৩.৬ হাদিস অনুযায়ী শতবর্ষী মুজাদ্দিদ কবে আসবেন তাহলে?

মুজাদ্দিদ (আরবি:مجدد‎) শব্দের অর্থ সংস্কারক। প্রতি শতাব্দীতে মুসলিম সমাজ সংস্কার, মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশকৃত অনৈসলামিক রীতির মূলোৎপাটন এবং ইসলামের প্রকৃত আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আবির্ভূত হন এমন ব্যক্তিকে বুঝায়। তারা শুধু একটি সেক্টরের সংস্কারের জন্যও আগমন করতে পারেন বা সম্পূর্ণ সংস্কারের জন্যও আগমন করতে পারেন। শেষ জামানায় যিনি আসবেন তিনি সর্ব বিষয়েই সংস্কার করবেন, এমনটাই আশা করা যায়। হাদীসে বলা হয়েছে,

"আল্লাহ তা'আলা এ উম্মাতের (কল্যাণের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দ্বীনকে সংস্কার করবেন।"

-        (সহীহ, সূনান আবূ দাউদ (ইঃ ফাঃ) ৪২৪১ [আলবানী একাঃ ৪২৯১]; হাকেম ৮৫৯২; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৪৭; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭০, ইবনে দাইলামী)

দ্বীন তথা শরীয়তের আক্বীদা ও আমলের তাজদীদ বা সংস্কার যিনি করেন তাঁকে মুজাদ্দিদ বা জামানার ইমাম বলে। প্রতি জামানায় যখন ইসলামের বড় কোনো ক্ষতি হয় তখন আল্লাহ মুজাদ্দিদ বা ইমাম প্রেরণ করেন আর তিনি আবার দ্বীনকে সংস্কার করে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যায়। হাদীছের সূত্র ও আলেমদের মতেঃ

(১) যখনি ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হবে, তার ১০০ বছরের মাথায় আল্লাহ প্রদত্ত বা মনোনীত একজন ব্যক্তির আগমন ঘটবে।

(২) সেই ব্যক্তিকে মুজাদ্দিদ বা ধর্ম সংস্কারক বলা চলে।

(৩) তিনি দ্বীনের সংস্কার-সংশোধন করবেন, ত্রুটিমুক্ত করবেন। (বিদআত ও চরমপন্থা থেকে মধ্যম পন্থায় আবার নিয়ে আসবেন)

(যেমনঃ যখন বাইতুল মুকাদ্দাস ক্রুসেডারদের দখলে চলে গিয়েছিলো, তার প্রায় ৯০-১০০ বছরের মাথায়, গাজি সালাহউদ্দিন (র) বাইতুল মুকাদ্দাসকে উদ্ধার করেছিলেন।)

আমাদের নিকটবর্তী সময়ে সর্বশেষ বড় ক্ষতি হিসেবে ১৯২৪ সালে উসমানী খিলাফত ধ্বংস হয়েছে। প্রায় এ বিষয়ে সকলেই একমত যে এটাই ইসলামের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় এবং এই বিপর্যয় এর সময় থেকেই হিসেব করেই হাদিসের সূত্রানুসারে ১০০ বছরের মাথায় অর্থাৎ, ২০২৪ সালে কেউ একজন আল্লাহ প্রদত্ত ব্যক্তির আগমন ঘটবে। যদি ১০০ বছর হিসাবটি চন্দ্র হিসাবে তথা হিজরি সাল ধরি তাহলে হয় ২০২১ সাল। অর্থাৎ এই দুই সময়ের মধ্যেই একজন ব্যক্তির আবির্ভাব হওয়ার কথা। শেষ জামানায় যেই মুজাদ্দিদ এর আগমন হবে তার ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, শেষ জামানায় পথভ্রষ্ট আলেম বৃদ্ধি পাবে। আর তাঁরা দ্বীনকে মৃত্যুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। ঠিক তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত উমর (রা:) এর বংশ থেকে একজন বালককে পাঠাবেন। যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত (সংস্কারসাধন) হবে।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮০৬)

শেষ জামানা বলতে এই জামানাকেই বুঝানো হয়েছে। আর দেখতে পাচ্ছি এই জামানাতেই পথভ্রষ্ট আলেমদের সংখ্যা সর্বোচ্চ। আর এই সময়েই উমর (রা:) এর বংশ থেকে এক বালকের তথা যুবকের আবির্ভাব হবে যার মাধ্যমে দ্বীন জীবিত হবে। এই হাদিস থেকে স্পষ্টই বুঝা যায় এখানে সেই দ্বীন সংস্কারক বা মুজাদ্দিদ এর কথাই বলা হয়েছে যিনি আমাদের জামানায় আবির্ভাব করবেন আর তা ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে। তিনি ইমাম মাহদী নন কারণ ইমাম মাহদী আসবেন ফাতিমা (রা:) এর বংশ হতে অর্থাৎ আহলে বাইত থেকে। আর তিনি যখন আবির্ভূত হবেন তখন তার বয়স হবে চল্লিশ তাই তিনি বালকও হবেন না। তাই উমর (রা:) এর বংশের এই বালক বা যুবক অন্য কেউ এবং তার পরিচয়ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

হযরত কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি জিহাদ হবে, আর সেই যুদ্ধের শহীদরা কতইনা উত্তম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন কে? তিনি বললেন, উমর (রা:) এর বংশের এক দুর্বল বালক।

-        (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৮৭)

মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ নিয়ে তার ব্যাপারে এসেছে-

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) বলেছেন, শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তাঁর বন্ধু সাহেবে কিরানের প্রকাশ ঘটবে। আর তাদের মাধ্যমে মুশরিকদের উপর মুসলমানদের বড় বিজয় আসবে। আর তা হবে মাহদীর আগমনের পূর্বে।

-        (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশকারী নেতা)

হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তার জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধে) বজ্রাঘাতে (আনবিক অস্ত্রে) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। সে তার সহচর বন্ধু সাহেবে কিরান শামীম বারাহকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, যে বেলাল ইবনে বারাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।

-        (আসরে যুহরি ১৮৭ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক; ইলমে তাছাউফ; ইলমে রাজেন; বিহারুল আনোয়ার)

-        উক্ত হাদিসটি এই পাঁচটি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দিছগণ ব্যক্ত করেছেন উক্ত হাদিসটি সহীহ, কেউ কেউ বলেছেন হাসান।

উল্লিখিত হাদিস অনুযায়ী ইমাম মাহদীর পূর্বে আরেক ইমামের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার নাম বলা হয়েছে ইমাম মাহমুদ। তাহলে এটিও জানা গেল যে এই ইমাম মাহমুদ, তিনিই সেই শতবর্ষী মুজাদ্দিদ হবেন এবং ২০২৪ সালের মধ্যেই তার পূর্ণ আত্মপ্রকাশ হবে ইংশাআল্লাহ।

উল্লিখিত এইসকল হাদিস পর্যালোচনা করে বুঝা যায় যে, শতবর্ষী মুজাদ্দিদের আগমন ও ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশও একই সময়ে হবে না। এবং তারা দুজন আলাদা ব্যক্তি হবে। শতবর্ষী মুজাদ্দিদের আবির্ভাব ২০২৪ এর সময় ও ইমাম মাহদী এর আবির্ভাব ২০২৮ সালে হবে ইংশাআল্লাহ। এটাকে প্রায়ই এক করে দেখা হয় কারণ এই জামানায় আবির্ভূত হওয়া মুজাদ্দিদ সম্পর্কে হাদিসগুলো না জানার কারণে। উল্লিখিত হাদিস থেকে এটিও জানা যায় যে এই মুজাদ্দিদের নেতৃত্বে মুশরিকদের সাথে মুমিনদের একটি যুদ্ধ হবে এবং এটি বিশ্লেষণ করলে জানা যায় এটি সেই হিন্দুস্তানের যুদ্ধ বা গাজওয়াতুল হিন্দ। তাহলে এটিও পরিস্কার হয় যে হিন্দুস্তানের যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন এই শতবর্ষী মুজাদ্দিদ ইমাম মাহমুদ, ইমাম মাহদী নন। আর এই যুদ্ধ ইমাম মাহদীর আগমনের আগেই সংঘটিত হতে যাচ্ছে। এটিও আগেই পরিস্কার যে তিনি এই শতবর্ষী মুজাদ্দিদ নন। কারণ তিনি আসবেন ১০৪ বছরের মাথায় যা নির্দিষ্ট করে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম মাহদীর পূর্বে এই ইমাম মাহমুদের প্রকাশ ঘটলে, তখন অবশ্যই আমাদের এই ইমামের জামাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে যদি আমরা সঠিক ইসলামটি পেতে চাই এবং হিন্দুস্তানের যুদ্ধে শরীক হতে চাই।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ