হিন্দের যুদ্ধের মূল সূচনাটা হবে ঠিক তখন থেকে যখন ভারতীয় মুশরিকরা কাশ্মীরকে হারিয়ে ফেলবে বা বেদখল হয়ে যাবে। বলতে গেলে একরকম, এই কাশ্মীরের যুদ্ধ থেকেই হিন্দের যুদ্ধের সূচনা। এরপর তা চরম মাত্রায় পৌঁছাবে। মুশরিকরা যেমন প্রস্তুতি নিয়েছে, নিচ্ছে ঠিক তেমনই মুসলিমদের মধ্যে একটি জামায়াতও তাদের রুখতে, তাদের মুকাবিলা করতে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছে। মুশরিকদের পরিকল্পনা শুধু কাশ্মীর নেওয়া নয়। ভারত আগে যেরকম ছিল অর্থাৎ অখণ্ড ভারত তৈরির পরিকল্পনা। তার সাথে আবার আরেকটা শর্তও আছে। আর তা হচ্ছে ‘মুসলিমবিহীন’ অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা। কারণ মুসলিমরা থাকলে নাকি তাদের জন্য হুমকি। এ কারণেই তারা এই পৃথিবীতে মুসলিমদের রাখতেই চায় না। বিশ্বের সব বাতিলরাই এইদিক দিয়ে এক যে, মুসলিমদের রাখা যাবে না, এটা নাকি তাদের জন্য হুমকি। কিন্তু আল্লাহ কুরআনে বলেই দিয়েছেন- এই দ্বীন সব দ্বীনের উপর বিজয় হবে।
হিন্দুস্তানের মুশরিকরা যখন মুসলমানদের উপর গণহত্যা শুরু করবে ঠিক তখন মুসলিমদের একটি হক জামাত ঘুরে দাঁড়াবে তাদের মুকাবিলায়। মুশরিকদের গভীর ষড়যন্ত্রকে রুখতেই হিন্দের পূর্ব ভূখণ্ডে হাবীবুল্লাহ মাহমুদ ও তার সহচর শামীম বারাহ (সাহেবে কিরানের) আত্মপ্রকাশ হবে। মুসলিমদের উপর গণহত্যা করার মুশরিকদের গোপন ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করতে তারা আগে থেকেই এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে। আর তাই তারা সঠিক ভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারবে। তাদের সাথে থাকবে একদল নিষ্ঠাবান মুসলিমদের জামাআত। তাদেরকে সাথে নিয়েই তারা পরিকল্পনা মতো ও আল্লাহর সাহায্যে খুব দ্রুতই বিজয়ের জন্য ছুটে যাবে। যদিও আল্লাহর মনোনীত আমীরকে না মেনে, তার কথা না মেনে একদল মুসলিম, মুশরিকদের রুখতে ও তাদের মুকাবেলা করার জন্য যাবে কিন্তু তারা পরাজয় বরণ করবে এবং গণহারে হত্যা হবে। কারণ তাদের কোন পূর্বপ্রস্তুতি-পরিকল্পনা নেই এবং আল্লাহর মনোনীত আমীরের অবাধ্য হওয়ায় তাদের উপর আল্লাহর কোনই সাহায্য থাকবে না। সেটার ব্যাপারেই হাদিসে এসেছে-
হযরত হুযাইফা (রা:) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, মানুষের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তারা বছরে দু এক বার বিপর্যস্ত হবে! যার একটি শুরু হবে বায়ু দ্বারা যা মুশরিকদের দূর্গ ক্ষতিগ্রস্তের মাধ্যমে! আর শেষ হবে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। আর এই দুর্ভিক্ষ শেষ হতে না হতেই মুশরিকরা একটি ফিতনা সৃষ্টি করবে! যার মুকাবিলা করার জন্য হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল থেকে একদল মুসলিম ধাবিত হবে। কিন্তু মুশরিকরা তাদের এমন ভাবে হত্যা করবে যেমন ভাবে তোমরা এক নির্দিষ্ট দিনে (কুরবানীর দিন) পশুগুলোর উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো! ফলে তারা পরাজিত হবে। অনুরূপ আরেকটি মুসলিম দল মুশরিকদের দিকে ধাবিত হবে (মুকাবিলা করতে)। তাদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকবে। তারাই বিজয়ী। একথা তিনি (রসূল ﷺ) তিন বার বললেন। অতঃপর বললেন, তাদের নেতা হবে দুর্বল! আহ্ প্রথম দলটির জন্য কতইনা উত্তম হতো যদি তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করতো! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! তারা তাদের নেতাকে গ্রহণ করবে না কেন? তিনি ﷺ বললেন, কেননা তারা সে সময় নিজেরাই নিজেদের যোগ্য মনে করবে!
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহাদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১১৯)
হাদিস থেকে আরো জানা যায়, তখন হিন্দের অবস্থা হবে যে, দুর্ভিক্ষ হওয়ার আভাস থাকবে বা দুর্ভিক্ষ চলবে। এই দুর্ভিক্ষ ছোট পরিসরেও হতে পারে বা বড় পরিসরেও। আর তার মধ্যেই বা তার সমসাময়িক সময়েই ভারতের মুশরিকরা বাংলাদেশে ফিতনার সৃষ্টি করবে, অর্থাৎ দেশ দখলে জোর-জবরদস্তি করবে ও মুসলিমদের গণহারে নির্বিচারে হত্যা করা শুরু করবে। তখন হিন্দের পূর্ব অঞ্চল থেকে হাবীবুল্লাহ মাহমুদ অর্থাৎ ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ তার দলবল নিয়ে চূড়ান্তভাবে মুশরিকদেরকে আঘাত হানবে এবং মুশরিকদের পরাজিত করে সামনে এগিয়ে যাবে এবং ভারতে ঢুকবে। হাদিসে এসেছে-
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, দুর্বল ব্যক্তিরাই জান্নাতের অধিকারী। আর শেষ জামানায় একজন দুর্বল বালকের প্রকাশ ঘটবে। সে দাম্ভিক ও অত্যাচারী মুশরিকদের মুকাবিলা করবে।
- (আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮০)
বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, খুব শীঘ্রই মুশরিকরা তাদের বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেবে আর নির্বিচারে হত্যা করবে। তখন সেখানকার দূর্গম নামক অঞ্চল তথা বালাদি লিল ‘উছরো থেকে একজন দুর্বল বালক তাদের মুকাবিলা করবে। আর তার নেতৃত্বেই মুমিনদের বিজয় আসবে। (গাজওয়াতুল হিন্দ বিজয়)। রাবি বলেন, তিনি আরো বলেছেন, তার একজন বন্ধু থাকবে যার উপাধী হবে সৌভাগ্যবান।
- (আস সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান ১৭৯১; আসারুস সুনান ৮০৩; আস-সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ৮৮১)
...... তৃতীয় জন হিন্দুস্তানের বাদশা, সে বন্ধু অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। চতুর্থ জন, হিন্দুস্তানের দ্বিতীয় বাদশা। যে মুসলমানদের হত্যার শপথ নিয়ে শাসন ক্ষমতায় যাবে। আর মুসলিম হত্যায় সে উন্মাদ হয়ে পড়বে। পঞ্চম হলো একজন নারী শাসক, সে শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়ে বা'আল দেবতার ইবাদত (অর্থাৎ পূর্বপুরুষদের পূজা) বৃদ্ধি করবে। আর মুশরিকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে। আর মুসলমানদের হত্যা করবে। অথচ সে হবে মুসলমান। তখন দেখবে সেখানকার দুর্গম নামক অঞ্চলের এক দুর্বল বালক তাদের ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাবে এবং মুমিনদের বড় বিজয় আনবে।
- (কিতাবুল আক্বিব ১৭২; আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ১৭৫)
আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের উপরে খুবই অত্যাচার করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব অঞ্চল হতে একটি মুসলিম জামাতের প্রকাশ ঘটবে। যাদের পরিচালনা করবে একজন দুর্বল বালক। যার নাম হবে মাহমুদ, উপাধি নাম হবে হাবীবুল্লাহ। তিনি হিন্দুস্তান বিজয়ের পর কাবার দিকে ধাবিত হবে।...... (প্রয়োজনীয় অংশ)
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ, অধ্যায়ঃ গাজওয়াতুল হিন্দ, ২৩১; কিতাবুল আক্বিব ১২৫৬; ক্বাশ্ফুল কুফা ৭৩২; আল আরিফুল ফিল ফিতান ১৭০৩)
৬.১০.১ গাজওয়াতুল হিন্দে দুটি দলের যোগদান
আমরা জেনেছি ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ এর নেতৃত্বে হিন্দের যুদ্ধ সংঘটিত হবে অর্থাৎ তার নেতৃত্বে মুশরিকদের উপর মুসলিমরা বিজয় অর্জন করবে। তার সাথে তার সহচর থাকবেন যিনি হবেন হিন্দের যুদ্ধের মূল সেনাপতি, যার নাম শামীম বারাহ, যার উপাধি সাহেবে কিরান এবং মুসলিমদের একটি জামাতও তাদের সাথে থাকবেন যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু একটি প্রশ্ন আসে- হিন্দের যুদ্ধে অন্য কোন দেশ বা জাতি যুক্ত হবে কিনা। এ ব্যাপারে হাদিস থেকে স্পষ্ট কিছু পাওয়া যায় না। তবে হাদিস বিশ্লেষণে শুধু বলা যায় পুরো হিন্দের মুসলমানদের থেকেই এই মুসলিম জামায়াত তৈরি হবে। আর একটি হাদিসে বলা ছিল যে, খুরাসানীরা তখন অটল থাকবে অর্থাৎ বিজয়ী থাকবে কাফির-মুশরিকদের উপর। হাদিসটি-
হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের মুসলমানদের উপর ইহুদী-নাসারাগণ অত্যাচার বৃদ্ধি করে দিবে। তখন কেবল খোরাসানীরাই (আফগানীরাই) তাদের মোকাবেলায় সুদৃঢ় থাকবে। এরূপ হিন্দুস্তানের মুশরিকরাও মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করে দেবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্ব ভূখণ্ডের দূর্গম নামক একটি অঞ্চল থেকে একজন দুর্বল বালক বা যুবকের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। (সংক্ষিপ্ত)
- (আখীরুজ্জামানা আল মাহদী ফিল আলামাতিল কিয়ামাহ ২৩২)
তবে শাহ্ নিয়ামাতুল্লাহ (রহ:) এর কাসিদা এবং আশ-শাহরান এর আগামী কথনে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, আফগান জাতি ও ইরানী জাতি হিন্দের যুদ্ধে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহ ও তার দলকে সাহায্য করবে।
শাহ্ নিয়ামাতুল্লাহ (রহ:) এর কাসিদাতে এসেছে
(৪৭) মিলে এক সাথে দক্ষিণী ফৌজ ইরানী ও আফগান
বিজয় করিয়া কবজায় পুরা আনিবে হিন্দুস্তান।
ব্যাখ্যাঃ “হিন্দুস্তান সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের দখলে আসবে। আর সেই হাবীবুল্লাহর দলের সাথে ইরানী ও আফগান বাহিনী পরে মিলিত হবে এবং তাদের সম্মিলিত আক্রমনে বিজয় আসবে।”
কাসিদার এই প্যারায় ও তার ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় হিন্দের যুদ্ধে এই দুই দেশের মুমিনদের অংশগ্রহণ থাকবে।
আশ-শাহরান এর আগামী কথনে এসেছে
প্যারাঃ (২৩)
সে ক্ষণে মিলিবে দক্ষিনী বাতাস, মুমিনদের সাথে দুই আলিফদ্বয়।
মুশরিক জাতি পরাজয় মানবে, মুমিনদের হইবে বিজয়।
ব্যাখ্যাঃ “এই প্যারায় আশ-শাহরান ভবিষ্যৎবাণী করে বলেছেন যে, সাহেবে কিরান ও হাবীবুল্লাহর নেতৃত্বে গাজওয়াতুল হিন্দের জন্য যখন মুমিনগণ ভারতে দিকে অগ্রসর হবে ও যুদ্ধ চালাবে তখন মুমিনদের সাহায্যের তাগিদে মহান আল্লাহ তাআলা দুইটি ইসলামী দল বা দেশকে বা সেখানকার হকপন্থী মুমিনদের এই দলে যোগ করিয়ে দিবেন। সেই দুইটি দল বা দেশের নামের প্রথম হরফ হবে আরবির "আলিফ" হরফ দিয়ে। বীর গাজী মুমিনদের সাথে তারা যোগদান করে হিন্দুস্তানের মুশরিকদের পরাজিত করবে। হিন্দুস্তান পুরোপুরি মুমিন মুসলিমদের দখলে চলে আসবে।
আগামী কথনের এই প্যারায় বলা আছে যে, গাজওয়াতুল হিন্দের সময় সাহেবে কিরান ও হাবীবুল্লাহর দলে যে দুই দেশ যোগ দিবে এবং হিন্দুস্তান বিজয় করে পুরোপুরি মুসলমানদের দখলে আনবে সেই দেশ দুইটি হলো ১। ইরান। ও ২। আফগানিস্তান।
অতএব, জানা গেলো যে, সাহেবে কিরান ও হাবীবুল্লাহর দলে ইরান এবং আফগানিস্তানের মিলিত হবার পর এই তিন (৩) দলের সংঘবদ্ধ শক্তির উছিলায়ই মহান আল্লাহ গাজওয়াতুল হিন্দে মুসলমানদের বিজয় দান করবেন। যে বিজয়ের ওয়াদার ভবিষ্যৎবাণী হিসেবে মহান আল্লাহ তার প্রিয় রসূল ﷺ এর মাধ্যমে অনেক পূর্বেই দান করেছিলেন। এবং কাসিদায় সওগাতে শাহ নিয়ামাতুল্লাহ এবং আগামী কথন এ আশ-শাহরান ইলহামী ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।”
এ থেকে জানা গেল হিন্দের যুদ্ধে ‘আফগান’ ও ‘ইরান’ জাতি অংশগ্রহণ করবে। এটি হয়তো হবে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহর নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তার দলের সাথে মিলিত হয়ে। এর পরেই তাদের সম্মিলিত আক্রমনে হিন্দুস্তান বিজয় হবে।
আফগানী বাহিনী তথা খুরাসানীরা (তালিবান) হকের পথে থেকে এখনও লড়াই করে যাচ্ছে। আর ভবিষ্যতে তারা আফগানে বিজয় পাবে এবং পরে কাশ্মীর ও পরবর্তীতে এই হিন্দের যুদ্ধে ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহর দলের সাথে একত্রে মিলিত হবে, যা উল্লিখিত বিষয় থেকে বুঝা যায়। কিন্তু ইরানীরা কিভাবে সাহায্য করবে এটা জানা যাচ্ছে না। কারণ সেখানের বেশির ভাগই হচ্ছে শিয়া সম্প্রদায় আর সেটি ইসলামের তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এর অন্তর্ভুক্ত না। তাহলে তাদের মাঝে কি কোন পরিবর্তন আসবে? তারা কি ইমাম মাহমুদ হাবীবুল্লাহকে সত্য মেনে ইসলামের সঠিক পথে ফিরে আসবে? এ সকল বিষয় জানা নেই। তবে কবিতার কথা হয়তো এরকমও বুঝাতে পারে যে- কিছু ইরানীরা বা একটি জামায়াত হয়তো তার দলে মিলিত হতে পারে। আল্লাহু আ’লামু।
0 মন্তব্যসমূহ