কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلٰٓئِكَةُ أَوْ يَأْتِىَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِىَ بَعْضُ ءَايٰتِ رَبِّكَ ۗ يَوْمَ يَأْتِى بَعْضُ ءَايٰتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمٰنُهَا لَمْ تَكُنْ ءَامَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِىٓ إِيمٰنِهَا خَيْرًا ۗ قُلِ انتَظِرُوٓا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
তারা কি এই অপেক্ষায় আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতারা আসবে অথবা তোমার প্রতিপালক (স্বয়ং) আসবেন কিংবা তোমার রবের কিছু নিদর্শন আসবে (তখন তারা ঈমান আনবে)? যে দিন তোমার রবের কতক নিদর্শন এসে যাবে, সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন সুফল দিবে না যে পূর্বে ঈমান আনেনি বা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি। বল, তোমরা অপেক্ষা কর (তাহলে দেখতে পাবে তোমাদের কুফরীর পরিণাম কী দাঁড়ায়), আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম (আমাদের পুরস্কার প্রাপ্তি ও তোমাদের পরিণতি দেখার জন্য)। (সূরা আন'আম, ৬/১৫৮)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে ধমক দিয়ে বলছেন, তারা কি নিদর্শনের অপেক্ষায় রয়েছে? জেনে রেখ! যেদিন নিদর্শন চলে আসবে সেদিন ঈমান আনলে কারো ঈমান কোন কাজে আসবে না যদি পূর্ব থেকে ঈমান না থাকে। কেননা তাওবাহ কবূল বা ঈমানের জন্য অন্যতম শর্ত হল: গরগরা আসার (এটি মৃত্যুর সময় আসে) বা সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবার পূর্বে তাওবাহ বা ঈমান আনতে হবে।
সহীহ হাদীস প্রমাণ করে যে, আয়াতে উল্লেখিত “তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন” দ্বারা উদ্দেশ্য হল পশ্চিামাকাশে সূর্য উদয়, এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরদের উক্তি। (তাফসীর তাবারী ৮/৯৬-১০২, ইবনু কাসীর ৩/৩৩৬-৩৭১ ও কুরতুবী)
ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসিরদের উক্তি উল্লেখ করার পর বলেন: এ মতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সঠিক মত হচ্ছে যা রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত হাদীস সমর্থিত, তিনি ﷺ বলেন: এ ব্যাপারটি তখনই হবে যখন পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয় হবে। (তাফসীর তাবারী ৮/১০৩)
আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, “যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেননি। (সুরা আনআম, আঃ ১৫৮)-এর সম্পর্কে আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, উক্ত আয়াতের (মর্মার্থ) হলো, পশ্চিম দিক হতে সূর্যোদয় হওয়া।
- (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৪৫)
ওহাব ইবনু মুনাব্বিহ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (পশ্চিমাকাশে) সূর্যোদয়টা হল কিয়ামতের দশম আলামত। আর এটাই কিয়ামতের শেষ আলামত। অতঃপর প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভ সম্পর্কে ভুলে যাবে। প্রত্যেক ধনবান ব্যক্তি তার মাল সম্পদ প্রত্যাখ্যান করবে। আর প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার ব্যবসা থেকে অন্যমনষ্ক হয়ে যাবে।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৪৪)
ওহাব ইবনু জাবের ইবনু খাইওয়ানি (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) এর নিকট ছিলাম। তখন তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। অতঃপর বললেন, যখন সূর্য ডুবে যায় তখন তা সালাম দেয় ও সিজদা করে এবং পরবর্তী দিন উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। আর তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। এমনকি যখন দিন হয়, তা ডুবে যায়। অতঃপর বলে হে প্রতিপালক! নিশ্চয়ই যাত্রা অনেক দূরের!! আর আমাকে (যদি) অনুমতি না দেওয়া হতো, তাহলে আমি পৌঁছতাম না। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যতক্ষণ চান তা আটকে রাখবেন। অতঃপর সূর্যকে বলা হবে, তুমি যেখান থেকে ডুবেছো, সেখান থেকে উদিত হও। সুতরাং সেদিন হতে কিয়ামত পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির (নতুনভাবে আনা) ঈমান তাকে উপকার করতে পারবে না, যে ব্যক্তি নিদর্শনের পূর্বে ঈমান আনয়ন করেনি।
- (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৫০)
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয় হবে তখন মানুষ তা দেখতে পাবে এবং সকলেই ঈমান আনবে। কিন্তু তখন কারো ঈমান উপকারে আসবে না, যদি পূর্ব থেকে ঈমান না এনে থাকে অথবা ঈমান আনার পর কোন সৎ আমল না করে থাকে।
- (সহীহ, সহীহ বুখারী ৪৬৩৫, ৬৫০৬)
ইবনু উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেন, যখন সূর্য তার পশ্চিম দিক হতে উঠবে তখন সকল মানুষই ঈমান আনবে, কিন্তু সেদিন তাদের ঈমান তাদের কোনো কাজে আসবে না।
- (যঈফ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৪১)
উবাইদ ইবনু উমাইর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন তোমার প্রভুর কিছু আলামত আসবে। তিনি বলেন, (আর সেটা হল) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়।
- (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৫১)
আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়টা দুটি একত্রিত ছাগলের বাচ্চার ন্যায়। (অর্থাৎ, এরপরেই কেয়ামত)
- (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৫২)
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কিয়ামাতের আলামত হল) দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ, দাব্বাহ, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়।
- (সহীহ, আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ, পথিক প্রকাঃ ১৮৫৯)
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা:) হতে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগেই তোমরা নেক আমলে দ্রুততা অবলম্বন করো, তা হলো- (১) পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, (২) ধোঁয়া উত্থিত হওয়া, (৩) দাজ্জাল আবির্ভাব হওয়া, (৪) দাব্বাহ, অদ্ভুত জন্তুর আত্মপ্রকাশ, (৫) খাস বিষয় [কারো ব্যক্তিগত মৃত্যু] ও (৬) আম বিষয়- সার্বজনিক বিপদ।
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৮৭-(১২৮/২৯৪৭) [ইঃ ফাঃ ৭১৩০, ইঃ সেঃ ৭১৮২])
উমাইয়্যাহ্ ইবনু বিস্তাম (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ্ (রা:) এর সূত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছয়টি (আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে) দ্রুত তোমরা নেক আমল করতে শুরু করো। তা হলো দাজ্জাল প্রকাশিত হওয়া, ব্যাপক ধোঁয়া দেখা দেয়া, দাব্বাতুল আরয (অদ্ভুত জন্ত) বের হওয়া, পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, কিয়ামত (জাতিগত ধ্বংস) এবং মাওত (কারো মৃত্যু)।
- (সহীহ, সহীহুল মুসলিম হাঃ একাঃ ৭২৮৮ [ইঃ ফাঃ ৭১৩১, ইঃ সেঃ ৭১৮৩])
ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রসূল ﷺ বলেছেন, যতক্ষন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয় ঘটবে ততক্ষন কিয়ামত হবে না, যখন সেদিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং লোকেরা তা দেখবে তখন সবাই ঈমান গ্রহণ করবে, এটাই সেই সময় যখন কোন ব্যক্তিকে তার ঈমান কল্যাণ সাধন করবে না। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন (সূরা আন'আম, ৬/১৫৮)।
- (সহীহুল বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর (كتاب تفسير) | হাদিস নাম্বার: ৪২৮১/৪২৭৮ (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৭৫, তাওহীদ প্রকাঃ ৪৬৩৬)
- (মুসলিম, পর্ব ১: ঈমান, অধ্যায় ৭২, হাঃ ১৫৭; আল-লুলু ওয়াল মারজান ৯৭)
একই রকম আরো বর্ণনা পাওয়া যায় যাতে “তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন” এটি শেষে নেই। এবং অন্য অধ্যায়সহ কিয়ামতের আলামত অধ্যায়ে পাওয়া যায়।
- সুনানে ইবনে মাজাহ | অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয় (كتاب الفتن) | হাদিস নাম্বার: ৪০৬৮
- সহীহুল বুখারী ৪৬৩৫, ৪৬৩৬, ৬৫০৬, ৭১২১, মুসলিম ১৫৭, ১৫৮, তিরমিযী ৩০৭২, আবূ দাউদ ৪৩১২, আহমাদ ৭১২১, ২৭৩৫৫, ৮৩৯৩, ৮৬৩৩, ৮৯২১, ১০৪৭৬, রাওদুন নাদীর ১১১২, তাখরীজুল তাহাবিয়াহ ৭৬৫ নং পৃষ্ঠা। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী (রহঃ) ... আবূ সারীহা হুযায়ফা ইবনু আসী’দ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একটি কামরার ভেতর ছিলেন। তখন আমরা তাঁর থেকে একটু নীচু স্থানে ছিলাম। তখন তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, তোমরা কি আলোচনা করছিলে। আমরা বললাম, কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন না দশটি নিদর্শন প্রকাশিত হবে। পূর্ব দিগন্তে ভূমি ধস, পশ্চিম অঞ্চলে ভূমি ধস, আরব উপদ্বীপে ভূমি ধস, ধুম্র, দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, ইয়াযুয-মা-জুজ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং সর্বশেষ আদন এর গর্ত হতে অগ্নি প্রকাশিত হওয়া যা লোকদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। শু’বা (রহঃ) বলেন, ... আবু সারীহা থেকে ... অনুরূপ। তবে এতে নবী ﷺ উল্লেখ করেন, দশম নিদর্শন হিসাবে একজন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অবতরণের কথা বলেছেন, অন্যজন বলেছেন যে, এমন ঝঞ্ঝা বায়ু (প্রবাহিত হবে), যা লোকদেরকে সমুদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করবে।
- (সহীহুল মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী (كتاب الفتن وأشراط الساعة) | হাদিস নাম্বার: ৭০২২)
উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তোমরা নেক আমল করতে আরম্ভ কর। তা হল দাজ্জাল, ধোঁয়া, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া, ব্যাপক বিষয় (জাতিগত কিয়ামত) এবং খাস বিষয় (ব্যক্তির মৃত্যু)।
- (সহীহুল মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী (كتاب الفتن وأشراط الساعة) | হাদিস নাম্বার: ৭১৩১/প্রায় একই রকম বর্ণনা ৭১৩০)
মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... হুযায়ফা ইব্ন উসায়দ গিফারী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমরা রসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর ঘরের ছায়ায় বসে ছিলাম। আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এ সময় আমাদের কন্ঠস্বর চড়ে গেলে, তখন রাসুসূল্লাহ্ ﷺ বলেনঃ কিয়ামত কখনো হবে না, অথবা কিয়ামত ততক্ষণ কায়েম হবে না, যতক্ষণ না তার পূর্বে দশটি আলামত প্রকাশ পায়। তা হলোঃ
১। সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে; ২। দাববাতুল আরদ বের হবে; ৩। ইয়াজুজ মাজুজ বের হবে; ৪। দাজ্জাল বের হবে; ৫। ঈসা ইব্ন মারয়াম আসমান থেকে অবতরণ করবে; ৬। ধোঁয়া প্রকাশ পাবে; ৭। তিনটি স্থান ধসে যাবে-পশ্চিমে; ৮। পূর্বে; ৯। আরব উপদ্বীপ এবং ১০। সবশেষে ইয়ামনের আদন প্রান্তর হতে আগুন বের হবে, যা লোকদের সিরিয়ার 'মাহ্শার' নামক স্থানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে।
- (সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৩২/ যুদ্ধ-বিগ্রহ (كتاب الملاحم) | হাদিস নাম্বার: ৪২৬০)
আবূ হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে, আর লোকজন তা দেখবে, তখন সকলেই ঈমান আনবে। এ সম্পর্কেই (আল্লাহ্র বাণী) “তখন তার ঈমান কাজে আসবে না ইতোপূর্বে যে ঈমান আনেনি, কিংবা যে ব্যক্তি ঈমান এনে নেক কাজ করেনি। ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে (এ অবস্থায়) যে, দু’ব্যক্তি (বেচা কেনার) জন্য পরস্পরের সামনে কাপড় ছড়িয়ে রাখবে। কিন্তু তারা বেচাকেনার সময় পাবে না। এমন কি তা ভাঁজ করারও সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামাত (এমন অবস্থায়) অবশ্যই সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যক্তি তার উষ্ট্রীর দুধ দোহন করে রওয়ানা হবে কিন্তু তা পান করার সুযোগ পাবে না। আর ক্বিয়ামাত (এমন অবস্থায়) সংঘটিত হবে যে, কোন ব্যক্তি (তার পশুকে পানি পান করানোর জন্য) চৌবাচ্চা তৈরি করবে কিন্তু সে এ পানি থেকে পানি পান করানোর সময়ও পাবে না। আর ক্বিয়ামাত (এমন অবস্থায়) কায়েম হবে যে, কোন ব্যক্তি তার মুখ পর্যন্ত লোক্মা উঠাবে, কিন্তু সে তা খাওয়ার সময় ও সুযোগ পাবে না।
- (সহীহুল বুখারী ৬৫০৬ [আধুনিক প্রকাঃ ৬০৫৬, ইসঃ ফাঃ ৬০৬২] [৮৫; সহীহুল মুসলিম ৫২/২৬, হাঃ ২৯৫৪])
আবূ হুরাইরাহ (রা:) থেকে বর্ণিতঃ যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ দু'টি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবি হবে অভিন্ন। আর যতক্ষণ ত্রিশের কাছাকাছি মিথ্যাচারী দাজ্জাল-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহ্র প্রেরিত রসূল বলে দাবি করবে এবং যতক্ষণ ইল্ম উঠিয়ে নেয়া না হবে। আর ভূমিকম্প আধিক হারে না হবে। আর যামানা (কাল) সংক্ষিপ্ত না হবে এবং (ব্যাপক হারে) ফিতনা প্রকাশ না পাবে। আর হারজ ব্যাপকতা লাভ করবে। হারজ হল হত্যা। আর যতক্ষণ তোমাদের মাঝে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি না পাবে। তখন সম্পদের এমন সয়লাব শুরু হবে যে, সম্পদের মালিক তার সদাকাহ কে গ্রহণ করবে - এ নিয়ে চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়বে। এমন কি যার নিকট সে সম্পদ আনা হবে সে বলবে আমার এ মালের কোনই প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষণ মানুষ উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণের জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ না হবে। আর যতক্ষণ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পাশ অতিক্রম করার সময় বলবে হায়! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থলে হতাম এবং যতক্ষণ সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত না হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে এবং সকল লোক তা দেখবে এবং সেদিন সবাই ঈমান আনবে। কিন্তু সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে এর আগে ঈমান আনেনি। কিংবা ইতোপূর্বে যারা ঈমান আনেনি কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি - (সূরাহ আন'আম, ৬/১৫৮)। আর অবশ্যই ক্বিয়ামাত এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, দু'ব্যক্তি (পরস্পরে বেচাকেনার উদ্দেশ্যে) কাপড় খুলবে। কিন্তু তারা বেচাকেনা ও গুটিয়ে রাখা শেষ করতে পারবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামাত এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি তার উটের দুধ দোহন করে নিয়ে ফিরেছে। কিন্তু সে তা পান করতে পারবে না। ক্বিয়ামাত এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি তার হাওয আস্তর করছে, কিন্তু সে পানি পান করাতে পারবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামাত এমন (অতর্কিত) ভাবে কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি মুখের কাছে লোক্মা তুলবে কিন্তু সে তা আহার করতে পারবে না।
- (সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৭১২১, ৮৫ [আঃ প্রঃ ৬৬২২; ইসঃ ফাঃ ৬৬৩৬], সহীহ; সহীহুল মুসলিম ১/৭২, হাঃ ১৫৭; মুসনাদে আহমাদ ৭১৬৪)
আহমদ ইব্ন আবূ শুআয়ব (রহঃ) .... আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেনঃ কিয়ামত ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। লোকেরা যখন তা উদিত হতে দেখবে, তখন ঈমান আনলে আর কোন উপকার হবে না, যদি না সে এর আগে ঈমান আনে অথবা ঈমান থাকাবস্থায় নেকী অর্জন না করে।
- (সহীহ, সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৩২/ যুদ্ধ-বিগ্রহ (كتاب الملاحم) | হাদিস নাম্বার: ৪২৬১; বুখারী; মুসলিম)
আবূ যার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ সূর্য অস্ত যাবার সময় আবূ যার রাঃ-কে বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সাজদাহয় পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার উদিত হবার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজদা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়— এটাই মর্ম হল মহান আল্লাহর বাণীরঃ “আর সূর্য নিজ গন্তব্যে (অথবা) কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।” (ইয়াসীন ৩৮)
- (সহীহ, সহীহুল বুখারী তাঃ পাঃ ৩১৯৯, ৪৮০২, ৪৮০৩, ৭৪২৪, ৭৪৩৩ [আঃ প্রঃ ২৯৫৮; ইসঃ ফাঃ ২৯৬৯]; সহীহুল মুসলিম ২৫০-(১৫৯); সুনান আত তিরমিজী ২১৮৬ [আল মাদানী প্রকাঃ] মিশকাত হাঃ একাঃ ৫৪৬৮; মুসনাদে আহমাদ ২১৫৮১; সহীহুল জামি ৭৮২৮; আল মু'জামুল আওসাত্ব ৪৪৭০)
এ বিষয়ে সাফওয়ান ইবন আসসাল, হুযায়ফা ইবন আসীদ, আনাস ও আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান-সহীহ।
- (সূনান তিরমিজী ইসঃ ফাঃ ২১৮৯)
0 মন্তব্যসমূহ