৬.১৮ তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ মারা যাবে

 হিন্দুস্তানের যুদ্ধ, মহামারী-দুর্ভিক্ষ, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর চরম দুর্ভিক্ষ, ধোঁয়ার প্রকাশ ইত্যাদি কারণে পৃথিবীর শোচনীয় এক অবস্থা হবে। পৃথিবীর রূপ পাল্টে যাবে। যেমন একটি হাদিসের শেষে বলা হয়েছে- “এ কথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীমের ৪৮ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন।” (আস সুনানুল কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৮)

এই আয়াতে আসলে কি বলা আছে? কুরআনে এসেছে,

যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকেও এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এবং আল্লাহর সামনে পেশ হবে।

রসূল এর উদাহরণ দেওয়া এই আয়াত থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে। অসংখ্য মানব, দানব, গাছপালা, পশুপাখি মারা যাবে এবং বিশ্বব্যাপী চরম দুর্ভিক্ষ থাকবে আর তাতেও মানুষ নিহত হতে থাকবে। এটাই মাহদীর আগমনের আলামত যে, পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ আগে মারা যাবে এরপর মাহদীর আগমন ঘটবে। ঐ এক ভাগ মানুষ মাহদীর জামানা পাবে। এখন বর্তমানে ৭০০+ কোটি মানুষ থাকলেও মাহদীর আবির্ভাবের আগেই তার সংখ্যা কমে হবে ২৫০ কোটির মতো আনুপাতিক। অর্থাৎ তিন ভাগের দুই ভাগ নিহত হয়ে যে পরিমাণ থাকবে। আর এটার বাস্তব অবস্থা আমরা ইতিমধ্যেই টের পাচ্ছি। হাদিসে এসেছে,

হযরত আবু বাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আস সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করলাম, কখন ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে? তিনি বললেন, রসূলে পাক এর বংশধর এর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা যাবে। এক, শ্বেত মৃত্যু। দুই, লাল মৃত্যু। শ্বেত মৃত্যু অর্থাৎ দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যু। আর লাল মৃত্যু হল যুদ্ধের কারণে মৃত্যু।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৫২)

সালামা ইবনু নুফাইল সাকুবি (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই তিনি আমার নিকট ওহি প্রেরণ করেছেন যে, আমি তোমাদের মধ্যে অবস্থানকারী নই। আর আমার পর তোমরা অল্প সময়ই অবস্থানকারী। অতঃপর তোমরা অবস্থান করবে, এমনকি বলবে, কখন? আর অচিরেই ধ্বংস আসবে। তোমরা একে অপরকে ধ্বংস করে দিবে। আর কিয়ামতের পূর্বে দুটি কঠিন মৃত্যু হবে। আর তারপরের বছরগুলো হবে ভূমিকম্পের বছর।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭০৪)

হযরত কাইসান রাওয়াসী কাসসার থেকে বর্ণিত আর তিনি গ্রহণযোগ্য রাবী ছিলেন তিনি বলেন, আমার মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) আমার নিকট বর্ণনা করে বলেন যে, আমি হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু কে বলতে শুনেছি যে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদী বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তিন ভাগের এক ভাগকে হত্যা করা হয়। তিন ভাগের এক ভাগ মারা যায়।এবং তিন ভাগের এক ভাগ লোক জীবিত থাকবে।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৫৯)

হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের নিকটবর্তী সময়ে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা দিবে। লাল মৃত্যু ও শ্বেত মৃত্যু। হঠাৎ হঠাৎ লাল ও রক্তবর্ণ বিশিষ্ট পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। আর লাল মৃত্যু হল তরবারি (যুদ্ধের) দ্বারা মৃত্যু ও শ্বেত মৃত্যু হল প্লেগ, মহামারী দ্বারা মৃত্যু।
-       (কিতাবুল ইরশাদ, শেখ মুফীদ প্রণীত, পৃ. ৪০৫; গাইবাত, শেখ তূসী প্রণীত, পৃ. ২৭৭; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৮৮)

হযরত জাফর সাদিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, মাহদীর আবির্ভাবের পূর্বে দুই ধরনের মৃত্যু দেখা দিবে। লাল (যুদ্ধের কারণে) মৃত্যু ও শ্বেত (দুর্ভিক্ষ, মহামারীর কারণে) মৃত্যু। (অবস্থা এমন হবে) যে প্রতি ৭ জনের ৫ জন মৃত্যুবরণ করবে।
-       (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২০৭; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৯২)

হযরত জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ইমাম মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে না। তখন আমি আবু বাসির জিজ্ঞাসা করলাম, তখন কোন ব্যক্তি অক্ষত থাকবে? এ উত্তরে জাফর সাদিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, তোমরা (মুসলমানেরা) কি অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ এর মধ্যে থাকতে চাও না?
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬০; বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ১১৩; আসরে জুহুরী, পৃষ্ঠা ১৯০)

হযরত মুস্তাওয়ীদ আল কুরাইশী (রা:) বলেন, আমি রসূল কে বলতে শুনেছি। কিয়ামতের পূর্বে ইহুদী-খৃষ্টান বৃদ্ধি পাবে। আর বজ্রঘাতের মৃত্যুতে তাদের সংখ্যা কমে যাবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৭)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, সাবধান! মুশরিকরা নিজেদের অবাধ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীতে কেয়ামত আনয়ন করবে। আর তখন পৃথিবীতে অগ্নি প্রকাশ (পারমাণবিক বোমার আঘাত) পাবে, যা পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে ধ্বংস করবে। তাঁর পরেই আল্লাহ তায়ালা একটি শান্তিময় পৃথিবী দেখাবেন, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা থাকবে না। এ কথা বলে তিনি সূরা ইবরাহীমের ৪৮ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন।
-      (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৮)

এই আজাব আসবে সকলের উপরেই যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এতে যে শুধু অমুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয় মুসলিমরাও হবে।

ওয়াহাব ইব্‌ন বাকীয়্যা (রহঃ) .... আবূ বকর (রা:) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহ্‌ ও রাসূলের প্রশংসার পর বলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা এ আয়াত তিলাওয়াত কর, কিন্তু তোমরা একে অন্যস্থানে প্রয়োগ কর। তোমাদের চিন্তা করা উচিত যে, তোমাদের মাঝে যারা গুমরাহ হবে, তারা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে শর্ত হলো-যদি তোমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যদি সৎ পথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (সূরা আল-মায়িদাহ, আঃ ১০৫)।

রাবী খালিদ (রা:) বলেন, আমি নবী -কে বলতে শুনেছি যে, যখন লোকেরা জালিমের হাত ধরে তাকে জুলুম করা থেকে বিরত না রাখবে, তখন মহান আল্লাহ্‌ তাদের উপর ব্যাপকভাবে আযাব নাযিল করবেন।

রাবী আমর ইবন হুশাযম (রা:) বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্‌ -কে বলতে শুনেছিঃ যে কওম এরূপ হবে যে, তারা যখন গুনাহে লিপ্ত হবে, তখন তা প্রতিরোধ করার মত কিছু লোক থাকা সত্ত্বেও যদি তারা প্রতিকার না করে তখন আল্লাহ্‌ তাআলা সকলকে আযাবে গ্রেফতার করবেন। রাবী শুবা (রহঃ) বলেনঃ যে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক গুনাহে লিপ্ত হবে, আল্লাহ্‌ তাদের সকলকে আযাবে নিপতিত করবেন।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩৩৮ [ইঃ ফাঃ ৪২৮৭]; তিরমিযী; ইবনু মাজাহ; মুসনাদে আহমাদ)

জারীর (রা:) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী -কে বলতে শুনেছিঃ কোনো ব্যক্তি কোনো জাতির মধ্যে বাস করছে যাদের মাঝে পাপাচার হচ্ছে, তারা এ পাপাচার প্রতিরোধে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরোধ করছে না, তাহলে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তাদের চরম শাস্তি দিবেন।
-       (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ (আলবানী একাঃ) ৪৩৩৯ [ইঃ ফাঃ ৪২৮৮]; ইবনু মাজাহ)

এই তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ ইমাম মাহদীর জামানা পাবেন। তাদের বেশির ভাগই হবে মুসলিমরা। কারণ এই সকল আজাব থেকে আল্লাহ তাদেরকে বাচিয়ে রাখবেন সে সময়। আর তার মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত নেতাকে অনুসরণ করে ও তার জামায়াতে যুক্ত হয়ে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ