৬.২৬ পূর্বের কালো পতাকাধারী দলের আত্মপ্রকাশ ও পশ্চিমে গমন

 কুতায়বা (রহঃ)...আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ খুরাসানের দিক হতে কালো পতাকাবাহীগণ আবির্ভূত হবে (মাহদীর সমর্থনে)। অবশেষে সেগুলো ইলিয়া (বাইতুল মাকদিস)-এ স্থাপিত হবে (খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করবে) এবং কোন কিছুই তা ফিরাতে পারবে না। (আবু ঈসা বলেন) এ হাদীসটি গারীব।

-       (যঈফ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২৬৯ [ইঃ ফাঃ ২২৭২]; মুসনাদে আহমাদ ৮৭৬০)

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, খোরাসান থেকে কালো ঝান্ডার অধিকারী বিশাল বাহিনীর আগমন ঘটবে। কেউ তাদের মোকাবেলা করতে পারবেনা। তাদের রাজত্ব বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত হবে (সেখানেও কায়েম হবে)।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৮৪)

হযরত ছাওবান (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন তোমরা কালো ঝান্ডা দেখবে যা আসবে খোরাসানের দিক হতে তখন তোমরা উক্ত ঝান্ডাকে ধরো (তাতে যোগ দাও) বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও। কেননা তার ভিতর আল্লাহ তাআলার হেদায়েতপ্রাপ্ত খলীফা (বা খলীফা মাহদী) থাকবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৯৬; সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৪০৮৪; যইফাহ ৮৫; ইমাম আলবানী বলেনঃ আল্লাহর খলীফা কথাটি ব্যতীত হাদীছের বাকী অংশ সহীহ)

হযরত ছওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল বলেছেন, যখন তোমরা দেখবে, কালো পতাকাগুলো খোরাসানের দিক থেকে এসেছে, তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেও। কেননা, তাদেরই মাঝে আল্লাহর খলীফা মাহদী থাকবে।
-       (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৭৭; কানজুল উম্মাল, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪৬; মিশকাত শরীফ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়)

ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে (হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন)। তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা সত্যের (পূর্ণ ইসলামী শাসনের) দাবী জানাবে, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুইবার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে, কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা (ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব) আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদীর) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয়
-       (আবু আমর আদ দাইনি ৫৪৭; মুহাক্কিক আবু আবদুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

হযরত তাবে হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যে, খোরাসান হতে কালো ঝান্ডাবাহী দল বের হবে। আর তাদের সাথে দুর্বল জাতি বের হবে। তারা সকলেই একত্র হবে। আল্লাহ তাআলা তার সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী করে দিবেন। তাদের পরপরই পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীরা বের হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯০০)

হযরত হাসান (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন- রসূল বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। যা তার পরিবারের লোকদের উপর আসবে। এমনকি আল্লাহ তাআলা পূর্বাঞ্চল হতে এক কালো ঝান্ডা পাঠাবেন। যে ব্যক্তি উহাকে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করবেন। আর যে ব্যক্তি উহাকে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে পরিত্যাগ করবেন। এমনকি এক ব্যক্তি আসবে যার নাম আমার নামের অনুরূপ হবে। অতঃপর তারা তাদের বিষয়গুলো তার নিকট ন্যাস্ত করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে শক্তিশালী করবেন এবং সাহায্য করবেন।

অন্য অনুবাদে এসেছে- শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক পূর্বদিক থেকে কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে পাঠাবেন। যারা ঐ কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে সাহায্য করল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে সাহায্য করবেন। যে তাকে ছেড়ে দিল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে ছেড়ে দেবেন। তারপর ঐ কালো পতাকাবাহী দল এমন এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর কাছে আসবে যার নাম আমার নামের মতো হবে। তারা ঐ ব্যক্তি (ইমাম মাহদী) এর উপর শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব সোপর্দ করবে। সুতরাং, আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯০৪)

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আদম হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন আমি আব্দুর রহমান ইবনে গায ইবনে রবীআ আল জারসীকে বলতে শুনেছি যে, আমি আমর ইবনে মাররা জুমালী যিনি রসূল এর একজন সাহাবী। তাকে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই অবশ্যই খোরাসান হতে একটি কালো ঝান্ডা বের হবে এমনকি সেটার খূর এই যাইতুন গাছের সাথে সংযুক্ত হবে যা লাহিয়ান ও হিরসাতা নামক এলাকার মাঝ বরাবর থাকবে। আমরা বললাম, আমরা তো উক্ত এলাকার মাঝে কোন যাইতুন গাছ দেখি নাই। তিনি বললেন উক্ত স্থানদ্বয়ের মধ্যে যাইতুন গাছ রোপণ করা হবে। এমনকি উক্ত ঝান্ডাবাহী দল সেখানে অবস্থান নিবে। ফলে তাদের ঘোড়ার খুরগুলি উক্ত গাছের সাথে আটকে যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আদম বলেন, আমি এ হাদীস হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সুলাইমান এর নিকট ব্যাক্ত করলাম, তখন তিনি বললেন উক্ত গাছগুলো দ্বিতীয় কালো ঝান্ডাবাহীদের ঘোড়ার খুর বাঁধবে যে ঝান্ডবাহী দল প্রথম ঝান্ডার উপর বের হবে। যখন তারা এখানে অবতরণ করবে তখন এদের অধিবাসীদের থেকে বাহির হওয়া এক ব্যক্তি বের হবে। ফলে প্রথম ঝান্ডবাহীদের কাউকে সে পাবে না। তবে তারা সবাই আত্মগোপন করবে। অতঃপর তাদের পরাজিত করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯০৫)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ বলেন, পূর্বদিক থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদীর খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে।

অন্য অনুবাদে এসেছে- প্রাচ্য দেশ থেকে কতক লোকের উত্থান হবে এবং তারা মাহ্দীর রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে।
-       (যঈফ, সহীহুল মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদিস নং ২৮৯৬; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ৩, তাঃ পাঃ ৪০৮৮; যইফাহ ৪৮২৬, যইফ আল-জামি' ৬৪২১)
-       এ বিষয়ে সহীহ হাদিসও থাকায় এটিকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

হযরত আবু জাফর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন খোরাসান হতে আগত যে কালো ঝান্ডাবাহী দল কূফায় অবস্থান নিবে। অতঃপর যখন মক্কায় মাহদীর অবির্ভাব ঘটবে তখন আনুগত্যের (স্বীকার করার জন্য) জন্য মাহদীর নিকট একটি দল প্রেরণ করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯২১)

খুরাসান এলাকা কোনটি?

মূলত রসূল এর যুগে বৃহত্তর খোরাসান বলতে এর সীমানা নিম্ন লিখিত ভূখণ্ডের সমষ্টিকে বুঝায়, যার মূল কেন্দ্র হচ্ছে বর্তমান আফগানিস্তান। বিস্তৃতি নিম্নরূপঃ

উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান (হেরাত, বালখ, কাবুল, গাজনি, কান্দাহার দিয়ে বিস্তৃত),

উত্তর ও দক্ষিন-পূর্ব উজবেকিস্তান (সামারকান্দ, বুখারা, সেহরিসাবজ, আমু নদী ও সীর নদীর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বিস্তৃত),

উত্তর-পূর্ব ইরান (নিশাপুর, তুশ, মাসহাদ, গুরগান, দামাঘান দিয়ে বিস্তৃত), দক্ষিন তুর্কমেনিস্তান (মেরি প্রদেশ - মার্ভ, সানজান), দক্ষিণ কাজিকিস্তান),

উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান (মালাকান্দ, সোয়াত, দীর ও চিত্রাল),

উত্তর পশ্চিম তাজিকিস্তান (সুগ্ধ প্রদেশের খোজান্দ, পাঞ্জাকেন্ত দিয়ে বিস্তৃত)।

দরিদ্র পীরিত তালোকান অঞ্চল (আফগানিস্তানের উত্তর পূর্বাঞ্চল) সেখানে স্বর্ন, রৌপ্যের খনি নেই কিন্তু আল্লাহ্‌র রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ। তারাই আল্লাহর রহমত দ্বারা স্বীকৃত, শেষ জামানায় তারাই হবে ইমাম মাহদীর সহযোগী।
-       (আল বুরহান ফি আলামত আল মাহদী ফি আখীরুজ্জামান, আল মুত্তাকী আল হিন্দি)

৬.২৬.১ কালো পতাকাধারী দলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ

আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা যখন রসূলুল্লাহ -এর নিকট বসা ছিলাম, তখন হাশিম বংশীয় কতক যুবক তাঁর নিকট উপস্থিত হলো। তাদের দেখতে পেয়ে নবী -এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হলো এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমরা সব সময় আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করি। তিনি বলেনঃ আমাদের আহলে বাইত-এর জন্য আল্লাহ তাআলা পার্থিব জীবনের পরিবর্তে আখেরাতের জীবনকে পছন্দ করেছেন। আমার আহলে বাইত আমার পরে অচিরেই কঠিন বিপদে লিপ্ত হবে, কষ্ট-কাঠিন্যের শিকার হবে এবং দেশান্তরিত হবে।

প্রাচ্যদেশ (পূর্বদিক, হিন্দ-খুরাসান) থেকে কালো পতাকাধারী কতক লোক তাদের (মাহদীর) সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে। তারা কল্যাণ (খিলাফত) প্রার্থনা করবে, কিন্তু তা তাদের দেয়া হবে না। তারা লড়াই করবে এবং বিজয়ী হবে। শেষে তাদেরকে তা (খিলাফত) দেয়া হবে, যা তারা চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে আমার আহলে বাইত-এর একজন লোকের (ইমাম মাহাদীর) নিকট তা (খিলাফত) সোপর্দ করা হবে। সে পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে, যেমনিভাবে লোকেরা একে যুলুমে পূর্ণ করেছিলো। তোমাদের মধ্যে যারা সে যুগ পাবে, তারা যেন বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের নিকট চলে যায়।
-       (জঈফ, সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৮২; রাওদুন নাদীর ৬৪৭; তারিখে তাবারী; আস সাওয়ায়িকুল মুহ্রিকাহ্, অধ্যায় ১১, উপাধ্যায় ১, পৃ. ২৫০-২৫১)

৬.২৬.২ সুফিয়ানীর দলকে পরাজিত করবে

হযরত বাকির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, সুফিয়ানী ও তার সঙ্গী-সাথীরা (দল) আবির্ভূত হবে এবং হযরত মুহাম্মাদ এর আহলে বাইত এবং তার অনুসারীদের ওপর বিজয়ী হওয়া ছাড়া তার আর কোনো চিন্তা থাকবে না! এ কারনেই সে (সুফিয়ানী) একদল সৈন্যকে কুফায় প্রেরণ করবে এবং তারা সেখানে হযরত মুহাম্মাদ এর একদল অনুসারীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে যে হয় তাদের কে হত্যা করবে অথবা ফাসিতে ঝুলাবে! আর তখন খোরাসান থেকে একটি সেনাদল বের হবে এবং দাজলা অববাহিকায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তারা অব্যাহতভাবে অগ্রসর হতে থাকবে! স্বীয় সঙ্গী-সাথী সমেত এক অনারব দুর্বল ব্যাক্তি তাদের (খোরাসানীদের) নেতৃত্ব দিয়ে বের হয়ে, নাজাফে (সুফিয়ানীর সাথে) সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। সুফিয়ানি তার আরেকটি সেনাদলকে মদিনা অভিমুখে প্রেরণ করবে। আর তারা সেখানে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করবে। আর মানসুর সেখান থেকে মাহদীর নিকট পালিয়ে যাবেন! সুফিয়ানীর বাহিনী ঐ অঞ্চলে মুহাম্মাদ এর বংশের (কুরাইশদের) ছোট বড় সবাইকে বন্দী করবে! তাদের মধ্য থেকে এমন কোনো ব্যাক্তি বিদ্যমান থাকবে না, যাকে বন্দী করা হবে না! সুফিয়ানীর বাহিনী ইমাম মাহদী ও তার সঙ্গী-সাথীদের সন্ধানে তল্লাশি চালাতে থাকবে। আর ইমাম মাহদী, হযরত মুসা (আঃ) এর মত উদ্বেগ উৎকন্ঠার সাথে মদিনার বাইরে চলে আসবেন এবং মক্কায় এসে আশ্রয় নেবেন। *
-       (কিতাবুল যুহুর, ৫২ তম খন্ড, পৃষ্ঠা- ২২২)
-       * এখানে অনারব দুর্বল ব্যক্তি হচ্ছেন ইমাম মাহমুদ যিনি ইরাকে সুফিয়ানীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন। হাদিস থেকে এটিও জানা যায় মাহদী মদিনার অধিবাসী।

সুফিয়ানী ইরাকে অবস্থান করতঃ পূর্বদিক থেকে আগত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে।
-       (যঈফ জিদ্দান, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬২০)

হযরত আবু জাফর (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন খোরাসান হতে যে কালো ঝান্ডা বের হবে তা কূফায় অবস্থান নিবে। অতঃপর যখন মক্কায় মাহদীর প্রকাশ ঘটবে তখন তার নিকট বাইয়াত নিয়ে পাঠাবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯০৯)

(কিছু অংশ বাদে)...তাদের সাক্ষাত ঘটবে বাবে ইস্তাখাররাতে (ইরানের ফার্স প্রদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থানে)। তখন তাদের মাঝে বড় একটি যুদ্ধ হবে, সে যুদ্ধে কালো ঝান্ডাবাহী দল জয়ী হবে। এবং সুফিয়ানীর সৈন্য পলায়ন করবে। আর সে সময়ই মানুষ মাহদীর আকাঙ্ক্ষা করবে এবং তাকে খুঁজতে থাকবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯১৪)

হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন সিরিয়ায় সুফিয়ানীর অবির্ভাব হবে। অতঃপর তাদের মাঝে কিরকিসিয়া নামক এলাকায় একটি ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ যুদ্ধ হবে। এমনকি আকাশের পাখিরা ও হিংস্র জানোয়ার তাদের পচে গলে যাওয়া দূর্গন্ধ যুক্ত শরীর দ্বারা তাদের পেট পুর্তি করবে। অতঃপর তাদের পরবর্তীদের উপর প্রভাত হবে। আর তাদের থেকে একদল মানুষ খোরাসানে প্রবেশ করবে। আর এদিকে সুফইয়ানির সৈন্যদল খোরাসানের অধিবাসীদের খোঁজে অগ্রসর হবে। অতঃপর তারা কূফার শিয়া এ আলে মুহাম্মাদ নামক স্থানে যুদ্ধ করবে। অতঃপর (তারা বিজয়ের পর) খোরাসানের অধিবাসীরা মাহদীর খোঁজে বের হবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৮১)

হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রসূল বলেন পূর্বাঞ্চল হতে বনু আব্বাসের কালো ঝান্ডা বের হবে। অতঃপর তারা আল্লাহ তাআলা যতক্ষণ চান তারা ততক্ষণ অবস্থান করবে। অতঃপর ছোট একটি কালো ঝান্ডাবাহী দল (খুরাসানী) বের হবে। তারা আবু সুফিয়ানের বংশধরের এক ব্যক্তি ও তার সাথীদের সাথে পূর্বাঞ্চলের দিকে যুদ্ধ করবে। তারা মাহদীর আনুগত্যতা স্বীকার করবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯০৬)

হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন সুফিয়ানী ঘোড়া (সৈন্য) কূফার দিকে বের হবে। সে খোরাসানবাসীদের অনুসন্ধানের জন্য সৈন্য প্রেরণ করবে। আর এদিকে খোরাসানবাসীরা মাহদীর খোজে বের হবে। অতঃপর সে এবং হাশেমী ব্যক্তি কালো ঝান্ডা সহকারে যে ঝান্ডাবাহী দলের সম্মুখভাগে থাকবে শুয়াইব ইবনে সালেহ। অতঃপর তার এবং সুফিয়ানীর দলের ইসতাখাররা বাবের নিকট সাক্ষাৎ ঘটবে। অতঃপর তাদের মাঝে বড় একটি যুদ্ধ হবে। অতঃপর কালো ঝান্ডা প্রকাশ পাবে। এবং সুফিয়ানীর সাথী বা দল ভেগে যাবে। আর সে সময়ই মানুষ মাহদীর আকাঙ্ক্ষা করবে এবং তাকে ডাকবে (অনুসন্ধান করতে থাকবে)।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯১২)

মোহাম্মদ ইবনে হানাফিয়্যাহ (রঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, খোরাসান থেকে কালো পতাকা বের হবে যেগুলোর বাহকরা, কালো টুপি ও সাদা পোশাক পরিহিত থাকবে! তাদের সহিত আরও এক ব্যাক্তি থাকবেন যাকে শুয়াইব ইবনে ছালেহ বলা হবে!

খোরাসানী ও শুয়াইব ইবনে ছালেহ, সুফিয়ানীর বাহিনীকে পরাজিত করবে এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করবে যাতে করে তারা ইমাম মাহদীর হুকমতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়। শাম দেশ (সিরিয়া) থেকে তিনশ ষাট জন ব্যাক্তি তাদের সাথে যোগ দিবে।

-       (ইমাম ইবনে হাম্মাদের হস্তলিখিত পান্ডুলিপি, পৃঃ ৮৪, এবং এ রেওয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থের প্রায় একই অর্থবিশিষ্ট রেওয়ায়েত উক্ত গ্রন্থের ৭৪ পৃষ্ঠায়ও বর্ণিত হয়েছে)

প্রথম যুদ্ধে ইমাম মানসূর ও শুয়াইব ইবনে সালেহ সুফিয়ানীর সাথে পরাজিত হবে তখন পূর্বদিক থেকে আগত কালো পতাকাবাহী দলের সাথে আবার যুদ্ধ হবে আর তখন কালো পতাকাবাহীরা বিজয়ী হবে। এই কালো পতাকাবাহী দলের নেতৃত্বে থাকবে ইমাম মাহমুদ।

এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, কালো পতাকাবাহী দল ইরাকে সুফিয়ানীর সাথে যুদ্ধ করবে এরপর মাহদীর সাহায্যার্থে আরবে প্রবেশ করে যুদ্ধ করবে আবার অন্যত্র এসেছে কালো পতাকাবাহী দল বের হয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় করতে যাবে। কোনটি আগে হবে, কিভাবে হবে?

উত্তরঃ খুরাসান বা পূর্বদিক দিয়ে দুইটি কালো পতাকাবাহী দল বের হবে। প্রথমটি বের হবে শামীম বারাহ এর নেতৃত্বে আর সেটি বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যাবে এবং সেখানে ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করে বাইতুল মুকাদ্দাস দখলে আনতে থাকবে। ঠিক ঐ সময় সুফিয়ানীর সাথে ইমাম মানসূর ও শুয়াইব ইবনে সালেহ এর সম্মিলিত দল যুদ্ধে হেরে যাবে এবং শুয়াইব ইবনে সালেহ বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ছুটবে। সেখানে পূর্বেই যাওয়া শামীম বারাহ এর দলের সাথে মিলিত হয়ে একসাথে বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় করবে। এরপর মাহাদীর সাহায্যার্থে পূর্বদিক থেকে তথা খুরাসান থেকে আবার কালো পতাকা নিয়ে ইমাম মাহমুদ বের হয়ে আসবে এবং যেহেতু তিনি আরবের দিকে ছুটছেন, তাই পথিমধ্যে ইরাকে সুফিয়ানীর বাঁধার সম্মুখীন হবে এবং তখন সুফিয়ানীর সৈন্যবাহিনীর সাথে ইরাকে এই কালো পতাকাবাহী দল যুদ্ধ করে বিজয়ী হবে এবং এরপর তারা আরবে প্রবেশ করবে। দেখা যাচ্ছে মাহদীর সাহায্যকারী দলের সকল নেতা বা সেনাপতিরাই কালো পতাকাবাহী হবেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ