রসূল ﷺ এর যুগ থেকে এখন কেন, কিয়ামতের আগ (দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ) পর্যন্ত একটি দল জিহাদ ও কিতাল চালিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস এসেছে। এখনও একটি দল জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে। এটি থেমে থাকার কোন বিষয় না। তবে এর তীব্রতা কম বেশি হয়। আমরা যেহেতু জেনেছি সামনেই আমাদের জন্য হিন্দের যুদ্ধ অপেক্ষা করছে এবং এর মর্যাদা সম্পর্কে জানার পর শুধুমাত্র মুনাফিক শ্রেণী ব্যতীত কোন মু’মিনই তা থেকে অনুপস্থিত থাকতে চাইবে না। আমরা যদি সাধারণ সময়েই (যখন ফরজে কেফায়া থাকে) জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই তার জন্যই বিভিন্ন হাদিসে ভর্ৎসনা করেছে। তাহলে যখন বর্তমানে জিহাদ ফরজে আইন এবং আবার হিন্দের যুদ্ধ রয়েছে যাতে অংশগ্রহণ না করলে কি হবে সেটাও জানা দরকার। আগামীতে যে আজাব আসছে তার কারণই এটি যে, আমরা জিহাদ হতে বিমুখ। বর্তমান সময়েও যদি আমরা জিহাদ থেকে বিমুখ থাকি, হিন্দের যুদ্ধের সেই কাঙ্ক্ষিত জামায়াতকে না খুঁজি, আর তাতে অংশগ্রহণ না করি, তাহলে আমাদের এর জন্য চরম মূল্যই দিতে হবে। আমরা আল্লাহর সেই আজাবে তো পাকড়াও তো হবোই সাথে বেঈমান হিসেবেই হয়তো মৃত্যুবরণ করবো। আর না পাবো কোন শহীদের মর্যাদাও। সামনের যুদ্ধ-বিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ এছাড়া ৩য় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, এরপর ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ও ফিতনা-ফাসাদ রয়েছে। আমরা যদি এখনো সঠিকভাবে ইসলামে প্রবেশ না করি তাহলে দুনিয়াতে আমাদের জন্য বেঁচে থাকাই দুষ্কর হয়ে উঠবে। এই সকল ফিতনা থেকে শুধু মাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী আসল মু’মিনরাই বেঁচে ফিরবে এবং তারাই এরপর দুনিয়ার মালিক হবে, তারাই মাহদীর জামানা পাবে। আর যারা জিহাদ থেকে পালিয়ে ছিল? অন্তরে মুনাফিকি নিয়ে ছিল? তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই তাদের বরবাদ হবে। কাজেই সময় ফুরাবার আগেই আমাদের জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, সঠিক জামায়াতে যোগদান করতে হবে এবং সেই জামায়াতের সাথে জান ও মাল দিয়ে শরিক হতে হবে। যাদের এখনো জিহাদ নিয়ে সমস্যা আছে কিন্তু ইসলামের আর কোন বিষয়ে সমস্যা নেই, তাদের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য কিছু হাদিস দেওয়া হলো।
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম ইয়া রসূলুল্লাহ ﷺ! উক্ত ফেৎনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে? এবং তিনি পথ ভ্রষ্টদের আহবানের কথাও বলেন, জবাবে তিনি বলেন, সেদিন যদি পৃথিবীতে কোনো খলীফা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে তাহলে তাকে আঁকড়িয়ে ধরো। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত করে এবং তোমার সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। না হয় ফেতনার স্থান থেকে পলায়ন করে মৃত্যু পর্যন্ত গাছের শিকড় কামড়িয়ে ধরে থাকো।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৩৫৭)
আবূ হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিতঃ নবী ﷺ বলেছেন, মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমরা জান-মাল ও বাক্য দ্বারা সংগ্রাম চালাও।
- (সহীহ, সুনান আবূ দাউদ আঃ একাঃ ২৫০৪; সুনান আন নাসাঈ ৩০৯৬, ৩১৯২; মুসনাদে আহমাদ ১১৮৩৭, ১২১৪৫, ১৩২২৬; রিয়াদুস সলেহিন ১৩৫৭; দারেমী ২৪৩১)
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরত নেই, কিন্তু যুদ্ধ ও নিয়ত আছে। যখনি তোমাদের নেতা তোমাদেরকে যুদ্ধের আহ্বান করবে, তখনি তোমরা বাহির হয়ে আসবে।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৬২)
হযরত আনাস (রা:) বলেন, রসূলে পাক ﷺ বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের ধরো, আঘাত করো, সেই পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহর দ্বীনের বিজয় হয়।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৭১)
যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।
- (সহীহ, সুনান আবু দাউদ আঃ একাঃ ৩৪৬২; সহীহাহ ১১)
আবূ উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিতঃ নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করল না, অথবা কোন মুজাহিদকে (যুদ্ধ-সরঞ্জাম দিয়ে যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুত করল না কিংবা মুজাহিদদের গৃহবাসীদের ভালভাবে তত্ত্বাবধান করার জন্য তার প্রতিনিধিত্ব করল না, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের পূর্বেই কোন বিপদ বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত করবেন।
- (হাসান, সুনান আবূ দাউদ আঃ একাঃ ২৫০৩; সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৬২; রিয়াদুস সলেহিন ১৩৫৬; দারেমী ২৪১৮)
আবূ হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও (আকাঙ্ক্ষাও) করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৪৮২৫ (১৫৮/১৯১০); সুনান আন নাসায়ী ৩০৯৭; রিয়াদুস সলেহিন ১৩৪৯; সুনান আবূ দাউদ আঃ একাঃ ২৫০২)
আবূ যার (রা:) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! সর্বোত্তম আমল কি? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা।
- (সহীহ, সহীহুল বুখারী ২৫১৮; সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ১৫১-(১৩৬/৮৪); সুনান আন নাসায়ী ৩১২৯; সুনান ইবনু মাজাহ ২৫২৩; মুসনাদে আহমাদ ২৩৮৪৫, ২০৯৩৮, ২০৯৮৯; রিয়াদুস সলেহিন ১২৯৫; দারেমী ২৭৩৮)
ইমরান ইবন মূসা কাযযায বাসরী (রহঃ) ...... উম্মু মালিক বাহযিয়্যা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ ﷺ ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তা অত্যন্ত নিকটবর্তী বলে বর্ণনা দেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এতদপ্রেক্ষিতে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে হবেন? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি হল যে তার পশুপালের মাঝে অবস্থান করবে এবং এগুলোর হক আদায় করবে আর তার রবের ইবাদত করবে। আরেক জন হল সেই ব্যক্তি যে তার ঘোড়ার মাথা ধরে থাকবে এবং শত্রুদের ভয় দেখাবে আর তারাও তাকে ভয় দেখাবে।
- (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৭৭ [ইঃ ফাঃ ২১৮০]; সহিহাহ ৬৯৮; তা’লিকুর রাগীব ২/১৫৩)
ইয়াহইয়া ইবন মূসা (রহঃ) ..... ইবন আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জামাআতের উপর আল্লাহ্ তা’আলার (রহমতের) হাত প্রসারিত।
- (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত/আল মাদানী প্রকাঃ) ২১৬৬ [ইঃ ফাঃ ২১৬৯]; তাখরিজু ইসলাহিল মাসাজিদ ৬১; যিলালুল জান্নাত ১-৮; মিশকাত ১৭৩; বিদায়াতুস সূল ৭০/১৩৩)
কুতায়বা (রহঃ) ...... ছাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ আমার উম্মতের ব্যপারে আমি পথভ্রষ্টকারী নেতাদেরই আশংকা করি। ছাওবান (রা:) বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেনঃ আমার উম্মতের একদল আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সব সময়ই বিজয়ী অবস্থায় সত্যের উপর দৃঢ় থাকবে। যারা তাদের অপদস্ত করতে প্রয়াস পাবে তারা তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে না।
- (সহীহ, সুনান আত তিরমিজী (আল মাদানী প্রকাঃ) ২২২৯ [ইঃ ফাঃ ২২৩২]; সহিহাহ ৪/১১০, ১৯৫৭; মুসলিম ২য় অংশ)
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ জাহান্নামের দিকে আহবানকারী লোকদের আবির্ভাব হবে। যারা তাদের আহ্বানে সাড়া দিবে তাদেরকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের নিকট তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন। তিনি বলেনঃ তারা আমাদের মধ্য থেকে হবে এবং আমাদের ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম, তারা যদি আমাকে পায় তবে আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ তুমি অপরিহার্যরূপে মুসলিমদের সংঘভুক্ত থাকবে এবং তাদের ইমামের (আমীর বা খলীফার) আনুগত্য করবে। যদি মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকে এবং তাদের ইমামও না থাকে তাহলে তুমি তাদের সকল বিচ্ছিন্ন দল থেকে দূরে থাকো এবং কোন গাছের কান্ড আঁকড়ে ধরো এবং সেই অবস্থায় যেন তোমার মৃত্যু হয়।
- (সহীহ, সুনান ইবনু মাজাহ তাঃ পাঃ ৩/৩৯৭৯; সহীহুল বুখারী ৩৬০৬; মুসলিম ১৮৪৭; আবূ দাউদ ৪২৪৪; আহমাদ ২২৯৩৯; সহীহাহ ২৭৩৯)
দ্বীনের হক আদায় করো
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের হক আদায় করবে, আল্লাহ তা'আলার জান্নাত তাঁর জন্য আবশ্যক যদি সে এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! দ্বীনের হক কি? তিনি বলেন, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, আর আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের সন্নিকটে (আনুগত্য করবে) থাকবে। এ কথা বলে আল্লাহর রসূল ﷺ সূরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াত পাঠ করে শোনালেন। *
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১২৫)
- * সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতটি হচ্ছে- হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তাহলে তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূল ও তোমাদের নেতৃবর্গ (মনোনীত আমীর বা নেতা) দের অনুগত হও। আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের (কুরআন ও সুন্নাহ) দিকে ফিরিয়ে দাও। এটিই হল উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল ﷺ একদিন এক মজলিসে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, হে মানব সকল! তোমরা কি আল্লাহর জান্নাত লাভ করতে চাও না? সকলেই বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ আমি চাই, আমি চাই। তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর নিকট জবাবদিহি থেকে মুক্তি চাও না? উপস্থিত সকলে বলল, আমি চাই, আমি চাই। আল্লাহর রসূল ﷺ বললেন, তাহলে আল্লাহর দ্বীনের হক আদায় করো।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১২৮)
হযরত মুসা আশআরী (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, তোমরা যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চাও তাহলে আল্লাহর দ্বীনের হক আদায় করো।
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১১২৯)
- (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৭৯০)
0 মন্তব্যসমূহ