেনার উপায় হল তার নামের প্রথম অক্ষর হবে আরবি অক্ষর শীন অর্থাৎ বাংলা অক্ষর এবং শেষের অক্ষর হবে আরবি অক্ষর নুন অর্থাৎ বাংলা অক্ষর । একটু খেয়াল করলে তিনি কে চিনতে পারবেন। আর এসব ঘটনা ঘটবে দুই ঈদের মাঝে। প্রিয় ভাইয়েরা একটু কল্পনা করুন, এদেশে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢুকে আপনার পিতা, আপনার ভাই ও আত্মীয় স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করবে, আপনার মা বোনদের ধর্ষণ করবে তখন কি অবস্থা হবে আপনার? আপনি ভেবেছেন কি আপনার সাজানো সংসার, আপনার চাকুরী, আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎ কি? সময় খুব অল্প। তাই মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি নিন। এছাড়া আর কোন পথ নেই।

(৪২) মহরম মাসে হাতিয়ার হাতে পাইবে মুমিনগণ
ঝঞ্ঝার বেগে করিবে তাহারা পাল্টা আক্রমণ।

(৪৩) সৃষ্টি হইবে ভারত ব্যাপিয়া প্রচণ্ড আলোড়ন
উসমান এসে নিবে জিহাদের বজ্র কঠিন পণ!

ব্যাখ্যাঃ উসমান একটি তরবারির নাম।

(৪৪) সাহেবে কিরানহাবীবুল্লাহ হাতে নিয়ে শমসের।
খোদায়ী মদদে ঝাঁপিয়ে পড়িবে ময়দানে যুদ্ধের।

ব্যাখ্যাঃ এখানে মুসলিমদের দুইজন নেতার কথা বলা হয়েছে। একজন হবেন সাহেবে কিরান বা প্রজন্মের সৌভাগ্যবান। আরেকজন হাবীবুল্লাহ

(৪৫) কাঁপিবে মেদিনী সীমান্ত, বীর গাজীদের পদভারে
ভারতের পানে আগাইবে তারা মহারণ হুঙ্কারে।

ব্যাখ্যাঃ আক্রমণকারীরা ভারত উপমহাদেশের হিন্দু দখলকৃত এলাকার বাইরে থাকবে এবং হিন্দু দখলকৃত এলাকা দখল করতে হুঙ্কার দিয়ে এগিয়ে যাবে মেদেনীপুর দিয়ে। আর এই মেদেনীপুর সিমান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের। এদিক থেকেই ভারতে ঢুকবে।

(৪৬) পঙ্গপালের মত ধেয়ে এসে এসব গাজীয়ে দ্বীন
যুদ্ধে জিতিয়া বিজয় ঝাণ্ডা করিবেন উড্ডিন।

(৪৭) মিলে এক সাথে দক্ষিণী ফৌজ ইরানী ও আফগান
বিজয় করিয়া কবজায় পুরা আনিবে হিন্দুস্তান।

ব্যাখ্যাঃ হিন্দুস্তান সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের দখলে আসবে। আর সেই হাবীবুল্লাহর দলের সাথে ইরানী ও আফগান বাহিনী পরে মিলিত হবে এবং তাদের সম্মিলিত আক্রমনে বিজয় আসবে।

(৪৮) বরবাদ করে দেয়া হবে দ্বীন ঈমানের দুশমন
অঝোর ধারায় হবে আল্লাহর রহমাত বরিষান।

(৪৯) দ্বীনের বৈরী আছিল শুরুতে ছয় হরফেতে নাম
প্রথম হরফ গাফ সে কবুল করিবে দ্বীন ইসলাম।

ব্যাখ্যাঃ ছয় অক্ষর বিশিষ্ট একটি নাম যার প্রথম অক্ষরটি হবে গাফ। গাফ মূলত উর্দু-ফার্সিতে ব্যবহার করা একটি অক্ষর। যা দিয়ে বাংলা শব্দটি বুঝায়। এই নামে এমন এক প্রভাবশালী হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম পক্ষে যোগদান করবেন। তিনি কে তা এখনো বুঝা যাচ্ছে না।

(৫০) আল্লাহর খাস রহমাতে হবে মুমিনেরা খোশদিল
হিন্দু রসুম রেওয়াজ এ ভূমে থাকিবে না এক তিল।

ব্যাখ্যাঃ এরপর ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্ম তো দূরে হিন্দুদের কোন রসম রেওয়াজও থাকবে না।

(৫১) ভারতের মত পশ্চিমাদেরও ঘটিবে বিপর্যয়
তৃতীয় বিশ্ব সমর সেখানে ঘটাইবে মহালয়।

ব্যাখ্যাঃ বর্তমান সময়ে স্পষ্ট সেই তৃতীয় সমরের প্রস্তুতি চলছে। অর্থ্যাৎ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মুসলমাদের বিরুদ্ধে কাফিররা যুদ্ধ করছে তথা জুলুম নির্যাতন করছে। এই জুলুম নির্যাতনই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে রূপ নিয়ে এক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হবে। এখানে বলা হচ্ছে মহালয় বা কিয়ামত শুরু হবে যাতে পশ্চিমারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে আর পুরো বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার ফলে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই মারা যাবে।

(৫২) এ রণে হবে আলিফ এরূপ পয়মাল মিসমার
মুছে যাবে দেশ, ইতিহাসে শুধু নামটি থাকিবে তার।

ব্যাখ্যাঃ এ যুদ্ধের কারণে আলিফ = আমেরিকা এরূপ ধ্বংস হবে যে, ইতিহাসে শুধু তার নাম থাকবে কিন্তু বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। বর্তমানে মুছে যাওয়ার আগাম বার্তা স্বরূপ দেশটিতে আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং অর্থনৈতিক মন্দা চরমভাবে দেখতে পাচ্ছি। আর সামনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

(৫৩) যত অপরাধ তিল তিল করে জমেছে খাতায় তার
শাস্তি উহার ভুগতেই হবে নাই নাই নিস্তার
কুদরতী হাতে কঠিন দণ্ড দেয়া হবে তাহাদের
ধরা বুকে শির তুলিয়া নাসারা দাড়াবে না কভু ফের।

(৫৪) যেই বেঈমান দুনিয়া ধ্বংস করিল আপন কামে
নিপাতিত শেষ কালে সে নিজেই জাহান্নামে।

(৫৫) রহস্যভেদী যে রতন হার গাথিলাম আমি তা, যে
গায়েবী মদদ লভিতে, আসিবে উস্তাদসম কাজে।

(৫৬) অতি সত্বর যদি আল্লাহর মদদ পাইতে চাও
তাহার হুকুম তালিমের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দাও।

ব্যাখ্যাঃ বর্তমানে সমস্ত ফিতনা হতে হিফাজত হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে সমস্ত হারাম কাজ থেকে খাস তওবা করা। সেটা হারাম আমল হোক কিংবা কাফের মুশরিক প্রণীত বিভিন্ন নিয়ম কানুন হোক।

(৫৭) কানা যাহুকার প্রকাশ ঘটার সালেই প্রতিশ্রুত
ইমাম মাহদী দুনিয়ার বুকে হবেন আবির্ভূত।

ব্যাখ্যাঃ কানা যাহুকা সূরা বনী ইসরাইলের ৮১ নং আয়াতের শেষ অংশ। যার অর্থ মিথ্যার বিনাশ অনিবার্য। পূর্ব আয়াতটির অর্থ সত্য সমাগত মিথ্যা বিলুপ্ত। অর্থাৎ যখন মিথ্যার বিনাশ কাল উপস্থিত হবে তখন উপযুক্ত সময়েই আবির্ভূত হবেন ইমাম মাহদী। উনার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে বাতিল ধ্বংস হবে। তাহলে বনী ইসরাইলের আয়াত ৮১+ভারতের সত্য মিথ্যার বিভক্ত বা পাকিস্তান নামে ভাগ হয়, ১৯৪৭+৮১=২০২৮ সালে মাহদী আসবেন। আর অসংখ্য হাদিস দ্বারাও এটি প্রমাণিত যে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ২০২৮ সালে হবে।

(৫৮) চুপ হয়ে যাও ওহে নেয়ামত এগিও না মোটে আর
ফাঁস করিও না খোদার গায়বী রহস্য আসরার
এ কাসিদা বলা করিলাম শেষ কুনতু কানযান সালে
অদ্ভুত এই রহস্য গাঁথা ফলিতেছে কালে কালে।

ব্যাখ্যাঃ লেখক শাহ্‌ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, গায়েবী খবর যা খোদা তাকে দান করেছেন তা আর প্রকাশ করবেন না। আর কুনতু কানযান সাল অর্থাৎ হিজরি সন ৫৪৮ মোতাবেক ১১৫৮ ইংরেজি সাল হচ্ছে এ কাসিদার রচনা কাল। এটা আরবি হরফের নাম অনুযায়ী সাংকেতিক হিসাব। আরবী হরফের নাম অনুযায়ী তার যোগফল হয় সর্বমোট = ৫৪৮। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ