৬.৭৪ এরপরেই কিয়ামত সংঘটিত হবে

 আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই কিয়ামতের অনেক নির্দশন রয়েছে। আর তার নির্দশন আসা ব্যতীত কখনোই কিয়ামত সংঘটিত হবে না।

-       (মাওকুফ, সনদ বিচ্ছিন্ন, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮১৫)

কেয়ামতের সকল নিদর্শনগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর কেয়ামত হবে। আর তার আগের অবস্থা সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে।

নবী বলেনঃ

وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ نَشَرَ الرَّجُلَانِ ثَوْبَهُمَا بَيْنَهُمَا فَلَا يَتَبَايَعَانِهِ وَلَا يَطْوِيَانِهِ وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدِ انْصَرَفَ الرَّجُلُ بِلَبَنِ لِقْحَتِهِ فَلَا يَطْعَمُهُ وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَهُوَ يُلِيطُ حَوْضَهُ فَلَا يَسْقِي فِيهِ وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ رَفَعَ أُكْلَتَهُ إِلَى فِيهِ فَلَا يَطْعَمُهَا

কিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, দুজন লোক ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের কাপড় একে অপরের সামনে পেশ করবে কিন্তু তারা তা ক্রয়-বিক্রয় বা ছড়ানো কাপড় ভাঁজ করার সময় পাবেনা। কিয়ামত এমন পরিস্থিতে কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি উটনী দোহন করে নিয়ে আসবে কিন্তু তা পান করার সুযোগ পাবেনা। কিয়ামত এমন পরিস্থিতে কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি পশুকে পানি পান করানোর জন্য চাড়ি বসাতে থাকবে কিন্তু তার পশুকে পানি পান করানোর সুযোগ পাবেনা। কিয়ামত এমন পরিস্থিতে কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি মুখে খাদ্যের লোকমা উঠাবে কিন্তু তা মুখে দিয়ে খাবার সুযোগ পাবেনা
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২১, ৮৫ [আঃ প্রঃ ৬৬২২; ইসঃ ফাঃ ৬৬৩৬]; সহীহুল মুসলিম ১/৭২, হাঃ ১৫৭; মুসনাদে আহমাদ ৭১৬৪)

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ বলেনঃ এক লোক তার উষ্ট্রী দোহন করবে; কিন্তু পাত্র তার মুখের নিকটে পৌছার আগেই কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে দু লোক কাপড় ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। তারা ক্রয়-বিক্রয় শেষ না করতেই কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। এমনিভাবে এক লোক তার হাওয মেরামত করতে থাকবে। কিন্তু মেরামত শেষ করে মুখ ফিরাবার আগেই কিয়ামত এসে উপস্থিত হবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭৩০৩-(১৪০/২৯৫৪) [ইঃ ফাঃ ৭১৪৫; ইঃ সেঃ ৭১৯৭]; আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮১৩)

কিয়ামত কবে হবে, কখন হবে তা গায়েব এর বিষয়। এই জ্ঞান কাউকে দেওয়া হয়নি। কেউ যদি বলে যে এই বিষয় জানে, তাহলে সে মিথ্যা বলছে। তবে আলামত ও শর্ত রয়েছে যা পূর্ণ হলেই কেবল এতটুকু বলা যায় যে কিয়ামত এখন নিকটবর্তী। অতি নিকটবর্তী। কুরআনে বলা হয়েছে-

إِنَّ اللَّهَ عِندَهُۥ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌۢ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌۢ

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (৩১:৩৪)

يَسْـَٔلُكَ النَّاسُ عَنِ السَّاعَةِ ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ ۚ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا

লোকে তোমাকে ক্বিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তার জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে। কিসে তোমাকে জানাবে- সম্ভবতঃ ক্বিয়ামত নিকটেই। (৩৩:৬৩)

إِلَيْهِ يُرَدُّ عِلْمُ السَّاعَةِ ۚ وَمَا تَخْرُجُ مِن ثَمَرٰتٍ مِّنْ أَكْمَامِهَا وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنثٰى وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِۦ ۚ وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ أَيْنَ شُرَكَآءِى قَالُوٓا ءَاذَنّٰكَ مَا مِنَّا مِن شَهِيدٍ

কিয়ামতের জ্ঞান তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। তাঁর অজ্ঞাতসারে আবরণ হতে ফলসমূহ বের হয় না, কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তান প্রসবও করে না এবং সেদিন যখন তিনি তাদেরকে আহবান করে বলবেন, আমার শরীকরা কোথায়? তারা বলবে, আমরা আপনাকে জানাচ্ছি যে, এ ব্যাপারে আমাদের থেকে কোন সাক্ষী নেই। (৪১:৪৭)

وَتَبَارَكَ الَّذِى لَهُۥ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَعِندَهُۥ عِلْمُ السَّاعَةِ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

আর তিনি বরকতময়, যার কর্তৃত্বে রয়েছে আসমানসমূহ, যমীন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু; আর কিয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই আছে এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (৪৩:৮৫)

হযরত আলী (রা:) এর নিকট থেকে বর্ণিতঃ "আমি যেন দেখতে একটি জাতিকে দেখতে পাচ্ছি, হাতুড়ির ঘা খাওয়া ঢালের মতো যাদের মুখমণ্ডল স্পষ্ট দৃশ্যমান, যারা রঙ্গিন রেশমী কাপড় পরিহিত এবং উন্নত জাতের অশ্ব চালনা করছে, সেখানে হত্যাযজ্ঞ এতটা অধিক যে, আহতরা নিহতদের লাশের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পার হচ্ছে। ঐ যুদ্ধে পলায়নকারীদের সংখ্যা যুদ্ধবন্দীদের চেয়ে অনেক কম।"

এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলোঃ "হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞানের সাথে পরিচিত।" হযরত আলী (রা:) হেসে বনি কালব গোত্রের ঐ লোককে বললেনঃ "হে বনি কালব গোত্রীয় ভ্রাতা! এটি গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞান নয়; বরং এ হচ্ছে এক ধরনের অবগতি যা একজন জ্ঞানী অর্থাৎ রসূলুল্লাহর নিকট থেকে শিখেছি। কারণ গায়েব সংক্রান্ত জ্ঞান কেবল কিয়ামত সংক্রান্ত জ্ঞান এবং যা কিছু মহান আল্লাহ পাক এ আয়াতে উল্লেখ করেছেন তা।

আর আয়াত টি হচ্ছেঃ একমাত্র মহান আল্লাহই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনি মাতৃগর্ভসমূহে যা আছে সব ব্যাপারে জ্ঞাত, আর কোন ব্যক্তি জানেন না যে, তার জীবন (আয়ু) কোথায় শেষ হয়ে যাবে...। একমাত্র মহান আল্লাহ মাতৃগর্ভে যা আছে- ছেলে না মেয়ে, সুন্দর না কুৎসিত, দাতা না কৃপণ, সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা এবং কোন ব্যক্তি দোজখের অগ্নির দাহ্য কাষ্ঠ, কোন ব্যাকটি বেহেস্তি এবং কোন ব্যক্তি নবীদের সাথী সে সম্পর্কে জ্ঞাত। অতএব, গায়েব সংক্রান্ত যে জ্ঞান মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই জানে না তা হচ্ছে ঠিক এটিই। যা কিছু বলা হয়েছে তা ছাড়া আর সবকিছু হচ্ছে এমন জ্ঞান যা মহান আল্লাহ তার রসূল কে শিখিয়েছেন। মহানবী আবার তা আমাকে শিখিয়েছেন এবং আমার জন্য দোয়া করেছেন যাতে করে মহান আল্লাহ তা আমার হৃদয়ে স্থাপন করেন দেন এবং আমার অন্তঃকরণ তা দিয়ে পূর্ণ করে দেন।"
-       (নাহজুল বালাগাহ, খুতবা নং ১২৮)

তবে পৃথিবীর শেষ সময় সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে যা একটি ধারণা দেয় কিয়ামত কবে কখন হবে। তবে কিয়ামতের পূর্ব আলামত ও শর্ত থেকেই তার আন্দাজ ভালোভাবে করা সম্ভব। আর সেই আলামত গুলিই পূর্বে এই বইয়ে সাজানোভাবে লিখা হয়েছে।

পৃথিবীতে শুধু নিকৃষ্টরাই বেঁচে রবে। এরপর যেকোনো সময় পশ্চিমে সুর্য উদয় হবে সেটি কোন দিন না মাস না বছর পরে হবে তা কেউ জানেনা। আর সেই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেটি কোন দিনে হবে সে ব্যাপারে কিছু হাদিসে এসেছে যে ১০ই মোহররম শুক্রবার কিয়ামত সংঘটিত হবে।

হযরত আবু মুসা আশআরী (রা:) বলেন, রসূল বলেছেন, আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। অবশ্যই তোমরা সকলে কিয়ামত দেখতে পাবে, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল আমরা কিয়ামত সম্বন্ধে ভীত। তাঁর দিবস ও সময় জানতে চাই, যেন তাঁর আগেই আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি। তিনি বললেন, কিয়ামত তিন প্রকার-যার একটি অপরটির চেয়ে ভয়ঙ্কর। সাহাবীগণ বললেন, কি কি হে আল্লাহর রসূল ? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি কিয়ামত, যখন কেউ মৃত্যুবরণ করবে তখন তা দেখতে পাবে। দুই, জাতি কিয়ামত, যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করা হবে, অথবা তারা নিজেরাই যুদ্ধ করে ধ্বংস হয়। তিন. পৃথিবী ধ্বংসের কিয়ামত, যা দশই মহররম শুক্রবারে ঘটবে।
-       (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১৭৬)

আলকামা (রা:) সূরা হজ্জের, নিশ্চয়ই কিয়ামতের কম্পন হবে একটা বিরাট বিষয় এ সম্পর্কে বলেছেন, এটা হবে কিয়ামতের আগে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৮২)

কখন হবে তা কেউ জানেনা

হাদিস থেকে জানা যায়-

খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রা:) সুত্রে নাবী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ গায়েবের কুঞ্জি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না। (১) মাতৃজঠরে কি গুপ্ত রয়েছে তা জানেন একমাত্র আল্লাহ। (২) আগামীকাল কি সংঘটিত হবে তাও জানেন একমাত্র আল্লাহ (৩) বৃষ্টিপাত কখন হবে তাও একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না। (৪) কে কোন ভূমিতে মারা যাবে তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না। (৫) আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই জানে না, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে। *
-       (সহীহ, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | হাদিস নাম্বার: ৬৮৭৫)

-       * উপরের ৫টি জ্ঞানকে গায়েবের জ্ঞান বলা হয়েছে। কিন্তু এটা ভালো করে জানার বিষয় যে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে গায়েবের জ্ঞান থেকে কিছু অংশ জানান। উপরিউক্ত ৫টি জ্ঞান থেকে ৪টিরই প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন মুজেজা ও কারামতের ঘটনায়। যেমন আবু বকর (রা:) এর আগেই বলে দেওয়া যে তার স্ত্রী এর গর্ভে ছেলে না মেয়ে সন্তান রয়েছে। এটি তার কারামত। এরপর ২নং গায়েবের জ্ঞান অর্থাৎ তাকদীর (নেককার তথা জান্নাতি বা বদকার তথা জাহান্নামী) এর বাপারেও আল্লাহ আগে জানিয়ে দিতে পারেন এবং জানিয়েছেনও। যেমন উমর (রা:) এর আগে থেকেই বলা যে তার ছেলের ঘর থেকে নেক সন্তান (উমর ইবনে আব্দুল আজিজ- যিনি আসেম ইবনে উমর এর মেয়ের গর্ভে জন্মে) হওয়ার বিষয়ে। এরপর কে কোথায় মারা যাবে, কবে মারা যাবে, কিভাবে মারা যাবে তাও জানিয়ে দেওয়ার ঘটনা এসেছে অসংখ্য কারামতের ঘটনায়। কিন্তু বিষয় হচ্ছে একটি গায়েবের জ্ঞান এখনো কাউকে জানানো হয়নি আর তা হচ্ছে কেয়ামতের জ্ঞান। এটা আলাদা ভাবে কুরআন হাদিসে অসংখ্য জায়গায় স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে যে কিয়ামতের সময়ের জ্ঞানটি কাউকে দেননি।

কুরআনে স্পষ্ট করে তা বলা আছে-

يَسْـَٔلُكَ النَّاسُ عَنِ السَّاعَةِ ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ ۚ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا

লোকে তোমাকে ক্বিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তার জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে। কিসে তোমাকে জানাবে- সম্ভবতঃ ক্বিয়ামত নিকটেই। (৩৩:৬৩)

শাবি রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, জিবরাইল (আঃ) ঈসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে দেখা করেন। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জিবরাইল! কিয়ামত কখন হবে? তখন উনি উনার ডানাকে উঁচু করলেন। এরপর বললেন, এই বিষয়ে প্রশ্নকারী থেকে উত্তরদানকারী বেশি জানে না, আসমান ও যমিনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর অজান্তেই এসে যাবে। এরপর বললেন, এটার সময় আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নির্দিষ্ট করে জানে না।
-       (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৮৩)

ইবনু ওমর রাঃ, ওমর (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, এক লোক রসূল কে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে জবাবে বললেন, এই ব্যপারে প্রশ্নকারী থেকে উত্তরদাতা বেশি জানে না। আবারো প্রশ্ন করে- তাহলে এর নিদর্শন কি? তিনি (রসূল) বললেন, যখন একজন কৃতদাসী তার কর্তীকে প্রসব করবে, অথবা বলেছিলেন কর্তাকে এবং খালি পায়ের নগ্ন দরিদ্র রাখালেরা উঁচু দালান তৈরিতে প্রতিযোগিতা করবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৮৪; সহিহ বুখারি ৪৫১৭; সহিহ মুসলিম ৩৬; সুনানু নাসাঈ ১৪৯৩)

উরওয়া (রা:) বলেছেন, রসূল কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা বন্ধ করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত না এই  আয়াত অবতীর্ণ হয়, এতে আপনার কি? এর জ্ঞান আপনার রবের কাছে। (সুরা নাজিয়াত : ৪৩, ৪৪), এরপর উনি বন্ধ করেন।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৮৫)

শিঙ্গায় ফুঁৎকার এবং মহা কিয়ামত

দুনিয়ার বয়স যখন শেষ হয়ে যাবে, মানুষের চারিত্রিক পতন ঘটবে, কুকর্মে পৃথিবী ভরপুর হয়ে যাবে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার মত কোন লোক বাকি থাকবেনা তখন কোন এক জুমআর দিন ইসরাফীল ফেরেশতার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে দুনিয়া ফানা হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেনঃ

يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا

সেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। অতঃপর তোমরা দলে দলে উপস্থিত হবে। (সূরা নাবা, আঃ ১৮)

فَإِذَا نُقِرَ فِي النَّاقُورِفَذَلِكَ يَوْمَئِذٍ يَوْمٌ عَسِيرٌ

অতঃপর যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। সেটি হবে অত্যন্ত কঠিন দিন। (সূরা মুদ্দাছছির, আঃ ৮-৯)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

 

وَنُفِخَ فِى الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِى السَّمٰوٰتِ وَمَن فِى الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَآءَ اللَّهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرٰى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ

আর যখন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে তখন মুর্ছিত হয়ে পড়বে যারা আছে আকাশে আর যারা আছে যমীনে, তবে আল্লাহর ইচ্ছায় এ থেকে যে রেহাই পাবে তার কথা ভিন্ন। অতঃপর শিঙ্গায় আবার ফুঁ দেয়া হবে, তখন তারা উঠে দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। (সূরা যুমার, আঃ ৬৮)

নবী বলেনঃ

كَيْفَ أَنْعَمُ وَصَاحِبُ الْقَرْنِ قَدِ الْتَقَمَ الْقَرْنَ وَاسْتَمَعَ الْإِذْنَ مَتَى يُؤْمَرُ بِالنَّفْخِ فَيَنْفُخُ

আমি কিভাবে শান্তিতে থাকবো? ইসরাফীল ফেরেশতা শিঙ্গা মুখে নিয়ে কান পেতে আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে শিঙ্গায় ফুঁ দিবে। (সুনান আত-তিরমিযী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল কিয়ামাহ)

আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ বলেছেনঃ উভয় ফুঁৎকারের মাঝে (ব্যবধান) চল্লিশ হবে। সাহাবাগণ বললেন, হে আবূ হুরাইরাহ! চল্লিশ দিন (ব্যবধান)? তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে সন্দিহান। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন, এ কি চল্লিশ মাস? এবারো তিনি বললেন, এ সন্দেহ পোষণ করি। তারা আবারও বলল, তা কি চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি তা বলি না। তারপর আকাশ হতে বৃষ্টিপাত হবে, এতে মানুষ উদগত হবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। এরপর তিনি বললেন, একটি হাড় ছাড়া মানুষের সকল শরীর পচে যাবে। আর সে হাড়টি হলো, মেরুদণ্ডের হাড়। কিয়ামতের দিন এ হাড় হতেই পুনরায় মানুষকে পুনঃসৃষ্ট করা হবে।
-       (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭৩০৪-(১৪১/২৯৫৫) [ইঃ ফাঃ ৭১৪৬; ইঃ সেঃ ৭১৯৮])
-       অর্থাৎ শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সাথে সাথে কিয়ামত হয়ে যাবে।

তা হটাত করেই সংঘটিত হবে

নবী আরো বলেনঃ

تَقُومُ السَّاعَةُ وَالرَّجُلُ يَحْلُبُ اللِّقْحَةَ فَمَا يَصِلُ الْإِنَاءُ إِلَى فِيهِ حَتَّى تَقُومَ وَالرَّجُلَانِ يَتَبَايَعَانِ الثَّوْبَ فَمَا يَتَبَايَعَانِهِ حَتَّى تَقُومَ وَالرَّجُلُ يَلِطُ فِي حَوْضِهِ فَمَا يَصْدُرُ حَتَّى تَقُومَ

এত অল্প সময়ের মধ্যে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে যে, লোকেরা উটনীর দুধ দহন করবে কিন্তু পান করার সময় পাবেনা। দুজন লোক কাপড় ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য একমত হবে, কিন্তু ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করে কাপড়টি হস্তগত করার সুযোগ পাবেনা। লোকেরা পানির হাওজে নেমে তা মেরামত করতে থাকবে, কিন্তু তা থেকে বের হয়ে আসার পূর্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)

আবূ হুরাইরাহ (রা:) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ বলেছেন, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে না যতক্ষণ দুটি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবি হবে অভিন্ন। আর যতক্ষণ ত্রিশের কাছাকাছি মিথ্যাচারী দাজ্জাল-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রসূল বলে দাবি করবে এবং যতক্ষণ ইলম উঠিয়ে নেয়া না হবে। আর ভূমিকম্প অধিক হারে না হবে। আর যামানা (কাল) সংক্ষিপ্ত না হবে এবং (ব্যাপক হারে) ফিতনা প্রকাশ না পাবে। আর হারজ ব্যপকতা লাভ করবে। হারজ হল হত্যা। আর যতক্ষণ তোমাদের মাঝে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি না পাবে।

তখন সম্পদের এমন সয়লাব শুরু হবে যে, সম্পদের মালিক তার সাদাকা কে গ্রহণ করবে- এ নিয়ে চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়বে। এমন কি যার নিকট সে সম্পদ আনা হবে সে বলবে আমার এ মালের কোনই প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষণ মানুষ উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণের জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ না হবে। আর যতক্ষণ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলবে হায়! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থলে হতাম এবং যতক্ষণ সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত না হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে এবং সকল লোক তা দেখবে এবং সেদিন সবাই ঈমান আনবে। কিন্তু সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে এর আগে ঈমান আনেনি। কিংবা ইতোপূর্বে যারা ঈমান আনেনি কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি- (সূরা আনআম, আঃ ৬/১৫৮)।

আর অবশ্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, দুব্যক্তি (পরস্পরে বেচাকেনার উদ্দেশে) কাপড় খুলবে। কিন্তু তারা বেচাকেনা ও গুটিয়ে রাখা শেষ করতে পারবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি তার উটের দুধ দোহন করে নিয়ে ফিরেছে। কিন্তু সে তা পান করতে পারবে না। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি তার হাওয আস্তর করছে, কিন্তু সে পানি পান করাতে পারবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন (অতর্কিত) ভাবে কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি মুখের কাছে লোকমা তুলবে কিন্তু সে তা আহার করতে পারবে না।
-       (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২১, ৮৫ [আঃ প্রঃ ৬৬২২; ইসঃ ফাঃ ৬৬৩৬]; সহীহুল মুসলিম ১/৭২, হাঃ ১৫৭; মুসনাদে আহমাদ ৭১৬৪)

আবু হুরাইরা (রা:) বলেছেন, কিয়ামত আসবে এমন দুই ব্যক্তির উপর, যারা তাদের কাপড় ছড়িয়ে নিজেদের মাঝে বিক্রি করতে থাকবে। এর মধ্যেই হঠাৎ কিয়ামত চলে আসবে।
-       (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৭৭৯)

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ